Search

Thursday, June 28, 2007

মুক্তিযুদ্ধ একটি ফ্যাশানের নাম

আমাকে খুনি বানাবার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে সামনাসামনি আমার মাকে নিয়ে কুত্সিত কথা বলা। আর আমাকে তীব্র মানসিক কষ্ট দেয়ার সহজ, উত্কৃষ্ট গালি হচ্ছে আমাকে দেশবিরোধী বলা। এরচে কুত্সিত গালি আর কী হতে পারে আমার জন্য।

সম্প্রতী একজন ঠিক এমন একটা গালিই দিয়েছেন আমাকে, আমার সম্বন্ধে দেশবিরোধী বলে সংশয় প্রকাশ করে। না, সামনাসামনি না, লেখায়। এই মানুষটার এমন স্পর্ধা নাই আমার চোখে চোখ রেখে তার এলোমেলো বক্তব্যটা বলতে পারবেন।
মানুষটার দুঃসাহস দেখে আমি হতভম্ব! হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে উঠা আমার জন্য খুব একটা সমস্যা ছিল না। এই মানুষটাকে মনে রাখার মতো কোন স্মৃতি আমার নাই- এমন কোন দুঁদে মানুষ না তিনি, আমার দৃষ্টিতে। কিন্ত আমি পাথর হয়ে যাই যখন দেখি আমার ক-জন সহযোদ্ধা এই নিয়ে টুঁ শব্দ দূরের কথা, প্রতিবাদ দূরের কথা, নিরাসক্ত ভঙ্গিতে দেখলেন।

বেশ-বেশ! নিজের হাতের আঙ্গুলের মত সহযোদ্ধাদের চেনাটাও বড়ো জরুরী! ফ্রিডম নামের মুক্তিযুদ্ধের একটা বই আছে আমার। একজন দুর্বল মানুষের দুর্বল প্রচষ্টা আর কী- কিঞ্চিৎ দেশমার ঋণ শোধের অপচেষ্টা!
তো, আমি এই বইটি একজনকে দিয়েছিলাম, পড়ার জন্য। একবার জানতে চাইলাম, আচ্ছা, বইটায় আপনি কোন সমস্যা পেয়েছেন?
তিনি বললেন, আমি তো পড়িনি। আপনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন- পড়ার প্রয়োজন কি?
আমি হতবাক হয়ে মানুষটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। যদি তিনি বলতেন, আপনার লেখা কিচ্ছু হয়নি, এতে আমার মন্দ লাগার কিছু ছিল না। নিজেকে শোধরাতে পারতাম।

আসলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারী গোলমাল হয়ে গেছে এখন। কারও কারও বদ্ধমূল ধারণা, বিশেষ একটি দলই এই দেশ স্বাধীন করে ফেলেছে- অন্য আর কারও অবদান ছিল না। ভাঙ্গা রেকর্ডের মত এদের কথা বলে চর্বিতচর্বণ করছি আমরা। আমরা মনে রাখি না ১০ বছরের লালুর কথা, হিন্দু বালিকা ভাগিরথী, একমাত্র আদিবাসী বীর বিক্রম উক্য চিং এর কথা!

আমি ব্যতীত অন্তত অন্য ২ জনকে একই দোষে দুষ্ট করা হয়েছে। ১ জনের বিষয়ে বলি। ওঁর মনন স্পর্শ করার ক্ষমতা অনেকেরই নাই- তাঁর দেশের প্রতি মমতার অভাব আছে বলে আমি মনে করি না।
অন্যজন আমাকে দিয়েছেন তাঁর কিশোরকাল থেকে জমানো মুক্তিযুদ্ধের দূর্লভ সব পেপার কাটিং। যে কিশোরটি বুকে লালন করে আসছে একগাদা মমতা- এত বছর পর সে রাজাকারসম হয়ে গেল। বাহ! এইজন্য কি, এঁরা আপনাদের মত মানুষদের সঙ্গে ঝাকের কৈ হতে পারেন না।

কে বোঝাবে এদের- একেকজনের কাজ করার ভঙ্গি একেক রকম!
কে জানে, সেই দিন খুব দূরে না, মুক্তিযুদ্ধ হবে একটি ফ্যাশনের নাম। বুঝে না বুঝে, কষে কুৎসিত গালি দিয়ে আমরা ক্রমশ পরিণত হবো একটা জাঁকালো মুক্তিযুদ্ধ ফ্যাশনবাজরূপে!