বিষয়টা লক্ষ করে ওদিন মনটা ভারী বিষণ্ন হয়েছিল! মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে প্রচুর লেখা নাই। ঠিক কোথায় কোথায় আছে এটা আমি নিজেও জানি না! বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ওয়েব-সাইটে লিখেছি। কখনও চলে আসার সময় সব পোস্ট মুছে দিয়ে এসেছি। কখনও-বা কেউ আমার সমস্ত পোস্ট মুছে দিয়েছেন। এই কান্ডটা একটা সো-কলড এলিট ওয়েব-সাইট করেছিল, বানরের হাতে ক্ষুর থাকলে যা হয় আর কী! হাঁটু পানিতে সাঁতরানো এই নির্বোধরা কখন বুঝবে, একজনকে পছন্দ না করাটা অন্যায় না কিন্তু তার সন্তানকে খুন করাটা অন্যায়! আমার কাছে আমার সমস্ত লেখালেখিই সন্তানসম।
বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখাগুলোর প্রতি আমার আলাদা মমতা আছে। কেবল বিষয়বস্তুর কারণেই না। আগেও বলেছি, অনেক বিনিদ্র রজনী কেটেছে এই লেখাগুলোর পেছনে। আমি যে ডেস্কটপে কাজ করতাম সেটা থাকত অফিসে। সব কাজ শেষ করে রাতে আমি অফিসে চলে যেতাম, কখন ভোর হয়ে যেত টেরটিও পেতাম না। দিনের-পর-দিন একই ঘটনা। বাচ্চার মা জনে জনে এটা বলে বেড়াতে লাগলেন আমার নাকি মাথায় গন্ডগোল দেখা দিয়েছে। সত্যি সত্যি তখন আমার পারিবারিক জীবনে অশান্তি নেমে এসেছিল।
সেই সময়টায় একটা ওয়েব সাইটে শুভ নামে চুটিয়ে লেখালেখি করি। একের-পর-এক মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পোস্ট। সময়টা বড়ো প্রতিকূল। তখন নামকরা সব রাজাকারের গাড়িতে পত পত করে উড়ে বাংলাদেশের পতাকা। আমার বাড়তি সুবিধা ছিল যেটা সেটা হচ্ছে, শুভ নিকটাকে তখন কেউ চিনত না। তখন খুব অল্প কিছু মানুষই আমার ফোন নাম্বার জানতেন। এই নাম্বার কারা কারা কাকে দিয়েছিলেন এই বিস্তারিত আলাপে যাই না। কিন্তু তখন রাত-বিরাতে ভয় উদ্রেক করার মত ফোন আসে। লাভ হবে না জেনেও নিরুপায় হয়ে আমি তখন থানায় জিডি করেছিলাম। সে আরেক কাহিনি!
যাই হোক, পরে আমি আমার নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে ফোন নাম্বারগুলোর হোতাকে খুঁজে বের করতে সমর্থ হয়েছিলাম। ঈশ্বর, মানুষ এমন বিশ্বাসঘাতক হয় কেমন করে!
এটা তখনকার কথা বলছি, সালটা ২০০৫। তখন বিষয়টা এতো সহজ ছিল না, ওয়েব সাইটে বাংলায় মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত তেমন বিশেষ তথ্য ছিল না। তার উপর মুক্তিযুদ্ধের বই-পত্রের দাম আগুন। এ এক বিচিত্র, কেন মুক্তিযুদ্ধের বইপত্রের মূল্য আয়ত্বের বাইরে রাখা হয় এটা সংশ্লিষ্ট লোকজনরা ভাল বলতে পারবেন। হয়তো এটাও একটা কারণ হতে পারে এই সব বই পয়সাওয়ালাদের স্টাডিতে সাজিয়ে রাখার জন্যে।
আমার মনে আছে, 'বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস'-এর সবগুলো পর্ব ফটোকপি করতে গিয়ে আমার নাভিশ্বাস অবস্থা হয়েছিল। ১৫০০০ পৃষ্ঠা ফটোকপি করা চাট্টিখানি কথা ছিল না! এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত, বিভিন্ন ছবি। বেচারা ফটোকপিয়ার মেশিন, বেচারা!
মুক্তিযুদ্ধের ছবির জন্য আলাদা একটা সাইট করেছিলাম [১]। নিয়মিত আপডেট করা হয় না। বড়ো অন্যায় হচ্ছে। দেখি, এখন থেকে নিয়মিত আপডেট করার চেষ্টা করব।
মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত লেখাগুলোর জন্য আলাদা একটা সাইট করে [২] এখান থেকে লেখাগুলো সেখানে নিয়ে যাচ্ছি। এটা আমার নিজের জন্যই প্রয়োজন, কাজের সময় এই বিশেষ লেখাগুলো খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। মাত্র শতেক লেখা পেয়েছি- আমি নিশ্চিত, প্রায় ১০০ লেখা না, এর সংখ্যা আরও অনেক হওয়ার কথা। সম্প্রতি একটা ওয়েব সাইট থেকে আমার ড্রাফট করা কিছু লেখা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, যেটা আমি 'নিধন' নামে শুরু করেছিলাম। খুঁজলে আরও কিছু লেখা এদিক-ওদিক পাওয়া যাওয়ার কথা।
ওই সাইটে লেখাগুলো পোস্ট করতে গিয়ে লক্ষ করেছি, কিছু বানান ভুল রয়ে গেছে, অসঙ্গতি আছে। আসলে যে সময়কার এই লেখাগুলো তখন ইউনিকোডে লেখার অনেক সমস্যা ছিল। ফন্ট ছিল অন্য রকম, 'ক্ষ' অক্ষর আসত না। এই সব কিছু কিছু ঠিক করেছি, তারপরও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে! লেবেল উল্টাপাল্টা আছে, সময় করে ঠিক করতে হবে।
কোন সহৃদয় মানুষ সাইটটা ভিজিট করলে কোন অসঙ্গতি চোখে পড়লে, জানালে আগাম কৃতজ্ঞতা। এখুনি আমি এই সাইট থেকে লেখাগুলো ডিলিট করছি না। আগে সংশোধন শেষ হোক তারপর।
সাইটটার নাম 'প্রসব বেদনা, ১৯৭১' দিয়েছি। হা হা করে হাসতে হাসতে অনেকে বলবেন, 'প্রসব বেদনা' নামটাই বা কেন? হাসাহাসি শেষ হলে একটু বলি, এর পেছনে আমার খানিক যুক্তি আছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামের শিশুটির জন্ম হতে গিয়ে এই দেশের মানুষদের যে অমানুষিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল তার তুলনা চলে কেবল একজন মার প্রসব বেদনা-গর্ভ যন্ত্রণার সঙ্গে। একজন মার প্রসব বেদনার সবটুকু আঁচ কি কারও পক্ষে সম্ভব? এমন কি মার পক্ষেও? একজন মা কি তখনকার সবটুকু কষ্ট উপলব্ধি করতে পারেন? আমার ধারণা, পারেন না কারণ তখন তাঁর বাহ্যেন্দ্রিয় জ্ঞান লোপ পায়।
৭১ সালটা তেমনি। এখনকার সময়ে আমরা খানিক অনুমান করতে পারি কিন্তু পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারব না, পারা সম্ভব না। যারা তখন এই সত্যগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন তাঁদের পক্ষেও না। সন্তান জন্মদানের পর মার যেমন কষ্টের স্মৃতিসব মনে রাখা সম্ভব হয় না, ঠিক তেমনি তাঁদের পক্ষেও।
সহায়ক লিংক:
১. ছবি ব্লগ, মুক্তিযুদ্ধ: http://71photogun.blogspot.com/
২. প্রসব বেদনা, ১৯৭১: http://1971-bangladesh.blogspot.com/
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Saturday, October 9, 2010
মুক্তিযুদ্ধ: আলাদা একটা সাইট
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment