Search

Wednesday, October 16, 2013

একজন মানুষ কেবল একটা সংখ্যা না...

গত দুই সংখ্যায় লিখেছিলাম, নায়কদের নিয়ে কিন্তু নায়কের পাশাপাশি চলে আসে খলনায়কেরও কথা। তাই এই সংখ্যায় (http://khoborer-khoje.blogspot.com/2013/10/blog-post_14.html) লিখলাম:
সম্ভাব্য মৃত্যু! 
৬ অক্টোবর। সকাল ১১টা। একজন বয়স্ক মানুষকে দেখা গেল রাস্তায় এলোমেলো পায়ে হাঁটছেন। তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি বুকে একটা ধাক্কার মত খেলাম। সমস্ত মুখ ক্ষত-বিক্ষত, তাকানো যায় না, এমন! কাছের একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ’এই মানুষটার কি হয়েছে’? তিনি উত্তর দিলেন, ’মনে হয় মদ খাইছে’।
আমি হতভম্ব! একটা মানুষ রক্তে ভেসে যাচ্ছেন- তিনি মদ খেয়েছেন, নাকি খাননি এই প্রশ্নটা এখন কেন!। এই মানুষটার যে এখন দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। পুরোটা ভাবার সময় পাওয়া গেল না এরিমধ্যে মানুষটা দড়াম করে মাটিতে পড়ে গেলেন।

মাটিতে পড়ে থাকা মানুষটাকে আমি হাত বাড়িয়ে শক্ত করে ধরে আছি। মানুষটার সমস্ত মুখ রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে, দাড়ি বেয়ে টপটপ করে রক্ত ঝরছে! ফোঁটায় ফোঁটায় পড়া সেই উষ্ণ রক্ত আমার হাতে পড়ছে। আমি একজন দুর্বল মানুষ, দৃশ্যটা, গোটা বিষয়টা আমার কাছে সহ্যাতীত মনে হচ্ছিল। আমি নিজের সঙ্গে নিজেই যুদ্ধ করছি যেন আমি নিজেই-না জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমার মাথায় সব কেমন যেন জট পাকিয়ে যাচ্ছে- এখন কী করব? পুলিশি ঝামেলারও একটা বিষয় আছে।
আমি পাগলের মত একের-পর-এক ফোন করে যাচ্ছি। খবরের খোঁজের পরিবারের লোকজনের এখন বড়ো প্রয়োজন। খবরের খোঁজের সম্পাদককে ফোনে পাওয়া গেল। তার আসতে সময় লাগছে দেখে ফোনে ধরার চেষ্টা করি নির্বাহী সম্পাদককে। তিনি আমাকে ফোনে বললেন, ’একটু পরে আসলে হয় না, আমি তো এখনও নাস্তা করিনি’। আমি নির্দয়ের মত বললাম, ’না, এখুনি আসতে হবে’।

ঝড়ের গতিতে এরা দুজনেই চলে আসেন। আমি বুকে আটকে রাখা শ্বাস ফেলি। যাক, এখন যাহোক একটা গতি হবে। আমার আর কিছু করতে হয়নি- এরা ভাঙ্গাচোরা ওই মানুষটাকে অতি দ্রুত হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করলেন।  এদের কল্যাণে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসাও শুরু হয়ে গেল।


এরপর ফাঁকে ফাঁকে আমরা মানুষটাকে দেখে গেছি। আসল ঘটনাটা এমন, কেউ এই মানুষটাকে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে দিয়েছে, এরপর টাকা-পয়সা রেখে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়েছে। এখন মানুষটা ঘোরের মধ্যে উলটা পালটা বকছেন। কখনও বলছেন তাঁর বাড়ি রায়পুরায় আবার কখনও বলছেন, নোয়াখালি...। 
পরের দিন দুপুরেও আমরা দেখলাম মানুষটা এলোমেলো প্রলাপ বকছেন। মানুষটার ঝোলার মধ্যে একটা কিশোরের ছবিও পাওয়া গিয়েছিল। আমরা চেষ্টা করছিলাম, তাঁর বাসার ঠিকানা বের করার জন্য কিন্তু তাঁর আচরণের অস্বাভাবিকতার কারণে কোনো সুরাহা হচ্ছিল না। কিশোরের ওই ছবিটাও দেখানো হলো কিন্তু তিনি চিনতে পারলেন না। আমরা বুঝে গেলাম মানুষটার সুস্থ হতে আরো সময় লাগবে।
আমরা হাসপাতালের লোকজনকে বলে এসেছিলাম, পরের দিন সকাল পর্যন্ত দেখা যাক তাঁর স্মৃতি ফিরে আসে কি না। স্মৃতি ফিরে আসলে আমরা এই মানুষটাকে বাড়িতে পাঠাবার ব্যবস্থা করব। আমরা এসে যা হোক একটা ব্যবস্থা করব।

পরের দিন খবরের খোঁজের প থেকে একটা লুঙি, একটা পাঞ্জাবি কেনা হলো কারণ আমরা দেখে এসেছিলাম, মানুষটার পরনের লুঙি ছিঁড়ে ফালা ফালা হয়ে গেছে, গায়ের কাপড়টায়ও ছোপ ছোপ রক্ত শুকিয়ে ছিল। আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখলাম, মানুষটার বিছানা খালি! আমরা অপেক্ষায় ছিলাম হয়তো বাথরুমে গেছেন এটা ভেবে। কিন্তু অনেকটা সময় পার হবার পর খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই মানুষটাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে!

আমি হতবাক, বাকরুদ্ধ- মানুষটার জন্য কেনা কাপড়গুলো বুকে জড়িয়ে ধরে আমি নির্বোধের মত দাঁড়িয়ে আছি। আমার চশমার কাঁচ ঝাপসা হয়ে আসছে। আমি প্রাণপণে কেঁদে না-ফেলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আহা, পুরুষ মানুষের লোকজনের সামনে কেঁদে ফেলাটা তো কোনো কাজের কাজ না। নিজেকে পরাজিত একজন মানুষ মনে হচ্ছিল। নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছিলাম, কেন-কেন-কেন, কেন এই মানুষটার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে গেল? কেন এই মানুষটার রক্তে আমার শরীর ভিজে গেল!

খানিকটা সামলে উঠার পর আমার ভেতরের দ্রোহ, অদম্য ক্রোধ পাক খেয়ে উঠে। দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ড-বয়কে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলাম, ’...৪৮ ঘন্টাও পার হয়নি, কোন যুক্তিতে এমন অবস্থায় এই মানুষটাকে এভাবে ছেড়ে দেয়া হলো? অপ্রকৃতিস্থ, এমন রোগির পুরোপুরি সুস্থ না-হওয়ার পরও কেন হাসপাতাল থেকে বিদায় করে দেয়া হলো, কেন’?
ওয়ার্ডবয় জানাল, ’আমাকে বলে লাভ নাই। হাসপাতালের টিএইচও স্যারের নির্দেশ মত ওনাকে ছেড়ে দেয়া হইছে’।
আহ, এই হাসপাতালের প্রধান যদি এই কাজটা করে থাকেন তাহলে এই চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিকে বকাবকি করার তো কোনো অর্থ হয় না।
খবরের খোঁজের সম্পাদক এই হাসপাতালের প্রধান ডা. শাহ আলমের সঙ্গে কথা বললেন। ডা. শাহ আলম জানালেন, ’রোগি বাড়ি যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল বিধায় তাকে বাড়ি যেতে দেয়া হয়েছে’।

বিষাক্ত কিছু খাইয়ে দেয়া রোগির সুস্থ হতে যে সময় লাগে এটা জেফকটের ‘মেডিসিন’ বই না-পড়েও বলে দেয়া যায়। এটা জানার জন্য তো রকেটবিজ্ঞানি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না!
আহা রে, কী মায়া গো এই ডাক্তার মানুষটার মনে!
ভাল-ভাল! এখন থেকে আমাদের দেশের সমস্ত ডাক্তার সাহেবরা এর মত বড়ই  মানবিক ডাক্তার হয়ে যাবেন। অপারেশন থিয়েটারে মাথা এলোমেলো রোগি যখন বলবে: ডাক্তার সাব: আমি অহনই বাড়িত যামু। তখন ডাক্তার সাহেব হা হা করে হাসতে হাসতে বলবেন, ভাল তো! যান, সোজা বাড়িতে চলে যান। বাড়িতে গিয়ে গরম-গরম ভাত খেয়ে ভাতঘুম দেন। এরপর হি হি করে হাসতে হাসতে ডাক্তার সাহেব মাটিতে গড়াগড়ি খাবেন। আহ, সে এক দেখার মত দৃশ্য বটে!
আমাদের দেশের সমস্ত ওটি এখন থেকে হয়ে যাবে বড়ই মানবিক একটা বাগান। কারো হার্টের অপরেশন হবে, ডাক্তার সাহেব বলবেন: না গো, না, আমি আপনার হার্ট ছুঁতেও পারব না- আহা, আমি যে বড়ো হৃদয়বান, গো।

যাই হোক, আমরা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মানুষটাকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। জানি, মানুষটা হারিয়ে গেছেন তবুও, যদি...যদি, যদি কোনো একটা বিচিত্র উপায়ে মানুষটাকে পেয়ে যাই। আসলে এই সব সিনেমায় হয়, বাস্তবে হয় না। বাস্তবে জলজ্যান্ত একটা মানুষ এমন করেই হারিয়ে যান। একটা মানুষ আসলে এই সব ‘ভদ্দনোকের’ কাছে একটা সংখ্যা মাত্র। এরা ভুলে যান এই মানুষটারও কেউ-না-কেউ প্রিয়মানুষ আছেন। যিনি পথ চেয়ে বসে আছেন মানুষটার ফিরে আসার অপেক্ষায়। অপেক্ষায় থাকা সেই মহিলার নাকের নথ ভিজে যায় চোখের জলে। এদিকে ছোট্ট মেয়েটা গাল ফুলিয়ে বসে আছে: বাজান যে বইলা গেলো আসার সময় কাঁচের চুড়ি নিয়া আইব, বাজান আসে না ক্যান?
রাত হওয়ার পূর্বে পাখিরাও তার আবাসে ফিরে আসবে হয়তো ফিরবেন না এই হতভাগা মানুষটা!
তাই শিরোনামে লিখেছি, সম্ভাব্য মৃত্যু! কারণ? মানুষটার মৃত্যু কী আমি চোখে দেখেছি? না, দেখিনি।

এবার অন্য প্রসঙ্গ। আচ্ছা, এই যে লক্ষ-লক্ষ ইরাকিকে জুনিয়র বুশ হত্যা করলেন কেউ কী দেখেছে বুশ নিজের হাতে একটা ইরাকির গায়ে টোকাটিও দিয়েছেন? না, তিনি কিসসু করেননি তবুও লক্ষ-লক্ষ ইরাকিকে হত্যার দায় জুনিয়র বুশ এড়াতে পারেন না।
গোল্ডা মায়ারের সেই বিখ্যাত উক্তি, “নিজ হাতে হত্যা করা বা হত্যার জন্য নির্দেশ দেয়া অথবা কাউকে হত্যার জন্য উপলক্ষ হওয়ার মধ্যে খুব একটা তফাত নেই।”

*আনুমানিক ১৫ বছর ধরে এই ডাক্তার সাহেব এই এলাকায় আছেন, বিচিত্র কারণে বদলি হন না- হলেও কাছাকাছি কোথাও, ঘুরেফিরে আবার এখানেই! স্বভাবতই এখানে তার শেকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে। সেই শেকড়গুলো আমাকে বড়ো বিরক্ত করছে- এরিমধ্যে পত্রিকাটি পড়ে কেউ-কেউ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাদের কারও-কারও কথা, এর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ আছে সম্ভবত। ভুল! এই ডাক্তারের এমন অনেক কান্ডের কথা আমি জানি যেসব লিখলে আস্ত একটা মহাভারত হয়ে যাবে। কিন্তু সেসব এখানে এখন আলোচ্য বিষয় না।
যারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাদের কাছে আমার স্পষ্ট বক্তব্য, আমার আপন ভাই হলেও এই লেখার একটা শব্দও আমি পরিবর্তন করতাম না। সবাই আমার হাত ছেড়ে দিলেও আমি এই মানুষটার কথা বলব, এই লেখার পক্ষে থাকব। কারণ আমার একজন পিতা ছিলেন এবং আমিও একজন পিতা।
পাখি ওড়ে যায় ফেলে যায় পালক, মানুষ চলে যায় রেখে যায় স্মৃতি। ওই মানুষটা হারিয়ে গেছেন কিন্তু আমার কাছে থেকে গেছে তার ঝোলা থেকে উদ্ধার হওয়ার সেই কিশোরটির ছবি। এই মানুষটার ঝোলায় মধ্যে কেন ছিল এই ছবিটা? এটা আজ আর জানার কোনো উপায় নেই! ছবিটির এই কিশোরটি কী অভিমান করে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল আর এই মানুষটা তাকে খুঁজতে বেরিয়েছিলেন?
আমার লেখালেখি করার জায়গাটায় সযতনে আছে ছবিটা, ওখানে চোখ পড়া-মাত্র আমার মাথায় সব কেমন জট পাকিয়ে যায়। আজকে ঈদের এই দিনে আমার খুব করে মনে পড়ছে এই মানুষটার কথা। যদিও অনুমান করি সম্ভাবনা খুবই কম তবুও প্রবল আশা নিয়ে ভাবি, মানুষটা কী ফিরতে পেরেছিলেন তাঁর পরিবারের কাছে? নাকি হারিয়ে গেছেন চিরতরে...।


*এই লেখায় আমি একটা ভুল করেছি, ডেভিডসনের জায়গায় জেফকট লিখেছি!
ভুল ধরিয়ে দিলে কেউ-কেউ ক্রদ্ধ হন কিন্তু আমি যে কেবল লজ্জায় মরে যাই এমনই না, মানুষটার প্রতি অসম্ভব কৃতজ্ঞও হই। যে-কারও কোনো প্রশ্ন থাকলে সাধ্যমত উত্তরও দেয়ার চেষ্টা করি। এই লেখাটাই ফেসবুকে (https://www.facebook.com/ali.mahmed1971/posts/10151697010007335) দেয়ার পর জীবনের গান নিকের একজন ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছেন। তার প্রতি আমি আমার গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি। কিন্তু তার লেখায় ছিল তীব্র শ্লেষ, অহেতুক আক্রমণ, সীমাহীন মাতব্বরি করার চেষ্টা। নমুনা:
জীবনের গান লিখেছেন:
ডাক্তারের দোষ তো দেখছি নাআপনি নিজেই লিখেছেন সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু হয়ে গেল’.... এটা তো খুবই ভাল কথাসম্ভবত ডাক্তারের অন্যায় যে তিনি আটচল্লিশ ঘন্টা না হতেই রোগীটা ছেড়ে দিলেনএটাতো একান্তই ডাক্তারের এসেসম্যান্ট এবং রোগীর অবস্থার উপর নির্ভরশীলসাধারণত রাস্তায় যে ধরনের ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয় এদের হাফলাইফ (কার্যকারিতার সময়) আট ঘন্টা থেকে চব্বিশ ঘন্টাডোজ বেশী হলে এর কিছুটা বেশীও হতে পারে পর্যাপ্ত স্যালাইন পেলে দ্রুত রিকভারি হতে পারেসে ক্ষেত্রে এই রোগীটির আটচল্লিশ ঘন্টার আগেই সুস্থ হয়ে যাওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়সে কারণে রোগীকে ছেড়ে দেওয়াতে দোষের কিছু দেখি না
পুরো লেখাটা পড়ে যেটা মনে হল লোকটির সেবা যত্নের সমস্ত ভার উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ডাক্তার ও তার নার্স ওয়ার্ডবয় এর উপর ছেড়ে দিয়ে আপনারা নির্ভার মনে চলে এসেছেনপরদিন খবরের খোঁজের পক্ষ থেকে পাঞ্জাবি লুঙ্গিকিনে এনেছেন আপনাদের একবারও কি মনে হল না এই লোকটার সাথে একজন এটেনডেন্ট হিসেবে থাকার খুব দরকার ছিল? নিজে একজন বাবা কিংবা আপনি কারো বাবা সেই কথা সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন কিন্তু আপনার কি মনে হয় নিজের বাবা হলে আপনি এভাবে লোকটিকে হাসাপাতালের বেডে তুলে দিয়ে পরদিন দুপুরের অপেক্ষায় থাকতে পারতেন? রক্তাক্ত মুখের দুটো ফটো তুলে (সম্ভবত এটা নিয়ে একটা নিউজ করবেন সেটা আগেই মাথায় ছিল) অত:পর তা ফেসবুক বা পত্রিকায় তুলে দিতে পারতেন? এরকম একটা এরোগেন্ট রোগীকে একা বেডে রেখে আপনারা বলছেন নাও ডাক্তার এবার তোমার পালা, তোমার ঠ্যালা তুমি সামলাওআমরা কাল এসে দেখবো তুমি কত বড় মানবিকআপনারা সাংবাদিকরা এটাই পারেনপারেন না লোকটির সাথে কেউ একজন থাকতে বা কাউকে রাখতে? সব দায় ডাক্তারের?
এরপরও যেহেতু রোগীর ছাড়পত্রের সময় আপনারা কেউ ছিলেন না সেহেতু ডাক্তারের বক্তব্যকে জোর করে অসত্য বলার সুযোগ নেইরোগীর সেই সময়ের অবস্থা না দেখে আগের দিনের এসেসমেন্ট অনুযায়ী এটা বলা যায় না যে লোকটির সম্ভাব্য মৃত্যু হয়েছে
বিনয়ের সাথে জানাই এই লেখায় আপনার একটি সবিরোধীতাও চেখে পড়ার মতআপনি নিজেই লিখেছেনমানুষটার সমস্ত মুখ রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে, দাড়ি বেয়ে টপটপ করে রক্ত ঝরছে! ফোঁটায় ফোঁটায় পড়া সেই উষ্ণ রক্ত আমার হাতে পড়ছেআমি একজন দুর্বল মানুষ, দৃশ্যটা, গোটা বিষয়টা আমার কাছে সহ্যাতীত মনে হচ্ছিলআমি নিজের সঙ্গে নিজেই যুদ্ধ করছি যেন আমি নিজেই-না জ্ঞান হারিয়ে ফেলি সেই আপনিই সেই রক্তাক্ত ছবি তুলে ফেসবুকে ছেড়েছেন কোন রকম এডিট না করেই, আজ এই ঈদের দিনেপ্রায় জ্ঞান হারানো মানুষের পক্ষে এটা সম্ভব নাএটা ঠান্ডা মাথার কাজ
সবশেষে আরেকটি বড়রকমের তথ্যবিভ্রাটের কথা বলিজেফকট কোন কালেই কোন মেডিসিনের বই লেখেননি, লিখেছেন গাইনীর বই
আলী মাহমেদ ব্লগিং জগতে একটি গূরুত্বপূর্ণ নামএরকম ভুল ভাল তথ্য পরিবেশন তার কাছে আশা করিনা
আমার উত্তর-বক্তব্য:
“…সবশেষে আরেকটি বড়রকমের তথ্যবিভ্রাটের কথা বলিজেফকট কোন কালেই কোন মেডিসিনের বই লেখেননি, লিখেছেন গাইনীর বই…”
হ্যাঁ, আপনার এই তথ্য সঠিক। আমার লেখার কথা ছিল ডেভিডসনের মেডিসিন- ডেভিডসনের জায়গায় ভুলে জেফকটের নাম লিখেছি। আপনি আমার এই ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছেন বলে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। পাশাপাশি বড়ো লজ্জাও লাগছে। আমি অন্য লেখায়ও অন্য এক প্রসঙ্গে লিখেছিলামও, যে এই ডেভিডসন জন্মেছেন শ্রীলঙ্কায়। তাহলে এখানে এই ভুলটা কেমন করে হলো? যাই হোক, এই ভুলের দায়টা আমি আমার নিজের কাঁধেই তুলে নিচ্ছি। আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।

...ডাক্তারের দোষ তো দেখছি না...ডোজ বেশী হলে এর কিছুটা বেশীও হতে পারে পর্যাপ্ত স্যালাইন পেলে দ্রুত রিকভারি হতে পারেসে ক্ষেত্রে এই রোগীটির আটচল্লিশ ঘন্টার আগেই সুস্থ হয়ে যাওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়সে কারণে রোগীকে ছেড়ে দেওয়াতে দোষের কিছু দেখি না...
এটা আপনার বক্তব্য, আমার না।
আমার বক্তব্য হচ্ছে, ২য় দিন রাতে যখন এই মানুষটার সঙ্গে কথা বলি তখন এই মানুষটা একবার বলছিলেন, তার বাড়ি রায়পুরায় আরেকবার বলছিলেন, নোয়াখালি। ...তার ঝোলায় লেমনেটিং করা যে কিশোরটির ছবি পাওয়া গিয়েছিল সেই কিশোরটিকেও তিনি চিনতে পারছিলেন না! তখন তার এক চোখ ছিল পুরোপুরি বন্ধ- যে চোখের নীচে তিনটা সেলাই দেয়া হয়েছিল! এই চোখ দিয়ে তিনি আদৌ কখনও দেখতে পাবেন কিনা এটাও আমার জানা নেই। এই প্রসঙ্গের কিছুটা আমি এই লেখায় শেয়ার করেছি। আর তখন পর্যন্ত তিনি নিজে-নিজে বাথরুমে পর্যন্ত যেতে পারছিলেন না।
ওই মানুষটার সঙ্গে কথোপকথনের পুরো অডিও ট্র্যাক আমার কাছে আছে।
তো, তেলেছমাতি সোলেমানী তাবিজের কল্যাণে ওই মানুষটা রাতের মধ্যে এমন সুস্থ হলেন যে সকালে উঠেই বললেন, ঘোড়া বোলাও। এরপর সেই ঘোড়ায় চেপে প্রথমে গেলেন নোয়াখালি। গিয়ে দেখলেন, ওরি আল্লা, এইটা তো তাঁর বাড়ি না। পরে গেলেন রায়পুরা। এবং রাস্তায় ঘোড়া থামিয়ে আপনার কাছে বিস্তারিতও বলে গেলেন। আপনার সঙ্গে এক হাত পাঞ্জা লড়ে গেছেন এটা শুনলেও আমি অন্তত অবাক হবো না।

...পুরো লেখাটা পড়ে যেটা মনে হল লোকটির সেবা যত্নের সমস্ত ভার উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ডাক্তার ও তার নার্স ওয়ার্ডবয় এর উপর ছেড়ে দিয়ে আপনারা নির্ভার মনে চলে এসেছেনআপনাদের একবারও কি মনে হল না এই লোকটার সাথে একজন এটেনডেন্ট হিসেবে থাকার খুব দরকার ছিল?...
আপনাদের কী একবারও মনে হলো না...? ওহো, আপনি তো দেখছি ত্রিকালজ্ঞ। আপনি তো সবই আগে থেকে জেনে বসে আছেন!
কে বলল আপনাকে, একজন কাউকে সঙ্গে রাখা হয়নি? আপনার অবগতির জন্য বলি, একজনকে একটা পুরো দিন রাখা হয়েছিল। পরে আমাদেরকে যখন বলা হলো, রোগী এখন ঘুমাচ্ছে, লোকের এখন আর প্রয়োজন নেই, ওয়ার্ডবয়রাই দেখভাল করবে তখন আমরা আর লোক রাখার প্রয়োজন বোধ করিনি। তারপরও আমরা ফোন নাম্বার দিয়ে এসেছিলাম, যে-কোনো প্রয়োজনে আমাদেরকে যেন জানানো হয়।

(সম্ভবত এটা নিয়ে একটা নিউজ করবেন সেটা আগেই মাথায় ছিল)...আমি নিজেই-না জ্ঞান হারিয়ে ফেলি সেই আপনিই সেই রক্তাক্ত ছবি তুলে ফেসবুকে ছেড়েছেন কোন রকম এডিট না করেই, আজ এই ঈদের দিনেপ্রায় জ্ঞান হারানো মানুষের পক্ষে এটা সম্ভব নাএটা ঠান্ডা মাথার কাজ...
এটা ঠান্ডা মাথার কাজ...। আহা, আপনি তো দেখছি সত্যি-সত্যি একজন ত্রিকালদর্শী! বিশ্বাস করেন, আমি আজ পর্যন্ত কোনো ত্রিকালদর্শীকে দেখা পাইনি, আপনাকে পেলুম এবং ধন্য হলুম। সব দেখি আপনি আগেই জেনে বসে আছেন! বেশ-বেশ!
সলাজে তবুও খানিকটা বলি, লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে, গত দুই সংখ্যায় লিখেছিলাম, নায়কদের নিয়ে কিন্তু নায়কের পাশাপাশি চলে আসে খলনায়কেরও কথাতাই এই সংখ্যায় (http://khoborer-khoje.blogspot.com/2013/10/blog-post_14.html) লিখলাম: ৬ অক্টোবরসকাল ১১টাএকজন বয়স্ক মানুষকে দেখা গেল রাস্তায় এলোমেলো পায়ে হাঁটছেন...
ঘটনাটা ৬ অক্টোবরের। যে পত্রিকার লিংকটা দেয়া হয়েছে ওই পত্রিকাটা ছাপা হয়েছে, ১৪ অক্টোবর।...শিরোনাম, সম্ভাব্য মৃত্যু। এবং পত্রিকায় এই ছবিটাই ঝাপসা করে দেয়া হয়েছিল এবং নীচে লিখে দেয়া হয়েছিল, ছবিটি বিভৎস হওয়ায় অস্পষ্ট করা হয়েছে
আমরা এটার প্রয়োজন বোধ করেছি এই কারণে, আমাদের পত্রিকায় শিশুদের নিয়ে একটা বিভাগ আছে- যেখানে শিশুরা লেখালেখি করে, তাদের লেখা ছাপা হয়। কিন্তু আমার জানা ছিল না ফেসবুকেও আজকাল এমন অবোধ্য শিশুরাও আছে বিশেষ করে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে! জানা থাকলে বলতাম, শিশুরা, যাও, খেলা করো। বা অন্যত্র লাফাও, আমার এখানে না।
...আর আজ এই ঈদের দিনে... আপনার এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে বলি, এই ঈদে টন-কে-টন রক্তে আপনার সমস্যা হচ্ছে না হয়ে গেল কয়েক ফোঁটা রক্তে। আহা, কী নরোম গো আপনার মন! পেন্নাম হই।
আমি আমার কাছে রয়ে যাওয়া ওই মানুষটার ঝোলা থেকে পাওয়া ওই কিশোরটির ছবিটি দেখছিলাম- এই ঈদে কেবল আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, ওই কিশোরটির কথা, ওই হারিয়ে যাওয়া মানুষটির কথা। আমি আমার স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করছি কিন্তু এই কিশোরটি, সেই মানুষটি...- আমার কষ্ট হচ্ছিল। আমার মনে হয়েছিল, আমার এই কষ্টের কথা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করি।
সেই আপনিই সেই রক্তাক্ত ছবি তুলে... আপনি ত্রিকালদর্শী, সব তো জেনেই বসে আছেন!  তবুও বলি, আমি এই ছবিটি তুলিনি। ছবিটা তুলতাম, কি তুলতাম না সে ভিন্ন প্রসঙ্গ কিন্তু আমার সে সুযোগ ছিল না। কারণ আমি একহাতে শক্ত করে ঢলে পড়া মানুষটিকে ধরে রেখেছিলাম এবং অন্য হাতে ফোনে একের-পর-এক নাম্বার টিপে যাচ্ছিলাম। এরপর এতো দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল যে ছবি-টবি নিয়ে মাথা ঘামাবার সুযোগ আমাদের ছিল না।
ঘটনাটা ঘটেছিল মধ্য-রাস্তায় তাই একজন ছবিটি তার মোবাইল ক্যামেরায় তুলেছিলেন, পরে আমি তার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু এটা নিয়ে নিয়ে লেখা হবে শুনে তিনি আমাকে অনুরোধ করেছিলেন তার নাম প্রকাশ না-করতে।

(সম্ভবত এটা নিয়ে একটা নিউজ করবেন সেটা আগেই মাথায় ছিল)... হ্যাঁ, হাসপাতালের একটা ছবি আমরা তুলেছিলাম এই কারণে যদি এই মানুষটার বাড়িতে ফেরার কোনো সুযোগই না থাকে তাহলে জাতীয় পত্রিকায় এটা ছাপিয়ে তার স্বজনদের খোঁজার চেষ্টা করা।

...আলী মাহমেদ ব্লগিং জগতে একটি গূরুত্বপূর্ণ নামএরকম ভুল ভাল তথ্য পরিবেশন তার কাছে আশা করি না
আলী মাহমেদ ব্লগিং জগতে একটি গূরুত্বপূর্ণ নাম এটাও আপনার বক্তব্য, আমার না। এবং অন্তত আপনার কাছ থেকে এই মতামত আমার কাছে কোনো গুরুত্বই রাখে না। কারণ আমি একজন সাধারণ মানুষ, আপনার মত ত্রিকালজ্ঞ নই যে ভুল করব না। এবং আমার লেখালেখি আমার মতই সাধারণ মানুষদের জন্য, আপনার মত আকাশলোকের বাসিন্দার জন্য না। তাই আকাশলোকের বাসিন্দার মতামত আমার কাছে অর্থহীন! 

ডিয়ার ত্রিকালদর্শী,
আপনার সঙ্গে আমার আলাপচারিতার এখানেই সমাপ্তি- আপনার এই মন্তব্যের উত্তর আমি দেয়ার আগ্রহ বোধ করতাম না কারণ আপনি ত্রিকালজ্ঞ বিধায় সবই তো জেনে বসে আছেন- আমার আবার বলার কী থাকবে! তবুও কেন উত্তরটা দিলাম? কারণ আপনি আমার একটা ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন যেই কারণে আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। সেই কৃতজ্ঞতার দায় শোধ করেছি, ব্যস।
এরপর আপনি জীবনের গান নামের মুখোশ পরে অন্যত্র আপনার গান শোনান, এখানে না। কারণ মুখোশধারী কারো সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ নেই আমার। মুখোশধারী একজন যার নিজের নাম, চেহারা দেখাবার সৎ-সাহস নেই, তার উপর ত্রিকালজ্ঞ, তার সঙ্গে ফিযুল আলাপচারিতার অর্থ অপচয়, স্রেফ শব্দের অপচয়...!    
 

1 comment:

hankagaetano said...

Every spin earns you factors toward valuable rewards like food provides, Free Play, promotion entries, special event invites, and resort stays at partner locations around the world. Enhance your gaming experience with our first-class service and take your recreation to a whole new degree, in a non-public setting dedicated to our most exclusive gamers. We offer the premier gaming experience in Pittsburgh with over 65 desk games, together with craps, blackjack, roulette 1xbet heaps of|and lots of} more of your favorite games in spacious and comfy environment. You'll find several of} progressive video poker games on the on line casino floor. For instance, if a computerised slot is designed to have a 97% RTP, the average winnings quantity will vary around $3 for each $270 wagered.