Search

Sunday, August 2, 2009

এ কষ্ট কোথায় রাখি ?


আমার দীর্ঘ দিনের সুতীব্র ইচ্ছা ছিল, মুক্তিযোদ্ধা, সুরুয মিয়ার (তাঁর প্রতি সালাম) পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলি, জানার চেষ্টা করি এই দেশের সেরা সন্তান সুরুয মিয়ার সম্বন্ধে। কেন মানুষটা ঠিক ১৬ ডিসেম্বর ভোরেই নিজেকে মেরে ফেললেন- আত্মহত্যা করলেন?

ইচ্ছা এবং বাস্তবতায় অনেক তফাত। আমি ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার টাইপের মানুষ। নিজের খেয়ে মনের বাঘ তাড়াই। কতশত সীমাবদ্ধতা! একটা ভাল ক্যামেরা নাই, লজিস্টিক সাপোর্ট নাই, পকেটে যথেষ্ঠ ময়লা কাগজ নাই...।

দেরিতে হলেও, অবশেষে মুখোমুখি হই, মুক্তিযোদ্ধা সুরুয মিয়ার পরিবারের সঙ্গে। শ্বাস চেপে দেখি, যেখানটায় তিনি ফাঁসি লাগিয়েছিলেন। সেই পেয়ারা গাছটা! পরবর্তীতে ভয়ে গাছটা কেটে ফেলা হয়েছে। আমার গা ছমছম করে, আপ্রাণ চেষ্টায় ভয় চেপে রাখি।
তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়। কখনও ছবি তুলতে গিয়ে হাত কেঁপে যাচ্ছিল, কখনও দুর্দান্ত রাগে ইচ্ছা করছিল, কাউকে এক কোপে দু-টুকরা করে ফেলি। আবার কখন যে গাল ভিজে গেছে জানি না। বিষ-পিপড়া কখন পায়ে কামড় দিয়েছে টেরটিও পাইনি। পরে তীব্র ব্যথা কাবু করে ফেলেছিল। তবুও তীব্র ভাললাগায় মাখামাখি হয়ে থাকি।

তাঁর স্ত্রীর কথোপকথনের ভাষারীতি সামান্য পরিবর্তন করে প্রায় হুবহু তুলে দেই:

"মানুষটা গলায় ফাঁস দিব এইটা স্বপ্নেও ভাবি নাই। সারাদিন সারারাত পেটের যন্ত্রণায় চিল্লাইত, হাঁটত, দৌড়াইত। মানুডার চিকিৎসা করাইতে কোন বাকি রাখি নাই। বাড়ির অর্ধেকটাই বেইচা আগরতলা (ভারত) নিছি। পরে টাকা শ্যাষ হইলে ওষুধ কিনতে পারতাম না। তহন হের পেটের যন্ত্রণা আরও বাড়ছিল। সারারাত দৌড়াইত, চিল্লাইত। একদিন রাইতে রুটি বানায়া দিছি। রাইত ১২টা হইব, জাইগা দেখি, মানুডা রুডি খায় নাই, বিড়ির বান্ডিল ছুইয়াও দেহে নাই, হের হাতের লাডি পইরা রইছে। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ারা গাছে গিয়া দেহি, মাগগো...। মানুডা ঝুলতাছে।

এই বুইড়া মানুডার লাশ ১২ ঘন্টা গাছে ঝুইল্যা ছিল। কেউ নামায় নাই, নামাইতে দেয় নাই। চেয়্যারমেন, মেম্বার হগলের হাতে-পায়ে ধইরাও কুনু লাভ হয় নাই। আমার সোয়ামি করত আম্লিগ, আমার সোয়ামির ভাতা বন্ধ কইরা দিছিল যে ইশকুল মাস্টার, বিএনপির তোতা মিয়া, হে একটু চেষ্টা করলেই হইত কিন্তুক হে থানাত ফোন কইরা কইল, লাশ যেন নামান না হয়। ইউএনও অফিসে গেলে হেরা কইল, চেয়্যারমেন মেম্বারের কাছে যাও। ইতা কইরা মানুডা ঝুলতাছিল, কেউ আগায়া আসে নাই।
মামুন ডাক্তার এই ভালা মানুডার লিগা আমার বুইড়া মানুষটারে কাডাকাডি (পোস্ট-মর্টেম)করে নাই।

দাফন লইয়াও অনেক ঝামেলা হইছিল। হেষে হের দাফন হইল। দাফনের পর মিলাদের লিগা সরকার থিক্যা দশ হাজার টেকা দিছিল। এক টেকাও পাই নাই, এই টেকা মাইরা দিছে। আমার সোয়ামির, মুক্তিযুদ্ধার কাগজগুলা কে নিয়া গেল কইতামাও পারতাম না।
আমার এক পুত থাইকাও নাই, হে বউ লইয়া আলগা হইছে। আরেকটা চিটাগাং-এ ছুড একটা চাকরি করে, ঠিকমত টেকা-পয়সা দিতে পারে নাই। দেহার আমার কেউ নাই। খালি সোহরাব সাম্বাদিকরে টুক্কুর কইরা ফোন করলে টাক্কুর কইরা আয়া পড়ে। পুলাডা কী ভালা, আমার মাতার চুলের সমান হেতে আয়ু পাক।"

*ভাল ক্যামেরা যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। সাধারণ সেলফোনে এটা ধারণ করা হয়েছে। ছবি এসেছে যাচ্ছেতাই- তবুও আমার আনন্দের শেষ নাই! অন্তত, এই ভদ্রমহিলার বেদনা-অকৃত্রিম অভিব্যক্তি ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। ধারণকৃত অংশ অনেক বড়ো, আমার নেটের যা স্পীড তাতে পুরোটা আপলোড করা প্রায় অসম্ভব। কাটছাঁট করে যতটুকু দেয়া সম্ভব হলো এতেই আমার সম্তুষ্ট থাকা ব্যতীত উপায় কী!

**জনাব, মো. সোহরাব হোসেন এবং জনাব, দুলাল চন্দ্র ঘোষ সহায়তা না-করলে এই অসাধারণ কাজটা করা আমার পক্ষে সম্ভব হত না। তাঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

1 comment:

Anonymous said...

আমি ভেবে পাই না why we are so stupid,inhuman and savage!!!!
How long we will clinch to this bloody binary politics? How long the good people of this nation will face tyranny of AL and BNP!!!???