Search

Friday, June 29, 2007

থানায় খানিকটা সময়।

আমাদের দেশের পুলিশ, থানা নিয়ে আমার ভীতির শেষ নাই। পারলে আমি শত-সহস্র হাত দূরে থাকি। কিন্ত আল্লা চাইলে উপায় কী!

ক-দিন আগে একটা ঝামেলা হয়ে গেল। গভীর রাতে একটা ফোন কল আসল। এই সময় আমি সচরাচর ফোন-রিং অফ রাখি। কিন্ত বাংলা একটা ওয়েব সাইটে লেখালেখির সুবাদে আমার কিছু প্রিয় মানুষ আছেন যারা আমি অন লাইনে থাকলে ফোন করেন বলে কখনও কখনও রিং অফ থাকে না।

তো, একটা ফোন কল আসল। কথা নাই বার্তা নাই, প্রাণনাশের হুমকী, অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি, প্রিয় মানুষকে জড়িয়ে কুৎসিত সব কথা। হুমকির ভয়ে আমি খুব একটা কাতর নই কিন্ত প্রিয় মানুষকে জড়িয়ে কেউ কিছু বললে আমার মাথা খারাপের মতো হয়ে যায়। ভাবছিলাম, কে করতে পারে এমন ফোন। ওই ওয়েব সাইটে লেখালেখির সূত্র ধরে কি কেউ আমায় এভাবে অপদস্ত করার চেষ্টা করেছে? তখন আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একের পর এক পোস্ট দিচ্ছি। অনেকে এটা পছন্দ করছিলেন না। এই কারণেও ওখানে অনেকে আমাকে তীব্র অপছন্দ করেন। ওখানে এমনিতে আমি কিছু বিষয়ে আমি আপোষহীন ছিলাম।
এক: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রসিকতা
দুই: গালিবাজী।

ওই ওয়েব সাইটের কেউ কেউ ওপেন ফোরামে গালি দেয়ার অধিকার নিয়ে বহু দিন ধরেই লড়ছেন। এদের সাফ কথা, প্রকাশ্য স্থানে দিগম্বর হয়ে বসে থাকা আমার অধিকারের পর্যায়ে পড়ে, বা স্যুট টাই (সম্ভব হলে না খুলে) লাগিয়ে বাথরুম সারা। এবং যা তা গালি না, প্রিয় মানুষদের জড়িয়ে কুৎসিত সব গালি দেয়ার মহান অধিকার অর্জন।
তো, আমি ভাবছিলাম, ওই ওয়েব সাইটের কেউ কি? যিনি ওখানে বলার সাহস না করে ফোনে একচোট নিলেন।

কিছু ঘটনা আমাকে চট করে কাবু করে ফেলে। রাতে ঘুম হলো ছাড়াছাড়া। নিজেকে কোন ভাবেই প্রবোধ দিতে পারছিলাম না। প্রাণনাশের হুমকির চেয়ে প্রিয় মানুষকে গালি দেয়াটা আমার সহ্য হচ্ছিল না। কেবল মনে হচ্ছিল, অথর্ব আমি, আমার প্রিয় মানুষকে আগলে রাখার শক্তি নাই!

পরদিন। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এটা জানার পর আমাকে নিয়ে পড়লেন। ইনি বিচিত্র কোন কারণে আমাকে, আমার লেখালেখি নিয়ে অহেতুক উচ্ছ্বাস বোধ করেন। কেন, কে জানে!
যাই হোক, ওঁর বক্তব্য হচ্ছে আমার লেখা পড়ে তিনি… ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আমি কিনা এটা নিয়ে ভয়ে কাবু। আমার আইনের সহায়তা নেয়া প্রয়োজন।
তিনি আমাকে বললেন, আপনি লোকাল থানায় যান| আমি ফোনে ওসিকে পাইনি, এস আই অমুক আছেন, ফোন করে দিয়েছি, আপনি যান, আমি পরে দেখছি।

সত্যি বলতে কি আমার মোটেও ইচ্ছা করছিল না। থানা তো দূরের কথা, আমি কোন পুলিশ ম্যানের ১০০ হাতের ধারেকাছেও থাকতে চাই না! তবুও গেলাম। কখনও প্রিয়জনদের কথা না শুনে উপায় কী! ওসি ছিলেন না, ছিলেন একজন এস আই। তার সঙ্গে আমার কথোপকথন।

এস আই: হুম। আপনি কিছু না করলে কেন আপনাকে কেউ হুমকি দেবে, অশ্রাব্য কথা বলবে?
আমি: তা তো জানি না।

এস আই: যে কল দিয়েছে সে কি আপনার পরিচিত?
আমি: জ্বী না।

এস আই: অপরিচিত নাম্বার ধরেন কেন?
আমি: জরুরী কিছু কলও তো আসে অপরিচিত নাম্বার থেকে।

এস আই: আপনার ফোনে কি রেকর্ডার আছে? যে নাম্বার থেকে ফোন আসে কথা রেকর্ড করেছেন?
আমি: না নাই।

এস আই: রেকর্ড করেন নাই, আগে রেকর্ড করেন। তারপর আমরা দেখব কি করা যায়। আপনার মুখের কথায় তো আর কিছু করা যায় না। এই যে আপনার জন্য যে কর্মকর্তা আমার সঙ্গে কথা বলেছেন আমি বুঝব কেমন করে, ওই লোক জেনুইন।
আমি বললাম: ওনাকে লাগিয়ে দেই। আপনি নিশ্চিত হয়ে নেন।
এস আই: কোন প্রয়োজন নাই। আপনাকে যে নাম্বার থেকে হুমকি দেয়া হয়েছ, এটা কোন কোম্পানীর?

আমি খানিকটা থমাকালাম। কোম্পানী মানেটা কি! আঁচ করতে পারলাম, অপারেটরের কথা বলছে। বললাম, সিটিসেল।

এস আই: সিটিসেল তো এখন রিকশাওয়ালারা ব্যবহার করে। আপনারটা কোন কোম্পানীর?
আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে বললাম: সিটিসেল।

আমার খুব অস্থির লাগছিল। আমার ওই সুহৃদকে থানা থেকেই ফোন করলাম। এস আই সাহেবের আচরণের সবটা আর বলিনি। আমি জানি এ একটা অনর্থ করবে। প্রথমেই যে গালিটা দেবে এটা শুরু হবে 'বা' দিয়ে। এস আইকে বললাম, আপনি কি ওনার সঙ্গে কাইন্ডলি কথা বলবেন একটু। এস আই এবার ওই কর্মকর্তাকে প্রতি নিঃশ্বাসে স্যার বলা শুরু করলেন।

ফোনে কি কথা হলো জানি না কিন্ত আমাকে ওই সুহৃদ বললেন, আপনি এই মুহূর্তে থানা থেকে চেক আউট করেন। ওসি আসলে আমি তার সঙ্গে কথা বলে 'বা'…কে ঠিক করছি। আমি ওই সুহৃদকে বললাম, আমি এটা নিয়ে আর বাড়াবড়ি করতে চাচ্ছি না। কারণ আপনি একটা অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি করবেন। এখানে আপনি তো আর সর্বদা থাকবেন না, থাকতে হবে আমাকে। পুলিশের বিশ্বাস কী, এরা পারে না এমন কোন কাজ আছে এই দেশে!

আমাদের দেশের পুলিশ বলে কথা …যম যা না পারে এরা তাও পারে!

No comments: