Search

Tuesday, December 2, 2025

অজ্ঞ বাউল বনাম আমাদের বিজ্ঞজন...!

একজন বাউলের পালাগান-বিচারগান নিয়ে দেশ উত্তাল—কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে!

এখানে বাউল আবুল সরকারের একটা ক্লিপ দিচ্ছি। এখানে প্রসংগক্রমে 'সুরা নাসের' [*]কথা বলা হয়েছে:


এটা অনেকের ধর্মানুভূতিতে মারাত্মক আঘাত করেছে। এই ভিডিও ক্লিপটা খুব ভাল করে দেখা-শোনার পরও কারও যদি এমনটা মনে হয়ে থাকেও, এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার খুব একটা ইচ্ছা আমার ছিল না:

কিন্তু..., এই ক্লিপটা দেখার পর মনে হচ্ছে খানিকটা বাতচিত করাটা জরুরি। এই মানুষটার নাম-বিস্তারিত জানি না এই কারণে গভীর দুঃখ প্রকাশ করি। কিন্তু মানুষটা পোশাক দেখে অনুমান করি 'ওটির চাপরাশি' টাইপের কেউ হবেন না, ডাক্তারই হবেন কারণ ইংরেজিতে খই  ফোটাচ্ছেন।

বেচারা! এপ্রোনটা খোলারও সময় পাননি! আশা করছি, অপারেশনটা শেষ করার পর-পরই 'শব্দের গোলা' দেগেছেন। 'খোদা-না-খাস্তা' অপারেশনটা অসমাপ্ত রেখে বা জোশের চোটে অক্সিজেনের পাইপে পা রেখে থাকলে রোগির তো 'রাম-নাম সাত্যা' হয়ে গেছে।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এই পৃথিবীতে হাজারো বিষয় থাকতে ধর্মীয় বিষয় এড়িয়ে যাওয়াটাই সমীচীন কারণ আমাদের বাপ-দাদাদের চেয়ে আমরা এখন অনেক ধার্মিক হয়ে গেছি!

আমি এটা বলছি না, বাউল আবুল সরকার সমস্ত সমালোচনার বাইরে তাঁর সমালোচনা করেন, কোন সমস্যা নাই। প্রত্যেকের জন্যই এটা মানাটা জরুরি, আপনি কি বলছেন, কেন বলছেন, কোথায় বলছেন, কার সঙ্গে বলছেন, কোন সময় বলছেন!

তাঁর সহধর্মিণী এবং সহশিল্পী আলেয়া বেগম বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন। কী অসাধারণ তাঁর বোঝাবার ভঙ্গি! আমি কান পেতে রই।


আজ যারা তাঁকে বা বাউলদের নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছেন এবং কী সগর্বেই না বলা হচ্ছে, 'আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, বাউলদেরকে গণধোলাই দেওয়া হচ্ছে...':

আচ্ছা, অন্যদের নিয়ে আপনাদের ধর্মানুভূতি কাজ করে না? আজ 'মুসলমানদের কবি' কাজী নজরুল ইসলাম বেঁচে থাকলে কতশত বার যে বাতাসে তার বাবরি চুল উড়ত, কল্লাসহ; তার ইয়াত্তা নাই। নমুনা []:


এখানে এসে আমাদের 'ধর্মানুভুতি কবিরা' এপ্রোন খুলে নিরব হয়ে যান!
বা ধরুন, তাঁর (কবি কাজী নজরুল ইসলাম)-এর এই সমস্ত অনুবাদ:


ভাগ্যিস, কাজী নজরুল ইসলাম যে 'রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম' থেকে অনুবাদ করেছেন তার স্রষ্টা আজ আর বেঁচে নেই! ওমর খৈয়াম মরে বেঁচে গেছেন। এবং বঙ্গালদেশে জন্ম না-নিয়ে ইরানে জন্ম নিয়েছিলেন বলে দ্বিতীয় বার বেঁচে গেছেন। নইলে তাঁর লাশ কবর থেকে তুলে আগুন দেওয়া হতো।
আচ্ছা, আবুল সরকারের নাহয় ধর্মীয় জ্ঞান বা ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা নেই কিন্তু আমাদের ধর্মীয় শিক্ষকদের তো অগাধ জ্ঞান ধর্মের প্রতি আকাশসম শ্রদ্ধা। এই যে মাওলানা সাহেব বলছেন, "আল্লাহ চাঁদাবাজ...":

ইয়ে, ওই যে ডাক্তার সাহেব একেকটা আগুনের গোলা ছুড়ে দিলেন এটা শুনে কী তার 'ইয়েভূতি' আহত হয়নি?
বা, এই যে বিএনপি পন্থি লোকটা বললেন:
"জিয়াউর রহমান কোরান শরীফে বিসমিল্লাহ-হির-রাহমানির-রাহিম সংযুক্ত করেছিলেন":
এই মানুষটা কী এখনও মুক্ত ঘুরছেন?

আর আরেক ধর্মীয় শিক্ষক জামাতে ইসলামের এম. পি প্রার্থী আমির হামজা বলছেন,
"এখন যদি বলি, আল্লাহ 'কোরান-এ কারিমে' ফেসবুক কিভাবে চালাবেন, দিয়েছেন, বিশ্বাস করবেন?...সুরা আম্বিয়ার ৮৩ নম্বর আয়াত..." :
এমনকি, আমির হামজা আরও বলছেন, "লাইক-শেয়ার-কমেন্ট এই সমস্ত  কথাও আল্লাহ ১৫০০ বছর আগে কোরানে দিয়েছেন"।

কেউ কি এই মানুষটার ঘাড় ধরে জানতে চেয়েছে কোরানের কোথায় আছে এটা, দেখা? সুরা আম্বিয়ার ৮৩ নম্বর আয়াত এটা:

সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৩ ।  কোরানশরিফ, বঙ্গানুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান 

এই সমস্ত কারণে কি এই মানুষটাকে কী কেউ বাউলদের মত পানিতে চুবিয়েছে বা ফাঁসি দাবী করেছে?

মিজানুর রহমান আজহারির ওয়াজের নামে এই সমস্ত বক্তব্য'র জন্য 'তাওহাদি জনতা' কী কোন হইচই করেছে! আটকাতে-লটকাতে চেয়েছে?

ধর্মীয় শিক্ষক-ধর্মীয় বক্তাদের এমন অজস্র উদাহরণ দেওয়া যাবে... []

সূত্র:

১. দুখু মিয়া, সুখু মিয়াhttps://www.ali-mahmed.com/2015/05/blog-post_25.html?m=1

২. ওয়াজ সমগ্রhttps://www.ali-mahmed.com/2019/04/blog-post.html?m=1

* সুরা নাস (রুকু: ১, আয়াত: ৬) ১. বলো, আমি শরণ নিচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের, ২. মানুষের অধীশ্বরের, ৩. মানুষের উপাস্যের, ৪. তার কুমন্ত্রণার অমঙ্গল হতে, ৫. যে সুযোগমত আসে ও সুযোগমত সরে পড়ে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, ৬. জিনের মধ্য থেকে বা মানুষের মধ্য থেকে। -কোরান শরীফ