Search

Saturday, November 6, 2010

সোনার বাংলা...

ন্যানো ক্রেডিট [১] বিষয়টা আমাকে আক্ষরিক অর্থেই হতভম্ব করেছিল, কোথাও আটকায়নি! প্রচুর লোকজনকে বিভিন্ন খাতে ন্যানো ক্রেডিটের আওতায় ঋণ দেয়া হয়েছিল। কেউ কলা বিক্রি করেন, কেউ স্কুলে চকলেট-আচার, কেউ-বা সেলুন। এমন কি স্টেশনে ভাত বিক্রি করেন তাদেরও ন্যানো ক্রেডিটের নামে পুঁজি দেয়া হয়েছিল, আস্তে আস্তে মূল টাকাটা দিয়ে দেবেন। কাউকে কাউকে নিয়ে এখানে লিখেছি, অনেককে নিয়ে লেখা হয়ে উঠেনি। এরিমধ্যে কেউ কেউ আবার সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দিয়ে দ্বিগুণ টাকাও নিয়েছেন। আবার তা শোধ করে শেষও করে ফেলছেন!

মন মিয়া [২] নামের একজন কলা বিক্রি করতেন। পূর্বে এক হাজার টাকার জন্য ৬০০ টাকা সুদ দিতেন। তাঁকে ১০০০ টাকা দেয়ার পর প্রতিদিন ১০/২০ টাকা শোধ করে ১০০০ টাকা শোধ করে দিয়ে ২০০০ টাকা নিয়েছিলেন, সেই টাকাও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সবই মন ভাল হওয়ার মত খবর।
স্টেশনে ভাত বিক্রি করেন এমন কিছু মহিলাকেও ন্যানো ক্রেডিটের আওতায় টাকা দেয়া হয়েছিল। এঁদের চাহিদা খুব বেশি কিছু না, একজন তো মাত্র ৩০০ টাকা নিয়েছিলেন কারণ তাঁর এই টাকাই প্রয়োজন। যথারীতি অল্প অল্প করে এঁরা টাকা শোধ দিচ্ছিলেন, স্টেশনের স্কুলের টিচারের কাছে এঁরা টাকা জমা দিতেন, নিয়ম করে।

কিন্তু আমি লক্ষ করলাম, বেশ কিছু দিন ধরে এরা অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। এমনিতে এটাই আমার স্কুলে আসা-যাওয়ার পথ। এঁদের জিজ্ঞেস করে জানা গেল, স্টেশন কর্তৃপক্ষ এঁদের এখন আর এখানে বসতে দিচ্ছেন না। আমি আস্তে করে এখান থেকে সরে আসি, কারণ এখানে আমার করার কিছুই নাই। স্টেশনের কর্তৃপক্ষ যদি আইনগত সমস্যা মনে করেন তাহলে এখানে আমার কোন ভূমিকা থাকাটা যুক্তিযুক্ত না। অন্যায্য আবদার কর্তৃপক্ষকে আমি করতে পারি না।
এরপর থেকে আমি আর এঁদের কিছু বলি না, এঁদের বিমর্ষ মুখ দেখতে ভালও লাগে না। কিন্তু এঁরা টাকা দিতে পারছেন না বলে আমার আসা-যাওয়ার পথে আমাকে দেখলেই খানিকটা সংকুচিত হয়ে যান, আমি অন্য দিকে তাকাতে চেষ্টা করি। ফি-রোজ একই ঘটনা। বাধ্য হয়ে আমি স্কুলে যাওয়ার জন্য খানিকটা ঘুর পথ বেছে নেই।

আজ এদের একজন আমাকে দেখে ঝলমলে মুখে জানালেন আজ থেকে এরা বসতে পারবেন, ভাত বিক্রি করতে পারবেন। বুকে হাত দিয়ে বলি, শুনে মনটা আমার ভাল হয়ে গিয়েছিল। যাক, এই গরিব বেচারাদের একটা গতি হলো। আবার এঁরা পুরোদমে ভাত বিক্রির ব্যবসা শুরু করতে পারছেন, মাছ-ভাত ১৫ টাকা প্লেট!
আমি সম্ভবত খানিকটা অন্যমনস্ক ছিলাম। প্রথমে কথাটা ভাল করে বুঝিনি যখন তিনি বললেন, 'এখন ডেইলি ত্রিশ টাকা কইরা দিমু'।
আমি বললাম, 'না-না, ত্রিশ টাকা করে দিতে হবে না। আপনি প্রতিদিন বা হপ্তায় যা পারেন দিবেন'।
তিনি বললেন, 'ত্রিশ টাকা না-দিলে ভাত বেচতে দিব না'।
আমি অবাক, 'কে বলেছে এই কথা, স্কুলের মাস্টার'?

আসল ঘটনা এতক্ষণে বুঝতে পারি আমি। ষ্টেশন কর্তৃপক্ষকে প্রতিদিন ত্রিশ টাকা ঘুষের বিনিময়ে এখন এরা স্টেশনে ভাত বিক্রি করার অনুমতি পেয়েছেন! অর্থাৎ মাসে প্রত্যেককে এখন ৯০০ টাকা ঘুষ দিতে হবে। ভাবা যায়! এই-ই আমাদের সোনার বাংলার নমুনা!
বাহ, ঘুষ দিলে এখন আর বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের কোন ব্যত্যয় হয় না! হা ঈশ্বর! পূর্বেও লিখেছিলাম, এই দেশে টাকা পেলে আমরা মাকেও বিক্রি করে দেব- তাঁর ফুসফুস, কিডনি, লিভার...। থাক, বেচারা ঈশ্বরকে এখন আর ডাকাডাকি করে লাভ নাই। ঘুমাচ্ছে বেচারা। ঘুমাক।

সহায়ক লিংক:
১. ন্যানো ক্রেডিট: http://tinyurl.com/39dkbhh
২. মন মিয়া: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_18.html

4 comments:

Omio Ujjal said...

আলী ভাই,ঘুম তার প্রাপ্য নয়। স্টেশনের এই মানুষগুলো যখন ভাত বিক্রি করতে পারছিল না তখন নিশ্চয়ই তাদের রাতগুলো নির্ঘুম কেটেছিল।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

এই দেশে ঘুষখোরদের ঘুমের কোন সমস্যা হয় না। ঘুষখোরদের নিয়েও আমাদের কোন বিকার নাই। ঘুষখোরের বিছানায় মেয়েকে তুলে দিতে (বৈধ পদ্ধতিতে, বিবাহ নামের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে) দ্বিতীয়বার ভাবাভাবির প্রয়োজন হয় না।
এরা অবলীলায় বাজারের সবচেয়ে উঁচু গরুটা খরিদ করবেন। ধর্মের ঝান্ডাটাও উঁচু করে রাখবেন...। @Omio Ujjal

Monirul Islam said...

এই দেশে ঘুষখোরদের ঘুমের কোন সমস্যা হয় না। ঘুষখোরদের নিয়েও আমাদের কোন বিকার নাই। ঘুষখোরের বিছানায় মেয়েকে তুলে দিতে (বৈধ পদ্ধতিতে, বিবাহ নামের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে) দ্বিতীয়বার ভাবাভাবির প্রয়োজন হয় না।
এরা অবলীলায় বাজারের সবচেয়ে উঁচু গরুটা খরিদ করবেন। ধর্মের ঝান্ডাটাও উঁচু করে রাখবেন.

আপনার এই কথার সাথে আমি একমত

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

:)@Monirul Islam