Search

Friday, January 6, 2012

আমাদের কি দায় পড়েছে, দাদা?

তিতাস নদীর মাঝে রাস্তা করা নিয়ে তুলকালাম কান্ড হচ্ছে। আমি মনে করি, এই জাগরণ প্রতিবাদের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। এখানে কাজ করেছে স্রেফ দেশের জন্য আবেগ।


কিন্তু আমার মনে হয় মূল বিষয় থেকে আমরা খানিকটা সরে যাচ্ছি! 'তিতাস একটি...এর নাম' [১] লেখায় আমি যে বিষয়টা সামনে নিয়ে এসেছিলাম, অধিকাংশ মানুষ (প্রায় সবাই) সেই বিষয়টা এড়িয়ে গেছেন। সেটা হচ্ছে, আগরতলায় বিদ্যুত কেন্দ্র বসাবার নাম করে যেসমস্ত ভারী যন্ত্রপাতি নেয়ার জন্য এই দক্ষযক্ষ শুরু হয়েছিল ওই বিদ্যুত প্রতিষ্ঠানের নাম পালাটানা। ওরা ৭২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করবে। বাংলাদেশ হয়ে পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালসামান এখান দিয়ে পরিবহণ হওয়ার কারণে বাংলাদেশ ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আশা করেছিল।
কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, ওখান থেকে বাংলাদেশ ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎও পাচ্ছে না!

কেন এই বিষয়টা উপেক্ষা করা চলে না কারণ ঘটনার সূত্রপাত কিন্তু এটা থেকেই। ট্রানজিটের নামে সরকার যে জটিলতা সৃষ্টি করেছে এর আদৌ প্রয়োজন ছিল না- ট্রানজিট, ট্রানজিটের জায়গায়ই থাকত। ট্রানজিট ভালো কি মন্দ সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু ট্রানজিটের নাম করে তিতাসে রাস্তা করে যে ধোয়াশার সৃষ্টি করা হয়েছে তা অহেতুক! এটা করার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। আমরা এমন বোকা হলাম কবে থেকে কে জানে, ট্রানজিটের নামে এই হাতি গিলে।
তো, গোল বাঁধাল বিদ্যুৎকেন্দ্র! ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রেরই বিশাল-বিশাল যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়ার জন্যই কিন্তু এই ১২০ চাকার ট্রেইলর নিয়ে যাওয়া। এবং এই ট্রেইলরগুলো চালাবার জন্যই তিতাস নদীতে মাটি ফেলে এই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। কারণ যে ব্রীজ-কালভার্টগুলো আছে তা এর ভার সইবার মত করে বানানো হয়নি।
আমি ওই পোস্টে যেটা বলেছিলাম প্রচলিত ট্রানজিটের জন্য কিন্তু রাস্তা ছিল, এখনও আছে। পরে কেবল চওড়া করা হয়েছে। ট্রানজিটের গাড়িগুলো কিন্তু ওখান দিয়েই চলার কথা।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য সঠিক ধরলে এখন মাটি ফেলে যে রাস্তাটা করা হয়েছে এটা ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালসামান নেয়া শেষ হলে সরিয়ে ফেলার কথা। অবশ্য না-সরালেও বর্ষায় কিন্তু এই রাস্তা ডুবে যাবে। যদি না মত পাল্টে কোনো মাথামোটা পরে এই রাস্তাগুলোকে আরও উঁচু করার চেষ্টা করেন।
কে জানে, ভারতকে আরও অন্যায্য সুযোগ দিতে গিয়ে নদী ভরাট করে কুমিরের বদলে হাঙ্গর আনা হয়! আমি কেন কেউই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না যে এমনটা হওয়া অসম্ভব। আমাদের দেশে সবই সম্ভব। কারণ দেশ গোল্লায় যাক এই নিয়ে আমাদের গা করার কিছু নাই।

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক এই বাঁধ দেখতে এসে বলেছেন, সহসাই বিদ্যুৎকেন্দ্র, পালাটানার মালসামান নেয়া শেষ হবে। এবং হওয়ামাত্র এই প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলা হবে। উত্তম, অতি উত্তম।

তাঁর এই বক্তব্য যথাযথ পালন হলে জটিলতা কমে যায়, সমস্যার সমাধান হয়। কারণ এরপর যে সড়কপথ আছে সেটাই ব্যবহার করা হবে। আমরা তাঁর এই কথায় আস্থা রাখতে পারলে ভাল হতো কিন্তু...।
মুশকিল হচ্ছে সরকার, সরকারী লোকজনের সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক কম, পরস্পরের মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস কাজ করে নইলে এই পর্যন্ত এসে বলা যায় খুব সহসাই সমস্যাটা মিটে যাওয়ার কথা।

ওই লেখায় আমার যে বক্তব্য ছিল, ট্রানজিটের নামে...। ট্রানজিটের নামে বলার কারণ প্রচলিত ট্রানজিটের জন্য কিন্তু ১২০ চাকার ট্রেইলর চালাবার প্রয়োজন হয়নি। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, ঝামেলা বাঁধিয়েছে আগরতলার বিদ্যুৎকেন্দ্র! আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের কি এমন দায় আগরতলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন হলো, কি হলো না? যেখানে আমরা এক ওয়াটও বিদ্যুত পাচ্ছি না। তাহলে কেন আমরা এই করে অহেতুক তিতাসের উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে গেলাম!
তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, নির্বুদ্ধিতার কারণে আমরা ফেঁসে গেছি। বেশ, তাহলে কেন আমরা স্বচ্ছতা রাখলাম না? কেন পরিষ্কার করে এটা জানানো হলো না, এই কারণে আমরা এই করলাম! সহসাই এই প্রতিবন্ধকতাগুলো সরিয়ে ফেলা হবে। আগেই বলেছি, এটা জনগণ এবং সরকারের মাঝে দূরত্বের ফসল!

এই অবিশ্বাসের ফল কখনও ইতিবাচক হতে পারে না। কারণ দেখা গেল এই অস্থায়ী প্রতিবন্ধকতাটাই স্থায়ী করে ফেলা হয়েছে। বেদনার সঙ্গে আবারও বলি, এই দেশে এটা সম্ভব! তখন দেখা যাবে আগরতলায় আরেকটা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তখন আমরা বিগলিতচিত্তে এই প্রতিবন্ধকতাগুলো প্রায় চিরস্থায়ীই করে ফেলব। সম্ভব...। তখন?

এক ঘরোয়া আড্ডায় এই নিয়ে উদ্বিগ্ন কয়েকজন ব্লগারের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। ওখানে আমি বলেছিলাম, যদি এই প্রতিবন্ধকতা স্থায়ী হয়েই যায় তাহলে সেটা হবে তিতাস নদীর জন্য একটা বিপর্যয়। মাছদের সঙ্গে আলাপ করার তো আমাদের কোনো সুযোগ নাই। এখন জলজ প্রাণী এদিক থেকে ওদিক যেতে না-পারায় এদের আচরণ কি হবে সেটা আগাম বলা মুশকিল। এই বিষয়ে আমি ভাল বুঝি না, নদীবিশেষজ্ঞ ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা বলা যায় এক-দুই বছর পর এর ফল হবে ভয়াবহ।...যেখানে এক ওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি না সেখানে আমরা এই জটিলতাগুলো করতে গেলাম কেন?...আর ট্রানজিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও এই সব করার অর্থ কী!

যাই হোক, কথা হচ্ছে এটা এখনও ঝুলে আছে কেন? অনুমান করি, আশুগঞ্জ থেকে এই সমস্ত যন্ত্রপাতি নিয়ে আসার সময় বর্ষার কারণে দেরী হয়েছিল। কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়, একটা বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নিতে ক-বছর লাগে? কেন দিনের-পর-দিন এই সব নিয়ে যাওয়ার বিষয়টা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে?

তিতাস নদী নিয়ে অনেকেই অসাধারণ লেখা লিখেছেন। তবে...। আমাদের আবেগ থাকা উত্তম কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত আবেগ তথ্যবহুল লেখাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে! এই ব্লগস্ফিয়ারে কিছু লেখা পড়েছি, ছবি দেখেছি। বিশদ আলোচনায় যাই না। ভাঙ্গাচোরা যে সেতু আছে, এই সেতু কিন্তু ট্রানজিটের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। খানিকটা সতর্ক থাকলে বিষয়টা স্পষ্ট হতো ওই সেতু বহু বছর পূর্বেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে, পাশেই বিকল্প সেতুও করা আছে। উল্লেখিত ওই সেতু দিয়ে ট্রেইলর দূরের কথা, একটা ট্রাকও ওটার উপর দিয়ে যেতে পারবে না। সামান্য জ্যাম লেগে গেলে কখনও কখনও মটরসাইকেল, অটোরিকশার মত হালকা যান ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়, তাও কদাচিত।

আমাদের এখন যেটা করা প্রয়োজন বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালসামান নেয়া শেষ হয়েছে কিনা সেটার খোঁজ নেয়া। কারণ নেয়া শেষ হলে সরকারী লোকজনের কথামতে, এই প্রতিবন্ধকতার তখন প্রয়োজন থাকার কথা না। এবং প্রশাসনের লোকজনকে এই প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলার জন্য চাপ সৃষ্টি করা।
এবং দাদারা আরেকটা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চাইলে, আবারও আবদার করলে মুখের উপর বলে দেয়া, আমাদের কি দায় পড়েছে, দাদা?

*আশা করছি এই বিষয়ে আরও কিছু আপডেট দিতে পারব। পাওয়া মাত্র এখানে যোগ করা হবে।

সহায়ক সূত্র:
১. তিতাস একটি...এর নাম: http://www.ali-mahmed.com/2011/12/blog-post_23.html

No comments: