৬ আগস্ট যখন প্রথম আলোয় যখন এই সংবাদটা পড়ি তখন যথারীতি মেজাজের কাঁটা উর্ধ্বগতি। মনে মনে কষ্টের শ্বাস গোপন করি, কেউ কেউ কখনও বদলায় না, কেবল অন্যদেরকেই বদলাবার জন্যই আদাজল খেয়ে নামে! শেষের পাতায় খবরটা এক কলাম ইঞ্চি ছাপা হয়েছিল, "সম্পদের অর্ধেক দান করার ঘোষণা ৪০ ধনকুবেরের"।
আমি অহেতুক ভেবে ভেবে সারা, এটা কেন ফলাও করে প্রথম পাতায় এলো না? কেন এই খবরটা নিয়ে সম্পাদকীয় ছাপা হবে না? কেন এই খবরটা নিয়ে আমাদের দেশের দুধর্র্ষ কলামবাজরা ঝাপিয়ে পড়বেন না, কলাম লিখে লিখে পাতা ভরিয়ে ফেলবেন না?
এই খবরটা গুরুত্ব কী অপরিসীম এটা কেন আমরা অনুধাবন করতে পারলাম না? আমার সুযোগ থাকলে এঁদের ছবি বাঁধিয়ে প্রত্যহ ধূপ-ধুনা দিতাম। এঁদের এই একটা অভাবনীয় সিদ্ধান্ত, কোটি-কোটি মানবসন্তানের কল্যাণে ব্যয় হবে- এই গ্রহে আর কী চাওয়ার থাকতে পারে!
এই উদ্যোগটা নিয়ে ফলাও করে লিখলে যদি আমাদের দেশের কেবল একজন মাত্র ধনকুবেরের মত পরিবর্তন হয় সেটা কী এক অসাধারণ বিষয় হবে এটা আমার কল্পনাতেই আসে না। কেন আমি এটা আশা করতে পারব না, আমাদের দেশের একজন ধনকুবেরের ওদের মত মাথা এলোমেলো হবে না?
একজন ধনকুবের লাগে না, সামান্য একটা উদ্যোগ কেমন পরিবর্তন নিয়ে আসে এর ছোট্ট একটা উদাহরণ।
সুদূর আমেরিকা থেকে একজন ৪০০ ডলার পাঠিয়েছেন। টাকাটা হাত ঘুরে আমার কাছে এসেছে। আমার আনন্দিত হওয়ার কথা কিন্তু খানিকটা বিমর্ষ হয়ে গেলাম! এই টাকাটা আমাদের দেশের হতদরিদ্র মানুষদের জন্য ব্যয় হবে। শর্ত আছে, টাকাটা ব্যয় হবে মুসলমানদের জন্য, খাবার-দাবারের পেছনে এবং রমযানের মধ্যেই টাকাটা ব্যয় করতে হবে। আমার জন্য এটা একটা কঠিন শর্ত এবং অপছন্দের। যদি বলা হতো ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য তাহলে আমার আপত্তির কারণ ছিল না। ক্ষুধার্ত তো ক্ষুধার্ত, হিন্দু-মুসলিম-খ্রীস্টান কী! একবার মনে হয়েছিল, না করে দেই কারণ ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ করে আমি আরাম পাই না। অনেক ভেবে দেখলাম, কাজটা আমার অপছন্দের হলেও আমার কারণে কিছু মানুষ কেন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে?
যিনি মাধ্যম, তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হয় এর অধিকাংশ টাকা ব্যয় হবে 'ঈশ্বরের বিশেষ সন্তানদের স্কুলের' [৩] পরিবারে লোকজনের মধ্যে। এঁরা এমন না যে দু-বেলা খেতে পান না। তাই আমরা ভেবে ঠিক করলাম, প্রত্যেক পরিবারে জন্য পর্যায়ক্রমে মাংশের (গোশত লেখার নিয়ম সম্ভবত, মাংশ নাকি মুরতাদের শব্দ!) ব্যবস্থা করা হবে। এই মাংশের কল্যাণে এঁদের এবং এঁদের বাচ্চা-কাচ্চাদের শরীরে খানিকটা প্রোটিন যোগ হবে। মন্দ কী!
আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, সেই সুদূর আমেরিকা প্রবাসী একজনের টাকায় কেনা মাংশ খাচ্ছে দূর্গম এক এলাকার কিছু মানুষ!
ধরে নিলাম নিরুপায়, এরা লক্ষ-লক্ষ উট গুলি করে মেরে ফেলবে [৪] কিন্তু আমাদের দেবে না। হারামজাদারা, কেবল মুখ ফুটে একবার বললেই হতো আমরা এদের পোতাশ্রয় থেকে নিজ খরচে জাহাজ ভরে ভরে নিয়ে আসতাম। আমার জানার খুব আগ্রহ, অস্টেলিয়ায় আমাদের দূতাবাসের স্যাররা কি একবারও এদের বলে দেখেছিলেন, নাকি বড়ো বড়ো সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলেন?
তো, সর্বদা পত্রিকাওয়ালাদের অন্ধকার দিক নিয়ে লিখতে ভাল লাগে না। আমি অপেক্ষায় থাকি, এই নিয়ে এই পত্রিকায় সুদীর্ঘ লেখা ছাপা হবে। আমাদের দেশেরও কোন ধনকুবেরকে এমন পাগলামি করতে প্ররোচিত করা হবে। আমার অপেক্ষা আর ফুরায় না।
অবশেষে আজ (২৭ আগস্ট, ২০২০), অন্যআলোয় ফলাও করে ছাপানো হয়েছে, "বিশ্বের ছয় ধনীর অর্ধেক সম্পদ এখন গরিবের"। প্রথম আলো, বিশেষ করে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এটার লেখক নাইর ইকবালকে।
সহায়ক লিংক:
১. সম্পদের অর্ধেক দান করার ঘোষণা ৪০ ধনকুবেরের, : http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=24&date=2010-08-06
২. বিশ্বের ছয় ধনীর অর্ধেক সম্পদ এখন গরিবের: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=27&date=2010-08-27
৩. ঈশ্বরের বিশেষ সন্তানদের ইশকুল: http://tinyurl.com/2fs9j4p
৪. সভ্যতার কাকে বলে: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_9297.html
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Friday, August 27, 2010
ধন্যবাদ প্রথম আলো
বিভাগ
প্রথম আলো
মরবে না কিন্তু, খবরদার!
'পড়শী ফাউন্ডেশন' থেকে কুরিয়ারে আমার নামে অনেকগুলো ক্রাচ পাঠানো হয়েছে। আমার আনন্দিত হওয়ার কথা কিন্তু শনৈঃ শনৈঃ মেজাজ খারাপ হচ্ছে কারণ এই কুরিয়ার সার্ভিস এখানে পৌঁছে দেবে না, ২০ কিলোমিটার দূর থেকে গিয়ে নিয়ে আসতে হবে। এই বেঢপ সাইজের জিনিস স্কুটারে আঁটবে না। এদের ভাবখানা এমন, আমার গাড়ি আছে। শো-ও-ও করে নিয়ে আসব!
ভাগ্যিস নিয়ে এসেছিলাম।
দীর্ঘ দিনের অভ্যাসের কারণে আমার হাঁটা হয় প্রচুর। পরিচিত লোকজনরা বিস্ময় প্রকাশ করেন, হুদাহুদি হাঁটেন ক্যান? মেজাজ খারাপ থাকলে আমি বলি, রঙ্গে!
নিয়ম করে স্টেশনটা একটা চক্কর না-দিলে আমি আরাম পাই না। শিকার খোঁজার জন্য স্টেশনটা একটা উত্তম স্থান। যেদিন কাউকে পাই না সেদিন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
কাল এখানেই পেয়ে যাই দুলাল মিয়াকে। পায়ে কাপড় জড়িয়ে রেখেছেন বলে আমি জিজ্ঞেস করি, পায়ে কি হইছে?
মানুষটা মাথা নাড়ে, কিছু না।
তার পায়ের কাছে প্রচুর মাছি ভনভন করছে দেখে খানিকটা আঁচ করতে পারি, মানুষটার পায়ে সমস্যা আছে। নাকে ভেসে আসে তীব্র গন্ধ। আমি ডাক্তার না কিন্তু তবুও বোঝার বাকী থাকে না এর পায়ে পচন ধরেছে। গ্যাংরিন!
এর কাহিনী খানিকটা বিচিত্র! বউ এবং শাশুড়ি মিলে পায়ে এসিড ঢেলে দিয়েছে। এত দিন জানতাম এসিড ছুঁড়ে মারে পুরুষ, কাপুরুষ; এখন দেখছি মহিলারাও পিছিয়ে নেই!
আমি বলি, হাঁটেন কেমন করে?
নিস্তেজ উত্তর, লেছড়াইয়া-লেছড়াইয়া।
ক্রাচটা দিয়ে আমি বলি, এটা দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করে দেখেন। মানুষটা চেষ্টা করে কিন্তু নিষ্ফল চেষ্টা। এইবার মানুষটা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে, আমি আর বাঁচতাম না।
আমি বানিয়ে বানিয়ে কিছু কথাবার্তা বলি। মনে মনে দুঃখিত হই, মানুষটার সময় ফুরিয়ে আসছে। কারণ মানুষটা হাল ছেড়ে দিয়েছে। তাঁর এই নিরাশা আমার মধ্যেও খানিকটা প্রভাব ফেলেনি এমন না। ঢাকা থেকে যে ডাক্তার আসেন, তিনি আসবেন আগামীকাল।
আমি বলি, আগামীকাল ডাক্তার আপনাকে দেখে দেবে। দেখি, ডাক্তার কি বলেন। তা আপনার সঙ্গে কেউ নাই?
মানুষটা এইবার বলেন, আমার তিন কূলে কেককো নাই। তয় আমার ধর্মবাপ আছে।
আমি বলি, উত্তম। কোথায় আপনার ধর্মবাপ? সাদা চুলের একজন মানুষ এগিয়ে আসেন। ওই মানুষটার কাছে ডাক্তারের ঠিকানা লিখে দশ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে বলে আসি আগামীকাল সন্ধ্যায় চলে আসতে।
সেই আগামীকালটা আজ। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয় সেই মানুষটার পাত্তা নেই। আমার বিরক্তির শেষ নেই কারণ সময়টা আমার ছাতাফাতা লেখালেখির। আমার ছাতাফাতা লেখালেখির কী হবে! লেখালেখি গেল চুলায়। রাগে চিড়বিড় করতে করতে হাঁটা ধরি। মানুষটাকে সেই পুর্বের স্থানেই পেয়ে যাই। আমি রাগ চেপে বলি, ঘটনা কি, আপনি গেলেন না কেন?
মানুষটা অসহায় উক্তি, আমার ধর্মবাপ আহে নাই। যাওনের শক্তি নাই।
এটা শুনে মানুষটার উপর রাগ করা কঠিন। তবুও আমার রাগ কমে না, আপনি কেমন মানুষরে ধর্মবাপ বানান! আপনার আর কয়টা ধর্মবাপ আছে?
আমার মাথায় ধর্মবাপ কেমন হওয়া প্রয়োজন তারচেয়ে এখন যেটা ঘুরপাক খাচ্ছিল, বয়স্ক মানুষটা মাত্র দশ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেল, ফিনফিনে দাড়িসহ!
কী যন্ত্রণা, মানুষটাকে নিয়ে যাব কেমন করে? কে স্ট্রেচার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! আমি কি মাদার তেরেসার অনুসারী যে মানুষটাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে যাব? পাগল!
এক রিকশাচালককে অনেক বলে-কয়ে রাজী করাতে হয়েছে, দেখো মিয়া, টাকা-পয়সাই সব না; রাস্তা-ঘাটে চললে কিছু মানুষের দোয়াও নিতে হয়। আমার বুদ্ধির সঙ্গে রিকশাচালক পারবে কেন, এ কি ব্লগস্ফিয়ারের লোকজন? সে রাজী হলে আমি বলি, বাপ, খালি তুমি একে অমুক জায়গায় নিয়ে যাবে।
ডাক্তার একে দেখেই নিরাশ করলেন, এর তো এভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হবে না। আমি তো এখানে থাকব না। প্রতিদিন নিয়ম করে প্রতিদিন দুবার করে এর ডেসিং করতে হবে। ভাল হয়, হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।
আমি চোখে অন্ধকার দেখি, হাসপাতাল, এই দেশের সরকারী হাসপাতাল! এমনিতেই খবিরনকে [১] নিয়ে আমার দুর্দান্ত ক্ষোভ এখনও প্রশমিত হয়নি। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যদি এমন হয়, দুম করে হাসপাতালওয়ালাদের নাকে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলাম তখন কেলেঙ্কারীর একশেষ হবে। তকে মাথার দিব্যি দিয়েছে যারা দুকলম লেখার চেষ্টা করে এরা রেগে কারও নাকে ঘুষি বসিয়ে দিতে পারে না।
ভাগ্য ভাল, সেই ডাক্তারকে পেয়ে যাই। এই ডাক্তারের কাছে আমি ঋণী। একবার একটা কুত্তাকে [২] নিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলাম, তাঁর কল্যাণে উদ্ধার পেয়েছিলাম। যাই হোক, তার বদৌলতে আমাকে অবাক করে দিয়ে হাসপাতালওয়ালা দুলাল মিয়া নামের মানুষটাকে ভর্তি করে নেয়। তবে তিনি আমাকে এটা বলেও সতর্ক করে দেন, ভর্তির কাগজে আপনার নাম যাচ্ছে এই রোগীর কিছু একটা হয়ে গেলে পুলিশী ঝামেলায় পড়বেন।
আইনগুলো বড়ো চিত্র-বিচিত্র! রক্তে ভাসতে ভাসতে একজন মারা যাবে কিন্তু পুলিশ না-আসা পর্যন্ত কেউ ওই অভাগাকে স্পর্শও করবে না, ডাক্তারও না।
আমি হতভাগার এটা বলা ব্যতীত উপায় কী! দুলাল মিয়া, মরবে না কিন্তু, খবরদার!
সহায়ক লিংক:
১. কুত্তা জহির: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_15.html
২. খবিরন: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_24.html
ভাগ্যিস নিয়ে এসেছিলাম।

নিয়ম করে স্টেশনটা একটা চক্কর না-দিলে আমি আরাম পাই না। শিকার খোঁজার জন্য স্টেশনটা একটা উত্তম স্থান। যেদিন কাউকে পাই না সেদিন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
কাল এখানেই পেয়ে যাই দুলাল মিয়াকে। পায়ে কাপড় জড়িয়ে রেখেছেন বলে আমি জিজ্ঞেস করি, পায়ে কি হইছে?
মানুষটা মাথা নাড়ে, কিছু না।
তার পায়ের কাছে প্রচুর মাছি ভনভন করছে দেখে খানিকটা আঁচ করতে পারি, মানুষটার পায়ে সমস্যা আছে। নাকে ভেসে আসে তীব্র গন্ধ। আমি ডাক্তার না কিন্তু তবুও বোঝার বাকী থাকে না এর পায়ে পচন ধরেছে। গ্যাংরিন!
এর কাহিনী খানিকটা বিচিত্র! বউ এবং শাশুড়ি মিলে পায়ে এসিড ঢেলে দিয়েছে। এত দিন জানতাম এসিড ছুঁড়ে মারে পুরুষ, কাপুরুষ; এখন দেখছি মহিলারাও পিছিয়ে নেই!
আমি বলি, হাঁটেন কেমন করে?
নিস্তেজ উত্তর, লেছড়াইয়া-লেছড়াইয়া।
ক্রাচটা দিয়ে আমি বলি, এটা দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করে দেখেন। মানুষটা চেষ্টা করে কিন্তু নিষ্ফল চেষ্টা। এইবার মানুষটা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে, আমি আর বাঁচতাম না।
আমি বানিয়ে বানিয়ে কিছু কথাবার্তা বলি। মনে মনে দুঃখিত হই, মানুষটার সময় ফুরিয়ে আসছে। কারণ মানুষটা হাল ছেড়ে দিয়েছে। তাঁর এই নিরাশা আমার মধ্যেও খানিকটা প্রভাব ফেলেনি এমন না। ঢাকা থেকে যে ডাক্তার আসেন, তিনি আসবেন আগামীকাল।
আমি বলি, আগামীকাল ডাক্তার আপনাকে দেখে দেবে। দেখি, ডাক্তার কি বলেন। তা আপনার সঙ্গে কেউ নাই?
মানুষটা এইবার বলেন, আমার তিন কূলে কেককো নাই। তয় আমার ধর্মবাপ আছে।
আমি বলি, উত্তম। কোথায় আপনার ধর্মবাপ? সাদা চুলের একজন মানুষ এগিয়ে আসেন। ওই মানুষটার কাছে ডাক্তারের ঠিকানা লিখে দশ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে বলে আসি আগামীকাল সন্ধ্যায় চলে আসতে।

মানুষটা অসহায় উক্তি, আমার ধর্মবাপ আহে নাই। যাওনের শক্তি নাই।
এটা শুনে মানুষটার উপর রাগ করা কঠিন। তবুও আমার রাগ কমে না, আপনি কেমন মানুষরে ধর্মবাপ বানান! আপনার আর কয়টা ধর্মবাপ আছে?
আমার মাথায় ধর্মবাপ কেমন হওয়া প্রয়োজন তারচেয়ে এখন যেটা ঘুরপাক খাচ্ছিল, বয়স্ক মানুষটা মাত্র দশ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেল, ফিনফিনে দাড়িসহ!
কী যন্ত্রণা, মানুষটাকে নিয়ে যাব কেমন করে? কে স্ট্রেচার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! আমি কি মাদার তেরেসার অনুসারী যে মানুষটাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে যাব? পাগল!
এক রিকশাচালককে অনেক বলে-কয়ে রাজী করাতে হয়েছে, দেখো মিয়া, টাকা-পয়সাই সব না; রাস্তা-ঘাটে চললে কিছু মানুষের দোয়াও নিতে হয়। আমার বুদ্ধির সঙ্গে রিকশাচালক পারবে কেন, এ কি ব্লগস্ফিয়ারের লোকজন? সে রাজী হলে আমি বলি, বাপ, খালি তুমি একে অমুক জায়গায় নিয়ে যাবে।
ডাক্তার একে দেখেই নিরাশ করলেন, এর তো এভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হবে না। আমি তো এখানে থাকব না। প্রতিদিন নিয়ম করে প্রতিদিন দুবার করে এর ডেসিং করতে হবে। ভাল হয়, হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।
আমি চোখে অন্ধকার দেখি, হাসপাতাল, এই দেশের সরকারী হাসপাতাল! এমনিতেই খবিরনকে [১] নিয়ে আমার দুর্দান্ত ক্ষোভ এখনও প্রশমিত হয়নি। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যদি এমন হয়, দুম করে হাসপাতালওয়ালাদের নাকে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলাম তখন কেলেঙ্কারীর একশেষ হবে। তকে মাথার দিব্যি দিয়েছে যারা দুকলম লেখার চেষ্টা করে এরা রেগে কারও নাকে ঘুষি বসিয়ে দিতে পারে না।
ভাগ্য ভাল, সেই ডাক্তারকে পেয়ে যাই। এই ডাক্তারের কাছে আমি ঋণী। একবার একটা কুত্তাকে [২] নিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলাম, তাঁর কল্যাণে উদ্ধার পেয়েছিলাম। যাই হোক, তার বদৌলতে আমাকে অবাক করে দিয়ে হাসপাতালওয়ালা দুলাল মিয়া নামের মানুষটাকে ভর্তি করে নেয়। তবে তিনি আমাকে এটা বলেও সতর্ক করে দেন, ভর্তির কাগজে আপনার নাম যাচ্ছে এই রোগীর কিছু একটা হয়ে গেলে পুলিশী ঝামেলায় পড়বেন।
আইনগুলো বড়ো চিত্র-বিচিত্র! রক্তে ভাসতে ভাসতে একজন মারা যাবে কিন্তু পুলিশ না-আসা পর্যন্ত কেউ ওই অভাগাকে স্পর্শও করবে না, ডাক্তারও না।
আমি হতভাগার এটা বলা ব্যতীত উপায় কী! দুলাল মিয়া, মরবে না কিন্তু, খবরদার!
সহায়ক লিংক:
১. কুত্তা জহির: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_15.html
২. খবিরন: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_24.html
Subscribe to:
Posts (Atom)