অনেক আগে একটা লেখা লিখেছিলাম, 'মুক্তিযুদ্ধের আবেগও একটি বিক্রয়যোগ্য পণ্য' [১], ওই লেখাটার মূল সুর অনেকে ধরতে পারেননি। বিশেষ করে নব্য মুক্তিযোদ্ধাদের আহত হওয়ার কথা। নব্য মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সমস্যার অন্ত নেই- 'ম' শব্দটা পর্যন্ত এরা নিজেদের পকেটে ভরে রেখেছেন।
যাই হোক, ক-দিন আগে টিভি অন করতেই চ্যানেল আইয়ের রান্নার অনুষ্ঠান। যথারীতি এই গ্রহের দুর্ধর্ষ রান্না বিশারদ কেকা ফেরদৌসি রান্না করে দেখাচ্ছিলেন। ইনি কবি নজরুলের কোন এক বার্ষিকীতে 'শাহী কাজী মাটন' রেসিপি নামিয়ে ফেলেন। ইনি 'স্বাস্থ্য সচেতন রান্না'-এর বই লিখে Gourmand world cook book-এ নাম লেখান। স্বাস্থ্য সচেতন? এটা অবশ্য এই ভদ্রমহিলাকে দেখলেই আঁচ করা যায়!
আগেও দেখেছি এই ভদ্রমহিলা হর্সমাউথ, অনবরত বকে যান; কাউকে বলার সুযোগ দেন না।
এতে অবশ্য কোন সমস্যা দেখি না কারণ এই পারিবারিক চ্যানেলে এক ভাই হাস্কি ভয়েসে গাঁক গাঁক করবেন। বোনের রান্নার অনুষ্ঠান লন্ডন প্যারিসে নিয়ে গিয়ে দেখানো হবে এ নিয়ে আমরা বলার কে! মার মুক্তিযুদ্ধের নাটক দেখানো হবে, যেটায় থাকবে আরোপিত কিছু সংলাপ। কৃষকের ছোট্ট মেয়ে বলছে, 'বাজান আসার সময় বাজার থিক্যা ইন্দুর মারার বিষ নিয়া আইসো। পাকিস্তানি আইলে জান দিমু কিন্তু ইজ্জত দিমু না'।
কোথাও কোন সমস্যা নেই কিন্তু যখন দেখলাম কেকা ফেরদৌসি বলছেন, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, আমার স্বামীও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তখন আমি খানিকটা নড়েচড়ে বসি, ঘটনা কী!
ঘটনা কি তা আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হয়।
কেকা ফেরদৌসি এদিন খিচুড়ি রান্না করছিলেন। খিচুড়ি ভাল জিনিস, বর্ষা নেই বলে শীতে খিচুড়ি খাওয়া যাবে না এমন কোন দিব্যি কেউ দেয়নি। তবে এই খিচুড়িটা খানিকটা অন্য রকম, খিচুড়ির সঙ্গে এখানে ব্যবসা মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানটা হচ্ছে 'সজীব খিচুড়ি' নিয়ে। সজীব নামের একটা কোম্পানির 'সজীব রেডি মিক্স ঝটপট রান্না'।
হর্স মাউথের চিঁহি হি রব থেমে নেই! কেকা ফেরদৌসি এবার গোপন তাসটা বের করলেন। তিনি বলে যাচ্ছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা খিচুড়ি খেতেন, মুক্তিযোদ্ধারা কেমন করে খিচুড়ি খেতেন, কি কি ধরনের খিচুড়ি খেতেন। পাতলা, না ঘন? এই নিয়ে অনবরত বকে যাচ্ছেন। পাশাপাশি চলছে সজীব খিচুড়ি নিয়ে খুন্তি নাড়াচাড়া। যথারীতি কেকা ফেরদৌসির মুখ নাড়ানাড়ি।
এখন আমি অপেক্ষায় আছি। মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সাগর সাহেবরা অচিরেই আরও নতুন নতুন খেলা আবিষ্কার করবেন। কে জানে একদিন দেখব ফাইভ স্টার কোন এক হোটেলে (এটা এঁদের জন্য কোন বিষয় না [২], মতিউর রহমান চৌধুরীরা এমন অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য যে মুখিয়ে থাকেন) লালমুখো বাঁদরদের সম্মানে কাঠের ডামি বন্দুক হাতে কোন একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এনে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা দেখাবেন। 'লালুয়ারা' শিষ বাজিয়ে বলবে, "ওয়াও, হোয়াড আ মাক্টিডুড্ডা"!
সহায়ক সূত্র:
১. পণ্য...: http://www.ali-mahmed.com/2009/10/blog-post_07.html
২. পুরস্কার...: http://202.79.16.19/index.php?option=com_content&task=view&id=14782&Itemid=39
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Tuesday, December 21, 2010
মুক্তিযোদ্ধাদের খিচুড়িও যখন একটি বিক্রয়যোগ্য পণ্য!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
6 comments:
ভাইয়া পোষ্টে একটা বিষয় ভাল লাগল না।
"স্বাস্থ্য সচেতন? এটা অবশ্য এই ভদ্রমহিলাকে দেখলেই আঁচ করা যায়!"
আপনি "তবুও একজন শফিক রেহমান"(http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_20.html) লেখায় উল্লেখ করেছেন,-
"শিক্ষিত মানুষরা কেন যে কারও শারীরিক ক্রুটি নিয়ে কটাক্ষ করেন, কে জানে- যেটায় তার হাত নাই!"
ভাই সাক্লাইন , শারিরিক ত্রুটি আর স্থুলতা এক জিনিস নয়।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা একধরনের অর্জিত সমস্যা।মিসেস কেকা একজন পুষ্টি বিশারদ।এমন স্বাস্থ্য তার অতি ভোজনের ফল বলেই অনুমান হয়।
"ভাইয়া পোষ্টে একটা বিষয় ভাল লাগল না।..."
এই বাক্যটা যখন লিখছিলাম তখনই অনুমান করেছিলাম নিজের গর্তে নিজেই পড়ছি। লিখতে হয়েছিল ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তীব্র অনিচ্ছায়। তাহলে লিখতে গেলাম কেন?
ফকিরের ভূমিকায় যেমন একজন পালোওয়ানের মত মানুষকে সহ্য করা মুশকিল তেমনি পুষ্টিবিশারদ (!), স্বাস্থ্যসম্মত রান্নার মাস্টারের এই নমুনাকেও।
আমার অনুমান, এই ভদ্রমহিলা এই স্থূলতা অর্জন করেছেন। কিন্তু কখনও কখনও স্থূলতার উপর মানুষের হাত থাকে না। এই ভদ্রমহিলার ক্ষেত্রে ঠিক কোনটা দায়ি এটা পুরোপুরি নিশ্চিত নই বলে আমার এই বাক্যটা লেখাও এক ধরনের স্থূলতা।
এটা বাক্যটা লেখার জন্য আমি আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করি। @Shaqlain Shayon
"শারিরিক ত্রুটি আর স্থুলতা এক জিনিস নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা একধরনের অর্জিত সমস্যা।..."
সহমত। তারপরও...। লেখার সৌন্দর্যহানি ঘটে। @your doctor
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আর কোনো ব্যাবসার রাস্তা নেই মনে হয়, থাকলে আপনার আমার এখনই ঝাপিয়ে পরতে হবে! বৈশাখী টিভিতে "সম্পর্ক" নামে এক ইন্ডিয়ান বজ্র পরা নাটকের হুবুহু কার্বন কপিতে ( যেখানে তারা রাতের বেলায় মেইক-আপ, আর লাখখানিক টাকার শাড়ি পরে ঘুমাতে যায়) কয়েকটি পর্ব হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধকে ব্যাবহার করে। কেউ একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, সে আবার রাজাকারের সন্তানের সাথে প্রেমে জড়িয়ে গেছে! চিন্তা করেন , মুক্তিযুদ্ধকে কতোটা নীচে নামিয়ে এনেছি আমরা! কয়েকদিন পরে মুক্তিযোদ্ধাদের জামা-কাপড় নিয়ে ব্যাবসা হবে, ফ্যাশন শো হবে যদি এখন্তক না হয়ে থাকে!
"কয়েকদিন পরে মুক্তিযোদ্ধাদের জামা-কাপড় নিয়ে ব্যাবসা হবে...।"
এই ব্যবসা তো শুরু হয়ে গেছে! মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠি নিয়ে...@নিশম
Post a Comment