Search

Sunday, November 15, 2009

একজন তদ্বিরকারী এবং একচোখা মডারেটর!

সামহোয়্যার নামের একটা ওয়েবসাইটে দীর্ঘ সময় লেখালেখি করেছি, যার চালু নাম ব্লগিং। সময়টা সম্ভবত ২০০৫ সালের ডিসেম্বর।  

চর্বিতচর্বণ, তবুও বলি, সে এক সোনালি সময়! লাইভ- পার্থক্যটা টিভি নাটক এবং মঞ্চ নাটকের মতো!

পূর্বে বই বের হত কিন্তু পাঠকের প্রতিক্রিয়া জানতে পারতাম না। এক লেখায় যেটা বলেছিলাম, 'কনক পুরুষ' নামের বইটার প্রতিক্রিয়া জানতে পেরেছিলাম প্রায় ১০ বছর পর, তাও নেটের কল্যাণে!
তো, ওইসব লেখা নিয়ে 'শুভর ব্লগিং' নামে বইটা বেরুল। বাংলা ব্লগিং নিয়ে প্রথম বই। বিভিন্ন কারণে ওখানে লেখালেখি করার সুর কেটে গেল। যাও ঝুলে ছিলাম কিন্তু এদের সীমাহীন ফাজলামি থেকে এই ফাজলামিটা বড়ো অসহ্য লাগল। এরা ঠিক করল, কোন ব্লগারকে শাস্তি দিলে তার সমস্ত লেখালেখি উধাও করে দেবে। কী সর্বনাশ, বলে কী! 
আমার কোন সমস্যা ছিল না, আমার সমস্ত লেখালেখিই বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কিন্তু যে মানুষটা বছরের পর বছর ধরে এখানে লিখে গেছেন, যাদের রয়েছে শত-শত পোস্ট। ইচ্ছা করলেই সন্তানতুল্য তার লেখাগুলোকে তিনি স্পর্শ করতে পারবেন না? কর্তৃপক্ষ নামের মিছা-ঈশ্বরের মন উদাস হলেই তাদের সমস্ত লেখা হাপিস করে দিতে পারেন! দূর-দূর, হুশ-হুশ, নিকুচি করি আমি এমন লেখালেখির!

কালে কালে এই সাইটটা দুর্দান্ত জনপ্রিয় হয়েছে। এখন এই সাইটটার এলেক্সা রেন্কিং ৫২১২, সাইট ভ্যালু আনুমানিক সাড়ে পাঁচ লক্ষ ইউ.এস ডলার! ভাবা যায়? আজ এই সাইটটার এই যে অভাবনীয় অবস্থান এর পেছনে এখানে যারা লেখালেখি করেছেন, করেন তাঁদের অবদানই মূখ্য। কিন্তু এদের প্রতি এই সাইটটা যারা চালান, তাঁদের ন্যূনতম ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয় না। ব্লগারকে শাস্তি দিলে তার সমস্ত লেখালেখি উধাও করে দেয়া- তাঁদের এমন অর্বাচীন ভাবনার জন্য আজও ব্যথিত-লজ্জিত হয়েছেন বলে তো শুনিনি! ভাবখানা এমন, মিয়া, তোমরা ছলিমুল্লা-কলিমুল্লা, মাগনা লেখালেখি করো আবার লম্বা লম্বা বাতচিত করো!  লিখতে দেই এই তো ঢের!

এ তো গেল তবলার ঠুকঠাক। গানটা শুরু করি: আমার পুত্রধন, তখন উনার বয়স ৬। আমার 'শুভর ব্লগিং' বইটা নেড়েচেড়ে দেখে লম্বা-লম্বা শ্বাস ফেলেন। উনার খায়েশ হলো ব্লগিং করবেন। বেশ, আমি এখানে লিখি না বলে উনি লিখতে পারবেন না এমনটা বলি কেমন করে! তাছাড়া চাকু চালানোর চেয়ে কলম চালানো শিখুক, মন্দ কী! রেজিস্ট্রেশন করে দিয়েছিলাম। উনি টুকটুক করে টাইপ করেন,  হাবিজাবি-বাকোয়াজ কীসব লেখা শুরু করলেন। সে অনেকদিন হলো। 
তবে সময় পেলেই কানের পাশে অনবরত বকে যান, উনার নাকি প্রথম পাতায় এক্সেস নাই, মন্তব্য করতে পারেন না ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি গা করি না। যতটুকু জানতাম, সাইটওয়ালারা নাকি কি কি সব নিয়ম করেছেন, অন্য ব্লগারদের নিরাপত্তার খাতিরে নতুন ব্লগারদের চোখে চোখে রাখেন। হতেই পারে এমন। বাৎসল্য স্নেহে অহেতুক লাফাবার কোন কারণ দেখিনি।

এরিমধ্যে এই ক্ষুদে ব্লগারের বয়স বেড়েছে, সাত ছাড়িয়েছে, বুদ্ধিতেও খানিকটা পোক্ত হয়েছেন। এখন আবদার করার সময় উনার মাতাশ্রীকে সঙ্গে রাখেন। দু-জন মিলে আমাকে যুক্তির ফাঁদে ফেলে দেন। এদের বক্তব্য, অন্য কেউ আমার কাছে সহায়তা চাইলে আমি কি না করতে পারতাম? হক কথা!
নিজের জন্য কখনও এ পথ মাড়াইনি, তবুও আমি অনেকটা অনিচ্ছায় সাইটটার কর্তৃপক্ষকে হপ্তা পূর্বে একটা মেইল করলাম। অনেকটা এমন:   
"ডিয়ার কর্তৃপক্ষ,
শুভেচ্ছা।
আমি এই ব্লগারের বাবা। এ এখানে ৬ বছর বয়সে ব্লগিং শুরু করে। এখন এর ৭-এর উপরে চলছে। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছি, এর এখানে ১ বছর ৩ মাস হয়ে গেল কিন্তু এখনও প্রথম পাতায় এক্সেস পায়নি! ওর লেখার মানই যদি এর একমাত্র কারণ হয়ে থাকে তাহলে আমার বলার কিছু নাই।

আমার ধারণা, এখানে সে সর্বকনিষ্ঠ ব্লগার। ৬ বছরের বালকের কাছ থেকে আমি অন্তত উঁচুমার্গের লেখা আশা করতে পারি না!
আমি দীর্ঘ সময় এখানে ব্লগিং করেছি। নিকটা বলে বাড়তি সুবিধা নিতে চাচ্ছি না। এবং এও চাচ্ছি না, আমার সন্তান আমার ছায়ায় এখানে ব্লগিং করুক। আমি চাই, সে অন্য আর দশজনের মত তার মত করে এখানে লিখুক। এও সত্য, সে গুছিয়ে মেইল করতে পারবে না বিধায় আমাকে তার হয়ে বলতে হলো বলে বিব্রতও বোধ করছি।
বাকিটুকু আপনাদের বিবেচনা।

শুভেচ্ছায়
-আলী মাহমেদ


ফিরতি মেইলে আমাকে জানানো হলো, ৩ দিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করা হবে। সমস্যাটার সমাধান হয়েছে অনেকটা।  
"আপনি নতুন ব্লগার, সামহোয়্যার ইন ব্লগে... আপনাকে স্বাগতমআপনাকে ব্লগের সকল সুবিধা দেওয়ার আগে ৪দিন পর্যবেক্ষনে রাখা হবেআপনার লেখা মডারেটরের উপস্থিতে সরাসরি প্রথম পাতায় ক্রমানুসারে প্রকাশিত হবেআর সম্পাদকের বিবেচনা সাপেক্ষে তা সংকলিত পাতায়ও প্রকাশ হতে পারে।"

এখনও আমার পুত্রধনকে 'ওয়াচ'-এ রাখা হয়েছে। এটা তার জন্য গর্বের বিষয়, কেউ তাকে চোখে চোখে রাখছে! এই দেশের গোয়েন্দাদের উপর ভরসা করা না-গেলেও এই সাইটের গোয়েন্দাদের উপর আস্থা রাখা চলে। বেশ-বেশ, থাকুক ওয়াচে, সেটা আমার আলোচ্য বিষয় না। আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, এই দেশের সবগুলো চাকা চলে তদ্বিরের জোরে! এখানেও তদ্বিরের প্রয়োজন হবে এ আর বিচিত্র কী!

এখানকার মডারেটর নামের একচোখা গোয়েন্দারা একবারও ভাবলেন না, ৬ বছরের এই ব্লগার নির্দোষ-সব পোস্ট দিচ্ছে, "আমাদের খেলার কোন মাঠ নাই" এই পোস্টটা কার মাথায় আঘাত করছে? আজ পর্যন্ত সে আপত্তিকর দূরের কথা নিজের পোস্ট ব্যতীত অন্য কারও পোস্টে মন্তব্যই করতে পারেনি। তাও এদের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য ১ বছর ৩ মাস! তদুপরি তদ্বির করার পর...! হা ঈশ্বর, একটা মানুষ বাঁচে ক-বছর?

3 comments:

admin said...

আমি দীর্ঘদিন ধরে সামুতে ব্যান। কারো পোস্টে কমেন্টও করতে পারি না। ব্যান উঠানোরও কোন সম্ভাবনা দেখি না। এই হলো সামুতে আড়াই বছর লেখালিখির প্রতিদান!

অলৌকিক হাসান said...

www.amarblog.com এ লিখতে বলুন জলদি। রেজিস্ট্রেশন করেই পোস্ট লিখে প্রথম পাতায় দেখতে পাবেন।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

মুকুল, চুতিয়া শব্দটা বলা নিয়ে আমার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু ক্রোধ হলে এটা না-বলে আরাম পাই না!
এরা ভুলে যায় ডায়নোসর নাই, রাশিয়া নাই, আদমজী জুটমিল নাই...।

অলৌকিক হাসান, ধন্যবাদ, দেখি রেজিস্ট্রেশন করে দেব। ওটা সমস্যা না, ওর লেখা পাতে দেয়ার মত না।
কিন্তু এদের আচরণ আমাকে হতভম্ব করেছে। আমার ধারণা ওখানে মডারেটর বলে কিছু নাই, আছে একটা নির্বোধ কম্পিউটার!