"...যখন আগের চারটি সরকার একের-পর-এক ক্ষমতায় এসেছিল অস্ত্রের বলে পূর্ববর্তি সরকারকে হটিয়ে। অধিকন্তু যে সমস্ত কর্মকর্তা খালেদ মোশারফের অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন এবং সরকারি সংবাদপত্রে যাদেরকে 'ভারতের এজেন্ট' বলে তিরস্কার করা হয়েছিল, তাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, ব্রিগেডিয়ার শাফায়াত জামিল। যিনি জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন।
সুতরাং বিষয়টা দাঁড়ালো এমন, যেসব কর্মকর্তা ৩ নভেম্বর জিয়াবিরোধী অভ্যুত্থানের পেছনে ছিলেন তারা ছিলেন মুক্ত আর যেসব ব্যক্তি ৭ নভেম্বর সাধারণ অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলেন, যে ঘটনায় জিয়া মুক্ত হয়েছিলেন, তাঁরা বিচারে মৃত্যুদন্ডের মুখোমুখি!
বিচার চলাকালে পুরো মাসে এ মামলাসংক্রান্ত অথবা বিচার নিয়ে রিপোর্ট করার চেষ্টা করার কারণে আমাকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এমন একটা খবরও এই দেশের পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়নি! অথচ প্রত্যেক সম্পাদক ভাল করেই জানতেন কারাগারের প্রাচীরের ভেতর কী হচ্ছে!
তাহের একদমই চাননি প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে [*] কিন্তু তাঁর আইনজীবীরা রাষ্ট্রপতি সায়েমের কাছে প্রাণদন্ড রদ করার জন্য আবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি সায়েম এই আবেদনে কর্ণপাত করলেন না। এ অভূতপূর্ব, তাহেরের দন্ডাদেশ দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার সিদ্ধান্ত দেন।
অথচ এই রাষ্ট্রপতি সায়েম যখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন তখন তিনি পূর্ণচন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযুক্তকে দেওয়া এক মৃত্যুদন্ডাদেশ রহিত করেন।
ওই মামলায় (পূর্ণচন্দ্র মন্ডল) বিচারপতি সায়েম তার জাজমেন্টে লেখেন:
"'...প্রাণদন্ডাদেশ অপরাধে অভিযুক্ত একজন বন্দির আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য শেষ মুহূর্তে একজন আইনজীবী নিয়োগ রিমেমবেরান্স ম্যানুয়ালের ১২ অনুচ্ছেদের ধারাই কেবল লঙ্ঘন করে না। ওই অনুচ্ছেদের বিস্তৃত ধারাগুলোর পেছনের উদ্দেশ্যও বাধাগ্রস্ত করে'।
অথচ তাহের তাঁর বিচারকাজ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়ার সুযোগই পাননি!
(২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া লরেনন্স লিফশুলজের বক্তব্য থেকে)
লরেনন্স লিফশুলজ হাইকোর্টে তাঁর হলফনামা দাফিল করে লিখেছিলেন:
"...ওই দিন কারাগারে একমাত্র নিরেপেক্ষ প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে আমি বিশ্বাস করি, এটা আমার দায়িত্ব সবাইকে জানানো, আমি কী দেখেছি এবং ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটেছে।
৩০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি এই ডাকটির জন্য অপেক্ষা করে থেকেছি। হাইকোর্টের সামনে দাঁড়ানোর সুয়োগকে আমি জীবনের অন্যতম সম্মানজনক ঘটনা হিসাবে মনে করি।
...তখন আমি জেনারেল জিয়ার সাক্ষাৎকার নেওয়ার চেষ্টা করি।...কিন্তু আমাকে সাক্ষাৎকার গ্রহণের অনুমতি দেননি জেনারেল জিয়া।...বরং আমাকে এই দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন।
...নির্মোহ ভাবে আমি বিশ্বাস করি, বিচার শুরুর আগেই এ রায় নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। ...বিচারের আগেই জিয়া তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
...তাহের ওই ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়ে তাঁর শেষ ভাষণে যা বলেছিলেন তা যদি পরের দিন খবরের কাগজে প্রকাশিত হতো, তাহলে জনগণের মধ্যে তাহেরের পক্ষে ভয়ানক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতো। (কিন্তু কোথাও এটা প্রকাশিত হয়নি!)
আমার দৃষ্টিতে, এখনই সময় রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগের, প্রকাশ্যে এ ঘোষণা দেওয়া যে আবু তাহেরের বিচার ভুল ছিল এবং তার মৃত্যুদন্ডও ভুল ছিল।"
লরেন্স লিফশুলজ যে হলফনামা হাইকোর্টে দাখিল করেছিলেন, সেখানে তিনি লিখেছিলেন:
"...তাঁর (মঞ্জুর) আশঙ্কা ছিল, তাহেরকে বিচারের মুখোমুখি করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন জিয়া। মঞ্জুর এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া অন্য সামরিক কর্মকর্তারা জিয়াকে এ ধরনের পদক্ষেপ (তাহেরের বিচার) থেকে বিরত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু জুনের শুরুতে মঞ্জুর অনিশ্চিত হয়ে পড়েন, তিনি এই বিচার-প্রক্রিয়া থামাতে পারবেন কি না। কারণ সেনাবাহিনীতে তখন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির বিপুল প্রভাব।...
মঞ্জুর আমাকে (লিফশুলজ) জানাতে চেয়েছেন, তিনি ওই বিচার ঠেকাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু স্পষ্টতই সেটি করার কোনো ক্ষমতা তাঁর ছিল না। যদিও তিনি ওই সময় নেতৃত্বের দিক থেকে তৃতীয় শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ছিলেন। তাহেরের বিচার নিয়ে তাঁর অবস্থান তাঁকে সামরিক বাহিনীতে চিহ্নিত করে ফেলেছিল ওই সব ব্যক্তির কাছে, যারা তাহেরের মৃত্যু চেয়েছিলেন।...।
হায় লিফশুলজ, আপনি ৩০ বছর ধরে আপনার এই স্বপ্নকে লালন করেছেন। অথচ আমরা কী বিস্মৃতপরায়ণ জাতি, ৩০ দিনেই সব ভুলে যাই!
তাহেরের বেলায় প্রত্যেকটা জায়গায়ই আইন ভঙ্গ করা হয়েছিল। মেজর জিয়াউদ্দিন, যিনি সেসময় বিচারে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন:
"...যেদিন তাহেরকে ফাঁসি দেয়া হয় সেদিন রাতের বেলায় বিডিআর অস্ত্র নিয়ে জেলখানায় ঢুকে পড়ল। এটা আন্তর্জাতিক জেল আইনের বিরোধী! জেলখানার ভেতর কোনো সশস্ত্র পাহারা ঢুকতে পারবে না। কেবল ঢুকলই না, প্রত্যেকটা সেলের সামনে একজন করে অটোমেটিক রাইফেলধারী সিপাহি দাঁড়িয়ে গেল। পুরো জেলখানা তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিল...।"
তখন জেলখানায় আটক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন:
"...জেনারেল মীর শওকত একদিন কারাগারের ভেতরে এসে পরীক্ষা করে গেলেন ফাঁসির দড়ি, ফাঁসির মঞ্চ ঠিকঠাক আছে নাকি! এটা বলার অপেক্ষা রাখে না এটি কোনো ভাবেই মীর শওকতের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু তারপরও সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন যারা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা তখন মরিয়া হয়ে গিয়েছিলেন কত দ্রুত তাহেরকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া যায়।..."
আমার মতে, জেনারেল মীর শওকতের এই আচরণ অস্বাভাবিক! এটা কোনো প্রকারেই একজন যোদ্ধা, একজন মুক্তিযোদ্ধা দূরের কথা; একজন সাধারণ মানুষের সুস্থ আচরণ হতে পারে না! এখানে এসে এই মানুষটাকে আমার পোকা-পোকা মনে হয়...।
আর আমার কাছে তো এমনটা মনে হচ্ছে, তখন জেলখানা বলে বা জেল-কোড বলে কোনো জিনিস বাংলাদেশে ছিল না! যা খুশি, যার যখন খুশি এখানে আসছেন-যাচ্ছেন। যেনো এটা একটা খেলার জায়গা বা এদের বাপের তালুক!
আমার স্পষ্ট অভিমত, রাষ্ট্রপতি সায়েম, ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারক কর্নেল ইউসুফ হায়দার (যিনি একজন রাজাকারও ছিলেন), জেনারেল মীর শওকত বা অন্য যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের প্রত্যেককে খুনের অভিযোগে খুনি অভিযুক্ত করাটাই ন্যায়, জাস্টিস...।
*আইনজীবীরা বলেছিলেন, তাহেরের আপিল করার সুযোগ নেই । একটিমাত্র পথ খোলা আছে সেটা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি জাস্টিস সায়েমের কাছে মার্সিপিটিশন প্রাণভিক্ষার আবেদন করা। তাহের সঙ্গে সঙ্গে তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, 'জিয়াউর রহমানকে আমি ক্ষমতায় বসিয়েছি। একজন মীরজাফর ছিল ব্রিটিশ আমলে আর এই হচ্ছে দ্বিতীয় মীরজাফর, জিয়াউর রহমান! তার কাছে আমি প্রাণভিক্ষা চাইব? কিংবা তার ক্রীড়ানক প্রেসিডেন্টের কাছে, প্রশ্নই আসে না'। তাহের প্রাণভিক্ষা চাইলেন না।
**"...সামরিক আদালতে বিচারের ঘটনা এবং এর প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখার জন্য আদালত সরকারকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছে।...[১]"
এই নির্দেশের গতি কী!
*** Faruk Abdullah চমৎকার এক পর্যবেক্ষণ করেছেন:
"...আর একটা জিনিস স্মরণ রাখাটা খুব জরুরি, মিলেটারি একাডেমিগুলোতে মূলত যে শিক্ষা দেয়া হতো, অর্থাৎ পাকিস্তান মিলেটারি একাডেমিতে। তাঁদের অনেকের মধ্যো 'উগ্র ভারত বিদ্বেষ' শিক্ষাটা, যেটা পরবর্তীকালে শত্রুর শত্রু, পাকিস্তানমুখি করেছিল...।
সহায়ক সূত্র:
১. হাইকোর্টের রায়: http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2011/03/110322_mk_taher_verdict.shtml
সুতরাং বিষয়টা দাঁড়ালো এমন, যেসব কর্মকর্তা ৩ নভেম্বর জিয়াবিরোধী অভ্যুত্থানের পেছনে ছিলেন তারা ছিলেন মুক্ত আর যেসব ব্যক্তি ৭ নভেম্বর সাধারণ অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলেন, যে ঘটনায় জিয়া মুক্ত হয়েছিলেন, তাঁরা বিচারে মৃত্যুদন্ডের মুখোমুখি!
বিচার চলাকালে পুরো মাসে এ মামলাসংক্রান্ত অথবা বিচার নিয়ে রিপোর্ট করার চেষ্টা করার কারণে আমাকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এমন একটা খবরও এই দেশের পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়নি! অথচ প্রত্যেক সম্পাদক ভাল করেই জানতেন কারাগারের প্রাচীরের ভেতর কী হচ্ছে!
তাহের একদমই চাননি প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে [*] কিন্তু তাঁর আইনজীবীরা রাষ্ট্রপতি সায়েমের কাছে প্রাণদন্ড রদ করার জন্য আবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি সায়েম এই আবেদনে কর্ণপাত করলেন না। এ অভূতপূর্ব, তাহেরের দন্ডাদেশ দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার সিদ্ধান্ত দেন।
অথচ এই রাষ্ট্রপতি সায়েম যখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন তখন তিনি পূর্ণচন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযুক্তকে দেওয়া এক মৃত্যুদন্ডাদেশ রহিত করেন।
ওই মামলায় (পূর্ণচন্দ্র মন্ডল) বিচারপতি সায়েম তার জাজমেন্টে লেখেন:
"'...প্রাণদন্ডাদেশ অপরাধে অভিযুক্ত একজন বন্দির আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য শেষ মুহূর্তে একজন আইনজীবী নিয়োগ রিমেমবেরান্স ম্যানুয়ালের ১২ অনুচ্ছেদের ধারাই কেবল লঙ্ঘন করে না। ওই অনুচ্ছেদের বিস্তৃত ধারাগুলোর পেছনের উদ্দেশ্যও বাধাগ্রস্ত করে'।
অথচ তাহের তাঁর বিচারকাজ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়ার সুযোগই পাননি!
(২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া লরেনন্স লিফশুলজের বক্তব্য থেকে)
লরেনন্স লিফশুলজ হাইকোর্টে তাঁর হলফনামা দাফিল করে লিখেছিলেন:
"...ওই দিন কারাগারে একমাত্র নিরেপেক্ষ প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে আমি বিশ্বাস করি, এটা আমার দায়িত্ব সবাইকে জানানো, আমি কী দেখেছি এবং ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটেছে।
৩০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি এই ডাকটির জন্য অপেক্ষা করে থেকেছি। হাইকোর্টের সামনে দাঁড়ানোর সুয়োগকে আমি জীবনের অন্যতম সম্মানজনক ঘটনা হিসাবে মনে করি।
...তখন আমি জেনারেল জিয়ার সাক্ষাৎকার নেওয়ার চেষ্টা করি।...কিন্তু আমাকে সাক্ষাৎকার গ্রহণের অনুমতি দেননি জেনারেল জিয়া।...বরং আমাকে এই দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন।
...নির্মোহ ভাবে আমি বিশ্বাস করি, বিচার শুরুর আগেই এ রায় নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। ...বিচারের আগেই জিয়া তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
...তাহের ওই ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়ে তাঁর শেষ ভাষণে যা বলেছিলেন তা যদি পরের দিন খবরের কাগজে প্রকাশিত হতো, তাহলে জনগণের মধ্যে তাহেরের পক্ষে ভয়ানক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতো। (কিন্তু কোথাও এটা প্রকাশিত হয়নি!)
আমার দৃষ্টিতে, এখনই সময় রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগের, প্রকাশ্যে এ ঘোষণা দেওয়া যে আবু তাহেরের বিচার ভুল ছিল এবং তার মৃত্যুদন্ডও ভুল ছিল।"
লরেন্স লিফশুলজ যে হলফনামা হাইকোর্টে দাখিল করেছিলেন, সেখানে তিনি লিখেছিলেন:
"...তাঁর (মঞ্জুর) আশঙ্কা ছিল, তাহেরকে বিচারের মুখোমুখি করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন জিয়া। মঞ্জুর এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া অন্য সামরিক কর্মকর্তারা জিয়াকে এ ধরনের পদক্ষেপ (তাহেরের বিচার) থেকে বিরত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু জুনের শুরুতে মঞ্জুর অনিশ্চিত হয়ে পড়েন, তিনি এই বিচার-প্রক্রিয়া থামাতে পারবেন কি না। কারণ সেনাবাহিনীতে তখন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির বিপুল প্রভাব।...
মঞ্জুর আমাকে (লিফশুলজ) জানাতে চেয়েছেন, তিনি ওই বিচার ঠেকাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু স্পষ্টতই সেটি করার কোনো ক্ষমতা তাঁর ছিল না। যদিও তিনি ওই সময় নেতৃত্বের দিক থেকে তৃতীয় শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ছিলেন। তাহেরের বিচার নিয়ে তাঁর অবস্থান তাঁকে সামরিক বাহিনীতে চিহ্নিত করে ফেলেছিল ওই সব ব্যক্তির কাছে, যারা তাহেরের মৃত্যু চেয়েছিলেন।...।
হায় লিফশুলজ, আপনি ৩০ বছর ধরে আপনার এই স্বপ্নকে লালন করেছেন। অথচ আমরা কী বিস্মৃতপরায়ণ জাতি, ৩০ দিনেই সব ভুলে যাই!
তাহেরের বেলায় প্রত্যেকটা জায়গায়ই আইন ভঙ্গ করা হয়েছিল। মেজর জিয়াউদ্দিন, যিনি সেসময় বিচারে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন:
"...যেদিন তাহেরকে ফাঁসি দেয়া হয় সেদিন রাতের বেলায় বিডিআর অস্ত্র নিয়ে জেলখানায় ঢুকে পড়ল। এটা আন্তর্জাতিক জেল আইনের বিরোধী! জেলখানার ভেতর কোনো সশস্ত্র পাহারা ঢুকতে পারবে না। কেবল ঢুকলই না, প্রত্যেকটা সেলের সামনে একজন করে অটোমেটিক রাইফেলধারী সিপাহি দাঁড়িয়ে গেল। পুরো জেলখানা তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিল...।"
তখন জেলখানায় আটক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন:
"...জেনারেল মীর শওকত একদিন কারাগারের ভেতরে এসে পরীক্ষা করে গেলেন ফাঁসির দড়ি, ফাঁসির মঞ্চ ঠিকঠাক আছে নাকি! এটা বলার অপেক্ষা রাখে না এটি কোনো ভাবেই মীর শওকতের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু তারপরও সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন যারা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা তখন মরিয়া হয়ে গিয়েছিলেন কত দ্রুত তাহেরকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া যায়।..."
আমার মতে, জেনারেল মীর শওকতের এই আচরণ অস্বাভাবিক! এটা কোনো প্রকারেই একজন যোদ্ধা, একজন মুক্তিযোদ্ধা দূরের কথা; একজন সাধারণ মানুষের সুস্থ আচরণ হতে পারে না! এখানে এসে এই মানুষটাকে আমার পোকা-পোকা মনে হয়...।
আর আমার কাছে তো এমনটা মনে হচ্ছে, তখন জেলখানা বলে বা জেল-কোড বলে কোনো জিনিস বাংলাদেশে ছিল না! যা খুশি, যার যখন খুশি এখানে আসছেন-যাচ্ছেন। যেনো এটা একটা খেলার জায়গা বা এদের বাপের তালুক!
আমার স্পষ্ট অভিমত, রাষ্ট্রপতি সায়েম, ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারক কর্নেল ইউসুফ হায়দার (যিনি একজন রাজাকারও ছিলেন), জেনারেল মীর শওকত বা অন্য যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের প্রত্যেককে খুনের অভিযোগে খুনি অভিযুক্ত করাটাই ন্যায়, জাস্টিস...।
*আইনজীবীরা বলেছিলেন, তাহেরের আপিল করার সুযোগ নেই । একটিমাত্র পথ খোলা আছে সেটা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি জাস্টিস সায়েমের কাছে মার্সিপিটিশন প্রাণভিক্ষার আবেদন করা। তাহের সঙ্গে সঙ্গে তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, 'জিয়াউর রহমানকে আমি ক্ষমতায় বসিয়েছি। একজন মীরজাফর ছিল ব্রিটিশ আমলে আর এই হচ্ছে দ্বিতীয় মীরজাফর, জিয়াউর রহমান! তার কাছে আমি প্রাণভিক্ষা চাইব? কিংবা তার ক্রীড়ানক প্রেসিডেন্টের কাছে, প্রশ্নই আসে না'। তাহের প্রাণভিক্ষা চাইলেন না।
**"...সামরিক আদালতে বিচারের ঘটনা এবং এর প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখার জন্য আদালত সরকারকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছে।...[১]"
এই নির্দেশের গতি কী!
*** Faruk Abdullah চমৎকার এক পর্যবেক্ষণ করেছেন:
"...আর একটা জিনিস স্মরণ রাখাটা খুব জরুরি, মিলেটারি একাডেমিগুলোতে মূলত যে শিক্ষা দেয়া হতো, অর্থাৎ পাকিস্তান মিলেটারি একাডেমিতে। তাঁদের অনেকের মধ্যো 'উগ্র ভারত বিদ্বেষ' শিক্ষাটা, যেটা পরবর্তীকালে শত্রুর শত্রু, পাকিস্তানমুখি করেছিল...।
সহায়ক সূত্র:
১. হাইকোর্টের রায়: http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2011/03/110322_mk_taher_verdict.shtml
No comments:
Post a Comment