পাথর চাপা হৃৎপিন্ড নিয়ে জয় বাসায় ফিরল। এখানে আরেক নাটক হচ্ছে। খালা ইভাকে নিয়ে পড়েছেন। ও বিব্রত ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে আছে। খালার দাঁত যেমন উঁচু, মনটা তেমনি নিচু। বিশ্রী ভঙ্গি করে কি সব জিজ্ঞেস করছেন, ‘অ্যাই, অ্যাই মেয়ে তোমার হাত-গা খালি, তোমার গহনা কই?’
জয় ঠান্ডা গলায় বলল, ‘এই মেয়ে, এই মেয়ে করছ কেন, ওর নাম নাই?’
‘তুই এভাবে কথা বলছিস যে! মুরুব্বীর সঙ্গে কেউ এভাবে কথা বলে?’
‘কিভাবে কথা বলছি?’
‘কিভাবে বলছিস জানিস না?
‘না, জানি না। বলে দাও।’
‘গহনার কথা জিজ্ঞেস করাতে দোষ হয়েছে, লিস্ট করতে হবে না?’
‘লিস্ট দিয়ে কি হবে?’
‘কি বলছিস তুই! কি কি এল খোঁজ নিবি না?’
‘কি করব খোঁজ নিয়ে, ধুয়ে খাব? ওর জিনিসের খোঁজ ও রাখবে, তুমি আমি কে?’
‘আমি কেউ না! বাড়িতে ডেকে এনে অপমান করছিস?’
‘তুমি যা ভাল মনে করো।’
এ মুহুর্তে খালাকে দেখে মনে হচ্ছে অসহ্য রাগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবেন। কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, ‘ওই দিন মাত্র তোকে লেংটা দেখলাম, আজ আমাকে তুই-তোকারি করছিস!’
‘খালা, শুধু শুধু কথা বাড়াচ্ছ। কখন তোমাকে তুই করে বললাম।’
‘বলিসনি, বলবি।’
‘আচ্ছা, যখন বলব তখন চড় দিও।’
‘বলে ফেললে কি করব? কলস ভেঙ্গে ফেললে চড় দিয়ে লাভ কী!’
‘খালা, দয়া করে চুপ করো।’
‘বাইরের একটা মেয়ের জন্যে আমাকে চুপ করতে বলছিস?’
‘এ বাইরের মেয়ে না, একে কলেমা পড়ে বিয়ে করেছি। তুমি যেমন, এ-ও তেমন।’
‘এ আর আমি সমান হলাম! কোথায় আগরতলা কোথায় চৌকির তলা!’
জয় চুপ করে রইল, এ মহিলার সঙ্গে কথা বলা বৃথা। ইভার মুখ সাদা হয়ে গেছে। খালা পাগলের মত হয়ে গেলেন, ‘তুই আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করলি, তোর খালু আজ পর্যন্ত এমন করার সাহস পায়নি!’
জয়ের ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গে গেল। চোয়াল শক্ত করে বলল, ‘খালু ভাল মানুষটার মাথা তো রাতদিন চিবিয়ে খাচ্ছ। লোকটার পাগল হতে বাকি আছে।’
খালা একছুটে রান্নাঘর থেকে জয়ের মাকে নিয়ে এসে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বললেন, ‘জাহানারা, দেখ, দেখ তোর ছেলে কিসব বলছে, আমার স্বামী নাকি পাগল। আল্লাগো, এ দিনও দেখার ছিল! অনেক হয়েছে আর না, বানের জলে ভেসে তো আর আসি নাই। ভেবেছিলাম ক’দিন থেকে এর সংসার গুছিয়ে দিয়ে যাব। ঠিক হয়েছে, মুখে ঝাঁটা মরে তাড়িয়ে দিচ্ছে। এই মুহুর্তে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। এক মুহুর্ত না... জানুরে, একটা ট্যাক্সি ডেকে দে।’
জয়ের মা, বলে কয়েও বোনকে রাখতে পারলেন না। খালা যাওয়ার আগে দীর্ঘক্ষণ খালুর সঙ্গে ফোনে কথা বললেন। প্রত্যেকটা শব্দের সঙ্গে খন্ড খন্ড করে কাঁদলেন। জয় ভয়ে ভয়ে ছিল, খালা না আবার মত বদলে ফেলেন।
ইভা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘তুমি কেন এমন করলে, খালাকে কাঁদিয়ে দিলে।’
‘বেশ করেছি। এ মহিলার মন আবলূস কাঠের মত।’
‘ছি, তুমি আমার জন্যে এমন করলে, মা খালা এরা কি ভাবলেন বলো তো!’
‘খালা কি ভাবলেন এতে কিছুই যায় আসে না। মা কিছু মনে করবেন না। নিজের বোনকে ভালই চেনেন।’
‘ছি, তুমি কিসব করো!’
‘আচ্ছা, এসব বাদ দাও। তন্ময় কিন্তু দুপুরে খাবে না, চলে গেছে।’
‘তুমি আটকালে না, আমি না কত করে বললাম।’
‘বলেছিলাম, শুনল না। ও নিয়মিত ড্রাগ নিচ্ছে, জোগাড় করতে গেছে।’
‘কি-ক-ক্কি বলছ!’
‘হুঁ। খুব খারাপ অবস্থা ওর।’
ইভার অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে এটা ভাবতে যে, এই আমুদে ছেলেটা ড্রাগ নিচ্ছে। জয় এবার গাঢ় স্বরে বলল, ‘যাওয়ার সময় খুব ঘটা করে বলে গেল তোকে অসম্ভব পছন্দ করি। কথাটা বলেই ফেললাম, আর যদি সুযোগ না হয় কোনদিন।’
ইভা এগিয়ে এসে নিঃসঙ্কোচে জয়ের হাত ধরল, ‘তন্ময় ভাইকে একটু বলবে আমার সঙ্গে দেখা করতে?
‘তন্ময়, তুই এটা কি করলি, কিসের অভাব তোর? তুই কী জানিস টাকা-পয়সার কি কষ্ট, তুই কী জানিস! এই আমি, আমি জানি। গত বছর পর্যন্ত কি কষ্টই না করেছি। মাস্টার্স করে ঘরে বসে আছি। চাকরি নেই, বাবার পেনশনের টাকায় চলছে না। এ বছর ছোট ভাইকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়াতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি। জানো ইভা, আমার এই ভাই তার জীবনের সেরা সময় কাটাচ্ছে বিদেশে, নি:সঙ্গ-একাকী। বড় ভাই হয়ে এ লজ্জা কোথায় রাখি বলো? মুহুর্তের জন্যেও ভুলতে পারি না, দায়িত্ব পালনে আমি অসফল হয়েছি। ওর যাওয়ার সময় আমি হাসিমুখে বললাম, যা দীপু যা, তোকে কোরবানি দিলাম। হাসি হাসি মুখে বলেছিলাম কিন্তু বুক ফেটে যাচ্ছিল।’
জয়ের এতক্ষণে খেয়াল হলো ইভা ওর হাত ধরে আছে। কী কোমল ওর হাত! জয় লজ্জায় লাল-নীল হতে থাকল, হাত ছাড়াবার জন্যে টানাটানি করতে লাগল। ইভা হাত ছেড়ে নিঃশব্দে হাসল। কর্কশ শব্দে টেলিফোন বাজছে। জয় বেঁচে গেল। দ্রুত গিয়ে ফোন উঠালো। ওপাশ থেকে খালুর আমুদে গলা ভেসে এল, ‘লায়েক হয়েছিস, তোর খালাকে কি বলেছিস? টান মেরে আলাজিব ছিঁড়ে ফেলব।’
‘সরি, খালু। আমার না আজ মনটা ভাল নেই।’
‘তোর মন ভাল নেই মানে, ওই জিনিসটা আছে নাকি তোর!’
‘সরি, খালু। ভুল হয়ে গেছে।’
‘আ: ক্যাঁচরম্যাচর বন্ধ কর। এই দজ্জাল মহিলাকে কাবু করলি কি করে?’
‘ইয়ে খালু, খালা খুব রেগেছে নাকি?’
‘রেগেছে মানে, গুন্ডা লাগিয়ে তোকে খুনও করে ফেলতে পারে, বিচিত্র কিছু না। আমাকে বলেছে তোকে ল্যাংটা করে পিটাতে, হা হা হা’
‘বিতিকিচ্চি ব্যাপার হয়ে গেল, খালু।’
জয় রিসিভারটা কানে আরও চেপে ধরল, কেমন শোঁ-শোঁ শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে সাগর তীরে বসে আছে। চিৎকার করে বলল, ‘হ্যালো, খালু, হ্যালো, লাইন ডিসটার্ব করছে, জোরে বলো শুনতে পাচ্ছি না।’
খালূর অস্পষ্ট গলা ভেসে এল, ‘এই শোন, কি কি বলে এই ভদ্র মহিলাকে কাবু করলি সব কাগজে লিখে রাখ। পরে তোর কাছ থেকে জেনে নেব নে।’
লাইন কেটে যেতেই জয় টেলিফোন রেখে হাসল। খালু যে কী ছেলেমানুষ!
‘জানো ইভা, খালুর মত মানুষ হয় না, অথচ এই ভদ্রলোককে খালা যে কি মানসিক অত্যাচার করেন এটা বলে শেষ করা যাবে না। এই সেদিন চাকরানির সাথে খালুকে জড়িয়ে বিশ্রী হইচই করলেন। একদিন কি ভালমানুষের মত মুখ করে বললেন, জয়, তোর খালু আজকাল দেরি করে বাসায় ফিরছে। আমার মনে হয় কোন মেয়ের পাল্লায় পড়েছে। তই একটু খোঁজ খবর নে তো, টাকা পয়সার কথা চিন্তা করিস না। চিন্তা করো, কী ছোট এই মহিলার মন।’
‘তুমি কি চা খাবে?’
‘নাহ, একটু বেরুব। তন্ময়ের ব্যাপারে কি করব বুঝতে পারছি না। দেখি ওর বাবার সঙ্গে কথা বলতে পারি কি না।’
*কনক পুরুষ, ৯: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_23.html
**কনক পুরুষ: http://tinyurl.com/29uf4s
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Sunday, August 22, 2010
কনক পুরুষ: ৮
বিভাগ
কনক পুরুষ
Subscribe to:
Posts (Atom)