Search

Saturday, September 5, 2009

রাজসভা এবং সেলিনার গোপন কথা

­রাজসভা বসেছে।
বর্তমানে রাজসভায় (link) রাজা নাই, রানী আছেন। রাজা যায় রানী আসে, রানী
যায় রানী ­আসে। মন্ত্রীরা অধিকাংশই উপস্থিত আছেন। এই মন্ত্রী-সেই মন্ত্রী, খাদক মন্ত্রী, কোনও মন্ত্রীরই অভাব নাই। পশু মন্ত্রী নাই কিন্তু পশু সম্পদ মন্ত্রী আছেন। এরাই দেশটার চাকা বনবন করে ঘুরাচ্ছেন।

এই পবিত্র রাজসভা (পবিত্র শব্দটি যোগ করা আবশ্যক-ফরযে আইন, নইলে এটা অপবিত্র বলে কারও ভ্রম হতে পারে) থেকেই দেশ চালাবার নীতি নির্ধারিত হয়। দেশের বিভিন্ন জটিল সমস্যা নিয়ে এখানে আলোচনা হয়। প্রতি মিনিটে হাজার-হাজার টাকা খরচ!
আলোচনার একটা সময় ব্যয় হয় যখন যে রাজা থাকেন তার বাবার, স্বামীর গুণকীর্তন করে। অধিকাংশ সময় বিরোধীদলের কুৎসা গেয়ে।
­বিরোধীদল­ দেশটার চাকা খুলে পাখা লাগাতে চাচ্ছেন, এইসব। বিরামহীনভাবে এই খেলা চলেই আসছে। আফসোস, এরা বেলের শরবত খেলে পেটের সঙ্গে সঙ্গে মাথাও ক্লিয়ার থাকত!

সেই দেশেরই এক মহিলা লেখক। ইনি একাই একশ, বিজ্ঞাপনের আবশ্যকতা কী! একটা বই লিখেছেন ‘বোরখাওয়ালী সেলিনার গোপন কথা’। এই নিয়ে বড় হইচই। কারা কারা নাকি আবিষ্কার করেছেন বোরখার বাইরে এক রং, ভেতর দিকে অন্য রং। বাইরের রং কালো তো ভেতর দিকে সবুজ- এই অঙ্গে অনেক রূপ। কী অবাক কান্ড!
'বোরখাওয়ালী সেলিনার গোপন কথা'র লেখক বিশদে লিখেছেন কারা কারা বোরখার রং দেখেছেন। এই নিয়ে সৈয়দ ভংশের (!) এক লেখক কাজীর দরবারে এগারো কোটি স্বর্ণ মুদ্রার মানহানী মামলা ঠুকেছেন, ইয়ালী! পাশের দেশেও নাকি কয়েক কোটি টাকা-টংকার মামলা হয়েছে। দুগগা-দুগগা!

'বোরখাওয়ালী সেলিনার গোপন কথা'র লেখকের এক কথা, আমরা সমস্ত শরীর বোরখায় ঢেকে রাখলেও দু-চোখ তো খোলা থাকে। আমরা পুরুষদের সব দেখতে পারব, পুরুষেরা কেন বোরখার ভেতরের রং দেখতে পারবে না? আমাদের কি ঝিনিকি ঝিনিকি মন থাকতে নেই? অন্য এক লেখককে নিয়ে এই বইটির লেখক নাকি
­ঝিনিকি-ঝিনিকি খেলা খেলেছিলেন কিন্তু তাদের মিলন হয়নি! আফসোস!
­
যথারীতি রাজসভায় এ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হলো। তর্ক, কুতর্কের ঝড় বয়ে গেল। হাস্যরসেরও সৃষ্টি হলো। একেকজন বিপুল আমোদে অন্যজনের গায়ে এলিয়ে পড়ছিলেন। কী আনন্দ-কী আনন্দ!
­এখানে কিছু ভাঁড় মন্ত্রী সর্বদাই থাকেন। এদের কাজ হচ্ছে প্রজাদের হাসানো। হাসতে হাসতে ­প্রজাদের ­খানিকটা পেশাব বেরিয়ে যায় বিধায় অযু ভেঙ্গে যায়! কেন অযু ভেঙ্গে যায় এই বিষয়ে বিশদে যেতে চাচ্ছি না।

­আকবরিয়া নামের একজন মন্ত্রী ওদিন বললেন: আমার ছয় বছরের ছেলে এখনও মার দুধ খায়, আমি নিজে বার বছর পর্যন্ত মার দুধ খেয়েছি। হি হি হি।
­ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে ভেঙ্গে সবজি চাষ করলে দেশের হাদ্য (খাদ্য) সমস্যার সমাধান হতো। হাক্কু হাক্কু হাক্কু।
­দূর্ঘটনায় যারা মারা গেছেন তারা ছাগল পাবেন না তবে তাদের পরিবারের লোকজনরা একটা করে ছাগল পাবেন, ফিনফিনে দাড়িসহ। রশি ফ্রি। হা-হা-হা। 


অন্য একজন মন্ত্রী মহামতি ছাফু বললেন: বিল গেটস ব্যাটা কম্পিউটার বিকরি করিয়া এই দ্যাশ থ্যিকা কুটি কুটি টাকা নিয়া যাইতেছে। হো হো হো।
­চিনির দাম বাড়াইছি তো কি হইছে, চিনি খাওয়া ভালা না? যে বেশি চিনি খায় হে পট নিয়া ডায়বেটিস রোগির পিছন পিছন ঘুরব। হোঃ হোঃ হোঃ।
দেশ উন্নতি করছে, ফকিরের হাতেও অহন মুবাইল। খিক খিক খিক।
 
কারেন্টের মন্ত্রী না তবুও বললেন, পাবলিকের হাতে হাতে মোবাইল। মোবাইল চার্জ দিয়া সব কারেন্ট শ্যাষ কইরা ফেলাইতেছে। বিকল্প উপায়ে কারেন্ট উৎপাদন করিতে হইবেক।

­মাথায় গ্রিজ মেখে অন্য-এক মন্ত্রী চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, উই লুকিং ফ শাতরু। আসো, ক্রসফায়ার-ক্রসফায়ার খেলা খেলব।

­আজ একজন আলতাফিয়া বললেন: মেথরের মল মেথর লইয়া গেলে হামি কি কারিবে? ­যার মাল ছে (সে) লইয়া গেছে। হিক হিক হিক।
­(সত্যি সত্যি এই কথাগুলো আমাদের মন্ত্রী বাহাদুররা বলেছিলেন, অতি সামান্য বদলে দেয়া হয়েছে, এই যা। ভাল কথা, মন্ত্রী বাহাদুররা আবার শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারেন না। তাদের বক্তব্য শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে, মিডল-ক্লাস।)

­আমাদের মন্ত্রী-টন্ত্রী বাহাদুররা পারেন না এমন কোন কাজ নাই, এরা চাইলে হনুমানজীকে পর্যন্ত কাজে লাগিয়ে দিতে পারেন! ইচ্ছা করলে এরা ২৫ ঘন্টায় দিন করে দিতে পারেন। ­আজকাল ­ফকিরদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যেতে হয় না, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই ছুটে যান ফকিরের কাছে! বিচিত্র কারণে এঁরা ডন কুইক্সোটের মত ভাবের জগতে থাকেন। ফ্রিগেট কেনার কথা ভাবেন কিন্তু রুস্তম-হামজার বিকল্প ভাবেন না! মুক্তিযুদ্ধের আবেগ নিয়ে জাগলিং করেন। ­
­সবই তাঁদের ইচ্ছা, আমরা শুনি কিচ্ছা!

­সেলিনার গোপন কথা নিয়ে রাজসভায় তুমুল আলোচনা হচ্ছে। একজন মন্ত্রী মহোদয় বললেন, ছেলিনা পাইছেটা কি, কেনু সে এইসব গুপুন কথা লিখবে? কেনু-কেনু-কেনু, উয়াই?
অন্যজন কটাক্ষ করে বললেন, লিখছে তো কি হইছে , গুপন কথায় আপনের
­তো আর নাম নাই, ইয়ুর ফব্লেমটা কি?
তুমুল বচসা। বইটি রাজসভায় জমা রাখা হলো পরবর্তিতে এটা খুঁটিয়ে দেখা হবে বলে। তাখলিয়া-বারখাস্ত বলে
­আজকের মত সভা মুলতবি হলো।­

সমস্যা দেখা দিল, ভয়াবহ সমস্যা। রাজসভায় জমা দেয়া ‘বোরখাওয়ালী সেলিনার গোপন কথা’ বইটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ খোঁজ খোঁজ। কোথাও নাই। দ্বাররক্ষক, কতোয়াল সবাইকে ডাকা হলো। নির্দেশ দেয়া হলো, যেভাবেই হোক এই বইটা খুঁজে বের করার জন্য। খানাতল্লাসী শুরু হলো। নাই তো নাই।
­বই তো আর পায়রা না যে ডানা মেলে উড়ে যাবে। ­ভয়ের চোটে দ্বাররক্ষকের মলদ্বারের দ্বার বন্ধ হয়ে গেল।

তান্ত্রিক ডাকা হলো। তান্ত্রিক মহাশয় অসংখ্য খুলিতে ধুপ জ্বালিয়ে রাজসভা প্রায় অন্ধকার করে ফেললেন। একবার ডানে একবার বায়ে ঝাড়ু দিয়ে পেটাচ্ছেন। বিচিত্র সব মন্ত্র পড়ছেন:

­"অং-বং-চং, হং হং হং, ঠং ঠং,
­করো নাকো ভং-চং-ফং, ঞ্চঁ-ঞ্চঁ
­পাশের বাড়ির মেয়েটি খেলে কুত-কুত,
­কোথায় গেলি সেলিনার গোপন ভূত।
­আহারে চুক চুক চুক- ভুক ভুক ভুক"
­তান্ত্রিক মন্ত্র পাঠ শেষ করে অমায়িক হাসি হেসে বললেন: মুসকিল আসান। মিল গিয়া, সাব কুছ খুল গিয়া।
সবাই উদগ্রীব: পেয়েছেন তান্ত্রিক ভা। (ভা মানে ভাইয়া)
­তান্ত্রিক ভাইয়া চুকচুক করে মানুষের খুলিতে চা পান করতে করতে বললেন, ­কিতাব সেলিনা গোপন কিয়া হ্যায়।
­সবাই স্তম্ভিত। ওরি শ্লা, কুতুয়া বলে কি! সেলিনার বইটা গোপন করেছে, মানে কী! বই গেল কিভাবে ওর কাছে? বইটার কি বিশেষ 'পাতা' গজিয়েছিল যে উড়ে-উড়ে চলে গেল!
রাজপাট অচল। পরদিন শুভ সংবাদটি পাওয়া গেল। একজন মন্ত্রী সাহেব বইটা পড়ার জন্য বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন।


*লেখাটা নেওয়া হয়েছে 'সাদাকে কালো বলিব' থেকে। ছবিঋণ: বই-মেলা ডট কম
...
লেখাটার এখানেই সমাপ্তি। এখন অন্য এক প্রসঙ্গ। তসলিমা নাসরিনের 'ক' বইটা বের হওয়ার পর অনেক নাটক হয়েছিল। লেখক সৈয়দ সাহেব ১১ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছিলেন। পরে এই মামলার গতি কী হয়েছিল এটা অবশ্য আমার জানা নাই! লেখক মিলন সাহেব বিশেষ উচ্চবাচ্য করেননি।
সবচেয়ে বিস্ময়কর কান্ডটা ঘটেছিল আমাদের মহান সংসদে এই নিয়ে তুলকালাম কান্ড হয়ে গিয়েছিল। কীসব হাস্যরসই না সৃষ্টি হয়েছিল, স্পীকার-মন্ত্রী-সাংসদদের আমোদে আমরাও আমোদিত হয়েছিলাম। যখন এখানে একজন অন্যজনকে কটাক্ষ করে বলছিলেন, আপনের সমস্যা কী, বইয়ে তো আপনার নাম তো
­নাই! 

আহারে-আহারে, এঁদের নাম নাই বলে এঁদের কী চাপা কষ্ট! ঝিনিকি-ঝিনিকি রক্তে ফিনিকি-ফিনিকি। কী কষ্ট-কী কষ্ট!
স্পিকার সাহেবের কাছে বইটা জমা রাখা হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে বইটার আর হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। খোঁজ-
­খোঁজ-­খোঁজ­ । অবেশেষে জানা গেল, একজন মন্ত্রীবাহাদুর 'ক' বইখানা বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন পড়ার জন্য!­ মন্ত্রীবাহাদুররা বই পড়েন এরচেয়ে আনন্দের আর কী আছে! ধন্য মায়ের ধন্য সন্তান...!

2 comments:

Sorif said...
This comment has been removed by a blog administrator.
Neha said...

Onek link deachen, sob golo porte gea jan berea geche :)