Search

Thursday, November 25, 2010

এই তালার চাবি আপনার কাছে, প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতির বিষয়ে লিখেছিলাম, হাতের নাগালে পেলেই তাঁকে কদমবুসি করব [১]। কিন্তু এখন যেটা মনে আসছে সেটা হচ্ছে, কিছু দূর্লভ তালা আছে যে চাবির হদিস জানেন এমন মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত অল্প। প্রধান বিচারপতি সেই অল্প মানুষদের একজন!

অনুমান করি, ক্রসফায়ারের নামে কিছু মানুষ মেরেছেন (যদিও এটা তিনি স্বীকার করেন না, আমিও সরাসরি জিজ্ঞেস করি না) এমন একজনের সঙ্গে একবার কথা হচ্ছিল। আমি আমার বক্তব্যে অটল ছিলাম, কোন অবস্থাতেই ক্রসফায়ার নামের বিচার বহির্ভূত অন্যায় আমি মানি না [২]
তিনি দুঃখিত গলায় বলছিলেন, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আমরা একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ধরি। আপনি কি জানেন, কখনও কখনও কতোটা ঝুঁকি নিতে হয়? আজকাল এদের কাছে যেসব অস্ত্র থাকে এসবের অনেকগুলো আমরা চোখেও দেখিনি! আর এই অবস্থায় আমি মারা গেলে আমার পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে, বলেন? কেন আমি প্রাণের ঝুঁকি নেব, দেশের জন্য? শুনতে ভাল লাগে কিন্তু আমার বউ-বাচ্চা রাস্তায় ভেসে যাবে এটা ভেবে আমার ভাল লাগে না। জানেন, আমি তো কোন উৎসাহ পাই না। আগে এই ভুলটা প্রায়ই করতাম। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে একেকজন দানবকে ধরতাম, এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন নিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসত। কী লাভ, বলেন!

ছবি ঋণ: এম সাদেক, প্রথম আলো
আমাদের বিচার ব্যবস্থার অবস্থা কী ভয়াবহ এর কতটুকুই বা আমরা জানি? এই একটা নমুনাই কি যথেষ্ঠ না। এরপর এই দেশে আর কোথাও দাঁড়াবার জায়গা আছে বলে তো আমার মনে হয় না! আজ কেউ আমাকে মেরে ফেললে আমি নিশ্চিত এক দিনের মধ্যে সেই মানুষটা জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে পরদিনই আমার সন্তানকে মারবে। এমনটাই হবে। তাহলে আর গণতন্ত্র-গণতন্ত্র বলে চেঁচিয়ে লাভ নাই, স্রেফ জঙ্গলতন্ত্র! জঙ্গলের আইন।

টিটুর বেরিয়ে আসতে লেগেছে দেড় মাস, আমার খুনি বিটু-ফিটুর লাগবে এক দিন। কারণ প্রিন্ট মিডিয়ায় অজস্র প্রমাণ থাকার পরও টিটু জামি পেয়েছে আর আমার মত অখ্যাত মানুষের অখ্যাত খুনির খবর কে রাখবে?
মিডিয়ায় অজস্র প্রমাণ থাকার পরও এবং জামিন দেয়া প্রসঙ্গে সরকারি ল-অফিসার (পিপি) মজিবুর রহমান বলেন, "কুমিল্লার অস্ত্রবাজির ঘটনা সারা দেশে আলোচিত হয়েছে। আলোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদেও। এ রকম ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজন আসামি জামিন পেয়েছেন। আমার আপত্তি সত্ত্বেও মহামান্য আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা তো কোনো মন্তব্য করতে পারি না।" (প্রথম আলো, ২৫ নভেম্বর ২০১০)

মহামান্য আদালতের বিরুদ্ধে কেউই কোন মন্তব্য করতে পারছেন না কিন্তু মহামান্য আদালত তো ঈশ্বর না যে কোন ভুল করতে পারেন না। মহামান্য আদালত কেন এই সন্ত্রাসীকে জামিন দিলেন এই নিয়ে আমার জানার কৌতুহল হচ্ছে। কেউ এই কৌতুহল মেটাতে পারবেন এমন ভরসা নাই। পারলে পারবেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর কাছে আমার অনুরোধ, এই মামলার বিস্তারিত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখুন। এমন একটা বহুল আলোচিত চরিত্রকে কেন জামিন দেয়া হলো সরকারি উকিলের তীব্র আপত্তি থাকার পরও! যিনি জামিন দিয়েছেন সেই বিচারককে জিজ্ঞেস করুন, লিখিত আকারে বিচার বিভাগকে অবগত করানোর জন্য আপনি উদ্যোগ নিন। এটা আপনিই পারেন, এই তালার চাবি কেবল আপনার কাছে। এই তালাবদ্ধ ঘরটা খোলা বড্ডো প্রয়োজন। সমস্ত আলো আটকে আছে ওই তালাবদ্ধ ঘরে...।

সহায়ক লিংক:
১. প্রধান বিচারপতি: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_13.html
২. ক্রসফায়ার: http://www.ali-mahmed.com/2008/07/blog-post_29.html   

No comments: