পুরস্কার দেয়ার অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। অনুষ্ঠানের কারণে এই সময়টায় ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগে অলিখিত তালা। কাজ গুছিয়ে, কাজ জমিয়ে সবাই চলে এসেছেন এখানে। বাংলা বিভাগের প্রধান আবদুল্লাহ আল ফারূক, হক, সঞ্জীব বর্মন, সাগর সরওয়ারসহ প্রায় সবাই।
সুদূর বার্লিন থেকে চলে এসেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নান, কবি দাউদ হায়দার। এসেছেন সাংবাদিক নাজমুন নেসা, সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা। আরও হয়তো অনেকে আছেন, এখন আমার নাম মনে পড়ছে না বলে ক্ষমা প্রার্থনা করি।
যে মানুষটির অনেক গল্প আজকের এই আয়োজনের পেছনে জড়িয়ে আছে, সেই দেবারতি গুহ নাই। ভাইয়ের বিয়েতে কলকাতা গেছেন। মিস করছিলাম তাঁকে।
কি বলা হবে এটা আমরা আলোচনা করে ঠিক করি। সময় মাত্র এক মিনিট, এরিমধ্যে গুছিয়ে যতটা বলা যায়। লিখে দেন দাউদ ভাই, কম্পোজ করে দেন সঞ্জীব বর্মন। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
সুদূর বার্লিন থেকে চলে এসেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নান, কবি দাউদ হায়দার। এসেছেন সাংবাদিক নাজমুন নেসা, সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা। আরও হয়তো অনেকে আছেন, এখন আমার নাম মনে পড়ছে না বলে ক্ষমা প্রার্থনা করি।
যে মানুষটির অনেক গল্প আজকের এই আয়োজনের পেছনে জড়িয়ে আছে, সেই দেবারতি গুহ নাই। ভাইয়ের বিয়েতে কলকাতা গেছেন। মিস করছিলাম তাঁকে।
কি বলা হবে এটা আমরা আলোচনা করে ঠিক করি। সময় মাত্র এক মিনিট, এরিমধ্যে গুছিয়ে যতটা বলা যায়। লিখে দেন দাউদ ভাই, কম্পোজ করে দেন সঞ্জীব বর্মন। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
সবাই হাসিখুশি। সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে আজ এখানে ঈদ-পূজা। কেবল আমি সিটিয়ে আছি, ভয়ে কাঠ। আমার বলার পালা যখন আসবে তখন বলতে গিয়ে কোনো একটা ভজকট করে ফেলব না তো? ঝামেলা একটা হয়ে গেলে আমার আর কী হবে, কচু? কিন্তু আমার কারণে যে দু-দেশের মাথা নীচু হবে! তখন এই লজ্জা কোথায় রাখব, কার কাছে বলব? কোথায় গিয়ে ডুবে মরব?
খানিকটা সাহস পাই, যথারীতি আরাফাত আমাকে আগলে রাখেন। নিয়ম ভেঙে আমার পাশে এসে বসেন। তিনি ননস্টপ আমার কানের পাশে অনবরত বকে যান, 'শুভ, কুল। কুল। মাথা ঠান্ডা রাখেন। একদম ঠান্ডা। দেখবেন সব ঠিকঠাক হবে, কোনো সমস্যা হবে না'।
তিনি কাগজ ঘেঁটে বের করেন আমার বলার পালা আসবে অনেকের পর অতএব খানিকটা সময় পাওয়া যাবে। আরাফাত নরোম করে বলেন, 'আরে, দেখেন না অন্যরা কি করে...'।
এরপর একেক দেশের একেকজন আসেন। এঁদের সামান্য কোন খুঁত পেলেই আরাফাত চাপা উল্লাসে বলেন, 'দেখলেন-দেখলেন, বলেছিলাম না'।
পারলে আরাফাত নিজের হাতে কিল মেরে বসেন। এখানে বসেই আমি বলার মূল অংশের সঙ্গে জার্মানি ভাষায় 'ডাংকেসুন' যার বাংলা অর্থ ধন্যবাদ যোগ করি। উপস্থাপিকার বলা বাংলায় 'দোননোবাদ' এর মতই হয়তো-বা আমার বলা ভুলভাল 'ডাংকেসুন' শোনায় কিন্তু তাতে কী!
এরপর একেক দেশের একেকজন আসেন। এঁদের সামান্য কোন খুঁত পেলেই আরাফাত চাপা উল্লাসে বলেন, 'দেখলেন-দেখলেন, বলেছিলাম না'।
পারলে আরাফাত নিজের হাতে কিল মেরে বসেন। এখানে বসেই আমি বলার মূল অংশের সঙ্গে জার্মানি ভাষায় 'ডাংকেসুন' যার বাংলা অর্থ ধন্যবাদ যোগ করি। উপস্থাপিকার বলা বাংলায় 'দোননোবাদ' এর মতই হয়তো-বা আমার বলা ভুলভাল 'ডাংকেসুন' শোনায় কিন্তু তাতে কী!
আমার পালা যখন আসে। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে আমি হোঁচট খাই। দোষটা আমার না, মেঝের অদেখা অপ্রয়োজনীয় বাড়তি উচ্চতার কারণে এই সমস্যাটা হয়েছে। কিন্তু আমি এতোটাই বিব্রত হয়ে পড়ি যে আমার মাথায় সব কেমন জট পাকিয়ে যায়।
এখনো আমার কানে ভাসে আরাফাতের কথা, 'শুভ, এইটা কোন ব্যাপার না। বাংলা ভাষাও অনেকবার হোঁচট খেয়েছে, আবার উঠে দাঁড়িয়েছে'।
আমার ঘোরলাগা এক অনুভূতি। শত-শত বিভিন্ন ভাষার মানুষদের সামনে এখানে বারবার উঠে আসছিল বাংলাদেশ, বাংলা ভাষার কথা। তখন আমার কেবল মনে হচ্ছিল, আজ আমার মৃত্যু হলেও সেটা হবে এক গভীর প্রশান্তির ঘুম। আমার মত অতি সামান্য একজন মানুষ বাংলা ভাষার জন্যে একটা ন্যানো ফোঁটা যোগ করতে পারলাম এরচেয়ে বড়ো পাওনা জীবনে আর কী হতে পারে?
আমার চোখে জল, আমি সব কেমন ঝাপসা দেখছি। আপ্রাণ চেষ্টা করছি নিজেকে সামলাতে। আমি দুর্বলচিত্তের একজন মানুষ, কাজটা আমার জন্যে বড়ো কঠিন।
এটা কেবল আমার অর্জন ছিল না, ছিল সবার। কিন্তু আমি জানি না অনেকে কেন এটাকে কেবল আমার অর্জন হিসাবেই দেখেন! হা ঈশ্বর, কেন দেখেন? প্রয়োজনে মধ্য-রাস্তায় আমাকে চাবুক মারেন কিন্তু ভাষাটাকে সগর্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেন। এটা একটা টিম-ওয়র্ক, এখানে অনেক মানুষের মেধা-শ্রম-আবেগ-চেষ্টা-ভালাবাসা-শুভাশিস-রাতজাগা ভোর-অবহেলা-অবজ্ঞা-অপমান-অদম্য রাগ-চোখের জল মিশে আছে।
এখানে আমি কেউ না-আমি কেউ না...কেউ না...।
এটা কেবল আমার অর্জন ছিল না, ছিল সবার। কিন্তু আমি জানি না অনেকে কেন এটাকে কেবল আমার অর্জন হিসাবেই দেখেন! হা ঈশ্বর, কেন দেখেন? প্রয়োজনে মধ্য-রাস্তায় আমাকে চাবুক মারেন কিন্তু ভাষাটাকে সগর্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেন। এটা একটা টিম-ওয়র্ক, এখানে অনেক মানুষের মেধা-শ্রম-আবেগ-চেষ্টা-ভালাবাসা-শুভাশিস-রাতজাগা ভোর-অবহেলা-অবজ্ঞা-অপমান-অদম্য রাগ-চোখের জল মিশে আছে।
এখানে আমি কেউ না-আমি কেউ না...কেউ না...।
(সবার মাঝখানে জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নান, সস্ত্রীক। কেবল একজন রাষ্ট্রদূত হিসাবে না, চমৎকার একজন মানুষ হিসাবে [১] তাঁর প্রতি আছে আমার মুগ্ধতা)
*বৈদেশ পর্ব, দশ: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_8079.html
***পুরস্কার গ্রহন নিয়ে ডয়চে ভেলের রেডিও অনুষ্ঠান: http://www.dw-world.de/popups/popup_single_mediaplayer/0,,5721397_type_audio_struct_11977_contentId_5721306,00.html
সহায়ক লিংক:
১. মাসুদ মান্নান: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_01.html
সহায়ক লিংক:
১. মাসুদ মান্নান: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_01.html
2 comments:
শুভ, অনেক দেরী হলো৷ তবুও বলি৷ আপনার লেখা পড়লাম৷ খুব ভালো লেগেছে৷ বাংলা ভাষার ব্লগকে আপনি আরো উন্নত করুন, সবার মাঝে নিয়ে যান৷
সত্যি, আপনি যেমন জার্মানিতে এসে আমাকে ‘মিস’ করেছিলেন, আমিও কিন্তু ভাই’এর বিয়ের সবকিছু গোছাতে গোছাতে আপনাকে, পুরস্কার দেওয়ার সেই অনুষ্ঠানকে, আমার সহকর্মীদের ভীষণ ‘মিস’ করেছি৷
আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আমাদের দেখা হবে৷ গল্প হবে৷
ধন্যবাদান্তে,
দেবারতি
দেবারতি,
আপনি ফিরে এসেছেন তাহলে, গুড।
এতো অল্প সময়, কেমন করে যে ঝড়ের গতিতে কেটে গেল বুঝতেই পারিনি!
আমি জানি, আমি হয়তো আমার কাজটা ভাল করে শেষ করতে পারিনি কিন্তু এটা বিশ্বাস করি, আমার পর যিনি আসবেন তিনি আমার অসমাপ্ত কাজটা দুর্দান্ত ভঙ্গিতে শেষ করবেন। সেই মানুষটির অপেক্ষায়...।
Post a Comment