প্রথম আলোর রিপোর্টটা অতি সাধারণ: "বাস ডাকাতদের কবলে রিকশাচালকের পরিবার...শনিবার রাত ১০টার দিকে... পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম গাড়িতে করে শাহবাগ মোড় হয়ে মৎস ভবনের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখতে পান যাত্রীবাহী একটি বাস সিগন্যালে না দাঁড়িয়ে সন্দেহজনকভাবে...তিনি বাসটির পিছু নেন...প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ধাওয়া করে অবশেষে আসাদগেটে ...বাসটি আটকান।"
এই খবরটাই কালের কন্ঠ লিখছে বড় বড় হেডলাইনে: দেহরক্ষী এবং ড্রাইভারকে নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ধরলেন পাঁচ ডাকাত।
এখন আমি পাঠক হিসাবে কোন পত্রিকাকে বিশ্বাস করব? খবর ঠিক আছে কিন্তু বক্তব্যে অনেক ফারাক! প্রথম আলোর মতে, এটা অতি সাধারণ একটা ঘটনা। পুলিশ ছিনতাইকারীকে পাকড়াও করেছে, রুটিন ওয়র্ক। এ তো হামেশাই হচ্ছে।
কিন্তু কালের কন্ঠে আমরা এক অভাবনীয় ঘটনা দেখতে পাই। একজন পুলিশ অফিসার অসাধারণ এক কান্ড করে ফেলেছেন। জানি জানি অনেকে ঠোঁট উল্টে বলবেন, পুলিশের কাজই তো এইটা।
আহা, চটছেন কেন! আমাদের দেশের পুলিশকে অপরাধী ধরে হাতে তুলে দিলেও যেখানে এঁরা গা করেন না, হাতের ফাঁক গলে টুপ করে পড়ে যায়। সেখানে পদস্থ একজন পুলিশ অফিসার তাঁর দায়িত্বের বাইরে ঝুঁকি নিয়ে প্রায় অরক্ষিত অবস্থায় মাইলের পর মাইল চেজ করে এদের ধরেছেন। সেখানে প্রথম আলোর এমন নিউজ ট্রিটমেন্ট দেয়ার মানে কী! আমাদের দেশে এমনিতেই বলার মত তেমন গল্প নাই, অহংকার করার মত বীর নাই সেখানে নায়ককে নায়ক বলতে সমস্যা কোথায়? পুলিশ বলে?
পৃথিবীর অনেক দেশেই মানুষ কিছু হলেই পুলিশের কাছে ছুটে যায়, পরম নির্ভাবনায়; আমাদের দেশে উল্টোটা। পুলিশের কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখা। কারণ অনেক।
একটা উদাহরণ দেই। ব্রাক্ষ্ণণবাড়ীয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ভেতরে চমৎকার একটা ভাস্কর্য আছে। একজন ট্রাফিক পুলিশ দুইজন স্কুলগামী ছেলে-মেয়েকে রাস্তা পার করাচ্ছে, পরম মমতায়। দেখলেই মনটা অন্য রকম হয়। এটা উম্মুক্ত স্থানে না-রেখে বেষ্টনির ভেতরে কেন এটা আমার বোধের বাইরে! আমি চেষ্টা করেছিলাম এটার ছবি উঠাবার জন্য। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ রে রে করে তেড়ে এলেন। কিছুতেই তিনি আমাকে এই ভয়াবহ কাজটা করতে দেবেন না। আমি যে এটার ছবি উঠিয়ে কোন সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত হবো না এটা বোঝাবার পর তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন সহকারী পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করার জন্য। আমি আগ্রহ বোধ করলাম না, লম্বা দিলাম। কারণ আমি জানি ওখানে যাওয়ার পর কি হবে? চোর-চোট্টার মত স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে বিস্তর প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রথমেই জানতে চাওয়া হবে, কেন আমি ছবি উঠাতে চাচ্ছি, আমি কি কোন পত্রিকার সাংবাদিক? না, তাহলে?
এমনিতেই আমাদের দেশের পুলিশদের আমরা ভিলেন হিসাবে দেখে আসছি। আমরা এদের সম্বন্ধে কী তাচ্ছিল্য পোষণ করি পুলিশেরা এর সবটা যদি জানতেন! আমার নিজের কানে শোনা, এক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা ঘটককে বলছেন, "তুমি পুলিশ ছেলের সম্বন্ধ আনলা কি মনে কইরা, মেথরের আনলেও একটা কথা আছিল"! রাগের চোটে অতিশয়োক্তি হয়ে গেছে এটা সত্য কিন্তু মানুষটার চোখে ঘৃণা উপচে পড়ছিল।
পুলিশকে নিয়ে ভয়ংকর উক্তিটা আমি পড়ি সাদত হাসান মান্টোর লেখায়, "একশজন ... দালালের মৃত্যু হলে একজন পুলিশের জন্ম হয়"। মান্টো এমনিতেও ভয়ংকরসব গল্প লিখতেন। তাঁর 'ঠান্ডা গোশত' পড়ে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। ৭৭ সালে যেটার অনুবাদ করেছিলেন মোস্তফা হারুন।
যাক গে, অন্য দেশের পুলিশে আমার কাজ কী, আমাদের দেশের পুলিশদের নিয়েই থাকি না কেন। আমাদের দেশে কিছু বিচিত্র বিষয় আছে, যাদের কাপড় থাকা প্রয়োজন শুভ্র, আমরা নিজেরাই তাঁদের ধপধপে কাপড়ে কালি ছিটিয়ে বেদম চেঁচাতে থাকি, দাগ-দাগ! একজন ইমামের বেতন দেড়-দুই হাজার টাকা। এই ইমামকে ১০০ টাকা ধরিয়ে দিলে এমন কাঁদা কাদবে আমার বাপও কবর ছেড়ে উঠে আসবেন। উনি ভুলভাল ফতোয়া না-দিলে কে দেবেন? এই দেশে দেড়-দুই হাজার টাকায় কোন মেথর কাজ করতে রাজি হলে আমি সেই মেথরের পদ-চুম্বন করব। ব্লগ-ভুবনের তার ধরে এই প্রতিজ্ঞাটা আজ করলুম।
ওসি সাহেব একটা উদাহরণ। অনেক ওসি সাহেবকে উপরে নিদেনপক্ষে দু-লাখ টাকা নজরানার দিতে হয়। এই উপরটা কোথায় এটা আবার ফট করে আমাকে জিজ্ঞেস করে বসবেন না যেন, তাহলে আমি নিজেই অন্য উপরে চলে যাব!
থানার ওসিকে ঠকায় হাজার দশেক, আনুমানিক ১০ হাজার টাকা বেতন কম দিয়ে। তো, ওসি সাহেব সরকারকে ঠকান আনুমানিক ৩০ লাখ। উপরে দুই, নিজের দুই, সাঙ্গোপাঙ্গ এক এবং এই অবৈধ পাঁচ লাখ টাকা আয় করতে গিয়ে ন্যূনকল্পে পঁচিশ লক্ষ টাকার অন্যায্য, অন্যায় সুবিধা প্রদান। প্রকারান্তরে যা সরকারেরই ক্ষতি। এই মোটা হিসাবটা আমাদের ডিসিশন-মেকাররা যে কেন বোঝেন না!
একটা মামলার তদ্বিরে আমাকে মাসে দু-বার কোর্ট ভবনে তশরীফ আনতে হয়। এখানে বিচিত্র মানুষ দেখি, গাছ দেখি। ততোধিক বিচিত্র মানুষদের সঙ্গে পরিচিত হই।
একবার পাশেই একজন পুলিশের কনস্টেবল বসে চা খাচ্ছিলেন। সচরাচর আমিও অন্যদের মত ট্রাকের মতই পুলিশের কাছ থেকে ১০০ হাত দূরত্ব বজায় রাখি। কিন্তু প্রকৃতি-পরিবেশের একটা ছাপ তো থেকেই যায়। পুলিশ নামের মানুষটার সঙ্গে কথা হয়। চাকুরির বয়স ২২ বছর। বেতন এখন পান কেটেকুটে ৭০০০ টাকা। ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা ডিউটি।
বলছিলেন বিমর্ষ হয়ে, 'বলেন, এইটা তো মানুষের শরীর, নাকি! ১৬-১৮ ঘন্টা ডিউটি কইরা শরীরে আর দেয় না, বুঝলেন। আপনে কন, মাথা ঠিক থাকে? এই যে আজকা ডিউটিতে আইছি, সারা দিনে না হইলেও ১০০ ট্যাকা খরচ। এর বাইরে এসআই সাব তো কয়া খালাশ, মোটর সাইকেলের তেল কিনতে হয়, টর্চলাইটের ব্যাটারি কিনি নিজের পয়সায়। ঘুষ না খাইলে বাড়িত ট্যাকা পাঠামু কোত্থিকা'?
শুনে যাই, সে অনেক কথা। সামান্য চার দামটা আমি দিয়ে দেয়ায় মানুষটা এতো অবাক হয়েছিল তার সেই চোখের দৃষ্টি এখনও ভুলিনি! এরা কি একজন মানুষের কাছ থেকে মানুষের আচরণ পাওয়া ভুলে গেছে? আমরা কি এদের লুটেরার পর্যায়ে নিয়ে গেছি?
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Monday, January 25, 2010
নায়ককে নায়ক বলতে সমস্যা কোথায়?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comment:
Osadaron apnar bislashon!!
Post a Comment