Search

Friday, May 17, 2013

তেলাপোকা টিকে আছে, তার নিজস্ব অবয়বে...।

পুরনো বিষয়টা সামনে চলে এলো যে কারণে, আমার এটা জানার খুব কৌতুহল ছিল, গ্রেফতার হওয়ার পর কার্টুনিস্ট আরিফকে তখন প্রথম আলোর তরফ থেকে অন্তত আইনি সহায়তাটা দেওয়া হয়েছিল কিনা?

আমি এটা বুঝতে পারি কখনও-কখনও আমাদেরকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরিস্থিতির কারণে সমঝোতা করতে হয়। সেই সমঝোতা কতটা গ্রহণযোগ্য এটা নির্ভর করে অনেক কিছুর উপর। কখনও-বা আমরা খানিক নরোম দৃষ্টিতে তাকাতেও বাধ্য হই, অনিচ্ছায়।


সেই কার্টুন নিয়ে যখন সময়টা উত্তাল তখন প্রথম আলোর সম্পাদক যে ভঙ্গিতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তা নিয়ে অনেকের ঘোর আপত্তি আছে কিন্তু এ বিষয়টাও মাথায় রাখা উচিত কেবল মতিউর রহমানই এখানে বিবেচ্য বিষয় না, তার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্টানের সঙ্গে আবার জড়িয়ে ছিলেন অসংখ্য মানুষ, তাদের পরিবার। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে এর অনেকটাই দায়দায়িত্ব মতিউর রহমানের উপর বর্তায়। তিনি হয়তো তার প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন। এই দিকটা একেবারে উড়িয়ে দেয়া চলে না। কিন্তু...।

একটা কিন্তু রয়ে যায়। কার্টুনিস্ট আরিফ তো এই পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। (আমরা এও জানি, তিনি কেবল নির্দোষ কার্টুনই এঁকেছিলেন কিন্তু কার্টুনের সঙ্গে সংলাপগুলো তাঁর ছিল না) তার প্রতি অন্তত ন্যূনতম দায় তো থেকেই যায়। একটা কুৎসিত পোষা প্রাণীর প্রতিও তো আমাদের মায়া পড়ে যায়, অজান্তেই দায়ও চলে আসে। আর কার্টুনিস্ট আরিফ তো কেবল আঁকাআঁকির একজন শিল্পীই না, একজন মানুষও! মতিউর রহমানের মত একজন, যিনি ঘটা করে বিভিন্ন মানবিক বিষয়গুলো বিভিন্ন সময়ের লোকজনকে শেখাবার চেষ্টা করেছেন, এখনো করেন। তিনি আরিফকে অন্তত আইন সহায়তা দেবেন এ তো অস্বাভাবিক কিছু না।

তর্কের খাতিরেও নাহয় ধরে নিলাম, সেইসময় আরিফের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগসূত্র রাখা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। বেশ! কিন্তু তিনি তো আর অগাবগা মানুষ নন, তার একটা ফোনে দশজন মানুষ ছুটে আসবে সাহায্য করার জন্য।

পূর্বে কিছু সূত্র থেকে জেনেছিলাম, মতিউর রহমান কোনো প্রকার আইনি সহায়তা আরিফকে দেননি। সত্য বলি, আমি এটা বিশ্বাস করিনি। করার কথা না, এটা আমি বিশ্বাস করতে চাচ্ছিলাম না।
অনেক দিন থেকে আমি চাচ্ছিলাম, আরিফের নিজের মুখ থেকে এটার সত্যতা যাচাই করতে। অবশেষে এই মানুষটার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, কোনো ধরনের সহায়তা দূরের কথা মতিউর রহমান বিন্দুমাত্র আইনি সহায়তাও দেননি। আরিফ জেলে যাওয়ার পর প্রথম যে মানুষটি ২ মাস পর খোঁজখবর নিয়েছিলেন তিনি হচ্ছেন সারা হোসেন।

আমরা এ তো সবাই জানি আরিফের মা দীর্ঘদিন রোগাক্রান্ত ছিলেন। সপ্তাহে দুবার কিডনি ডায়ালিসিস করতে হতো অথচ আরিফের পক্ষে এই ব্যয়ভার চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তখন ব্লগাররা এবং তাঁর কিছু বন্ধু এগিয়ে এসেছিলেন। আরিফ তাদের কথা এখনও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
পরে আরিফ নরওয়েতে চলে যান এবং পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেও ছিলেন, খুব চেষ্টা করছিলেন তাঁর মাকে নরওয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি ওই সাক্ষাৎকারের সূত্র ধরে জানতে চেয়েছিলাম, তাঁর মা এখন কেমন আছেন? অজান্তেই আমি একটা জঘন্য অপরাধ করে ফেলেছিলাম যেটা বুঝতে পারলাম তার এই উত্তরে, "...মা গত বছর ১২ এপ্রিল ২০১২-এ মারা গেছেন, বাঁচাতে পারলাম না...আজ এক বছর ২০ দিন..."।

কারো দাম্ভিক আচরণ, অহংকারের পরিপ্রেক্ষিতে আমি পূর্বে অসংখ্যবার লিখেছি, এই গ্রহে ডায়নোসর নাই, রাশিয়া নাই, আদমজি জুটমিল নাই।
বাক্যটা আসলে অসম্পূর্ণ! আজ এর সঙ্গে যোগ করে দিচ্ছি, কিন্তু তেলাপোকা আছে, অবিকল...।

No comments: