Search

Saturday, March 31, 2018

এমন ডাক্তার কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!

আমি আগেও লিখেছিলাম এই ডাক্তার মহোদয় অপারেশনের নাম করে যে গুচ্ছের টাকা নেন তা অবশ্য আমাদের দেশে বিরল না কিন্তু তিনি যে ভঙ্গিতে নিজেকে বাজারে মেলে ধরেন তা লজ্জাবতি গাছ ব্যতীত বিরল [১]! এই দেশের মতান্তরে এই গ্রহের (!) সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক যার বইয়ের বিজ্ঞাপন দিতে-দিতে প্রকাশক ফতুর সেই লেখকের বই না-পড়াটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে বৈকি [২]
আমাদের দেশের চালু দৈনিকগুলোয় নিয়ম করে এই ডাক্তার কাম লেখক মহোদয়ের বইয়ের বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। বইয়ের বিজ্ঞাপন ছাপাবেন প্রকাশক কিন্তু বিজ্ঞাপনে তার প্রকাশনীর কোনও উল্লেখ থাকে না, আজব! কিন্তু ডাক্তার সাহেবের ‘ইডেন মাল্টি কেয়ার হসপিটালের’ নাম ফলাও করে থাকে। আহা, বড় বেকুব আমাগো এই প্রকাশক!

এই লেখক মহোদয়ের বই না-পড়ার হতাশা লাঘব হল এক ডাক্তার বন্ধুর কল্যাণে। যেদিন অধ্যাপক ডা. এ. কে.এম ফজলুল হক লেখক মহোদয়ের বই হাতে পেলুম সেদিন এক চোখে জল এক চোখে পানি চলে এলো। অমায়িক আনন্দে। কিতাবখানা হচ্ছে ‘বৃহদন্ত্র … ও পাইলস’। যাই হোক, অধ্যাপক ফজলুল হকের লেখা ‘বৃহদন্ত্র … ও পাইলস’ নামক কিতাব থেকে খানিকটা তুলে ধরি। তিনি লিখেছেন, “…আমি বিগত নয় বছরে বৃহদন্ত্র ও … রোগাক্রান্ত ২৯,৬৩৫ রোগীর উপর গবেষণা করে দেখেছি যে, এদের ১৮% পাইলসে ভুগছেন…”। (পৃ: ২৯)

‘মারিছে এবং খারিছে’- বিরাট গবেষণা করিছে! ঝড় নাই বৃষ্টি নাই, আপিস কামাই নাই, ছুটিছাটা নাই ৯ বছর ধরে কেবল ইয়ের গবেষণা। এর জন্য আবশ্যক গড়ে প্রতি দিন ৯ জন রোগি! সেটা অবশ্য সমস্যা না। কিন্তু…। এদিকে আবার ৩৩ নং পৃষ্ঠায় এই লেখকই লিখেছেন, “লেখক বিগত নয় বছরে ২৯,৬৩৫ জন …রোগিদের উপর গবেষণা করে দেখেছেন যে, …”। এখানে এসে অবশ্য বলার ভঙ্গি বদলে গেল।
আমরা আবারও ৬০ পৃষ্ঠায় পাই লেখক লিখেছেন, “বিগত ৯ বৎসরে …২৯,৬৩৫ জন রোগীর উপর গবেষণা করে দেখেছি যে…”।

আবারও-এর পর কি লেখার নিয়ম? আবারও আবার? আচ্ছা! তো, ৭৫ পৃষ্ঠায় ‘আবারও আবার’ লেখক লিখেছেন, “লেখক বিগত নয় বছর … সমস্যায় আক্রান্ত ২৯৬৩৫ জন রোগির উপর গবেষণা করে দেখেছেন…”। গবেষণা এতই মারাত্মক যে আমরা ৭৮ পৃষ্ঠায় ‘আবারও আবার আবার’ দেখব লেখক মহোদয় লিখেছেন, "…বিগত নয় বছরে ২৯,৬৩৫ জন রোগীর উপর গবেষণা করে দেখেছি…”।
ডাক্তার কাম লেখক মহোদয়ের গবেষণা চলতে থাকুক এবার দোয়া প্রসঙ্গে যাই। ৬৪ নং পৃষ্ঠায় ডাক্তার সাহেব লিখেছেন, “অনেকে বলেন, স্যার টয়লেটে এখন এত আরাম পাচ্ছি যে তখনই আপনার জন্য দোয়া করি”। আমরা ভাগ্যহীন তাই দোয়ার বিস্তারিত জানতে পারলুম না।

দেখো দিকি কান্ড, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অতি উঁচু মানের এই কিতাবের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাকাতর হয়ে ভূত ব্যাটা কেবল ঝামেলা পাকায়। ভূত ছাপাখানায় গিয়ে অক্ষর এলোমেলো করে দেয় বলেই আমরা ৪৭ পৃষ্ঠায় দেখি ‘মাংসপি’ ঝুলে আছে তো আছেই। ৫৪ পৃষ্ঠায় ‘মাংসপি’ কেটে ১০৩ পৃষ্ঠায় ‘মাংসপি’ বেড়ে যায়। ‘মাংসপি’ বেড়ে-বেড়ে মাংসপিন্ডে রূপান্তরিত হোক ততক্ষণে আমরা ডাক্তার সাহেবের ‘জুলাফ’ নামের জিনিসটা দিয়ে গলা ভেজাই।
‘জুলাফ’ জিনিসটা কি এটা জানার জন্য আমাদের মত ডডনং পাঠককে জোলাপ খেয়ে টয়লেটে গিয়ে ডাক্তার সাহেবের জন্য নগদে দোয়া করতে হবে। এই মহান কিতাবে ‘ফুসফুসজ্জ’ টাইপের অজস্র শব্দ খুঁজে বের করে এখানে লিখে শব্দের অপচয় করাটা সমীচীন হবে না। এই কিতাবে আমরা ডাক্তার সাহেবের ইস্তারি সাহেবা এবং তার পুত্রধনের ছবিও দেখতে পাই। একজন পাঠক হিসাবে এটা দেখাটা আমাদের জন্য খুবই জরুরি হয়ে পড়ে বটে। এই মহান কিতাবখানা আবার একজন সম্পাদনাও করেছেন তিনি হচ্ছেন ডা. সজল আশফাক!
তো, কালে কালে পুত্র ডাঙ্গর হয়, ডাক্তার হয়। তখন আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াটা আবশ্যক হয়ে পড়ে। উপায় কী? আহা, এ এমন কী! এখন যে আমাদের ডাক্তার ফজলুল হক সাহেব নিয়ম করে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বইয়ের যে বিজ্ঞাপন দেন ওখানে তার ছবির সঙ্গে জুড়ে দেন তার পুত্রধনের ছবি এবং লেখা থাকে সম্পাদনায়: ডাঃ আসিফ আলমাস হক। এবং যথারীতি ডাক্তার সাহেবের 'ইডেন মাল্টি-কেয়ার হাসপাতালের' বিজ্ঞাপন।
এত্তো-এত্তো মানুষ ডাক্তার সাহেবের পেছনে লাগলে বেচারা ডাক্তারের লেখক না-হয়ে উপায় কী!

একজন ডাক্তার এভাবে চাল করে বিজ্ঞাপন দেওয়ায় আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটছে কিনা এটা একজন আইনজ্ঞ ভাল বলতে পারবেন কিন্তু একজন ডাক্তার,অতি শিক্ষিত একজন মানুষ এতোটা লাজহীন হন কেমন করে? এ এক বিস্ময়!

সহায়ক সূত্র:
২. ডাগদর কাম ল্যাকক: http://www.ali-mahmed.com/2016/02/blog-post_6.html

Thursday, March 22, 2018

খসে পড়ে একেক করে...!

রামুর প্রবীণ শিক্ষক সুনীল কুমার শর্মাকে তাঁরই ছাত্র সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার সংবাদ পুরনো। এবং পরবর্তীতে সংসদ সদস্য মহোদয় কিরিটি, কুয়াশা, মাসুদ রানাকেও ছাড়িয়ে এটাও প্রমাণ করে দিলেন এই প্রবীণ শিক্ষক ১৯৭১ সালে দেশবিরোধী ছিলেন [১]। ব্যস, এরপর আর কথা চলে না।

একজন আইনপ্রণেতা হয়তো নিজ শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে পারেন কিন্তু এখনও যেহেতু আইন আকারে এটা পাশ হয়নি তাই আমরা, বিশেষ করে আমি আগের নিয়মেই চলব। নিজ শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা তো কল্পনার অতীত তাঁর চোখে চোখ রাখাই যে দায়। সামনে পড়ে গেলে হৃদপিন্ডের ড্রাম কী আমি বাজাই, শ্লা!

যাই হোক, দেশের অনেক বড়-বড় খবরের মাঝে এই খবরটা চাপা পড়ে গেল! এই সংসদ সদস্য মহোদয়ের অনুসারী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি একরামুল হুদা মহোদয় আদালতে এই প্রবীণ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করে দিয়েছেন। ওরি বাবা, ‘মানি সাংসদের গেল মান আর একরামুল স্যারের উধাও কান’!

যাই হোক, কেউ মান খোয়ালে মানহানির মামলা করবে এবং যথারীতি ন্যায়ালয় মান ফিরিয়ে দেবে এতে কোনও সমস্যা নেই। এমনিতে আদালত আমাদের বিচার পাওয়ার শেষ ভরসাস্থল! এই নিয়ে আমার বিশেষ গাত্রদাহও নেই। কিন্তু আমি ভয়ে-ভয়ে আছি। নিজ ছাত্রের হাতে মার খাওয়া অভাগা এই প্রবীণ শিক্ষক যদি এই ১০০ কোটি টাকার মামলা হেরে বসেন তাহলে তো সর্বনাশ এই টাকা শোধ করবেন কেমন করে? ১০০ কোটি! হাজার না, লাখ না, কোটিও না একদম ১০০ কোটি! আহা, টাকার অংকটা কম হলে নাহয় চেষ্টা করা যেত। আচ্ছা ধরা যাক, খোলা বাজারে মাস্টার মশাইকে পার্ট-বাই-পার্ট বিক্রি করে দেওয়া হলো। মাস্টার মশাইয়ের কিডনি, ফুসফুস, পাকস্থলি, দাঁত কিন্তু… ওহো সবই তো দুর্বল পার্টস কোটি টাকা বাজারদর হবে কী! আরে, সব মিলিয়ে কোটি টাকা হলে আমি নিজেই বুঝি বসে থাকতাম, পাগল। কবে নিজের পার্টসগুলো বিক্রি করে টাকা ক্যাশ করে ফেলতাম।
কিন্তু মাস্টার মশাই থেকে ১০০ কোটি টাকা আদায়ের উপায় কী! আমি তো কোনও উপায় দেখছি না কারও মাথায় কোনও উপায় খেললে সে ভিন্ন কথা…।

সহায়ক সূত্র:
১. পিতা, তোমার নগ্নতায়...: http://www.ali-mahmed.com/2018/01/blog-post_19.html

Sunday, March 18, 2018

পাখি ওড়ে যায়, মানুষ হারায়...!


এই মানুষটাকে যখন একজন মারছিল তখন পাল্টা আঘাত দূরের কথা আত্মরক্ষার কোনও প্রকারের চেষ্টাই তার মধ্যে ছিল না। কারণটা পরে জানা গেল। মানুষটা হারিয়ে গেছেন, স্রেফ হারিয়ে গেছেন! তাঁর অনেক কিছুই মনে আছে কিন্তু বাড়ির ঠিকানা মনে নেই। কয়েক দফায় কথা বলে তাঁর সম্বন্ধে জানা হলো বিস্তর। মানুষটা উচ্চশিক্ষিত, শুদ্ধ বাংলার পাশাপাশি চোস্ত ইংরাজিতে কথা বলতে পারেন। টিনা টার্নার, স্টিভ ওয়ান্ডার, জর্জ মাইকেল, রকওয়েলের নাম এর মুখস্থ। এবং, সম্ভবত এঁর পরিবারের একাধিক ব্যক্তিগত গাড়িও আছে ।
একদিন চা খেতে-খেতে কথা হচ্ছিল। আমাকে দুম করে বললেন, 'আচ্ছা, আপনি কি হুইল-চেয়ারে বসে চিন্তাভাবনা করে দেখেছেন'? আমি মনের ভাব লুকিয়ে বললাম, 'আরে, চিন্তা করবে তো তারা যাদের ব্রেন আছে। আমা তো ওই জিনিসটা নাই'। এটা ছিল রসিকতার একটা অংশ কিন্তু আইডিয়াটা আমার পছন্দ হয়েছে...।

ঝকঝকে চোখের প্রাণবন্ত এই মানুষটা যখন গা দুলিয়ে কথা বলেন তখন মনেই হয় না এর ভুবনের কোথাও কোনও প্রকারের এলোমেলো হয়ে আছে। স্টিভ ওয়ান্ডার, রকওয়েল আমারও খুব প্রিয়। কথায়-কথায় যখন মানুষটা হাসি ছুড়ে দিয়ে আমাকে বলেন, 'আমি তাহলে আপনাকে কিশোরবেলায় ফিরিয়ে নিয়ে গেলাম, তখন কেবলই মনে হয় বুদ্ধিমান একজন মানুষ এমন অসহায়ের জীবন-যাপন করবেন এটা তো হয় না। তাঁর পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে যাওয়াটা জরুরি, খুব জরুরি…।

হারিয়ে যাওয়া মানুষ স্বজনের কাছে ফিরে আসে সিনেমায় এ সত্য কিন্তু বাস্তবেও এমনটা হতে পারবে না এই দিব্যি তো আর কেউ দেয়নি। আমি আশাবাদি মানুষ- এই মানুষটা তার স্বজনের কাছে ফিরে যাবেন এই আশায় বুক বাঁধি।মানুষটা বাড়ির ঠিকানা ভুলে গেছেন কিন্তু কেবল এটুকুই বলতে পারেন চট্টগ্রামে এদের বাসা। সম্ভবত হালিশহরে।
*আমার সঙ্গে সহৃদয় যারা যুক্ত আছেন বিশেষ করে চট্টগ্রামের, দয়া করে একটু হাত বাড়ান না …।
...
৭ দিন পর...।
বিপ্লব নামের এই মানুষটাকে নিয়ে একটা সমস্যায় পড়ে গেলাম! এ সত্য এমনতরো সমস্যা আমার জন্য নতুন কিছু না। কিন্তু…কোনও প্রকারেই বিপ্লবের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনও সুরাহা করা যাচ্ছিল না। ফাঁকতালে অতি মুল্যবান সময়ের অপচয় হচ্ছিল। যথেষ্ঠ প্রস্তুতি ব্যতীত এহেন রোগে আক্রান্ত একজন মানুষকে ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব। তাও দেখতে দেখতে ৭ দিন গড়িয়ে গেল। এরিমধ্যে কেউ-কেউ প্রচুর সময় নষ্ট করলেন। যারা তাকে ‘বিপ্লব’ নামে চিনতে পারলেন তারা যদি সঙ্গে সঙ্গেই এটা বলে দিতেন যে অনেক বছর পূর্বে একে দেখেছেন। এখনকার কোনও খোঁজ এদের জানা নাই। আফসোস, আমি অপেক্ষায় ছিলাম যে এই বুঝি একটা গতি হলো।

সময় গড়ায়। আমার অস্থিরতা বাড়ে। কেউ-কেউ আমাকে বিস্তর উপদেশও দিলেন, চালু সিস্টেমের(!) কথাও বললেন। তা কেমনতরো সিস্টেম? খুব সোজা! বিপ্লব নামের মানুষটাকে চট্টগ্রামের কোনও ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়া। এই সিস্টেমের কথা আমি যে জানি না এমন না। এই সিস্টেমের অনেক ক্ষেত্রেই চল আছে। যেমন মন্দির-মসজিদে নিজের জুতো খুঁজে না-পেয়ে অন্যের চকচকে জুতো পায়ে দিয়ে ঠোঁট গোল করে শিষ দিতে দিতে বাড়ি ফেরা। কিন্তু আহা, একটা মানুষের সঙ্গে এহেন আচরণের জন্য বুকের পাটা লাগে যে!

যাই হোক, পরিচিত কিছু মানুষ বিরক্ত হয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেন। একজন ডাক্তার সাহেবকে বিপ্লবের জন্য একটা ওষুধের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার ফোন দিয়েছিলাম। এখনও তিনি আমাকে ফোন করার সময় করে উঠতে পারেননি। একজন সাংবাদিক সাহেবের অবস্থাও তথৈবচ। আহা, ব্যস্ত মানুষ যে সব! এদের যখন ইয়া বড়ো ক্যারিয়ার তখন আমার মত চুতিয়ার হাতে টিফিন ক্যারিয়ার।

যেহেতু বিপ্লবের সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে হালিশহরের কথা এসেছিল তাই হালিশহর থানায় যোগাযোগ করলে বলা হলো এর বাবার নাম বা সেল নাম্বার না থাকলে কিসসু করার নেই। ওরে, বাবার নাম আর সেল নাম্বার থাকলে থানার সহায়তা লাগে নাকি আবার?!

অন্ধকার দিক নিয়ে কথা বলতে ভাল লাগে না। আলোকিত দিকের কথা বলি। বিপ্লবকে নিয়ে লেখাটা দেওয়ার পর অনেকে মমতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, কাতর হয়েছেন। লেখাটা শেয়ার করে ছড়িয়ে দিয়েছেন। সেইসব হৃদয়বান মানুষদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আমার ক্ষমতায় কুলালে প্রত্যেকের হাত ছুঁয়ে বলতাম, আহারে-আহারে, আপনাদের এতো মায়া কেন গো।

সেই সময়কার তুমুল জনপ্রিয় কোজাক, দ্য এটিম, এক্স ফাইলের ভুলে যাওয়া কথা না-হয় বাদই দিলাম। এই সাত দিনে বিপ্লব নামের মানুষটার তীক্ষ বুদ্ধি আমাকে কম হতভম্ব করেনি! তার উপর মায়ার ঝাঁপি- একদিন দরদর করে ঘামছি বিপ্লবের মায়াভরা গলা, ‘ভাইয়া, আপনি অনেক ঘামছেন’। এমন একটা দ্বৈতসত্তার মানুষকে বোঝার খুব ভাল ক্ষমতা আমার নাই। যে ফি-রোজ আমাকে মনে করিয়ে দিত, ‘ভাইয়া আমার পিয়নের চাকরিটা হবে তো’? ওর ওই সত্তার পিয়নের একটা চাকরির খুব প্রয়োজন এবং গ্রামের কুঁড়েঘরে থাকারও তীব্র আগ্রহ।

গতকাল সেলুনে এর চুল-দাড়ি কামিয়ে তার এই ছবিটা দেখিয়ে বলছিলাম, ‘বাহ, দেখেন তো, আপনাকে কী চমৎকারই না দেখাচ্ছে’! আমি নিজেও হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম। মায়াভরা,কী ঝকঝকে চোখ!
আমি এও লক্ষ করেছি বিপ্লব নামের এই মানুষটা অনেকটা আঁচ করতে পারছিল যে আমি তাকে নিয়ে একটা অস্থিরতায় মধ্যো আছি। এই অস্থিরতা থেকে আমাকে মুক্তি দিতেই কিনা জানি না কাল সে একটু হেঁটে আসার কথা বলে সেই যে গেল আর ফিরল না। আমি অপেক্ষায় আছি কিন্তু আমার মন বলছে বিপ্লব নামের অতি বুদ্ধিমান এই মানুষটা আর ফিরবে না। সে আমার প্রতি করুণা করে গেছে। আমাকে জানোয়ার হওয়ার হাত থেকে থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে।


পাখি ওড়ে যায়-মানুষ হারায়। কেউ ফেলে পালক কেউ স্মৃতি। আমার মত দুর্বল, পরাজিত একজন মানুষের বুকের ভেতর পাক খেয়ে উঠা বেদনা একপাশে সরিয়ে আমি চোখ বন্ধ করে কেবল ভাবি, এমনটা হতে পারে না, বেশ পারে। আমার মস্তিষ্ক আমাকে নিয়ে খানিকটা খেলছে। কোথাও গিয়ে ভুলে গেছি নিজের বাড়ির কথা। কেবল স্বজনদের মায়াভরা মুখ মনে আছে, মার হাতের ধোঁয়াওঠা সাদা-সাদা ভাতের কথা মনে আছে, নিজের ঘুমাবার বালিশটা কথা মনে আছে কেবল বাড়ির ঠিকানার কথা মনে নেই। মনে করার চেষ্টা করলে চোখ বড় হয়ে আসে। কথা আটকে গলায় দলা পাকায়, মুখ বেঁকে যায়। যেন এই শরীরটা আটকা পড়েছে অন্য একটা শরীরে। সেই শরীর ফিরতে পারছে না, ফিরতে পারছে না। আহারে-আহারে!

আমি আশাবাদি মানুষ। আমি নিশ্চিত, কোনও একজন মানুষ এগিয়ে আসবেন। তিনি আমার মত ছাতাফাতা দুর্বল মানুষ না। ওখানে থাকবে হোম, আশ্রয়স্থল নামের একটা শক্ত ছাদ যেখানে, এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়াতে কোনও সমস্যা নেই। কখনও কোনও সমস্যা হলেই ছুটে আসবে ডাক্তার-নার্স। একদিন, কোনও একদিন আশেপাশের সহৃদয় মানুষগুলো উল্লাসে হাতে কিল মেরে ঝলমলে মুখে বলবে, বলেছিলাম না, বলেছিলাম না এ ঠিক-ঠিক বাড়ি ফিরবে…।
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10155388657697335&set=a.10151298132117335.465193.723002334&type=3&theater