Search

Friday, January 19, 2018

পিতা, তোমার নগ্নতায়...।

আমরা যারা বেকুব টাইপের মানুষ তারা এখনও দূর থেকে নিজের স্কুলের শিক্ষককে দেখলে রাস্তা ছেড়ে সরে দাঁড়াই। মানুষটা যতই কাছাকাছি হতে থাকেন পাল্লা দিয়ে পা ততই দুর্বল হয়ে পড়ে। হবে না কেন, আমাদের বাবারা যখন মাঠে-আপিসে চলে যান তখন এই শিক্ষকরাই তো হাত ধরে-ধরে আমাদেরকে শেখান। এ যেন আরেক বাবা- বাবার ছায়া।

তাই আমাদের মত বেকুবদের কাছে কক্সবাজারের রামুর সংসদ সদস্য ওরফে আইনপ্রণেতার এই আচরণ বৈসাদৃশ্য ঠেকবে বৈকি। কিন্তু এতে আহত হওয়ার কিছু নাই। সাংসদ সাইমুম তার নিজের স্কুলের শিক্ষককে (যে শিক্ষকের তিনি ছাত্র ছিলেন) তুই-তোকারি করেছেন গায়ে হাত উঠিয়েছেন। যেহেতু তিনি আইনপ্রণেতা, বিস্তর আইনের বই নিয়ে ধস্তাধস্তি-কস্তাকস্তি করে কালে-কালে মহীরুহ হয়ে উঠেছেন তাই এতে দোষ ধরলে আইনের ব্যত্যয় হয় কিনা কে জানে! কথিত আছে, দানব নাকি তার মাকে খেয়ে ফেলে। এখন দেখছি কিছু মানব তার বাপকেও খেয়ে ফেলে!
...
কিন্তু বিষয়টা এখন পর্যন্ত থাকল না। সংসদ সদস্য মহোদয়ের মিডিয়ায় ইমেইল চালাচালি করাকরি নিয়ে আবারও লিখতে হলো...।

রামুর আইনপ্রণেতা সাংসদ সদস্য মহোদয়ের নিজ শিক্ষককে তুই-তোকারি করা এবং গায়ে হাত তোলার ঘটনা, এই সংবাদ পুরনো। এ সত্য, এটা অভূতপূর্ব এমন ঘটনা দেশে বিরল।
এটাও সত্য আমরা এটা আশা করে বসে নেই আর এখন সেই দিনও নেই যে ‘ডুপ্পুস’ করে কুয়ায় পড়ার শব্দ শুনব। আগেকালের বিচারে গলায় গামছা গলায় দিয়ে কারও শাস্তির রায় হলে সে লজ্জায়-অপমানে কুয়ায় ঝাঁপ দিত। পার্থক্য হচ্ছে এখন হি-হি করে বলে: গামছাডা নতুন দেইখ্যা দিয়েন। মানে সোজা গলায় গামছা দিয়ে মাফ চেয়ে নতুন গামছা নিয়ে সে বিমলানন্দে বাড়ির পথ ধরবে আর কী! 


তো, আমরা ভুলেও সাংসদ সাইমুমকে নিয়ে এমনটা দুরাশা করিনি। ওয়াল্লা, এখন দেখছি তিনি দাবি করছেন: তার শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন। তিনি নাকি পাকিস্তানি হানাদারকে বাজার করে দিতেন।
আওয়ামীলীগের এই সাংসদ ইমেইলে মিডিয়ার কাছে এটাও লিখেছেন, “তার শিক্ষক সুনীল কুমার আওয়ামী লীগবিদ্বেষী এবং একাত্তরের শান্তি কমিটির সদস্য”।

কেউ এই তথ্য জানে না কিন্তু আমাদের সাংসদ কেমন করে এই তথ্য জানেন এ এক বিস্ময়! তার শিক্ষক যখন পাকবাহিনীর গোশত-টোশত বাজার করে দিতেন তখন এই সংসদ সদস্য মহোদয় বাজারের কোথায় লুকিয়ে এটা পর্যবেক্ষণ করতেন এই তথ্য অবশ্য ইমেইলে উল্লেখ নেই। এখন তো দেশে এমন মুক্তিযোদ্ধাদের নামও শোনা যায় ১৯৭১ সালে যাদের বাবা-মার বিয়েও হয়নি। তাই এটা হওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক না।

এই একটা চল হয়েছে দেশে! কাউকে শুইয়ে দিতে হলে তাকে কোনও-না কোনও প্রকারে ১৯৭১ সাল জড়িয়ে দেশবিরোধী বানিয়ে দাও। ব্যস, এরপর ওই মানুষটার প্রতি করা যে-কোনও অন্যায় হিসাবের বাইরে। তখন সেই মানুষটার পক্ষে কারও দাড়াবার যো নেই। মানুষটা ঘৃণিত যে…!

No comments: