জনৈক সমালোচক কয়েদী নিয়ে কঠিন একটা সমালোচনা করেছেন। অবশ্য এটাকে আমি সমালোচনা বলে স্বীকার করি না। এটা হচ্ছে একজন মানুষকে কলম নামের চাপাতি দিয়ে ঠান্ডা মাথায় কুপিয়ে আহত করা। 'কয়েদী' নামে একটা বই আছে আমার। গোটা বইটাই হরতাল নিয়ে।
আমাদের দেশে হরতালের মতো দানবকে নিয়ে অন্য কোন লেখক কেন বই লেখেননি এটা আমার কাছে অষ্টম আশ্চর্যের একটি। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে চলে আসা হরতালকে তাইলে এঁরা সমস্যা মনে করছেন না- প্রকারান্তরে সমর্থন দিচ্ছেন! ভাল ভাল- জয় হোক মহান কলমবাজদের!
তো, সমালোচক সাহেবের বক্তব্য হলো, এটাকে কেন উপন্যাস বলে প্রকাশক বিজ্ঞাপন দিলেন। বিজ্ঞাপনটা ছিল এই রকম: 'হরতাল নিয়ে এই দেশের একমাত্র উপন্যাস'!
বিজ্ঞাপনটা হরতাল নিয়ে এ দেশের একমাত্র বই এমনটা গেলে আর দোষ হতো না। এটা না হয় মেনে নেয়া গেল।
সমালোচক সাহেব লিখেছেন, "৪২ পাতার কয়েদী পড়তে ৪০ মিনিট লাগল। যারা দ্রুত পড়তে পারেন তাদের ৩০ মিনিট লাগবে।" বেশ যা হোক, এখন থেকে একটা বই পড়তে কতোটা সময় লাগবে, এটাও ট্যাগ হিসাবে সংযোজন করা আবশ্যক।
আসলে বইটা ৪২ পাতার না, ৪৮ পৃষ্ঠার। এ নিয়ে আমার তীব্র বেদনা আছে। প্রকাশক সাহেবের আপত্তি ছিল, অন্তত ৪ ফর্মা বা ৬৪ পৃষ্ঠার ম্যাটার দেয়ার জন্য। কিন্ত আমার উপায় ছিল না। সে অন্য কাহিনি।
একটি বই বের হওয়ার পেছনের বেদনার কথা পাঠক জানেন না- তাঁর জানার প্রয়োজনও নেই।
আমার স্পষ্ট মনে আছে, যে বছর এই বইটা বের হয়। গভীর রাতেই আমার মেয়েটা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল- কারণ, পরদিন ছিল হরতাল। আমি ১৫০ কিলোমিটার দূরে। সকালে আমাকে যখন ফোন করে এ খবরটা দেয়া হয়, আমি ফোনে আমার মেয়ের কান্না শুনতে পাচ্ছিলাম অথচ আমি যেতে পারছিলাম না। কী কষ্ট-কী কষ্ট! এ গ্রহের সবচেয়ে বড়ো কারাগারে আটকে পড়া একজন বাবা-কয়েদী! এর নাম নাকি গণতন্ত্র!
তো, পরদিন যাওয়া ব্যতীত আমার কোন উপায় ছিল না। আমার মেয়ে হাসপাতালে আর আমি প্রকাশকের এখানে বসে কয়েদী বইটা প্রুফ দেখছি- চোখের জলে ভাসতে ভাসতে। ৬৪ পৃষ্টা লেখব কি, প্রুফ দেখেই শেষ করতে পারিনা এমন অবস্থা। গোপন ইচ্ছা ছিল, পরবর্তী সংস্করণে আরও কিছু পৃষ্ঠা যোগ করে দেব কিন্তু আমাদের মতো অগাবগা লেখকদের তো আর আবার প্রথম সংস্করণই কখনও শেষ হয় না!
সমালোচক সাহেব আলী মাহমেদ নাম নিয়ে তার আপত্তি বোঝাতে গিয়ে শিশ্ন শব্দটা ব্যবহার করেছেন। আমি সমালোচক সাহেবের লেখার ধাঁচের সঙ্গে পরিচিত- খেয়াল করেছি, গদ্য হোক আর পদ্য, প্রায় লেখায় শিশ্ন শব্দটা না থাকলে যেন লজ্জায় ওনার মাথা কাটা যায়। আমার কাছে মনে হয় এমন, কেউ যেন অনবরত বকেই যাচ্ছে, জানিস, আমার না একটা ইয়ে আছে। জানিস আমার না একটা। ওরে, তোরা জানিস আমার…।
ওনার মূল বক্তব্য হচ্ছে, কয়েদীর নামের বইটা একটা যাচ্ছেতাই । বেশ, নিরানন্দ ভঙ্গিতে না হয় মেনে নিলাম। একজনের লেখা সবার ভাল লাগতে হবে এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে!
কিন্ত, টুইস্ট হচ্ছে এই, তিনি শেষে বলেন, "আমি যদি এই বইটা লিখতাম তাহলে চরিত্রগুলোর একটার সঙ্গে অন্যটার..." (এরপর তার কেরামতির বিস্তারিত কাহিনী, লম্বা ফিরিস্তি)। মুশকিলটা হয়েছে এখানেই, গ্যালারীর দর্শক যখন খেলতে নেমে পড়ার জন্য লাফিয়ে পড়েন তাইলে খেলা দেখবে কে?
ওঁকে কে বোঝাবে, এটা একটা নতুন ধরনের কাজ করার চেষ্টা। বাপের সঙ্গে চাচার সম্পর্ক, চাচার সঙ্গে নানার এইটা চাচ্ছিলাম না। বইটায় তথাকথিত কোন নায়ক নেই। এই বইটায় একটা চরিত্রের সঙ্গে অন্য একটা চরিত্রের কোন সংযোগ না থাকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা হয়েছিল। যেন একটা কারাগারের বিভিন্ন সেল। একটা সেলের কয়েদীর সঙ্গে অন্য কয়েদীর কোন যোগ নাই, একেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ! কাছ থেকে কিছুই বোঝা যাবে না কিন্ত দূর থেকে তাকালে ক্রমশ গোটা কারাগারের একটা অবয়ব ফুটে উঠবে।
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Friday, June 29, 2007
কয়েদীর জনৈক সমালোচক নিজেই যখন লেখক!
বিভাগ
‘কয়েদি’ বই থেকে অংশবিশেষ
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment