Search

Thursday, April 25, 2013

এঁরা কেবল একেকটি সংখ্যা...।

সাভারে ভবন ধসে এখন পর্যন্ত ১০০ ছাড়াচ্ছে। ১০-২০-৩০-৪০-৫০-৬০-৭০-৮০-৯০-১০০-১১০... এভাবে ক্রমশ বাড়ে একেকটি সংখ্যা! সরকারী, বিরোধীদল, মিডিয়া, আমি- বিশ্বাস করেন, আমাদের সবার কাছেই কেবল এটা একটা সংখ্যাই মাত্র!

কিন্তু যে মেয়েটির হাত  থেকে এখনও মেহেদির দাগ মুছে যায়নি তার স্বজন কাঁদবে গড়াগড়ি দিয়ে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেটির মা কাঁদবেন স্বার্থপরের মত কারণ এখন তাঁকে যে মানুষের কাছে হাত-পাতা ব্যতীত তাঁর কোনো বিকল্পই থাকবে না।
আহ, আমরা কেন যে এটা বিস্মৃত হই, আমরা টবের গাছ না, নারকেল গাছ- আমাদের শেকড় ছড়িয়ে থাকে বহুদূর! এঁরা কেবল একটা সংখ্যাই না, এই সংখ্যাটার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনেকগুলো মানুষ।

যারা মরে গেল তাঁরা তো বেঁচে গেল। কিন্তু যারা বিকলাঙ্গ হয়ে বেঁচে থাকবেন (বলা হচ্ছে, সংখ্যাটা হাজারের উপর) এদের গতি কী! প্লিজ, আমাকে এটা বলবেন না এদের চিকিৎসার দায়িত্ব দেশ নেবে। কয়েকটা দিন, ব্যস...এরপর এদের খোঁজ রাখার সময় কোথায় আমাদের! আবারও অন্য এক সংখ্যার মিছিল...।

তাজরিন গার্মেন্টসে কতজনের মৃত্যু হয়েছিল এখন আমার মনে নেই! ইচ্ছা করলে ওই ঘটনা নিয়ে আমার পূর্বের লেখায় চোখ বুলিয়ে নিশ্চিত হতে পারি বা গুগলে সার্চ দিয়ে...। কী লাভ! কেউ না-জানুক কিন্তু আমি তো জানি, আমি নিজেকেই ফাঁকি দিচ্ছি। ওই যে বললাম, সবই সংখ্যা।

বা তাজরিনের আগুনে আহতরা এখন কোন অবস্থায়, কেমন আছেন আমরা কী জানি? জানি না! আচ্ছা, এই দেশে কত ঘটনাই তো ঘটে, দুই মাথাওয়ালা বাছুর, পাঁচ পাওয়ালা ছাগলের জন্ম হয় তেমনি একটা চমৎকৃত ঘটনা তো ঘটতেই পারত, যে তাজরিনের মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল? আমরা কী জানি এই মানুষটা এখন কোথায়? জানি না কারণ এটা আমাদের জানার প্রয়োজন নাই। 

ছবি: সংগ্রহ (কে প্রথম আপলোড করেছেন কোনো সহৃদয় জানালে নামটা এখানে যোগ করে দেব।
এই ভবন 'রানা প্লাজার' মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানা নাকি আটকা পড়েছিলেন। পরে সাংসদ মুরাদ জংয়ের সহায়তায় উদ্ধার হয়ে পালিয়ে যান। আপাতত প্রাণে বেঁচে গেছেন। ভাল...!

প্রকৃতির শোধ বলে একটা কথা আছে। প্রকৃতি হয়তো-বা আরও বড় কোনো খেলার জন্য তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
আবার কেউ বলছেন, চ্যানেল ৭১-এ নাকি এর সাক্ষাৎকার দেখিয়েছে! একে গ্রেফতার করা হবে না, এ নিশ্চিত! সরকারী দল করলে আর চিন্তার কোনো কারণ নাই। গ্রেফতার হবে না। বাই এনি চান্স, গ্রেফতার হলেও পিজিতে ভর্তি থাকবে। খোদা-না-খাস্তা, শাস্তি হয়ে গেলেও চিন্তার কিছু নাই। আমাদের দয়াবান প্রেসিডেন্ট বলে উঠবেন, 'ম্যায় হু না'...। আজ আবার আমাদের প্রেসিডেন্ট সাহেবের শপথ হচ্ছে। শপথ বলে কথা, যায় যদি যাক প্রাণ...।

একটা সত্য ঘটনা বলি, গান-পাউডার দিয়ে গাড়িতে আগুন দিয়ে যে নেতা মানুষ পুড়িয়ে দিলেন তার কাছেও ওই মানুষগুলো ছিল কেবলই সংখ্যা, ১-২-৩-৪-৫-৬-৭-৮-৯। ওই মানুষগুলোর স্বজনদের আকাশ ফাটানো কান্না শোনার সময় কোথায় ওই নেতার? কিন্তু তার নিজের তরুণ সন্তানের যখন অপমৃত্যুতে মৃত্যু হলো তখন কান্নায় তার বুক ফেটে যাচ্ছিল কিন্তু তার কান্না আমাকে মোটেও স্পর্শ করেনি! কারণ এটাও আমার কাছে একটা সংখ্যা...।

বরাবারের মত এ অভিযোগও উঠেছে, লাশ গুম করে ফেলা হচ্ছে। আমি জানি না এর পেছনে কতটুকু সত্যতা আছে! সত্যতা না-থাকলেও রাষ্ট্রের উচিত এমন সন্দেহের বীজ আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে না-দেয়া...।
তবে আমরা বড়ো দূর্ভাগা। এ সত্য, এটা হচ্ছে আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটা নমুনা। পূর্বেও যে এমনটা হয়নি এমন না। কী অভাগা আমরা, কখনও-কখনও স্বজনের লাশ ধরে কেঁদে যে বুকটা হাল্কা করব সেই সুযোগও থাকে না...।

এদিকে চ্যানেল 'টোয়েন্টি ফোর' নামের ইলেকট্রনিক মিডিয়া এক্সক্লুসিভের নামে যা দেখাচ্ছে আমার মনে হচ্ছে, একপাল কুত্তা, একপাল নেকড়ের কর্মকান্ড দেখছি!
এদের প্রতিবেদক ফাঁকফোকরে 'বুম' (মাইক্রোফোন) ঢুকিয়ে দিচ্ছে। মৃতপ্রায় এক মহিলার কাছে জানতে চাইছে, ওঁর নাম। মহিলা বারবার বলছেন, 'আমাকে বাঁছান, বাবা, আমাকে বাছান', অরেকজন বলছেন, 'ও আল্লা আমার জীবন ভিক্ষা দাও'।

কে শোনে কার কথা...! এই কুত্তাগুলোর কারণেই উদ্ধারকার্য আরও ব্যহত হয়। এদের কাছে আবেগ বিক্রিই একমাত্র মিশন। আবেগ একটি বিক্রয়যোগ্য পণ্য!
...
আমাদের দায়িত্বশীল লোকজনেরা এই বিষয়ে যা বলছেন তা আমরা একটু শুনি:

বিবিসিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: "...স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর বিবিসিকে বলেছেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ইমারত নির্মাণের নিয়ম কানুন যথাযথ অনুসরণ করা হয়নি বলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।তবে একইসাথে মন্ত্রী বলেন, কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।" [১]

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন: সাভারে সব লোককে আগেই সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।
"...সাভারে ধসে পড়া নয় তলা ভবন থেকে আগেই সব লোককে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, হতাহতরা পরে জিনিসপত্র আনতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছে।...[২]"

আমাদের মন্ত্রী বাহাদুরদের কথাবার্তা শুনে এই মুহূর্তে যেটা আমার মনে হচ্ছে, 'হে পরম করুণাময়, এই গ্রহে এতো দেশ থাকলে এই দেশেই পাঠালে কেন...'!

*অনেক তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন, Md Abdul Halim (https://www.facebook.com/profile.php?id=100005440173740), তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।

সহায়ক সূত্র:
১. প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য: http://www.rtnn.net//newsdetail/detail/1/3/62736#.UXgLyK46Dbp
২. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, বিবিসি বাংলা, অডিও লিংক: http://www.bbc.co.uk/bengali/multimedia/2013/04/130424_saalamgir.shtml

No comments: