আপনি একটা হিট কমার্শিয়াল ছবি বানাতে চান?
এ ধরনের ছবি বানাতে নিদেন পক্ষে আপনার যা লাগবে, একজন ভুঁড়িওয়ালা নায়ক, আড়াই থেকে তিন মণ ওজনের দুজন নায়িকা (একজন, যিনি একটু মোটা কম, শেষ দৃশ্যে প্রায় মিনিট পনেরো ধরে দীর্ঘ সংলাপ বলতে বলতে রক্তের সাগরে ভাসতে ভাসতে মারা যাবেন)। লাগবে কয়েক গ্যালন লাল রঙ, কয়েক লিটার খাঁটি সরিষার তেল অথবা গ্লিসারিন (সহজলভ্য যেটা), প্রচুর লাফিং গ্যাস এবং কাঁদানে গ্যাসের কিছু শেল।
আপাতত এসব নিয়েই শুটিং শুরু হবে। প্রথম দৃশ্যে দেখা যাবে, নায়িকা এমন একটা পোশাক পরেছে, যেটা পরা, না-পরা প্রায় সমান। একটু পরেই দেখা যাবে নায়িকা সাগরের পানিতে দাপাদাপি করছে। সাগরের পানি উপচে ডাঙায় চলে এসেছে, সাগর কাদার মরুভূমি।
এবার নায়িকা বিরক্ত হয়ে সমুদ্র নামের কাদার মরুভূমি থেকে ডাঙায় উঠে বনবাদাড়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করবে। ছোটখাটো গাছের ডালপালা সব ভেঙে ফেলবে।
গাধার (এরা নাকি খুব ভদ্র, ওজন নিয়ে তেমন বিশেষ মাথায় ঘামায় না) পিঠে করে নায়কের আগমন। নায়ক নায়িকার আকাশ পাতাল রূপ দেখে অন্য রকম হয়ে যাবে। নায়িকাকে কোলে নিয়ে (আসলে নায়কদের সময়ের অভাব নইলে বিশ্ব অলম্পিকে ওয়েট লিফটিং-এ সবগুলো সোনা বাগিয়ে নেয়া ডাল ভাত) গান গাইতে গাইতে আরও কিছু গাছের প্রচুর বড় ডালপালা ভাঙবে।
ওয়েল, এ ছবিতে গান থাকবে আঠারো থেকে বিশটা। প্রায় প্রতিটি গানের কথা থাকবে এরকম, বিচিত্র কারণে নায়িকার শরীরে আগুন ধরে গেছে, ফায়ার বিগ্রেড ডেকেও লাভ হচ্ছে না। ইনিয়ে-বিনিয়ে এটা নায়িকা বার বার বলতে থাকবে। আর নায়ক ঘুরে ফিরে আগুন নেভাবার প্রতিশ্রুতি তো দিবেই, বোনাস হিসাবে সে নিমিষে নায়িকার গোদা পায়ে চন্দ্র-সূর্য হাজির করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধও হবে।
এ ছবিতে কিছু স্পেশাল এফেক্ট থাকবে। এই যেমন, নায়ক মোটর সাইকেল নিয়ে আকাশে উড়বে, রিকশা নিয়ে ফোর-হুইল ড্রাইভ গাড়ির ধাওয়া করবে। ধান ক্ষেতে অনায়াসে প্লেন নামাবে, লম্বা লম্বা চুল রেখে পুলিশ কিংবা আর্মি হয়ে যাবে।
মারাত্মক কিছু দৃশ্য থাকবে এরকম, নায়ক একটা পিস্তল দিয়েই শ’য়ে শ’য়ে দুষ্টলোক মেরে ফেলবে। এক গুলিতে দু-তিনজন মারা যাওয়াও বিচিত্র কিছু না, গুলি কোন সমস্যা না। অথচ হাজার হাজার গুলি নায়কের গোপন কেশ দূরের কথা প্রকাশ্য কেশও স্পর্শ করতে পারবে না। বাই এনি চান্স, বুক ঝাঁঝরা হয়ে গেলেও টলতে টলতে দীর্ঘ সংলাপ বলবে। কিন্তু মরবে না, নায়কদের মরার নিয়ম নাই- সবই তার ইচ্ছা!
বিয়ের দৃশ্য: যদি মুসলমানের বিয়ে হয় তাহলে আকাশ পাতাল সাক্ষী রেখে বিয়ে হবে আর হিন্দুর বিয়ে হলে দেখা যাবে সিঁদুর নাই। তাহলে কি বিয়ে হবে না? হবে না মানে, অবশ্যই হবে। নায়ক চাকু বের করে এক পোঁচে নিজের হাত কেটে পোয়াখানেক রক্ত দিয়ে নায়িকার সিঁথি মাখামাখি করে ফেলবে।
দুঃখের দৃশ্য: ভাগ্যচক্রে রাজার মেয়ে রুজ-লিপিস্টিক মেখে থাই সিল্ক পরে মানুষের বাড়িতে ঝি-গিরি করবে। ন্যাকড়া দিয়ে ঘর মুছবে কিন্তু আলাদা পানির প্রয়োজন হবে না, চোখের জলই যথেষ্ট।
হাসির দৃশ্য: তিন-চার ফুটের কয়েকজন ভাঁড় নায়িকার সখিদের সঙ্গে রঙ-তামাশা করবে। অবশ্য এখনকার দর্শকরা আবেগশূন্য। নো প্রবলেম, সিনেমা হলে এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার না করে হাসির দৃশ্যে লাফিং গ্যাস এবং দুঃখের দৃশ্যে কাঁদানে গ্যাস স্প্রে করে দিতে হবে।
ও-হ্যাঁ, ছবিতে এক বা একাধিক ভিলেন থাকতে হবে, থাকতে হয়, নিয়ম। এদের একমাত্র কাজ হল ছলে-বলে-কৌশলে যে কোনো উপায়ে নায়িকাকে সতী থেকে অসতী বানিয়ে ফেলার সবিরাম চেষ্টা। আর এই অধ্যায় চলতে থাকবে আধ ঘণ্টা ধরে।
শেষ মুহূর্তে মানে ইজ্জত যায়-যায় এমতাবস্থায় নায়ক হাজির হবে (জাস্ট টাইম, নো কমপ্লেন)। প্রথমদিকে মার খাবে। এরপর প্রতি সেকেণ্ডে চল্লিশ-পঞ্চাশটা ঘুসি মেরে ভিলেনকে এ্যায়সা ধোলাই দেবে, ঘাঘু ধোপাও লজ্জা পেয়ে যাবে। এ অবস্থায় ভিলেনের পরলোকে রওয়ানা হওয়ার কথা। কিন্তু না, উঠবে মার খাবে, আবার উঠবে আবার মার খাবে। ছবি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভিলেনের নিস্তার নাই।
ভালো কথা, ছবিতে একজন মমতাময়ী মা থাকলে ভালো হয়। যার সামনের চুলগুলো অনেকটা ইন্দিরা গান্ধীর মতো পাকা কিন্তু গায়ের চামড়া টান-টান। যেহেতু ইনি মা, দয়ার শরীর, হাতির বাচ্চার মতো নায়ক মানে ইনার ছেলেকে গভীর বিষাদে বারবার বলতে থাকবেন, ‘আমার পুলা বাঁচতো না, শুখাইয়া চিপস হইয়া গেছে’। আর আধুনিক, হাই-ফাই মা হলে, ‘কী স্বাস্থ্য তোর, কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং, একটু জোরে বাতাস এলে চল্লিশ তলায় উড়ে যাবি’। বাংলাদেশে চল্লিশতলা নাই তাতে কি হয়েছে, ছবির বেশিরভাগ শুটিং হবে তো বিদেশে।
এবার বিজ্ঞাপন। ইত্তেফাক (বিজ্ঞাপনের স্পেস নিয়ে এদের কোনো সমস্যাই নেই, সিনেমায় বিজ্ঞাপনের জন্য দু-চার পাতা বাড়িয়ে দেয়া মামুলি ব্যাপার। এদের কেবল সমস্যা ভাইয়ে ভাইয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি) ব্যতীত অন্য দৈনিকগুলোতে মঘা ইউনানী বা শকুন ভাইয়ের ঘটকালির বিজ্ঞাপন দিয়ে দেয়ার আগেই যোগাযোগ করে বিজ্ঞাপনের কাজ শেষ করে ফেলতে হবে।
বিজ্ঞাপনে নায়ক নায়িকাকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে এভাবে, মাইগ্যা স্টার সরি ম্যাগা স্টার অমুক। বিউটি কুইন তমুক (ইনার গালের গর্তগুলো চুইংগাম দিয়ে ভরাট করা হয়েছে যার চালু নাম বিউটি স্পট)।
যেসব হলে ছবি চলবে তার দু-একটা হলকে বেছে নিতে হবে। ভাড়া করা কিছু লোক বিনামূল্যে এ ছবিটা দেখার দাবি জানিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করবে (হইচই করতে হলে গাড়ি ভাঙচুর করতে হয়, নিয়ম)। দেরিতে আসাই নিয়ম কিন্তু বিচিত্র কারণে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে লাঠি বা বেতচার্জ করবে। হুলস্থূল ব্যাপার। পত্রিকাগুলোতে এই নিউজটা ছাপা হবে। যে সব পত্রিকায় এ নিউজ ছাপানো হয়েছে সে সব পত্রিকার নাম, উদ্ধৃতি উল্লেখ করে আরেকটা বিশাল বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে বলতে হবে, এ ছবি দেখার জন্যে দর্শক উম্মাদ হয়ে গেছে।
ব্যস, কেল্লা ফতে। আপনি তৃপ্তির শ্বাস ফেলে বলবেনই, ছবি একটা বানালুম বটে!
*পোস্টটা দিয়ে বেরিয়েছিলাম একটা কাজে। চোখে পড়ল সিনেমার একটা পোস্টার। ছবির নাম: বউ বড়, না শাশুড়ি?
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Thursday, October 29, 2009
একখানা হিট ছলচিত্র(!) বানাবার কলা(কৌশল)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
2 comments:
আমাদের দেশের দুই রত্ন(!) হাসিনা,খালেদার কর্মকান্ডও কিন্তু এরচেয়ে কম গাঁজাখুরি নয়। উনারা দেশটাকে মাফ করে দিয়ে উনাদের মেধা(!!!) ঢাকাই ছবির পেছনে খরচ করে দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে পারেন।
হা হা হা, ভাল বলেছেন।
Post a Comment