ঘটনাস্থল কুমিল্লা। কুমিল্লা টাউন হল। বস্ত্রমেলায় একটা স্টল দিয়েছিলেন চীনা এক দম্পত্তি। মিস্টার থা এবং তাঁর স্ত্রী ইয়েনগি। কিছু বখাটে যুবক ইয়েনগিকে উত্যক্ত করলে তাঁর স্বামী প্রতিবাদ করতে গেলে, মিস্টার থা'র মাথা ফাটিয়ে ফেলা হয়। দরদর করে রক্তে তার সমস্ত শরীর ভিজে যায়।
এই পর্যন্ত এটা একটা ঘটনা। কিন্তু মিস্টার থা এই মেলার আয়েজকদের কাছে কোন ধরনের সাহায্য পাননি। পুলিশের ডিআইও ওয়ান যেটা বলেন এরপর কথা চলে না! তিনি বলেছেন, "এটি ছোট ঘটনা, বিষয়টা আমরা দেখছি।"
এটা ছোট ঘটনা তো বটেই! অন্তত আমি নিশ্চিত, এই চীনা দম্পত্তি দেশে ফিরে আমাদের এমন সুনাম করবেন, ব্যবসায়িক দ্বার উম্মোচনের কথা বলবেন; প্লেন বোঝাই করে চীনারা সব দলে দলে এই দেশে ভিড় করবে। প্লেনে বসার টিকেট না পেলেও কে জানে, দাঁড়িয়েও চলে আসতে পারে।
আমার জানা মতে, এইসব পুলিশ নামের অফিসারদের সারদা পুলিশ একাডেমিতে ট্রেনিং দেয়া হয়। আমার খুব জানার ইচ্ছা, ওখানে কী কেবল ঘোড়ায় চড়া শেখানো হয়?
সমাজপতিরা বিচারের নামে বাবাকে দিয়ে ছেলের চোখ উঠাতে বাধ্য করে। ঈশ্বর, কোন সভ্য দেশে এমনটা সম্ভব? এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিউদ্দিন প্রথম আলোর কাছে বলেন, "ঘটনাটা শুনেছি। আমার কাছে ছেলের বাবা এসেছিলেন। আমি তাঁকে বলেছি আগে চিকিৎসা করান। তারপর অভিযোগ দিয়েন।"
ভাল-ভাল! এই অফিসারের মনে দেখি অ-নে-ক মায়া! চোখের চিকিৎসা যখন শেষ হবে তখন পর্যন্ত দোষীরা বসে বসে ছা ফুটাবে।
আমাদের দেশের পুলিশ মহোদয়দের মনে কী মায়া এটা বোঝার জন্য এই ক্লিপিংসটাই যথেষ্ট। প্রকাশ্যে কোন দায়িত্বশীল মানুষ এমন একটা বেদনার ঘটনা নিয়ে এমন কুশ্রাব্য-কুৎসিত কথা বলতে পারেন এটা আমার কল্পনাতেও আসে না। আজ কেবল মনে হচ্ছে, সাদাত হাসান মান্টোর কথা "একশত জন...মারা গেলে একজন পুলিশম্যানের জন্ম হয়"।
এটা দেখে আমার কেবল মনে হচ্ছিল পুলিশ নামের এই মানুষটা অন্য গ্রহ থেকে এসেছেন। তাকে কেউ জন্ম দেয়নি, তিনি কাউকে জন্ম দেননি। তাই হবে! নইলে এই বাচ্চাগুলোর কষ্টটা তার চোখে ধরা পড়েনি।
কে জানে, একদিন দেখব এই অফিসারের শাস্তি দূরের কথা প্রমোশন দেয়া হয়েছে। সম্ভব, এই দেশে সবই সম্ভব...।
*ঋণ: ইউটিউবের এই ক্লিপিংসটা নেয়া হয়েছে: http://www.konfusias.blogspot.com থেকে
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Tuesday, August 24, 2010
সারদায় কি এই সব শেখায়?
বিভাগ
চুতিয়া
ডাক্তার নামের খুনিটার বিচার হবে না?
আজকের প্রথম আলোয় [১] (২৪ আগস্ট, ২০১০) খবরটা পড়ে কেবল মাথায় যেটা ঘুরপাক খাচ্ছে, আমাদের দেশে প্রাণ কত শস্তা! এরচেয়ে শস্তা সম্ভবত আর কিছু নাই, এক বোতল পানির দামও নিদেনপক্ষে ১০ টাকা। প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানাই, এই নিউজটা ছাপাবার জন্য, পাশাপাশি আমার এই ক্ষোভও আছে, এই খবরটাই আরও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন ছিল। প্রকারান্তরে একটা অন্যায়ও করা হয়েছে, যে ডাক্তারের বক্তব্য ছাপা হয়েছে এটা একটা বিকলাঙ্গ তথ্য!
কসম লেখালেখির, আমার মনে হচ্ছে হাঁটুর নীচে জোর নাই। এই খবরটা আমার চোখ এড়িয়ে গেলেই ভাল হতো, কেন চোখে পড়ল! এটা পড়ার পর থেকে আমার ভুবনটা এলোমেলো হয়ে আছে। কোন একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার সুতীব্র ইচ্ছা। হাতের নাগালে কাউকে না-পেলে আমি নিজে আছি কী করতে! স্বয়ংক্রিয় চাবুক পাওয়া যায় না বাজারে? যেটার কাছে গিয়ে নিজের পিঠ পেতে দিলেই শপাং শপাং; ব্যস, দুর্দম রাগ অনেকটা কমে এলো। এমন একটা জিনিস সহজলভ্য হলে মন্দ হতো না...।
সাভার উপজেলা হাসপাতালে 'খবিরন' নামের এক ছিন্নমূল অন্তঃসত্ত্বা নারী প্রসব ব্যথা নিয়ে গেলে ওখানকার ডাক্তার তাঁকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিদায় করে দেন। খবিরন ওই সময় তীব্র ব্যথায় বারবার ডাক্তারকে অনুরোধ করেও কোন লাভ হয়নি।
গত রোববার রাতে খবিরন অসহ্য প্রসবযন্ত্রণা সহ্য করতে না-পেরে ফুটওভারব্রীজ থেকে লাফিয়ে পড়েন। তাঁর সঙ্গে মৃত্যু হয় তাঁর অদেখা সন্তানেরও [২]।
কত্তো সহজ!
আবার কী অবলীলায়ই না ওই সাভার হাসপাতালের ডাক্তার নিখিল কুমার সাহা এটা বলে পার পেয়ে যান, "...এই নারীর পেটের বাচ্চার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তাই তাকে ঢাকা মেডিকাল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়"।
গুড-গুড! অতি উত্তম।
তা আমাদের সাংবাদিক মহোদয় এটুকু জিগেস করেই ক্ষান্ত দিলেন কেন? তিনি কেন জানতে চাইলেন না, কখন, কেমন করে খবিরনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে? ঢাকা মেডিকালে এই বিষয়ে খোঁজ নিলেন না কেন? নাকি তিনি এই তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন, অফিস ছাপায়নি?
আমরা সবাই যার যার গা বাঁচাচ্ছি। আরে, এটা তো আমার সমস্যা না, খবিরন নামের এই মহিলা তো আমাদের কেউ না। হিস্ট্রি রিপিট। আমাদের সঙ্গে এমনটা ঘটলে তখন আমরা গা ঝাড়া দিয়ে উঠব, আমরা কি এই অপেক্ষায় আছি? ভাল-ভাল, এই মনস্কামনা পূর্ণ হোক।
এখানে অবশ্য আমার কিছু জানার ছিল। আমি জানতে চাই, খবিরনকে কিসে করে ঢাকা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল, হেলিকপ্টারে, নাকি অ্যামবুলেন্সে করে? হেলিকপ্টারে করে করা হয়ে থাকলে আমি জানতে চাই, কাদের হেলিকপ্টারে করে? সেনাবাহিনীর, নাকি ভিভিআইপিদের যেটায় বহন করা হয়, সেটায়?
হেলিকপ্টার না-হয়ে অ্যামবুলেন্স হলে নিশ্চয়ই এটা হাসপাতালের? তাহলে অবশ্যই এই রেকর্ড থাকার কথা কখন, কটায় খবিরনকে ঢাকা মেডিকাল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আর যদি এটা প্রমাণিত না-হয় তাহলে খবিরনকে যে ডাক্তার দেখেছিলেন বা যিনি দায়ি তাকে কেন দুইজন মানুষ খুনের জন্য শাস্তি দেয়া হবে না? প্রচলিত আইনে দুইজন মানুষকে খুন করলে যে শাস্তি হয় এই শাস্তি কেন এই ডাক্তারকে দেয়া যাবে না।
এটা আমরা বেশ জানি, খবিরনের কাছে যদি বিস্তর টাকা-পয়সা থাকত তাহলে তাঁকে এটা অসহ্য প্রসববেদনায় আত্মহত্যা করতে হতো না। এই ডাক্তারই খবিরনকে নিয়ে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করে দিতেন। কারণ অন্তঃসত্ত্বা কাউকে কোন ক্লিনিকে পাঠালেই ডাক্তার সাহেবের পকেটে শুধুশুধুই অন্তত পাঁচ হাজার টাকা চলে আসে।
আমি পূর্বেও বলেছি, এই দেশে সরকারী চাকুরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অপরাধ করে থাকেন আমাদের দেশের ডাক্তার। পুলিশ এদের কাছে কোন ছার! পুলিশ অপরাধ করে পেটের জন্যে।
অথচ এই দেশের অধিকাংশ ডাক্তার বেতন, সুযোগ-সুবিধার পরও প্রাইভেট প্র্যাকটিসের পরও হেন কোন অন্যায় নাই যেটা করেন না। ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে গোপন আঁতাত- ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে নগদ টাকার বাইরেও এমন কোন জিনিস নাই এরা পান না, অন্তর্বাস ব্যতীত, নাকি এটাও আজকাল ওষুধ কোম্পানিগুলো দেয়া শুরু করেছে! যে ক্লিনিকে অযথা হাজার-হাজার টাকার টেস্ট পাঠান, টেস্টের টাকার অন্তত ফিফটি পার্সেন্টের বিনিময়ে। যে মার স্বাভাবিক বাচ্চা হওয়ার কথা তাঁর পেট কাটার জন্য ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন টাকার বিনিময়ে। কয়টার কথা বলব?
খবিরন যে শহরে আত্মহত্যা করেছেন সেই শহরে ক-লক্ষ মানুষ বসবাস করেন আমি জানি না। কেবল জানি ওই শহরের লোকজন মানবতার বড় বড় কথা বলেন, নিয়ম করে নামায-রোজা-হজ পালন করেন; সেই শহরেই যখন খবিরন আত্মহত্যা করেন, হাত-পা ছড়িয়ে মধ্য-রাস্তায় পড়ে থাকেন, তাঁর পেট ফেটে অদেখা বাবুটাও মরে পড়ে থাকে তখন সেই শহরের সমস্ত মানুষ নগ্ন হয়ে পড়েন।
খবিরন যে একটা মা এটা কারও মাথায় আসল না? এই গ্রহের সব মার আদল যে এক, সে 'মাছ-মা' [৩] হোক আর খবিরন, পার্থক্য কী! খবিরন নিশ্চয়ই এই শহরের এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাগলের মত ছুটাছুটি করেছেন, একে-ওকে ধরেছেন, বাবুটাকে-নিজেকে বাঁচাবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কেন পারলেন না?
আমরা জানি, অদেখা বাবুদের আত্মিক যোগ থাকে কেবল মার সঙ্গেই- কেবল আমরা এটা জানি না, বাবুটা কি কোন প্রকারে মাকে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল? নাকি সেও হাল ছেড়ে দিয়েছিল, একগাদা থুথু ফেলে উল্টো আরও মাকে প্ররোচিত করছিল। থুথু! অনেকে চেঁচিয়ে উঠবেন, ভুল-ভুল! অ, আচ্ছা, অদেখা সন্তানরা থুথু ফেলতে পারে না, না? তাই হবে!
আমি কেবল ভাবি, সেই শহরের দালান-কোঠাগুলো এখনও দাঁড়িয়ে থাকে কেমন করে? কেন এখানে রোদ, কেন বৃষ্টি?
নপুংসক আমরা, আমরা আর কিছু না পারলে খবিরনের বিরুদ্ধে একটা মামলা ঠুকে দিতে পারি। কারণ আত্মহত্যা প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা কলমের মাধ্যমে অনলবর্ষন করতে পারেন, কলামলেখক লিখতে পারেন দেড় হাত লম্বা কলাম, 'কী নিষ্ঠুর মা' এই শিরোনামে:
"খবিরন ভয়ংকর একটা অন্যায় করিয়াছে। সে নিজেকে মারিয়া ফেলিয়াছে। কেবল তাহাই নহে, এই পাষন্ডী মা তাহার গর্ভের সন্তানকেও মারিয়া ফেলিয়াছে। আমরা ভাবিয়া ভাবিয়া কূল পাইতেছি না, একজন মা হইয়া কেমন করিয়া তাহার গর্ভের সন্তানকে হত্যা করিতে পারে? ইহা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বটে। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবী করিতেছি, এই পাপিষ্ঠাকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হউক।"
অভাগা খবিরন- ইহকাল গেল, পরকালও!
সহায়ক লিংক:
১. প্রথম আলো: http://www.eprothomalo.com/?opt=view&page=4&date=2010-08-24
২. মা এবং তার অদেখা সন্তান: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_10.html
৩. মাছ-মা: http://www.ali-mahmed.com/2009/06/blog-post_6002.html
কসম লেখালেখির, আমার মনে হচ্ছে হাঁটুর নীচে জোর নাই। এই খবরটা আমার চোখ এড়িয়ে গেলেই ভাল হতো, কেন চোখে পড়ল! এটা পড়ার পর থেকে আমার ভুবনটা এলোমেলো হয়ে আছে। কোন একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার সুতীব্র ইচ্ছা। হাতের নাগালে কাউকে না-পেলে আমি নিজে আছি কী করতে! স্বয়ংক্রিয় চাবুক পাওয়া যায় না বাজারে? যেটার কাছে গিয়ে নিজের পিঠ পেতে দিলেই শপাং শপাং; ব্যস, দুর্দম রাগ অনেকটা কমে এলো। এমন একটা জিনিস সহজলভ্য হলে মন্দ হতো না...।
সাভার উপজেলা হাসপাতালে 'খবিরন' নামের এক ছিন্নমূল অন্তঃসত্ত্বা নারী প্রসব ব্যথা নিয়ে গেলে ওখানকার ডাক্তার তাঁকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিদায় করে দেন। খবিরন ওই সময় তীব্র ব্যথায় বারবার ডাক্তারকে অনুরোধ করেও কোন লাভ হয়নি।
গত রোববার রাতে খবিরন অসহ্য প্রসবযন্ত্রণা সহ্য করতে না-পেরে ফুটওভারব্রীজ থেকে লাফিয়ে পড়েন। তাঁর সঙ্গে মৃত্যু হয় তাঁর অদেখা সন্তানেরও [২]।
কত্তো সহজ!
আবার কী অবলীলায়ই না ওই সাভার হাসপাতালের ডাক্তার নিখিল কুমার সাহা এটা বলে পার পেয়ে যান, "...এই নারীর পেটের বাচ্চার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তাই তাকে ঢাকা মেডিকাল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়"।
গুড-গুড! অতি উত্তম।
তা আমাদের সাংবাদিক মহোদয় এটুকু জিগেস করেই ক্ষান্ত দিলেন কেন? তিনি কেন জানতে চাইলেন না, কখন, কেমন করে খবিরনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে? ঢাকা মেডিকালে এই বিষয়ে খোঁজ নিলেন না কেন? নাকি তিনি এই তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন, অফিস ছাপায়নি?
আমরা সবাই যার যার গা বাঁচাচ্ছি। আরে, এটা তো আমার সমস্যা না, খবিরন নামের এই মহিলা তো আমাদের কেউ না। হিস্ট্রি রিপিট। আমাদের সঙ্গে এমনটা ঘটলে তখন আমরা গা ঝাড়া দিয়ে উঠব, আমরা কি এই অপেক্ষায় আছি? ভাল-ভাল, এই মনস্কামনা পূর্ণ হোক।
এখানে অবশ্য আমার কিছু জানার ছিল। আমি জানতে চাই, খবিরনকে কিসে করে ঢাকা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল, হেলিকপ্টারে, নাকি অ্যামবুলেন্সে করে? হেলিকপ্টারে করে করা হয়ে থাকলে আমি জানতে চাই, কাদের হেলিকপ্টারে করে? সেনাবাহিনীর, নাকি ভিভিআইপিদের যেটায় বহন করা হয়, সেটায়?
হেলিকপ্টার না-হয়ে অ্যামবুলেন্স হলে নিশ্চয়ই এটা হাসপাতালের? তাহলে অবশ্যই এই রেকর্ড থাকার কথা কখন, কটায় খবিরনকে ঢাকা মেডিকাল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আর যদি এটা প্রমাণিত না-হয় তাহলে খবিরনকে যে ডাক্তার দেখেছিলেন বা যিনি দায়ি তাকে কেন দুইজন মানুষ খুনের জন্য শাস্তি দেয়া হবে না? প্রচলিত আইনে দুইজন মানুষকে খুন করলে যে শাস্তি হয় এই শাস্তি কেন এই ডাক্তারকে দেয়া যাবে না।
এটা আমরা বেশ জানি, খবিরনের কাছে যদি বিস্তর টাকা-পয়সা থাকত তাহলে তাঁকে এটা অসহ্য প্রসববেদনায় আত্মহত্যা করতে হতো না। এই ডাক্তারই খবিরনকে নিয়ে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করে দিতেন। কারণ অন্তঃসত্ত্বা কাউকে কোন ক্লিনিকে পাঠালেই ডাক্তার সাহেবের পকেটে শুধুশুধুই অন্তত পাঁচ হাজার টাকা চলে আসে।
আমি পূর্বেও বলেছি, এই দেশে সরকারী চাকুরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অপরাধ করে থাকেন আমাদের দেশের ডাক্তার। পুলিশ এদের কাছে কোন ছার! পুলিশ অপরাধ করে পেটের জন্যে।
অথচ এই দেশের অধিকাংশ ডাক্তার বেতন, সুযোগ-সুবিধার পরও প্রাইভেট প্র্যাকটিসের পরও হেন কোন অন্যায় নাই যেটা করেন না। ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে গোপন আঁতাত- ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে নগদ টাকার বাইরেও এমন কোন জিনিস নাই এরা পান না, অন্তর্বাস ব্যতীত, নাকি এটাও আজকাল ওষুধ কোম্পানিগুলো দেয়া শুরু করেছে! যে ক্লিনিকে অযথা হাজার-হাজার টাকার টেস্ট পাঠান, টেস্টের টাকার অন্তত ফিফটি পার্সেন্টের বিনিময়ে। যে মার স্বাভাবিক বাচ্চা হওয়ার কথা তাঁর পেট কাটার জন্য ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন টাকার বিনিময়ে। কয়টার কথা বলব?
খবিরন যে শহরে আত্মহত্যা করেছেন সেই শহরে ক-লক্ষ মানুষ বসবাস করেন আমি জানি না। কেবল জানি ওই শহরের লোকজন মানবতার বড় বড় কথা বলেন, নিয়ম করে নামায-রোজা-হজ পালন করেন; সেই শহরেই যখন খবিরন আত্মহত্যা করেন, হাত-পা ছড়িয়ে মধ্য-রাস্তায় পড়ে থাকেন, তাঁর পেট ফেটে অদেখা বাবুটাও মরে পড়ে থাকে তখন সেই শহরের সমস্ত মানুষ নগ্ন হয়ে পড়েন।
খবিরন যে একটা মা এটা কারও মাথায় আসল না? এই গ্রহের সব মার আদল যে এক, সে 'মাছ-মা' [৩] হোক আর খবিরন, পার্থক্য কী! খবিরন নিশ্চয়ই এই শহরের এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাগলের মত ছুটাছুটি করেছেন, একে-ওকে ধরেছেন, বাবুটাকে-নিজেকে বাঁচাবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কেন পারলেন না?
আমরা জানি, অদেখা বাবুদের আত্মিক যোগ থাকে কেবল মার সঙ্গেই- কেবল আমরা এটা জানি না, বাবুটা কি কোন প্রকারে মাকে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল? নাকি সেও হাল ছেড়ে দিয়েছিল, একগাদা থুথু ফেলে উল্টো আরও মাকে প্ররোচিত করছিল। থুথু! অনেকে চেঁচিয়ে উঠবেন, ভুল-ভুল! অ, আচ্ছা, অদেখা সন্তানরা থুথু ফেলতে পারে না, না? তাই হবে!
আমি কেবল ভাবি, সেই শহরের দালান-কোঠাগুলো এখনও দাঁড়িয়ে থাকে কেমন করে? কেন এখানে রোদ, কেন বৃষ্টি?
নপুংসক আমরা, আমরা আর কিছু না পারলে খবিরনের বিরুদ্ধে একটা মামলা ঠুকে দিতে পারি। কারণ আত্মহত্যা প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা কলমের মাধ্যমে অনলবর্ষন করতে পারেন, কলামলেখক লিখতে পারেন দেড় হাত লম্বা কলাম, 'কী নিষ্ঠুর মা' এই শিরোনামে:
"খবিরন ভয়ংকর একটা অন্যায় করিয়াছে। সে নিজেকে মারিয়া ফেলিয়াছে। কেবল তাহাই নহে, এই পাষন্ডী মা তাহার গর্ভের সন্তানকেও মারিয়া ফেলিয়াছে। আমরা ভাবিয়া ভাবিয়া কূল পাইতেছি না, একজন মা হইয়া কেমন করিয়া তাহার গর্ভের সন্তানকে হত্যা করিতে পারে? ইহা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বটে। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবী করিতেছি, এই পাপিষ্ঠাকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হউক।"
অভাগা খবিরন- ইহকাল গেল, পরকালও!
সহায়ক লিংক:
১. প্রথম আলো: http://www.eprothomalo.com/?opt=view&page=4&date=2010-08-24
২. মা এবং তার অদেখা সন্তান: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_10.html
৩. মাছ-মা: http://www.ali-mahmed.com/2009/06/blog-post_6002.html
Subscribe to:
Posts (Atom)