Search

Wednesday, July 2, 2025

এক যোদ্ধা: ক্যামেরার পেছনের কুশীলব!

লেখক: শাফকাত রাব্বী অনীক (https://www.facebook.com/share/1D28Vv2eDL/) [লেখকের লিখিত অনুমতিক্রমে প্রকাশিত]

"ছবিটি হচ্ছে শেখ হাসিনার পালানোর দিন, আগস্ট ৫, ২০২৪ সালের গণভবনের দুপুরের পূর্বে অপ্রকাশিত স্যাটেলাইট ইমেজ।একটা প্রাইভেট স্যাটেলাইট কোম্পানি থেকে এরকম বেশ কিছু ইমেজ আমি জোগাড় করি আগস্ট ৪ থেকে ৭ এর।
এই গল্পটা বলার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু অনেকে বলা শুরু করেছেন তাই আমিও বলছি। আগস্টের ৩  তারিখে Zulkarnain Saer হঠাৎ ফোন দিয়ে বলেন, হাসিনার বাসার উপরে স্যাটেলাইট নজরদারি বসানোর ব্যাপারে কি করা যেতে পারে?   

আমাকে এই প্রশ্ন করার কারণ হচ্ছে এর কিছু দিন পূর্বে সায়ের একটা ভিডিও প্রচার করেন যেখানে একটা গণকবর এর অস্তিত্ব দেখা যায়। আমি তাঁকে সেই কবরের জায়গার লোকেশন (লঙ্গিচুড, ল্যাটিচুড) পাঠাতে বলি। ওঁকে বলি, যে  লোকেশন পাঠালে স্যাটেলাইট ইমেজ দিয়ে আগে-পরের ছবি বের করতে ট্রাই করবো, যাতে গণকবরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায়।

সায়ের সেই আলাপের সূত্র ধরে নতুন আইডিয়া নিয়ে আসেন। অগাস্টের ৪-৫ তারিখে স্যাটেলাইট দিয়ে নজরদারি করা হবে শেখ হাসিনার বাসায়,  বিশেষ করে যদি কোন বড় ব্লাড শেড হয়, গণহত্যা চালানো হয় তাহলে কারা-কারা সেই হত্যাতে জড়িত তাদের ধরা যাবে।  

আমরা তখন এভিডেন্স ধরে রাখা,  আন্তর্জাতিক প্রেসার দেবার কাজ গুলোতে ফোকাস করছি। আমি সাথে-সাথে রাজি হয়ে কাজে নেমে যাই। প্রাইভেট স্যাটেলাইট কোম্পানির সংগে কথা বলে জানতে পারি  এই কাজে খরচ হবে ৩,৫০০ ডলার।  এটা দেবার জন্যে আমি নিজে সহ কয়েকজন ডোনার জোগাড় করি।

কিন্তু ঝামেলা লেগে যায় যখন আমরা সেই কোম্পানিকে জানাই আমাদের প্রজেক্টের একজেক্ট লোকেশন। তারা সাফ জানিয়ে দেয় এটা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, এটাকে আকাশ থেকে দেখার জন্যে শুধু টাকা দিলেই হবে না, যথাযথ কারণ বোঝাতে হবে। তারা কমার্শিয়াল কারণে এই কাজ করবে না।

তখন আমি অন্য লাইনে আগাই।  কয়েকজন প্রফেসরকে ইমেইল লিখতে বলি, কি লিখতে হবে, কাকে লিখতে হবে সেটার সব তথ্য প্রচার শুরু করি আমার ওয়ালে। তাঁদের জানাই, তাঁরা যেন জনস্বার্থে স্যাটেলাইট কোম্পানিকে অনুরোধ করেন, কারণ এই কোম্পানিগুলো ইউক্রেনের যুদ্ধে জনস্বার্থে এ ধরণের কাজ করেছে। সঙ্গে-সঙ্গে অনেকে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ শুরু করেন।  

আমাকে অবাক করে দিয়ে,  আমার ইনবক্সে  চলে আসেন পৃথিবীর সব চাইতে ফেমাস স্যাটেলাইট অপারেটর ইউরোপের 'এসরি' এবং আমেরিকার ম্যাকসার'-এ কাজ করেন এমন দুজন বাংলাদেশি গবেষক।  

এঁরা আমার লেখা পড়তেন,  দু'জনই আমার 'ফেসবুক ফ্রেন্ড', কিন্তু আমি জানতাম না তাঁরা এই দুঁদে স্যাটেলাইট ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন!এরিমধ্যে আরও কয়েকজন প্রফেসর তাঁদের নেটওয়ার্ক থেকে স্যাটেলাইট ডাটা পেয়ে যাবেন বলে জানিয়ে দেন।

ইতিমধ্যে Zia Hassan, জুলকারনাইন সায়ের  পোস্টে লিখে দেন যে, গণভবন নজরদারিতে থাকবে। এবং কোন বাড়াবাড়ি যেন না হয় ছাত্র-জনতা উপরে। আমরা আকাশ থেকে নজরদারিতে রাখব।  

আমি নিশ্চিত ছিলাম একটা তিয়েনআনমেন স্কয়ার (চীনের ১৯৮৯ সালের   ছাত্র অভ্যুথান)-এর মতো  ম্যাসাকার করা ছাড়া (তিয়েনআনমেনে তখন ১২  হাজার চাইনিজ ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছিল)  আমরা ধারণা করেছিলাম আমাদের লেডি হিটলার এ যাত্রায় বাঁচতে পারবে না কিন্তু পাশাপাশি আতংকও কাজ করছিল। রক্তের বন্যা বয়ে যাবে, শত-হাজার প্রাণ ঝরবে। 

আমাদের লক্ষ্য ছিল, সেই রকম একটা ম্যাসাকার থামানো, আর থামাতে না-পারলে প্রচুর এভিডেন্স গ্যাদার করা যেন পরে বিচার করার জন্য কাজে লাগে।   

এই ছবিটা পরবর্তীতে আমি পাই। কিন্তু ওই দিন আকাশে অনেক মেঘ ছিল। আর কোন ম্যাসাকারও হয় নাই। আমাদের বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সেটা হতে দেয়নি।

আকাশ ক্লিয়ার থাকলে আকাশ থেকে গণভবনে  হাজার  মানুষের উৎসব দেখা যেতো। কিন্তু সেদিনের মেঘ তেমন কিছু  স্যাটেলাইট ছবি থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করেছে। তবুও আফসোস নেই...!"

সংযুক্তি: আমার ৪ আগস্টের লেখা:


-লেখক: শাফকাত রাব্বী অনীক

(https://www.facebook.com/share/1D28Vv2eDL/)

No comments: