মুক্তিযুদ্ধের তেমন বিশেষ ছবি আমাদের নাই!
ওই সময় আধুনিক তো দূর অস্ত - ক্যামেরাই বা আমাদের দেশের কয়জনের কাছে ছিল! নাইব উদ্দিন আহমেদ। যে অল্প ক-জন মানুষ সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দূর্লভ কিছু ছবি আমাদের উপহার দিয়েছেন তাঁদের একজন!
একজন মুক্তিপাগল মানুষের সবটুকু শক্তি নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন, সামান্য একটা ক্যামেরা নিয়ে! স্টেনগানের চেয়েও ঝলসে উঠেছে তাঁর হাতের ক্যামেরা!
একাত্তরের সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে তিনি পাক আর্মি এবং এ দেশে তাদের সহযোগী রেজাকার, আল বদর, আল শামসদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বর্হিবিশ্বে পাঠিয়েছেন তাঁর দূর্লভ ছবিগুলো। সমস্ত পৃথিবীর মানুষ জানতে পেরেছে পাক আর্মির নৃশংসতা, বর্বরতা! গঠিত হয়েছে জনমত, বেড়েছে আন্তর্জাতিক ধিক্কার! সব বিশ্ববিদ্যালয় তখন পাক আর্মির টর্চার ক্যাম্প।
একদিন নাইব উদ্দিন আহমেদকে আটকানো হয়। ফটোগ্রাফারের পরিচয়পত্র দেখে পাক আর্মির মেজর কাইয়ুম নাইব উদ্দিনকে বললেন, তুমি কি ক্যামেরা ঠিক করতে পারো, আমার ক্যামেরাটায় সমস্যা হচ্ছে?
নাইবউদ্দিন ক্যামেরাটা দেখেই বুঝলেন, ক্যামেরা ঠিক আছে। শুধু লক করা অবস্থায় আছে, লকটা খুলে দিলেই হয়ে যাবে। ক্যামেরার লক ওপেন করে দেখলেন, আসলেই ঠিক আছে এবং ক্যামেরায় ফিল্ম ভরা। এ সময় তিনি দেখতে পেলেন, এখানে কিছু লোককে বেঁধে রাখা হয়েছে। খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় এলিয়ে পড়ে আছে একজন ধর্ষিতা। কাছেই কিছু বাড়ি পুড়ছে দাউ দাউ করে।
তিনি ক্যামেরা ঠিক করার ছলে, খুব দ্রুত কিছু ছবি তুলে নিলেন পাক মেজরের ক্যামেরা দিয়েই! তারপর আবার লক করে মেজরের হাতে ক্যামেরা ফেরত দিয়ে বললেন, এখানে তো ঠিক করা সম্ভব না, ময়মনসিংহে তার অফিসে আসলে ক্যামেরা ঠিক হয়ে যাবে। পরদিন মেজর নাইব উদ্দিনের অফিসে এলে, নতুন একটা ফিল্ম কিনে আগের ফিল্মটা মিছে ছল করে রেখে দিলেন।
সেই দূর্লভ ছবির অনেকগুলো মুক্তিযুদ্ধের ১৬ খন্ডে ছাপা হয়! একাত্তরের সেপ্টেম্বর মাসে নাইব উদ্দিন খবর পেলেন ধর্ষিতা এক তরুণী ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে রয়েছে। কিন্তু ডাক্তাররা তাঁর পরিচয় জানালে চাচ্ছিল না!
খেয়াল করলেন, ওয়ার্ডের এক কোনে এক তরুণী বুক ফাটা শব্দ করছে, আধ জবাই পশুর মতো। হাত দিয়ে মাথার চুল ছিঁড়ছে। কোন হুঁশ নেই। বদ্ধ পাগল। নাইবউদ্দিন বুঝতে পারলেন, এই সেই তরুণী!
ওই অবস্থায় তিনি সেই তরুণীর কিছু ছবি তুললেন। তখন তরুণীটির অমানুষিক, জান্তব চিত্কারে নাইব উদ্দিনের মাথা খারাপের মতো হয়ে গিয়েছিল, তাঁর হাত থেকে ক্যামেরা পড়ে গিয়েছিল। তিনি সেই জ্বলন্ত চোখের কথা ভুলতে পারছিলেন না! অন্যরা ছবি তুলতে নিষেধ করছিল কিন্তু সেই কুমারী তরুণীটির মা ছবি তোলার জন্য বলেন এবং নাইব উদ্দিনের হাত ধরে বলেছিলেন, বাবা, ওর ছবি তুলে বিদেশে পাঠাও। সবাই দেখুক পাকিস্তানীরা আমাদের উপর কী অত্যাচার করছে!
নাইব উদ্দিন সে রাতে ঘুমাতে পারেননি। সেই জ্বলন্ত চোখ, সেই অপার্থিব দৃশ্য! তাঁর এক পর্যায়ে হার্ট এ্যাটাক হয়ে গেল। পরেরদিন তিনি চিকিত্সার জন্য ইসলামাবাদ চলে যান। সঙ্গে নিয়ে যান তাঁর তোলা ছবিগুলো!
*পাক আর্মিরা যে কোরআন শরীফ পুড়িয়েছিল এ ছবিও তিনি তুলেছিলেন। কিন্তু এখন ছবিটা আমি খুজেঁ পাচ্ছি না।
**এখানে জনাব, নাইব উদ্দিন আহমেদের ২টা ছবি দেয়া হলো।
***নাইব উদ্দিন আহমেদের এই সাক্ষাত্কারটি নিয়েছিলেন: আনন্দ রোজারিও/ ভোরের কাগজ, ১৫.১২.৯৩
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Friday, June 29, 2007
সব যুদ্ধ স্টেনগান দিয়ে হয় না!
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
3 comments:
দীর্ঘশ্বাস শুধু আসে এইসব জেনে।
দীর্ঘশ্বাসের চেয়ে আমার গায়ে আগুন ধরে যায় যখন চুতিয়া পত্রিকাওয়ালারা নাইব উদ্দিনের মত মানুষের অসম্ভব বিখ্যাত ছবির পাশে লিখে দেয়, সংগৃহিত!
http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_6688.html
ভোরের কাগজে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটা হুবহু আপনার ব্লগ পোষ্টে প্রকাশ করা সম্ভব?
Post a Comment