Search

Friday, August 22, 2025

আমার ঢাকার জীবন এবং বিচিত্র এক মানুষ!

লেখক: Syed Saiful Alam Shovan (https://www.facebook.com/share/1GH823Ybmb/

"আমি এক ভদ্রলোককে ঢাকায় খুঁজে পেয়েছিলাম। উনার ব্যবসা ভাংগারির। তবে উনার অন্যতম প্রধান কাজ ছিল তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে সিটি করপোরেশনের ম্যানহোলের ঢাকনা আর সড়কের লোহার গ্রিল চুরি করানো।

উনার বউ ভাল রান্না করতেন। উনার কাছে যারা কাজ করেন সবাই মোটামুটি আবাসিক। ঢাকায় যদি কোন কিশোরের থাকার জায়গা না-থাকে বিনাবাক্যে তার কাছে আশ্রয় নিতে পারে।

কাজ শেষ করে সবাই ভোর রাতে ফিরত। এরা রাতে জাগে আর সারাদিন ঘুমায়। চুরি আর চুরির সহযোগিতার অভিযোগে তাকে পুলিশ অনেকবার গ্রেফতার করেছে। কিন্তু ফিরে এসে বার-বার আগের পেশায় ফেরত যান। উনার দলের কেউ কোথাও ধরা খেলে উনি দায়িত্ব নিয়ে ছুটিয়ে আনেন। কোথাও প্রয়োজনে জরিমানাও দেন। নিয়ম করে দলের সবাইকে ছাড়িয়ে আনেন। মামলার খরচ, থানা, পুলিশ নিজে দেখেন। 

ভদ্রলোক খুবই আমুদে প্রকৃতির একজন মানুষ এবং পাশাপাশি দায়িত্বশীলও। উনি নাবালক চোরদের আয়ের টাকা তাদের পরিবারের কাছে মাস শেষ পৌঁছে দেন।

আমি প্রায় ২ মাস তার আস্তানায় নিয়মিত গিয়েছিলাম। সেখানে কাজ করা অনেকের স্ত্রী, বাচ্চাদের মা-বাবার সাথে আমরা কথা বলেছিলাম। মীর আর ফাতেমার সহযোগিতায় তাদের সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলাম।

সেখান থেকে এক কিশোরের সন্ধান পেয়েছিলাম যে অসাধারণ গান গায়, ঢোল বাজায়। আমরা এক সন্ধ্যায় গান শুনতে গিয়েছিলাম তার বাসায়। সে আমাদের গান গেয়ে শোনাল, 'তুমি আইবা, তুমি আইবা রে, সেইদিন তুমি আমায় পাইবা না'।

ফাতেমা আগ্রহ নিয়ে সেই গান ধারণ করল। তারপর অনেকদিন মীর, ফাতেমা দুজনেই আমাদের টিম থেকে চলে গেল। ফাতেমা একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাথে কাজে যুক্ত হল। মীর কোন একটা এনজিওর কাজে ঢাকার বাইরে চলে গেল।

২০২৩ সালের মার্চ মাসের এক রাতে এক কিশোরকে ধানমন্ডি ১৯-এর সামনে মানুষ পেটাচ্ছে। আমি স্কুটি থামিয়ে এগিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি আস্তানার সেই ভদ্রলোক আর তার স্ত্রী এসেছেন কিশোরকে উদ্ধার করতে।

জনে-জনে বলছেন, পুলিশের কাছে দিয়ে কি লাভ, গরীব মানুষ পেটের দায়ে চুরি করছে। মাইরা, ছাইরা দেন ইত্যাদি-ইত্যাদি। 

একটা কিশোর মাটিতে পড়ে আছে।  মানুষ আসা যাওয়ার পথে যে যেভাবে পারছে লাথি দিচ্ছে। ভদ্রলোক দম পরীক্ষা করলেন, বেঁচে আছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে রিকশায় করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল হাসপাতালে নাম করে রওনা হলেন। ২৭ এর মোড় থেকে রিকশা ঘুরিয়ে হাসপাতালে না-গিয়ে নিজের আস্তানার দিকে চলে গেলেন! আমি আর পিছু নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম না।

প্রতি শনিবার দুপুরে উনার দু-নম্বুরি চালান যেত। ভাল চালান গেলে ঢেড়ায় বিশেষ পার্টি হয়। তখন ব্যাপক গানের আয়োজন। ঢাকায় এই টাইপের মালিকপক্ষ লাভের টাকা এমন নগদে শ্রমিকদের জন্য ব্যয় করেন তা অন্য কোথাও নজির পাওয়া কঠিন।

আমি আর মীর কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করে একবার সেই চালানের গাড়ি দেখতে পেলাম। গাড়ি অনুসরণ করে মূল গোডাউনের অবস্থান পাব আশা করেছিলাম। বেড়িবাঁধের পর গাড়ি আর অনুসরণ করতে পারিনি। তবে ঠিকানা পেয়েছিলাম। 

যে এলাকায় তার আস্তানা ছিল সবাই তাকে চেনে। সবাই জানে তার আস্তানায় কি-কি মাল পাওয়া যায়। 

ভদ্রলোক প্রতি ঈদে সবাইকে নিয়ে ঈদ করতে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যেতেন। আমি এক ঈদে তাদের বিদায় জানাতে গেলাম। ট্রাকে করে একদল কিশোর-কিশোরী কিশোরগঞ্জ যাচ্ছে। গাড়িতে রান্না করা খাবার নেওয়া হয়েছে। সাথে পানীয়। কিশোর, কিশোরী গাড়িতে ঢোল বাদকের সাথে। আমি অতি বিস্ময় চোখে বিদায় জানিয়ে ফিরে এসেছিলাম।  

মীর আমাকে শেষবার ফোন দিয়েছিল ভাই কাজটা শেষ করি আসেন। আস্তানায় হয়তো আবার নতুন মুখ এসেছে। আমিও অপেক্ষায় আছি দেশে ফিরে আস্তানায় যাব।

গান শুনব,

'তুমি আইবা, তুমি আইবা রে, সেইদিন তুমি আমায় পাইবা না'!"

-লেখক: Syed Saiful Alam Shovan (https://www.facebook.com/share/1GH823Ybmb/


No comments: