প্রত্যেকটা স্কুলে [১] বাচ্চাদের জন্যে কিছু নিয়ম-কানুন লিখিত আকারে ঝোলানো থাকে। প্রায় একই ধরনের কথাবার্তা: হাতের নোখ ছোট থাকবে, খাওয়ার আগে হাত ধুতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। স্কুল ভেদে খানিকটা পরিবর্তন হয়। যেমন, স্টেশনের স্কুলে বাড়তি যোগ হয়, ট্রেনের ছাদে উঠা যাবে না; আবার হরিজন পল্লীর স্কুলে, রেললাইনে হাঁটা যাবে না।
বাধ্য হয়ে এখন হরিজন পল্লীর স্কুলে বাড়তি একটা যোগ করতে হয়েছে, বেলুন(!) নিয়ে স্কুলে আসা যাবে না। এর ইতিহাস খানিকটা বিচিত্র।
যেদিন ডা. গুলজার হোসেনকে স্কুলের বাচ্চাদেরকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম, চিকিৎসার জন্য [২]। সেদিন হরিজন পল্লীর বাচ্চাদের কাছে বিচিত্র ধরনের কিছু বেলুন(!) পাওয়া গেল। ডাক্তার সাহেব সম্ভবত হকচকিয়ে গিয়েছিলেন কারণ এগুলো পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী (আমার ধারণা আমার লেখার অধিকাংশ পাঠক প্রাপ্তবয়স্ক। তাই বিস্তারিত বলার চেষ্টা করলাম না। অধিকাংশ বললাম এই কারণে, কখনও-সখনও কিছু পাঠকের কথা শুনে মনে হয় এরা কখন বড়ো হবে? এতে খানিকটা নিশ্চিত হয়েছি কিছু অপ্রাপ্তবয়স্ক পাঠকও আছেন তাদের জন্য বলি, ব্যাটা বড়ো হও, তখন বলব নে।)।
ডাক্তার সাহেব যতই বলেন, এটা ফেলো, মুখে দিয়ো না। কে শোনে কার কথা! এ ফেলবে না। মাস্টার মশাইয়ের চোখ রাঙানিও কাজে আসছে না। মহা মুশকিল!
লোকজন আমাকে তেমন একটা পছন্দ না-করলেও বাচ্চারা কেন জানি না আমাকে খানিকটা পছন্দ করে। কেন করে আমি জানি না, জানার চেষ্টায় আছি! আমি একে বললাম, এইটা ফালায়া আসো, মুখে দিতাছো, পেটে কিন্তু বড়ো বড়ো সাপ হইব।
এ খানিকটা দ্বিধায় পড়ে গেছে, কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। অনেক ভেবে-টেবে বলল, স্যার, তুমি কিন্তুক হামারে বেলুন আইনা দিবা? (এদের একসেন্টে খানিকটা ঝামেলা আছে)। আমারও :)!
আমি বললাম, আচ্ছা। এখন এটা ফেলে আসো। এ ফেলে আসে। আমি মাস্টার মশাইকে কেবল মুখেই বলে আসি না, লিখেও দিয়ে আসি, স্কুলে বেলুন(!)...।
আমি খানিকটা লজ্জিতও হলাম। খেলার জন্য এদের বেশ কিছু খেলার সামগ্রী দেয়া হয়েছে কিন্তু তালিকায় বেলুন ছিল না। এটা কেন মাথায় আসেনি এটাই ভেবে কূল পাচ্ছি না। একটা বেলুন একটা শিশুর কাছে কতটা আগ্রহের বিষয় এটা তো সইজেই অনুমেয়। এই অনুমানটা আমি কেন করতে পারলাম না!
তাই আজ ছিল এদের বেলুন উড়াবার দিন।
আমি পূর্বের একটা লেখায় লিখেছিলাম:
"স্বাস্থ্যসচিব হাইকোর্টে হলফনামা দিয়েছেন, এই দেশের সব দম্পতি পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত [৩]।
ভাল-ভাল। যেদিন (২৭.০৯.১০) এটা পত্রিকায় পড়েছি সেদিন কেবল হাসিই চাপিনি, হাতে-নাতে পরীক্ষাও করেছি। এই নিয়ে হরিজনপল্লীর কয়েকজনের সঙ্গে আলাপও করেছি। আলাপের বিশদে যাই না, কেবল বলি, আমাদের স্বাস্থ্যসচিব সাহেবের মুখের হাসি যে মিলিয়ে যাবে এতে অন্তত আমার কোন সন্দেহ নাই"।
ওখানে লিখেছিলাম, বিশদে যাই না...। এখানেও বিশদে যাব না। অল্প কথায় বলি, হরিজন পল্লীতে এই বিষয়ে সচেতন করার কোন উদ্যোগ কারও নাই। হরিজন পল্লীর লোকজনরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন এখানে লিখলে আমার কী-বোর্ড সাবান দিয়ে ধুতে হবে। বলার পর আবার এটাও বলতে ভুলছেন না, বাবু, আপনি কিন্তুক মনে কষ্ট লিয়েন না, হামরা সুইপার আছে তো...।
ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। ফি-বছর নিয়ম করে বাচ্চা! এখন আমাদের লোকসংখ্যা কত? ১৬ কোটি কি ছাড়িয়ে গেছে? আফসোস, আমাদের দেশে ৬ মাসে বাচ্চা হওয়ার কোন সুযোগ নেই নইলে আমরা অনায়াসে ভারত-চীনকে ছাড়িয়ে যেতে পারতাম। আরেক সুপার পাওয়ার হয়ে উঠতাম।
"এই দেশের সব দম্পতি পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত..."। এটা অবিশ্বাস করার কোন কারণ দেখি না যে দেশের শিশুদের হাতের নাগালে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী চলে এসেছে...!
সহায়ক লিংক:
১. আমাদের ইশকুল: http://tinyurl.com/39egrtn
২. স্কুল, রোবট এবং মানুষের গল্প: http://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post_23.html
৩. প্রথম আলো: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=3&date=2010-09-27
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Monday, October 25, 2010
কথার বেলুন!
বিভাগ
আমাদের ইশকুল: এক
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment