রমজান মিয়া।
কিছু ক্রাচ এবং ব্লাইন্ড স্টিক (এটার ভাল নাম আমি জানি না) আমাকে এনে দেয়া হয়েছে। ঈশ্বরের বিশেষ সন্তান [১], যারা চোখে দেখতে পান না তাঁদেরকে দেয়ার জন্য।
অনেকেই আছেন জন্ম থেকেই দেখতে পান না। এমন একজন রমজান মিয়ার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। কিন্তু মানুষটার হাতে ঘড়ি দেখে আমি থমকে যাই। মনে আমার একগাদা সন্দেহ- মানুষের প্রতি চট করে অবিশ্বাস করাটা আমাদের মজ্জাগত!। আমরা সন্দেহের বোঁচকাটা সঙ্গে নিয়েই ঘুরে বেড়াই, আমিও তো এদেরই একজন।
আমি অবিশ্বাসের বোঁচকাটা খুলতে খুলতে রমজান মিয়াকে বলি, আপনে ঘড়ি দিয়া কি করেন?
রমজান মিয়া খানিকটা বিরক্ত, ঘড়ি দিয়া মাইনষে কী করে! টেম দেখি।
না, মানে বলছিলাম কি, আপনি তো চোখে দেখতে পান না। সময় দেখেন কেমন করে?
রমজান মিয়া বলেন, দাঁড়ান, আপনেরে কই কয়টা বাজে।
তিনি ঘড়ির একটা বোতামে চাপ দিলে শব্দ বের হয়, এতোটা বেজে এতো মিনিট। আমি হাঁ। এই সম্ভাবনা আমার মাথাতেই আসেনি।
রমজান মিয়ার হাতে বাচ্চাদের একটা ছবিওয়ালা বই দেখে অবাক হয়ে জানতে চাই, এই বই দিয়া কি করবেন? আইজকা কিনলাম। এইটা আমার বাচ্চা পড়ব।
আপনার বাচ্চা কোথায় পড়ে?
একজন মাস্টার কইছে টেকা দিলে সপ্তাহে একদিন পড়াইব।
আমি চকচকে চোখে বলি, আমাদের একটা স্কুল আছে, আপনার বাচ্চাকে ওখানে দিলে পড়তে পারবে, টাকা-পয়সা লাগবে না।
মানুষটা রাজি। আনন্দিত গলায় বলেন, যদিও ম্যালা দূর, কষ্ট হইব। তারপরও আমি বাচ্চাটারে নিয়া আমু, আবার নিয়া যামু।
আমি অনেক ভেবে দেখলাম, স্কুলটা যে জায়গায় ওখান থেকে রমজান মিয়া যেখানে থাকেন ৮/১০ কিলোমিটারের কম হবে না। রমজান মিয়া করেন ভিক্ষা। এই বাচ্চাটা পড়ার পর তার বাবার সঙ্গে সঙ্গে স্টেশনে ঘুরবে। এবং এ দেখবে, শিখবে, হাত বাড়ালেই অনায়াসে পয়সা পাওয়া যায়। যে একবার হাত বাড়িয়ে টাকা আয় করার কৌশলটা শিখে যায় সে আর এই চক্র থেকে বেরুতে পারে না।
আমাদের দেশে ভিক্ষুকদের টাকা-আধুলি দিয়ে দানবীর সাজার আগ্রহটা আমাদের মধ্যে আবার প্রবল। তাছাড়া হরিজন পল্লীর বাচ্চাদের সঙ্গে অন্য বাচ্চাদের মেশালে কিছু অহেতুক ঝামেলার সৃষ্টি হবে। যেটা আপাতত আমি চাচ্ছি না।
যেমন হরিজন পল্লীর ইশকুলে [২] গিয়ে আমি একদিন বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, বাচ্চারা আমাকে আসসালামুয়ালাইকুম বলছে। মাস্টার মশাইকে আমি নিষেধ করলাম। বললাম, এরা আদাব-নমস্কার যা বলে তাই শেখান। কারণটাও আমি ব্যাখ্যা করলাম। এদের বাবা-মার মনে যেন অহেতুক এই আতংকটা কাজ না করে যে, আমরা ইশকুলের নামে এদের বাচ্চাদেরকে অন্য ধর্মে শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করছি।
রমজান মিয়ার কাছেই পাই চমৎকরণ তথ্য। তিনি যেখানে থাকেন সেখানে ১৫টা পরিবার থাকে। বয়স্করা সবাই অন্ধ। প্রত্যেক পরিবারের ১জন সন্তান ধরলেও ১৫ জন হয়। আমি রমজান মিয়াকে বলি, আচ্ছা, ওখানে একটা স্কুল খুললে কেমন হয়?
রমজান মিয়ার বিশ্বাস হয় না। কেন হয় না কে জানে! যখন খানিকটা বিশ্বাস হয় তখন তাঁর মুখভর্তি হাসি!
আমি আবারও বলি, একজন মাস্টার রেখে দিলে আপনারা কি আমাকে ১ ঘন্টার জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন? যেখানে আপনাদের বাচ্চারা পড়বে।
মানুষটা সব শর্তেই রাজি। কী তীব্র প্রকাশ তাঁর বাচ্চা পড়বে এই আনন্দে।
আমি বেদনার শ্বাস ফেলি, ঈশ্বরের এই সব বিশেষ সন্তানদের যাদের অধিকার [২] আমাদের চেয়েও বেশি থাকা প্রয়োজন ছিল তাঁরা কেন এই নিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলায় দুলবেন? আকিতার মার [৩] মতো এরাও কেন বলতে পারেন না,
"পৃথিবীতে অনেক লোক আছে যারা চুরি করে, অনেকে আবার নিজের অপকর্ম বা পাপের কথা স্বীকার করে না। মা বলতেন, তুমি তো একটা ঘটনার স্বীকার মাত্র। প্রকৃতি তোমার প্রতি অন্যায় করেছে, তাই তুমি এই রোগের সংস্পর্শে এসেছ, যাতে তোমার কোন হাত নাই! ...যখন কারো সঙ্গে কথা বলবে, তার চোখে চোখ রেখে কথা বলবে, বিন্দুমাত্র বিব্রতবোধ করবে না!"
আফসোস, এঁদের তো চোখে চোখ রাখার সেই ক্ষমতাটুকুও নাই!
এঁদের এখানে সহসাই যাওয়ার ইচ্ছা আমার। একটা স্কুল চালাবার মত বাচ্চা থাকলে একটা স্কুল খোলা হবে।
তোতা যেমন বলে, ছোলা দে। তেমনি আমিও বলি, টাকা দে। ছোলা কোত্থেকে আসবে এটা যেমন তোতার জানার প্রয়োজন নাই তেমনি টাকা কোত্থেকে আসবে এটাও আমার জানার প্রয়োজন নাই।
এটা 'পড়শী ফাউন্ডেশন'-এর সমস্যা, আমার না।
সহায়ক লিংক:
১. ঈশ্বরের বিশেষ সন্তান: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_03.html
২. ইশকুল: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_9016.html
৩. আকিতার মা: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post.html
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Sunday, July 18, 2010
ইশ্বরের বিশেষ সন্তানদের ইশকুল
বিভাগ
আমাদের ইশকুল: দুই
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment