Search

Thursday, May 7, 2009

আমি কেউ না- আমি কিছু না

Stephen Hawking-এর 'A Brief History of Time' নিয়ে কার্ল সাগান বলেন, "আইনস্টাইনের বিখ্যাত প্রশ্ন ছিল, মহাবিশ্ব সৃষ্টি করার সময় ঈশ্বরের কি অন্য রকম কিছু করার সম্ভাবনা ছিল? হকিং এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এই মহাবিশ্বের কোন কিনারা নেই, কালের কোন শুরু কিংবা শেষ নেই এবং স্রষ্টার করার মতো কিছু নেই।"

হকিং 'A Brief History of Time'- এ আলোচনা করছেন, "এই মুহূর্তে সূর্যে নিভে গেলে পৃথিবীতে সূর্যের আলো পেতে কোন সমস্যাই হবে না। সমস্যাটা আমরা জানব আট মিনিট পর। কারণ সুর্য থেকে আমাদের এখানে আলো পৌঁছতে সময় লাগে আট মিনিট।"
(পৃথিবী হতে সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র হচ্ছে সূর্য)

"একইভাবে বলা যায়, এই মহাবিশ্বের অন্যত্র কী হচ্ছে এটা আমরা জানি না, কখনও জানতেও পারব না। অসংখ্য নীহারিকা যাদের দুরত্ব ৮ হাজার মিলিয়ন আলোকবর্ষ! দূরের ওই নীহারিকা থেকে আগত যে আলো আমরা দেখি তা যাত্রা করেছিল ৮ হাজার মিলিয়ন বছর আগে! সুতরাং আমরা যখন এই মহাবিশ্ব দেখি তা আসলে ৮ হাজার মিলিয়ন বছর পূর্বের মহাবিশ্বের অতীত রূপ!"

"এখন আমরা জানি, প্রায় ১ লক্ষ মিলিয়ন Galaxy-এর মধ্যে মাত্র একটি আমাদের Galaxy। প্রতিটি Galaxy-তে প্রায় ১ লক্ষ মিলিয়ন নক্ষত্র থাকে। তারমধ্যে সূর্য একটি অতি সাধারণ হলুদ নক্ষত্র।"
(পৃথিবী থেকে সূর্য ১৩ লক্ষ গুণ বড়)।


এই সূর্যের পাশে আমরা কেমন:


"মনে করা হয়, Big Bang-এর সময় মহাবিশ্বের আয়তন ছিল শূণ্য। সুতরাং উত্তাপ ছিল অসীম। কিন্তু মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তাপ কমতে থাকে। Big Bang-এর ১ সেকেন্ড পর তাপমাত্রা কমে নেমে এসেছিল এক হাজার কোটি ডিগ্রিতে! এ উত্তাপ সূর্যের কেন্দ্রের চাইতে প্রায় ১ হাজার গুণ বেশি! কিন্তু হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণের সময় উত্তাপ এই মাত্রায় পৌঁছায়।
...।
আবার Big Bang-এ ১০০ সেকেন্ড পরই এই তাপমাত্রাই কমতে কমতে নেমে এসেছিল ১০০ কোটি ডিগ্রিতে।"

"Big Bang-এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই হিলিয়াম এবং অন্যান্য মৌলিক উপাদানের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওযার সম্ভাবনার কথা বলা হয়। ...তারপর ১০ লক্ষ বছর পর্যন্ত মহাবিশ্বের সম্প্রসারন ছাড়া আর কিছু ঘটেনি।"
(এবং মহাবিশ্ব এখনও সম্প্রসারিত হচ্ছে। একটা উদাহরণ আসে এখানে, একটা চুপসানো বেলুনের গায়ে সমসম্ত গ্রহ-নক্ষত্র আঁকা হল, ক্রমশ বেলুনটা ফুলে-ফেঁপে উঠার পাশাপাশি গ্রহ-নক্ষত্রগুলো খানিকটা করে দূরে সরে যাবে। এবং আমি আমার অবস্থায়, অনড় অবস্থান থেকে এই বেলুনের চারপাশের সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্রগুলো দেখা সম্ভব হবে না, কখনও না)।

"শুরুতে পৃথিবী ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত। পৃখিবীর কোন বায়ুমন্ডল বা atmosphere ছিল না। কালে কালে পৃথিবী শীতল হল। প্রাণের প্রথম বিকাশ হয়েছিল মহাসমুদ্রে।"

Alan Guth-এর মতে, ১ সেকেন্ডের সামান্য ভগ্নাংশ সময়ের ভেতর মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধ বেড়েছে মিলিয়ন, মিলিয়ন, মিলিয়ন, মিলিয়ন, মিলিয়ন (একের পর ৩০টা শূণ্য)।

"একটি বড় Black Hole সূর্যের ভরের চাইতে প্রায় ১ লক্ষ গুণ বেশি। কোন নক্ষত্র Black Hole-এর কাছাকাছি এলে মহাকর্ষীয় আকর্ষনের পার্থক্যর জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। যেকোন বস্তু বা নক্ষত্র Black Hole-এ হারিয়ে যাবে।"
.... ...
তাত্ত্বিকভাবে ধারণা করা হয়, প্রায় এক হাজার ৩৭০ বছর আগে (এখানে টাইপে ভুল করেছিলাম। আসলে হবে এক হাজার ৩৭০ কোটি বছর আগে। আজ, ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৯, জাকির হোসেন বাবু ভুলটা ধরিয়ে দিলেন। তাঁর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি)
-এর মধ্য দিয়ে মহাবিশ্বের সৃষ্টি। এবং ছোট্ট একটি গ্রহ পৃথিবীও। এর জন্য দায়ি যে শক্তি এটাকে বিজ্ঞানিরা বলছেন, ডার্ক এনার্জি বা ডার্ক ম্যাটার। বিজ্ঞানিরা ম্যাটারের স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ডার্ক ম্যাটার বা ডার্ক এনার্জির মাত্র ৪ ভাগ জানতে পেরেছেন।

বিবিসি এবং এএফপি-র বরাত দিয়ে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন,
'পরমাণু গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'ইউরোপীয় অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্স' বা সার্ন-এর তত্ত্বাবধানে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটি করা হয় সুইজারল্যান্ড-ফ্রান্স সীমান্তের কাছে মাটির ১০০ মিটার নিচে ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘি বৃত্তাকার সুড়ঙ্গের ভেতরে পরীক্ষাটি চালানো হয়। এই 'এলএইচসি' নামের এই প্রকল্প সৃষ্টি করতে সময় লেগেছে প্রায় ২০ বছর! পৃথিবীর ৩৬টি দেশের ৫ হাজার বিজ্ঞানি, প্রযুক্তিবিদ এই প্রকল্পে কাজ করছেন!
এখানে কিছু বিষয় সম্বন্ধে বিজ্ঞানিরা জানার চেষ্টায় আছেন। 'এলএইচসি' নামে পরিচিত বৃত্তাকার এই সুড়ঙ্গের মধ্যে অতিপারমাণবিক কণাগুলোকে আলোর গতির কাছাকাছি দ্রুতিতে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটানোর ফলে যে তাপমাত্রার সৃষ্টি হবে তা সূর্যের তাপের চেয়ে এক লাখ গুণ বেশি! এতে Big Bang-এর প্রকৃত অবস্থা আঁচ করা যায়।

বিজ্ঞানি, Dr. Michio Kaku (যার 'Hyperspace', 'Parallel Worlds' নামে দুইটা অসাধারণ গ্রন্থ রয়েছে এবং হালের ,'Physics of the Impossible') তিনি এই মতকে সমর্থন করেন, Black Hole-এ যখন কোন বস্তু সিঙ্গালারিটি নামের জায়গাটায় আটকা পড়ে তখন সংকুচিত হতে হতে একটা বিন্দুতে হারিয়ে যায়। কিন্তু বস্তুটি হারিয়ে যায় কোথায়?
সম্ভবত Black Hole-এর উল্টাদিকে White Hole আছে। সেখানে আবার অন্য কাহিনি। সেখানে বস্তুটি একটা বিন্দু থেকে প্রবল বেগে প্রসারিত হতে থাকে। (উদাহরণটা দিয়েছেন বাসন ধোয়ার সিন্কের সঙ্গে!)
Dr.Michio Kaku-এর মতে, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না, Big Bang আসলে একটা White Hole। যেভাবে সৃষ্টি হয়েছে আমাদের গ্রহ এবং মহাবিশ্ব। তো, Big Bang-এর পূর্বে কী ছিল? অন্য কোন মহাবিশ্ব, অন্য কোন ডাইমেনশন। মাল্টিভার্স, প্যারালাল ইউনিভার্স।

Kaku-এর ভাবনার রেশ ধরে একটা ধারণা দাঁড় করানো যায়।
পৃথিবী নামের গ্রহ। একটি সাধারণ হলুদ নক্ষত্র সূর্য। সূর্যের চেয়ে বিশালসব, প্রায় ১ লক্ষ মিলিয়ন নক্ষত্র Galaxy-তে। এমন ১ লক্ষ মিলিয়ন Galaxy নিয়ে মহাবিশ্ব। মহাবিশ্ব সৃষ্টির হয়েছে Big Bang-এর মাধ্যমে। শূণ্য বা ডটটা (!) এসেছে White Hole থেকে। White Hole-এর পূর্বে ছিল Black HoleBlack Hole-এর অন্য পাশে অন্য আরেকটা মহাবিশ্ব, অন্য এক ডাইমেনশন।

বেশ, একটা ধারণা তো পাওয়া গেল। কিন্তু Dr. Michio Kaku-এর কাছে আমার যে প্রশ্নটা করতে ইচ্ছা জাগে, সেটা হচ্ছে, বেশ, ওই অন্য মহাবিশ্বটা এসেছে আরেকটা মহাবিশ্ব থেকে? তাহলে এর শেষটা কোথায়?

এ গ্রহের মহাপুরুষরা ধর্মের আলোকে পৃথিবী সৃষ্টি নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ চালু করেছেন।
এখানে বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না, এটা অন্য প্রসঙ্গ। গৌতম বুদ্ধের ভাবনাটা আমার বেশ পছন্দ হয়। তাঁকে যখন কেউ বিশ্বসৃষ্টি-রহস্য এইসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করত, তিনি এর উত্তর দিতেন না। প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিতেন, আমি জানি না।

তো, এই সব তথ্যে আমার মস্তিষ্ক নামের ডেটা সেন্টার ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। গুগল তার ডেটা সেন্টার নিয়ে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রে শীতল রাখার জন্য। কিন্তু আমি আমার
মস্তিষ্ক নামের ডেটা সেন্টার কোথায় নেব শীতল করার জন্য? কার কাছে?
বুকের ভেতর থেকে হাহাকার বেরিয়ে আসে, আমি জানি না, আমি কিচ্ছু জানি না। আমি কেউ না, আমি কিছু না।

"বললে, নিমিষেই হও
অপাপবিদ্ধ ভুমিষ্ঠ শিশু আমি।
বললে, হোক আলোকিত-
চারদিক আলোয় ছেয়ে গেল সব।
বললে, হাই চেপে: দূর হ
নিজের লাশ কাঁধে বয়ে
তুমিই সব, আমি কিছু না।" 

*আমি আমার অল্প জ্ঞান নিয়ে বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করেছি। যথাসম্ভব চেষ্টা ছিল তথ্যগুলো নির্ভুল দেয়া। তারপরও কোন তথ্যে সামান্যতম বিচ্যুতি থাকলে, কোন সহৃদয়বান ভুলটা ধরিয়ে দিলে, এই নিয়ে আমার কোন লাজ নাই, আছে কৃতজ্ঞতা।
(আমি বারবার যেটা বলে আসছি কবেকার জ্ঞান, কোথাকার জ্ঞান। আজ যে জ্ঞানটাকে আমরা অকাট্য ভাবছি কাল সেটা 'কাট্য' কাটাকাটি হবে না এই দিব্যি কে দিয়েছে! কে জানে, কবে না মানুষ আলোর গতিকে ছাড়িয়ে যায় এমন কিছু আবিষ্কার না করে  বসে এই ভয়ে ভয়ে আছি!)
২০১২ সালে এসে জানা যাচ্ছে, সবচেয়ে দূরবর্তী নক্ষত্রপুঞ্জের সন্ধান পাওয়া গেছে যা এক হাজার ৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে! (যে-কারণে বারবার কথাটা বলে আসছি, কবেকার জ্ঞান...)

**এই লেখাটি অন্য একটা ওয়েব সাইটে, অন্য নামে হুবহু কপি-পেস্ট করা হয়। চোর্যবৃত্তির এই কাজটা করেন অমিত কুমার সরকার নামের একজন। বিষয়টা ধরিয়ে দেন শয়তান নামের একজন ব্লগার। রেফারেন্সের কারণে আমার একটা লেখা, 'চোর-চোট্টায় বিদেশটাও ভরে যাচ্ছে' এই বিষয়টা উল্লেখ করা হয়েছিল কিন্তু ভুলে শয়তান নামের ব্লগারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়নি, পরবর্তীতে এই পোস্টে 'চোর-চোট্টায় বিদেশটাও ভরে যাচ্ছে' শয়তান নামের ব্লগারের কাছে ভুলটা স্বীকার করা হয়।

13 comments:

Anonymous said...

Great job!

babu said...

আলি ভাই,অসাধারন লাগ্লো লিখাটা।
আমি নিঃশব্দে প্রারথনা করি আল্লাহ যেন আপনাকে
আরো জানার ক্ষমতা দেন।

বাবু
যশোর।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য আবারও কৃতজ্ঞতা। তবে পোস্টটা আপনি ব্যতীত আর কেউ যে পড়ে নাই এটা বোঝা গেল। অবশ্য পাঠক হিসাবে নিজেকে বাদ দিয়ে। হা হা হা।

www.babu25.blogspot.com said...

আলী ভাই,

ধন্নবাদ।

Anonymous said...
This comment has been removed by a blog administrator.
আলী মাহমেদ - ali mahmed said...
This comment has been removed by the author.
Anonymous said...
This comment has been removed by a blog administrator.
Anonymous said...
This comment has been removed by a blog administrator.
Anonymous said...
This comment has been removed by a blog administrator.
Anonymous said...
This comment has been removed by a blog administrator.
Anonymous said...
This comment has been removed by a blog administrator.
রুবাইয়্যাত said...

বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা যে কোন লেখাই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। আজকেই লক্ষ্য করলাম কেবল ব্লগাররাই আরেক ব্লগারের লেখা চুরি করেন না, পত্রিকায় লেখনে ওয়ালারাও চুরি করেন। একই লেখা কিছু অংশ যোজন বিয়োজন করে ছাপিয়ে দেন। 'বাংলাদেশ প্রতিদিন' এর রকমারী পাতায় মাঝে মাঝে চোখ বুলাতে পারেন। বলা যায় না, হয়তো দেখবেন আপনারাই এক লেখা আপনারাই দেওয়া শিরোনামে আরেকজন লিখে বসে আছে। :)

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

"বাংলাদেশ প্রতিদিন এর রকমারী পাতায় মাঝে মাঝে চোখ বুলাতে পারেন।...।"
দেখি, পাই কি না...। :) @রুবাইয়্যাত