Search

Thursday, June 30, 2016

‘কোল্ড ব্লাডেড মার্ডারার’ এবং কতিপয় গা ঘিনঘিনে কৃমি’!

খুন করার ভঙ্গিও আইনের কাছে বিবেচ্য বিষয়। রাগের মাথায় একজন একটা খুন করে করে ফেলল- আইন খানিকটা হলেও নরোম ভঙ্গিতে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু যে মানুষটা রসিয়ে-রসিয়ে খুন করে তার বেলায় কোনও প্রকারের ছাড় থাকার অবকাশ নাই।
বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে খুন করার পর এক লেখায় লিখেছিলাম [১], "সন্তানের সামনে তার মাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। যে খুনি হচ্ছে চরম কাপুরুষ এবং এই গ্রহের অতি নিকৃষ্ট সৃষ্টি- গা ঘিনঘিনে কৃমির চেয়েও। যে রাজনীতির কৌশল হিসাবে বেছে নিয়েছে একজন নারীকে, একজন মাকে! একটা শিশুর সামনে তার মাকে কোপানো হচ্ছে সেই মাটা পড়ে থাকেন থই থই রক্তের মাঝে…"।

পূর্বে খুব জোর গলায় বলা হচ্ছিল এটা জঙ্গিদের কাজ। আমাদের দেশে এখন এই কাজটা খুবই সোজা একটা মানুষকে মেরে ফেলো তারপর বলে দাও এ জঙ্গি ছিল। ব্যস, মামলা ডিসমিস। এমনিতে খুন হতে দেরি হয় না তদন্ত থাকুক কাজির গোয়ালে; যে-কোনও বিভাগের (তিনি পানি বন্টনের দায়িত্বে নাকি আকাশ তাতে কী আসে যায়) একজন ফস করে বলে বসেন, এটা জঙ্গির কাজ। এরপর আর কথা চলে না কারণ এই বাহাদুরগণ সব জানেন। ইহার পর আর কী- আমরা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলাম, থাকিলাম!

কিন্তু এখানে খানিকটা ব্যতিক্রম ঘটল। দানবের মাঝেও খানিকটা মানবের দেখা মিলল। এই হত্যাকাণ্ডের দায় জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ সাফ অস্বীকার করে যে এই কাপুরুষিত খুন আমাদের না।
যাই হোক, এরপর খুনি সন্দেহে আনোয়ার এবং ওয়াসিম দুজনকে ধরা হয়। এরপরই শুরু হলো ‘হাশ-হাশ’। লুকোচুরি! বাদীর সঙ্গে কথা বলার নিয়ম আছে এই অমায়িক বক্তব্য জেনে আমরা বিমল আনন্দ বোধ করি বটে কিন্তু বাস্তবে যেটা জানা গেল রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে মামলার বাদী এসপি বাবুল আকতারকে পুলিশ নিয়ে গেল। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ। ‘রাতভর’ মিডিয়ার খুব পছন্দের একটা শব্দ। 'চুতিয়া' মিডিয়া নারীদের প্রতি চরম শারীরিক নির্যাতনের বেলায়ও এটা হামেশা ব্যবহার করে, রাতভর…।

তো, এই কর্মকান্ড চলে ঝাড়া ১৫ ঘন্টা! অবশ্য পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার মিডিয়ার কাছে বলেন, "বাবুল আকতার মামলার বাদী। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে তাঁকে আনা হয়েছে…।"
ওহো, এটা তাহলে আলোচনা ছিল! বেশ-বেশ, আলোচনার জন্য গভীর রাত উপযোগীই বটে। তবে এটাকে কেবল আলোচনা বলাটা খানিকটা অমর্যাদার হয়ে উঠে, ‘ম্যারাথন আলোচনা’ বলাটাই সমীচীন- ১৫ মাইলের স্থলে হবে ১৫ ঘন্টা।
ছবি ঋণ: ব্লগার ও এনটিভির সাংবাদিক সন্দীপন বসু
এরিমধ্যে কিছু 'অমায়িক চুতিয়া' টাইপের মিডিয়া বিভিন্ন গল্পগুজব ফেঁদে বসল। এই সমস্ত কৃমি টাইপ নিউজ পোর্টালগুলোর বাইরেও আছে ‘বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর’, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর মত মিডিয়াও। ভাল কথা, মালিকের খুনিপুত্রের সর্বশেষ আপডেট কি?
সেসব অদায়িত্বশীল ছাতাফাতা মিডিয়ার কথা থাকুক। দায়িত্বশীল দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো (২৭ জুন ২০১৬) লিখেছে, "বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ থেকে তারা এমন সব তথ্য পেয়েছেন, যা শুনে নিজেরাই বিস্মিত হয়েছেন। কিন্তু পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তির কারণে তাঁরা সেসব তথ্য প্রকাশ করতে পারছেন না।"

এটা পড়ে আমার মত বেকুব পাঠকও আঁতকে উঠে, কী সর্বনাশ, পুলিশ বাহিনীর লোক এর সঙ্গে জড়িত? ক-কে-ক্কে? মনের অজান্তেই যে অস্পষ্ট মুখটা ভেসে উঠে সেই মুখটা বাবুল আকতারের! না, তা কী করে হয়? এই মানুষটা নিজের স্ত্রীকে? আহা,প্রথম আলো যেহেতু বলছে তাতে সন্দেহের অবকাশ কোথায়। কিন্তু, একটা কিন্তু থেকেই যায়। এতোশত উপায় থাকতে বাবুল আকতার সন্তানের সামনে লোক লাগিয়ে কোপাকোপি করতে গেলেন কেন! স্ত্রীকে অপছন্দের কারণ সে নাহয় বুঝলুম কিন্তু নিজ সন্তানের সামনে? আর বাবুল আকতারের মত চৌকশ লোক সোর্সকে ব্যবহার করবে এই খুনে! আর এমনটা হলে নিয়ম হচ্ছে খুন করার পর সোর্সকেও খুন করে ফেলা। আরে নাহ, তা কী করে হয়?

কিন্তু প্রথম আলো (২৮ জুন ২০১৬) যে জানাচ্ছে, "…তিনি আর চাকরিতে ফিরছেন না বলে অসমর্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে। …একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন…। …নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, …ওই সময় তাঁকে দুটি শর্ত দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। বলা হয়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সব তথ্য-প্রমাণ তাঁদের হাতে রয়েছে। তাকে জেলে যেতে হবে অথবা বাহিনী থেকে সরে যেতে হবে। বাহিনী থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে বাবুল সম্মতি দেন বলে জানা গেছে।"

প্রথম আলো এই সমস্ত লেখা পড়ে এখন আর খুনির চেহারা অস্পষ্ট না, দিনের আলোর মত ঝকঝকে। বাবুল আকতার খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত। এই খুনাখুনি আপাতত থাকুক। আমার প্রশ্ন অন্যত্র। অসমর্থিত সূত্রের উল্লেখ করে তাহলে যা-কিছু বলা যায়? আচ্ছা, ধরা যাক, আমি লিখলাম, একটি অসমর্থিত সূত্র থেকে জানা যায় আমাদের মতিউর রহমান ওরফে মতি ভাইয়া আপন মাকে মাসের-পর-মাস হাসপাতালে ফেলে রেখেছিলেন। দেখতে বিশেষ যাননি! এটা আমি এক আর্মি অফিসারের মুখে শুনেছিলাম। কিন্তু এটা লিখলে মতি ভাইয়া আহত হবেন না নিশ্চয়ই।

আমাদের দেশে সত্য-মিথ্যা, মিথ্যা-সত্য, মিথ্যামিথ্যা-সত্যসত্য; এইসবের ঘোরপ্যাঁচে আমার বোধশক্তি লোপ পেয়েছে সেই কবে তাই কে খুনি,কে খুনি না এই কুতর্কে আর যাই না। এই দেশে সবই সম্ভব। পূর্বের লেখার রেশ ধরে বলি, যে-ই এই খুনটা করেছে সে যদি বাবুল আকতারও হন এটা একটা ঠান্ডা মাথার খুন কোনও প্রকারেই এর দায় থেকে অব্যহতির সুযোগ নেই। তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে দাঁড়াতেই হবে। কিন্তু…।
কিন্তু বাবুল আকতার যদি খুনি না-হয়ে থাকেন তাহলে প্রথম আলো গংদেরকে ঠান্ডা মাথায় খুন করার অপরাধে বিচারের সম্মুখিন করা হোক। এ-ও একপ্রকার খুন, ঠান্ডা মাথার খুন। আর যে-ই খুনি হোক সে একটা গুয়েভাসা গা ঘিনঘিনে কৃমি। কৃমি থেকে মুক্তি চাই…।

সহায়ক সূত্র
১. আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম: http://www.ali-mahmed.com/2016/06/blog-post_13.html

No comments: