Search

Saturday, June 6, 2020

যুদ্ধ-বীরত্ব-অন্ধকার!

লেখক: Galib Choudhury 

" *(অনেক পাঠকের মনোজগৎ ভিন্ন। তাই কারো-কারো কাছে এই লেখাটির বিষয়বস্তু ডিসটার্বিং মনে হতে পারে। যারা নারীদের উপর নির্যাতনের বিবরণ পড়তে চান না, তারা দয়া করে এই লেখাটি এড়িয়ে যান। )

বার্লিনের যুদ্ধ (এপ্রিল-মে ১৯৪৫) ও মিত্রশক্তির জয়পরবর্তীকালে বার্লিনে ধর্ষণযজ্ঞ:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই যুদ্ধের কারণে তাদের দুই কোটি লোকের প্রাণহানি ঘটেছিল,
আর ছিল ব‍্যাপক সম্পদহানি যার মূল্য অর্থের পরিমাণ দিয়ে মাপা প্রায় অসাধ‍্য। তারপরও জোসেফ স্ট‍্যালিনের সেনাপতিদের দক্ষতা এবং জেনারেল জুকোভের যুদ্ধের বিজয়কৌশলের পথ ধরে সোভিয়েত লাল ফৌজের সেনানীরা পূর্ব দিক থেকে এগিয়ে এসে বার্লিন শহরের কেন্দ্রে 'ভিলহেলম' আর 'ফস' সড়কের কোনায় অবস্থিত হিটলারের শেষ আশ্রয়স্থল গুঁড়িয়ে দিয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের ক্ষেত্রে ইউএসএসআরের ভূমিকা ও বার্লিন জয়কে দেশের সবচেয়ে গৌরবময় মুহূর্ত হিসাবে দেখা হয়। তবে আরও একটি গল্প আছে, যুদ্ধের শেষ দিনগুলিতে জার্মান মহিলাদের সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা গণধর্ষণ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জার্মানি আক্রমণ ও দখলের সময় মিত্রপক্ষীয় সৈন্যদের হাতে প্রচুর সংখ্যক বেসামরিক লোক নিহত আর ব‍্যাপক হারে জার্মান নারী ধর্ষণের শিকার হন। অধিকাংশ ধর্ষণ সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল তবে মার্কিন, ব্রিটিশ, ফরাসি ও পোলিশ সৈন্যরাও এতে পিছিয়ে ছিল না।
মিত্রবাহিনী যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে জার্মান ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল এবং দখল করছিল, যুদ্ধ পরিচালনার সাথে এবং পরবর্তীকালে জার্মানি দখল করার সময় উভয় ক্ষেত্রেই মহিলাদের উপর ব্যাপক ধর্ষণ করা হয়েছিল। বেশিরভাগ পশ্চিমা ইতিহাসবিদরা একমত যে, ধর্ষণ সিংহভাগই সোভিয়েত সেনা কর্মীদের দ্বারা করা হয়েছিল তবে কিছু রাশিয়ান ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে, এই অপরাধগুলি ততো ব্যাপক ছিল না।
এই যুদ্ধকালীন ধর্ষণগুলি পরবর্তীতে কয়েক দশক নিরবতার বৃত্তে বাঁধা ছিল। তবে এনকেভিডি (সোভিয়েত সিক্রেট পুলিশ) প্রকাশিত ফাইলগুলি থেকে জানা যায় যে নেতৃত্বদানকারীরা যা ঘটছে তা জানতেন, তবে এটি থামাতে খুব একটা চেষ্টা করেননি। আবার কিছু রুশ ঐতিহাসিক এর সাথে একমত নন, তারা দাবি করেছেন যে সোভিয়েত নেতৃত্ব সেই সময় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে সোভিয়েত লাল ফৌজ জার্মানিতে প্রবেশ করে এবং জার্মান নারীদের উপর ধর্ষণ শুরু হয়। প্রায় ২০ লক্ষাধিক জার্মান নারী সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষিত হন। কোনো-কোনো ক্ষেত্রে এক একজন জার্মান নারী ৬০ থেকে ৭০ বার পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হন। কেবল বার্লিনেই কমপক্ষে ১,০০,০০০ নারী সোভিয়েত সৈন্যদের হাতে ধর্ষিত হন এবং এর ফলে প্রায় ১০,০০০ নারী প্রাণ হারান। প্রায় ২,৪০,০০০ জার্মান নারী সোভিয়েত সৈন্যদের হাতে ধর্ষণের ফলে প্রাণ হারান। কেবল পূর্ব প্রাশিয়া, পমেরানিয়া এবং সাইলেশিয়া অঞ্চলেই কমপক্ষে ১৪,০০,০০০ জার্মান নারী ধর্ষণের শিকার হন।

সোভিয়েত সৈন্যদের উপর বার্লিনে ৮ বছর থেকে ৮০ বছর বয়সী প্রতিটি জার্মান নারীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ আনা হয়। কেবল তাই নয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের সময় জার্মান সৈন্যরা যেসব সোভিয়েত নারীকে বন্দি করে দাসশ্রমিক হিসেবে জার্মানিতে প্রেরণ করেছিল, সেসব সোভিয়েত নারীদের অনেকেও সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন।
উল্লেখ্য, প্রাক্তন জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের স্ত্রী হান্নেলোর কোল, ১৯৪৫ সালের মে মাসে ১২ বছর বয়সে সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন এবং ধর্ষণের পর তাকে ঘরের জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলা হয়। এই ঘটনার ফলে তিনি আজীবন রোগগ্রস্ত থাকেন এবং অবশেষে ২০০১ সালে আত্মহত্যা করেন।

১৯৪৫ সালের গ্রীষ্মকালের পর থেকে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ জার্মান নারীদের ধর্ষণকারী সোভিয়েত সৈন্যদের শাস্তি দিতে শুরু করে, এবং কোনো-কোনো ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুদণ্ডেও দণ্ডিত করে। কিন্তু তার পরেও ১৯৪৭–১৯৪৮ সালের শীতকালে সোভিয়েত সৈন্যদের সুনির্দিষ্ট ঘাঁটিতে আবদ্ধ করার আগ পর্যন্ত ধর্ষণ অব্যাহত থাকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বৃহত্তম ও সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী রণাঙ্গন ছিল পূর্ব রণাঙ্গন। একে মানব ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা প্রাণঘাতী সংঘাত হিসেবে গণ্য করা হয়। এ যুদ্ধে ৩ কোটিরও অধিক মানুষ নিহত হয়। জার্মান বাহিনীর মোট হতাহতের শতকরা ৮০ ভাগই সংঘটিত হয় পূর্ব রণাঙ্গনে। এ রণাঙ্গনের উভয় পক্ষেরই মানুষের প্রাণের প্রতি কোন পরোয়া না থাকায় এর যুদ্ধসমূহের প্রকৃতি ছিল নৃশংস ও ভয়াবহ। এস্থানে যুদ্ধের আদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গীও এই নৃশংসতাকে তুলে ধরে, সংঘর্ষে লিপ্ত দুই পক্ষের আদর্শগত অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী।

আদর্শগত যুদ্ধ ছাড়াও, নাৎসি জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃদ্বয়, যথাক্রমে অ্যাডলফ হিটলার ও জোসেফ স্টালিনের মনমানসিকতার কারণে যুদ্ধের ভয়াবহতা ও এর প্রাণনাশী প্রকৃতি এক অভূতপূর্ব আকার ধারণ করে। হিটলার ও স্টালিন উভয়েই তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ করতে মানব প্রাণের তোয়াক্কা করতেন না। এমনকি তাদের নিজেদের সৈন্য ও জনগণের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করতেও তারা পিছপা হতেন না। এসব কারণে পূর্ব রণাঙ্গনের সামরিক ও বেসামরিক সকল নাগরিকের মধ্যেই যে এক নিষ্ঠুর প্রকৃতি পরিলক্ষিত হয়, যা নারকীয় ও অতুলনীয়।
লোকবল, স্থায়িত্বকাল, আঞ্চলিক প্রসার এবং ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে পূর্ব রণাঙ্গনের সংঘাতের আকার ছিল নরম্যান্ডি অভিযান থেকে শুরু হওয়া পশ্চিম রণাঙ্গনের প্রায় চার গুণ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার অবস্থান অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল, এবং অক্ষশক্তির পরাজয়ে এই ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সিসিলিতে যখন ব্রিটিশ ও মার্কিন বাহিনী ২টি জার্মান ডিভিশনের মোকাবিলা করে, তখন রুশ বাহিনী তাদের রণাঙ্গনে প্রায় ২০০টি জার্মান ডিভিশনের মোকাবিলা করছিল। রাশিয়া যুদ্ধে জড়িত না-থাকলে ইউরোপে অক্ষশক্তিকে হারানো অসম্ভব ছিল।
রেড আর্মির সৈন্যরা যখন জার্মানি পৌঁছল তখন তারা হতবাক হয়ে গেল। আট মিলিয়ন সোভিয়েত মানুষ তখন তাদের জীবনে এই প্রথমবারের মতো বিদেশে এসেছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল একটি বন্ধ দেশ। বিদেশের দেশ সম্পর্কে তাদের যা জানানো হতো তা ছিল অন্য দেশের বেকারত্ব, অনাহার এবং শোষণ। কিন্তু তারা যখন স্টালিনবাদী রাশিয়া থেকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ পশ্চিম ইউরোপে এলো... বিশেষত জার্মানি, তখন তারা বুঝতে পারল যে এই পরিবেশ তারা যা জানতো তার চেয়ে খুবই আলাদা। সৈন্যরা তখন সত্যিই অবাক ও রেগে গিয়েছিল, তারা বুঝতেই পারছিল না, এত ধনী হয়েও জার্মানরা কেন রাশিয়া দখল করতে গিয়েছিল!

১৯৪৫ সালের জানুয়ারিতে পূর্ব প্রুসিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়া সোভিয়েত সেনাবাহিনী ছিল আধুনিক ও মধ্যযুগের এক অসাধারণ মিশ্রণ: ট্যাঙ্কগুলিতে হেলমেট পরিহিত সৈন্য, কস্যাক অশ্বারোহী বাহিনী এবং হালকা বন্দুকবাহী টোডেজগুলি এবং তারপরে ঘোড়ার গাড়িতে সাহায্যকারী বাহিনী। সৈন্যদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের চরিত্র ছিল যা তাদের সামরিক সরঞ্জামের মতো বৈচিত্র্যময়। এমন বিচিত্র ও বিশাল সংখ্যক সেনাদল যখন এক দীর্ঘদিন ধরে চলা ও ক্লান্তিকর যুদ্ধ জয়ের পর মাতাল হয়ে বেশ নির্লজ্জভাবে খোলামেলা ধর্ষণ আনন্দে মেতে উঠল, তখন তাদের দেশের আদর্শবাদী, কঠোর কমিউনিস্ট এবং পার্টির বুদ্ধিজীবী সদস্যরা সেনাদের এ জাতীয় আচরণে হতবাক হয়েছিলেন।
পূর্ব প্রুশিয়ার সামুদ্রিক পদাতিকের অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নাট্যকার জখর আগরেনকো তাঁর ডায়েরিতে লিখেছিলেন, 'রেড আর্মির সৈন্যরা জার্মান মহিলাদের সাথে 'ব্যক্তিগত লিয়াজোঁ' বিশ্বাস করে না। একসাথে নয়, দশ, বারো জন পুরুষ - তারা তাদেরকে যৌথ ভিত্তিতে ধর্ষণ করে। '

বিজয়ী রেড আর্মির দ্বারা পরিচালিত একটি বিশাল যুদ্ধাপরাধ নিয়ে বার্লিনের পতন সম্পর্কে প্রশংসিত বইয়ের লেখক অ্যান্টনি বেভর। অ্যান্টনি বেভর তার বার্লিন: পতন ১৯৪৫ (Berlin: The Downfall 1945) বইয়ে, বিজ্ঞানী আন্দ্রেই সাখারভের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাটাল্যা গেস, যিনি ১৯৪৫ সালে সোভিয়েতের যুদ্ধের সংবাদদাতা হিসাবে রেড আর্মিকে কার্যত পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, তার সূত্রে দাবি করেন যে 'রাশিয়ান সৈন্যরা আট থেকে আশি বছর বয়সী প্রতিটি জার্মান মহিলাকে ধর্ষণ করছিল'। তিনি পরে উল্লেখ করেন 'এটি ধর্ষকদের একটি বাহিনী ছিল।'
জার্মানিতে রেড আর্মির গণ ধর্ষণের বিষয়টি রাশিয়ায় এতটাই দমন করা হয়েছে যে আজও অভিজ্ঞ প্রবীণরা সত্যিই কী ঘটেছে তা স্বীকার করতে অস্বীকার করেছেন। খোলাখুলিভাবে কথা বলার জন্য প্রস্তুত মুষ্টিমেয়রা অবশ্য সম্পূর্ণ অনুশোচনাপ্রবণ।

একটি ট্যাঙ্ক সংস্থার নেতা বলেছিলেন: 'তারা সবাই আমাদের জন্য স্কার্ট তুলে বিছানায় শুয়েছিল'। এমনকি তিনি গর্ব করে বলেছিলেন যে, 'জার্মানিতে 'আমাদের দুই মিলিয়ন শিশু জন্মগ্রহণ করেছে'
সোভিয়েত অফিসাররা বোঝাতে চেয়েছিলেন বা অন্তত স্বীকার করেছেন যে রাশিয়ার জার্মানরা যা করেছে তার পরে এবার তাদের ভোগ করার পালা ছিল। এক কর্ণধার এই সময় এক ব্রিটিশ সাংবাদিককে বলেছিলেন, 'আমাদের বন্ধুবান্ধব লোকেরা তখন যৌন-ক্ষুধার্ত ছিল'। তারা প্রায়শই ষাট, সত্তর বা আশির দশকের বৃদ্ধ মহিলাকে ধর্ষণ করে যা দাদীদেরও অবাক করেছিল, যদিও তারা এতে আনন্দিত হয়নি।'

রেড আর্মির সাথে যুক্ত যুদ্ধের সংবাদদাতা ঔপন্যাসিক ভ্যাসিলি গ্রসম্যান বুঝতে পারছিলেন যে, ধর্ষণের শিকাররা কেবল জার্মান ছিল না। পোলিশ মহিলারাও এর শিকার। দখল করা অঞ্চল থেকে তরুণ রাশিয়ান, বেলোরুশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় মহিলদেরকেও জার্মানরা দাসবৃত্তি করানোর জন্য জার্মানিতে পাঠিয়েছিল।
'মুক্ত সোভিয়েত মেয়েরা প্রায়শই অভিযোগ করে যে আমাদের সৈন্যরা তাদের ধর্ষণ করে', তিনি উল্লেখ করেছিলেন। 'একটি মেয়ে কেঁদে আমাকে বলল: 'সে একজন বৃদ্ধ, আমার বাবার চেয়ে বয়স্ক।'

গোয়েবেলসের কাছ থেকে তারা যেসব ভয়াবহ মিথ্যাচার শুনেছিল বার্লিনের পতন এবং রাশিয়ান প্রতিহিংসা ও সাম্ভাব‍্য বিপদের জন্য অনেক জার্মান মহিলাই প্রস্তুত ছিল না। অনেকে নিজেকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, গ্রামাঞ্চলে এই বিপদটি অবশ্যই খুব বড় আকারে হওয়া সম্ভব কিন্তু এই শহরে সবার সামনে গণধর্ষণের সম্ভাবনা খুবই কম।
অনেক মহিলাই একজন সৈনিকের কাছে নিজেকে 'সঁপে দিতে' বাধ্য করেছিল এই আশায় যে তারা অন্যদের হাত থেকে তাকে রক্ষা করবে। ২৪ বছর বয়সী অভিনেত্রী ম্যাগদা উইল্যান্ডকে তার অ্যাপার্টমেন্টের একটি আলমারি থেকে কুফারস্ট্যান্ডামের একেবারে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
মধ্য এশিয়ার এক অতি অল্প বয়স্ক সৈনিক তাকে টেনে আনে। সৈনিকটি একটি সুন্দর তরুণী স্বর্ণকেশীর প্রত্যাশায় এতটাই উচ্ছ্বসিত হয়েছিলো যে সে অকালেই বীর্যপাত করেছিল। তরুণীটি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে সৈনিকটিকে বলেন যে, সে যদি তাকে অন্য রাশিয়ান সৈন্যদের হাত থেকে রক্ষা করে তবে তিনি সেই সৈনিকের বান্ধবী হবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
কিন্তু অতি উৎসাহি সৈনিকটি যখন তার কমরেডদের কাছে এই নিয়ে গর্ব করতে চলে গেল, তখন অন্য একজন সৈন্য এসে তাকে ধর্ষণ করে।

ম্যাগদার ইহুদি বন্ধু এলেন গোয়েটকেও ধর্ষণ করা হয়েছিল। যখন অন্য জার্মানরা রাশিয়ানদের বোঝাতে চেষ্টা করেছিল যে সে ইহুদি এবং তার উপর নির্যাতন চালানো হয়েছিল, তখন তারা এই প্রতিক্রিয়াটি পেয়েছিল তা হলো: "Frau ist Frau" অর্থাৎ 'মহিলা মানে মহিলা'।
বার্লিনের মহিলারা শীঘ্রই সন্ধ্যার 'শিকারের সময়' অদৃশ্য হতে শিখে গেল। অল্প বয়সী কন্যাগুলি শেষ দিনগুলিতে স্টোরেজ লোফটে লুকিয়ে থাকলো। তাদের মায়েরা রাস্তায় জল আনতে রাস্তায় নামতে লাগলো কেবল ভোরে যখন সোভিয়েত সৈন্যরা আগের রাত থেকেই মদ খেয়ে ঘুমাচ্ছিল। কখনও কখনও এমনও ঘটেছিল যে, কোন মা তার নিজের মেয়েকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে অন্য মেয়েদের লুকানোর জায়গাটি বলে দিয়েছিলো।
অনুমান করা হয় বার্লিন নগরীর দুটি প্রধান হাসপাতাল থেকে ধর্ষণের শিকারদের পরিমাণ ৯৫,০০০ থেকে শুরু করে ১৩০,০০০। একজন ডাক্তার অনুমান করেছিলেন যে শহরে প্রায় ১০০,০০০ নারী ধর্ষণের মধ্যে প্রায় ১০,০০০ নারী মারা গেছে, বেশিরভাগ আত্মহত্যা করে।

পূর্ব প্রুশিয়া, পোমেরানিয়া এবং সাইলেসিয়ায় আক্রান্ত ১.৪ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে মৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল বলে মনে করা হয়েছিল। এইসময়ে কমপক্ষে দুই মিলিয়ন জার্মান মহিলা ধর্ষণ করা হয়েছে বলে মনে করা হয় এবং সবাই না-হলেও এদের একটি বড়ো অংশ একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে মনে করা হয়।
তখন পরিবারের কোন সদস্য ছাড়া কেউ সোভিয়েত আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে কোনও মহিলাকে রক্ষা করার চেষ্টা করতো না। হয়তো এক বাবা একজন মেয়েকে রক্ষার চেষ্টা করছেন বা একটি যুবক তার মাকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।
১৩ বছর বয়সী ডিয়েটার সাহল, তার প্রতিবেশীরা এক ঘটনার পরপরই একটি চিঠিতে লিখেছিল, 'নিজের সামনে যখন তার মাকে ধর্ষণ করা হচ্ছিল, তখন সে একজন রাশিয়ানকে মুষ্টিঘাত করে। কিন্তু এর ফলে সে নিজেই গুলি খেয়ে মরে এ ছাড়া সে আর কোনই লাভ হয় নি'।
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অনাহার থেকে বেঁচে থাকার প্রয়োজন হয়েছিল। কিছু মহিলারা নিজেকে অন্যের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একজন সৈনিকের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেন। বার্লিন আত্মসমর্পণের পরপরই, উরসুলা ফন কার্ডারফ সব ধরণের মহিলাকে খাবার বা সিগারেটের জন্য পতিতাবৃত্তি করেতে দেখেছেন।

আবার আশ্চর্যরূপে কোথাও পরস্পরের সম্মতিতেই সহাবস্থান হয়, যাতে রেড আর্মি অফিসাররা জার্মান 'দখলদার স্ত্রী' এর সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হন। সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ এমন খবরে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যখন তারা দেখেন কেউ কেউ মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার বদলে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি কর্মকর্তা তাদের জার্মান প্রেমীকাদের সাথে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন।
এখানে অভিযোগ করা হয় যে, মস্কোর ফিরে গিয়ে কর্ণধারেরা বেশ কয়েকটি বিস্তারিত প্রতিবেদন থেকে বার্লিনে কী চলছে তা ভাল করেই জানতেন।
ওয়াল্টার জাপোটোকজিনি জুনিয়র তাঁর বইতে লিখেছেন যে, ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে জার্মানি ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গণ ধর্ষণের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি দেখেছিল, যেখানে সোভিয়েত রেড আর্মি সৈন্যরা প্রায় দুই মিলিয়ন জার্মান নারীকে ধর্ষণ করেছিল।
হাসপাতালের প্রতিবেদন অনুসারে এপ্রিল ও মে মাসের মধ্যে জার্মান রাজধানী বার্লিনে ১ লক্ষেরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যখন পূর্ব প্রসিয়া, পোমেরানিয়া এবং সাইলেসিয়ায় ধর্ষণ করা হয়েছে ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি ঘটনা। এই সময়কালে অনেকে প‍্রায় ৭০ বার করে ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা বলেছিল।
হাসপাতালের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে সমস্ত জার্মান হাসপাতালে প্রতিদিন গর্ভপাতের অপারেশন করা হচ্ছিল। বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ ও বিস্তারজনিত কারণে অন্তত ২০০,০০০ মেয়ে ও মহিলার মৃত্যু হয়।"

...

Facebo......


"১৯৪৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২মে বার্লিনের যুদ্ধে যে ৮০,০০০ সোভিয়েত সেনার পতন ঘটেছিল তাদের স্মরণে বার্লিনের উপকণ্ঠে ট্র্যাপ্টওয়ার পার্কে এবং লিলাকের আকাশের বিপরীতে একটি স্ট‍্যাচু আছে। ৪০ ফুট উঁচু এটি একটি সোভিয়েত সৈনিককের আবয়ব। এক হাতে তলোয়ার এবং অন্য হাতে একটি ছোট্ট জার্মান মেয়ে আঁকড়ে ধরা এবং দেখানো হয়েছে তারা দাঁড়িয়ে আছে ভাঙা 'স্বয়াস্তিকা'র উপর।

এই স্মৃতিস্তম্ভের বিশাল শিলালিপিতে বলা হয়েছে যে সোভিয়েত জনগণ ইউরোপীয় সভ্যতাকে ফ্যাসিবাদ থেকে বাঁচিয়েছিল। তবে বার্লিনের কেউ কেউ এই স্মৃতিসৌধটিকে অজানা ধর্ষকের সমাধি বলেও অভিহিত করে থাকে।
রাশিয়ান মিডিয়া নিয়মিত এই ধর্ষণ কান্ডকে পশ্চিমা কল্পকাহিনী হিসাব আখ্যায়িত করে। কিন্তু একটি সূত্র বলে যে এমনটা ঘটেছে। এমন ঘটনার গল্প বলে যায় একজন তরুণ সোভিয়েত অফিসারের রাখা ডায়েরি।

বিবিসি সাংবাদিক #লুসি_এশ লেখা থেকে জানা যায়: মধ্য ইউক্রেনের ইহুদি এক সোভিয়েত লেফটেন্যান্ট, নাম, #ভ্লাদিমির_গেল্ফান্ড। তার ডায়েরিতে এমন এক মহিলার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন যিনি বার্লিনে রেড আর্মির প্রথম রাতের পরে, তার নিজের 'সুরক্ষাকারী' খুঁজছিলেন।
বার্লিন পৌঁছানোর পরে ২৫ এপ্রিল গেল্ফ্যান্ডের ডায়েরির মধ্যে সবচেয়ে প্রকাশিত অংশগুলির মধ্যে একটি রয়েছে। গেল্ফান্ড রিভার স্প্রি দিয়ে সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তখন তিনি স্যুটকেস এবং বান্ডেল বহনকারী একদল জার্মান মহিলার মুখোমুখি হলেন।
ভাঙা জার্মান ভাষায়, তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তারা কোথায় যাচ্ছে এবং কেন তারা তাদের বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছে?
গেল্ফান্ড লিখেছেন: 'তাদের মুখে ভয়ঙ্কর ঘটনা নিয়ে তারা আমাকে জানিয়েছিল যে রেড আর্মির আগমনের প্রথম রাতে কী ঘটেছিল'

'তারা এখানে খুঁচিয়ে ছিল', তার স্কার্টটির দিকে ইঙ্গিত করে বললো, সুন্দর জার্মান মেয়েটি। সারা রাত ধরে! 'তারা বুড়ো ছিল, কিছু লোকের সারা শরীর ফুস্কুড়িতে ঢাকা ছিল এবং তারা সকলে আমার উপরে উঠে পোক করছিলো! তারা অন্তত সংখ্যায় ২০ জন পুরুষ মানুষ ছিল'। বলে সে কান্নায় ফেটে পড়লো।

তার মা বললেন, 'তারা আমার মেয়েকে আমার সামনে ধর্ষণ করেছে, তারা এখনও ফিরে এসে তাকে আবার ধর্ষণ করতে পারে'। তখন এই চিন্তাটাই তাদের সবাইকে আতঙ্কিত করেছিল।
মেয়েটি হঠাৎ আমার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়লো, 'এখানে থাকো, তুমি আমার সাথে শোও! তুমি আমার সাথে যা চাও তা করতে পার, কিন্তু কেবল মাত্র তুমি'!

ধর্ষণ নাহলেই যে প্রতিটি সহবাস 'সম্মতিতে' হয়েছে এমন অবশ্যই নয়। তখন ধর্ষণ ছাড়াও মহিলারা বাধ‍্য হয়েছিল সৈনিকদের 'অনুমতি' দিতে যাতে অনাহারে বা রোগে মৃত্যু বরণ করতে না-হয়। একসাথে একাধিক পুরুষ দ্বারা গণধর্ষণ হওয়া এড়ানোর জন্যও অনেক মহিলারা তাদের 'ধর্ষণ' করার অনুমতি দেয়।

এক পর্যায়ে, সোভিয়েত ইউনিয়ন দখলকালে জার্মান সৈন্যরা প্রায় চার বছর ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নে যৌন সহিংসতা এবং অন্যান্য ভয়াবহতার জন্য দোষী ছিল। সোভিয়েত সৈন্যরা পরে পাল্টা অভিযানের সময় যতগুলি গ্রামে গিয়েছিল সেখানে তারা দেখেছে যে, নাৎসিরা কিভাবে সবাইকে এমনকি ছোট বাচ্চাদের হত্যা করেছিল এবং তারমধ‍্যে ধর্ষণের প্রমাণও ছিল।
গেল্ফ্যান্ড মারা যাওয়ার পরে তার ছেলে ভিটালি গেল্ফ্যান্ড বাবার এই ডায়েরি আবিষ্কার করেছিলেন।

রেড আর্মির সেই ডায়রি লেখক ভ্লাদিমির গেল্ফ্যান্ডের পুত্র ভিটালি গেল্ফ্যান্ড অস্বীকার করেন না যে অনেক সোভিয়েত সৈন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাহসিকতা ও ত্যাগ প্রদর্শন করেছিল তবে এটাই একমাত্র বা সম্পূর্ণ গল্প নয়।

ভিটালি রাশিয়ান রেডিওতে একটি সাক্ষাতৎকার দিয়েছিলেন, যার পরে তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছুলোক এ‍্যান্টি-সেমিটিক ট্রোলিং শুরু করেছিল, তারা বলেছিল যে ডায়েরিটি ভুয়া এবং ভিটালিকে ইস্রায়াইলে পাঠিয়ে দেওয়া হোক (যদিও তিনি সত্যিই ২০ বছর ধরে বার্লিনে বাস করেছেন)। তবুও ভিটালি আশা করেন যে ডায়েরিটি একসময় রাশিয়ায় প্রকাশিত হবে। বর্তমানে এর কিছু অংশ জার্মান এবং সুইডিশ ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
ভিটালি বলেন, 'যদি কেউ সত্যটি জানতে না চায় তবে তারা কেবল নিজেদেরই বিভ্রান্ত করছে। গোটা বিশ্ব এটি জানে, রাশিয়া এটি জানে, এমনকি অতীতের মানহানি সম্পর্কে এই নতুন আইনের পিছনে থাকা লোকেরাও তা জানে। আমরা এগিয়ে যেতে পারবো না, যতক্ষণ না আমরা আমাদের অতীত সম্পর্কে জানবো'

মস্কোর ইতিহাসবিদ #ওলেগ_বুদনিতস্কি বলেছেন, নাৎসি কমান্ডাররা সোভিয়েত অভিযানের সময়, ভেনেরিয়াল রোগ সম্পর্কে এতটাই উদ্বিগ্ন ছিল যে তারা পুরো অধিকৃত অঞ্চলজুড়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ সামরিক পতিতালয় স্থাপন করেছিল।
জার্মান সৈন্যরা কীভাবে রাশিয়ান মহিলাদের সাথে আচরণ করেছিল তার সরাসরি সব প্রমাণ পাওয়া শক্ত ছিল কারণ অনেক ভুক্তভোগীই আর বেঁচে থাকতে পারেননি। তবে বার্লিনের জার্মান-রাশিয়ান যাদুঘরের পরিচালক #জর্গ_মোরে, এক জার্মান সৈন্যের ব্যক্তিগত যুদ্ধকালীন অ্যালবাম থেকে ক্রিমিয়ার তোলা একটি ছবি দেখিয়েছেন। যেখানে একজন মহিলার লাশ মাটিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। দেখে মনে হচ্ছে তাকে ধর্ষণ করে বা ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছিল। তার স্কার্টটি উপরে তোলা এবং তার হাত মুখকে আড়াল করে রেখেছে।
তার ভাষ‍্যে 'এটি একটি জঘন্য ছবি। জাদুঘরে আমরা আলোচনা করেছি, আমাদের কী এইছবিগুলি দেখানো উচিৎ। এটি যুদ্ধ ছিল, এটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের মাটিতে জার্মান প্রশাসনের অধীনে যৌন সহিংসতা'

রেড আর্মি যখন জার্মানির দোরগোড়ায়, সোভিয়েত রেডিও তখন নাৎসিদের 'ফ্যাসিবাদী জানোয়ারের মস্তক' ঘোষণা দিয়ে সেনাবাহিনীকে উৎসাহিত করছিল: 'সৈনিক: আপনি এখন জার্মান মাটিতে আছেন। প্রতিশোধের সময়টি এসে গেছে'!
ইন ফ‍্যাক্ট, বাল্টিক উপকূল ধরে জার্মানিতে প্রবেশকালীন, উনিশ তম সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক বিভাগ ঘোষণা করেছিল যে, একজন সত্যিকারের সোভিয়েত সৈন্য এতটাই বিদ্বেষে ভরা থাকবে যে, তারা জার্মানদের সাথে যৌনতায় লিপ্ত হবে। এইভাবেই সোভিয়েত সেনারা আবারও তাদের আদর্শবাদীদের ভুল প্রমাণ করেছিলেন।

২০০২ সালে তার 'বার্লিন, দ্য ডাউনফল' বইটি গবেষণা করার সময় ইতিহাসবিদ #অ্যান্টনি_বেভর রাশিয়ান ফেডারেশনের রাজ্য সংরক্ষণাগারে যৌন সহিংসতার নথি পেয়েছিলেন। যা সোভিয়েত গোপন পুলিশ এনকেভিডি, ১৯৪৪ সালের শেষের দিকে, তাদের বস, #লাভ্রেন্টি_বেরিয়ায়-কে প্রেরণ করেছিল।
বেভর বলেছেন, 'এগুলি #স্টালিন এর হাতে দেওয়া হয়েছিল। আপনি টিক্স মার্কস থেকে চেক করে দেখতে পারেন যে তা পড়া হয়েছে কিনা। এবং তারা পূর্ব প্রুশিয়ার গণ ধর্ষণের বিষয়ে এবং জার্মান মহিলারা কিভাবে তাদের শিশুদের এবং নিজেদের হত্যা করার চেষ্টা করেছিল, তা নিয়ে রিপোর্ট করে'।

এই যুদ্ধের সময়ের আরও একটি ডায়েরি, যা ছিল এক হারিয়ে যাওয়া জার্মান সৈনিকের বাগদত্তার। এখান থেকে বোঝা যায় যে, কিছু মহিলাকে বেঁচে থাকার জন্য কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে হয়েছিল।

এই ডাইরি সূত্রে জানা যায়, যখন বার্লিনের মহিলা রেড আর্মির বিজয়ের আশংকা করছিল, তখন তারা নিজেদের মধ্যে রসিকতা করেছিল যে 'ইয়ঙ্ক ওভারহেডের চেয়ে একজন রাশকি উপরে থাকা ভালো' এবং মাথার উপর বোমা বিস্ফোরিত হওয়ার চেয়ে ধর্ষণ ভাল অপশন।
কিন্তু সৈন্যরা যখন তাদের বেসমেন্টে পৌঁছলো এবং মহিলাদের টেনে ছিঁচড়ে বের করে আনতে লাগলো, তখন তারা তারা ডায়রি লেখিকাকে অনুরোধ করতে লাগলো তার ভাঙা রাশিয়ান ভাষার সোভিয়েত কমান্ডের কাছে অভিযোগ করার জন্য।

রাস্তায় বিশৃঙ্খলা বাহিনী আর ছড়িয়ে পড়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও তিনি একজন সিনিয়র অফিসারকে খুঁজে বের করেছিলেন। কিন্তু সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে স্টালিনের ডিক্রি সত্ত্বেও, সিনিয়র অফিসারটি তাকে পাত্তা না দিয়ে বলেন, 'এটা হবেই'

তারপরও অফিসারটি তার সাথে সেলারে এসে রাগান্বিত হয়ে সৈন্যদের তিরস্কার করলেন। তখন এক সৈন্য ক্রুদ্ধস্বরে চিৎকার করে উঠলো, 'আপনি কী বলতে চান? জার্মানরা আমাদের মহিলাদের প্রতি কী করেছিল! তারা আমার বোনকে নিয়ে গিয়েছিল এবং ...'। অফিসারটি তখন সৈন্যটিকে শান্ত করতে বাইরে নিয়ে যায়"।

কিন্তু ডায়রি লেখিকা যখন তারা চলে গেছে কিনা তা দেখার জন্য করিডোরে যান, তখন দেখেন সেই সৈনিকরা তার জন‍্য অপেক্ষা করছিল। তখন তারা তাকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে এবং প্রায় শ্বাসরোধ করে হত্যাই করে ফেলেছিল। তা দেখে ডাইরি লেখিকার আতঙ্কিত প্রতিবেশীরা বেসমেন্টের দরজা বন্ধ করে দেয়। ডাইরিতে তিনি তাদের ব‍্যঙ্গ করে 'গুহাবাসী' বলে ডেকেছিলেন।

সৈন্যরা চলে গেলে 'অবশেষে দুটি লোহার পাল্লা খোলে। সবাই আমার দিকে তাকায়। আমার স্টকিংস আমার জুতো পর্যন্ত নেমে গেছে, আমি এখনও আমার সাসপেন্ডার বেল্টের যা বাকী রয়েছে তা ধরে রেখেছি। আমি চিৎকার করতে করতে তাদের বলি! নোংরা শুয়োরের দল! এখানে তারা আমাকে পরপর দু'বার ধর্ষণ করে এবং তোমরা আমাকে নোংরা ময়লার মতো শুয়ে থাকতে দিলে'!

অবশেষে ডায়রি লেখিকা বুঝতে পেরেছিলেন যে এই 'বণ‍্য জন্তু'-দের দ্বারা ক্রমাগত গণধর্ষণ বন্ধ করতে তার একটি 'নেকড়ে' খুঁজে বের করা দরকার। এতে করে শিকারী এবং শিকারের মধ্যে সম্পর্ক কম হিংস্র হবে, হবে আরও লেনদেনের এবং আরও পরিবর্তনশীল। পরে তিনি তার বিছানাটি লেনিনগ্রাদের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে ভাগ করে নিয়েছিলেন যার সাথে তিনি সাহিত্য এবং জীবনের অর্থ নিয়েও আলোচনা করতেন।

তিনি লিখেছেন 'কোনওভাবেই এটা বলা যায় না যে মেজর আমাকে ধর্ষণ করেছেন'। আমি কী এটা শুধুমাত্র বেকন, মাখন, চিনি, মোমবাতি, টিনজাত মাংসের জন্য করছি? কিছুটা হলেও আমি হয়তো এই জন্যই করেছি। এছাড়াও, মেজরটি একজন মানুষ হিসাবে আমার কাছ থেকে যত কম চাওয়া শুরু করেন, আমিও ততই তাকে ব্যক্তি হিসেবে পছন্দ করতে শুরু করি'।
ডায়রি লেখিকার অনেক প্রতিবেশীই বার্লিনের ধ্বংসাবশেষ বিজয়ীদের সাথে একই রকম চুক্তি করেছিলেন।

১৯৫৯ সালে 'অ্যা_ওম্যান_ইন_বার্লিন'' শিরোনামে যখন ডায়েরিটি জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল, তখন জীবনধারণের জন‍্য করা তার এই লেখাগুলির স্পষ্ট বিবরণ, জার্মান নারীদের 'সম্মান কলঙ্কিত করার' জন্য তাকে তীব্র আক্রমণ করা হয়েছিল। তিনি বইটি আর পরে পুনরায় প্রকাশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছিলেন। তার মৃত্যুর পরে বইটি আবার প্রকাশিত হয়।

তবে ২০০৮ সালে, নামী জার্মান অভিনেত্রী #নিনা_হোস অভিনীত অ্যানোনিমা নামক এক বার্লিন মহিলার ডায়েরির একটি চলচ্চিত্র রূপান্তর হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রটি জার্মানিতে একটি আবেগমুক্তিকর প্রভাব ফেলে এবং #ইনেজবার্গ_বুলার্ট সহ অনেক মহিলাকে এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করেছিল।
ইনজবার্গ, বয়স তখন নব্বই বছর, হ্যামবার্গে একটি বিড়াল এবং থিয়েটার সম্পর্কিত বইয়ের ফটো ভরা ফ্ল্যাটে বাস। ১৯৪৫ সালে তিনি ২০ বছর বয়সী, একজন অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং বার্লিনের শার্লটেনবার্গ জেলার একটি বড় রাস্তায় তার মায়ের সাথে থাকতেন।
যখন শহরটিতে সোভিয়েত আক্রমণ শুরু হয়েছিল, অপর মহিলা ডায়রি লেখকের মতোই, তিনি তার বিল্ডিংয়ের সেল্টারটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ইনজবার্গ এর এখনো মনে আছে, 'হঠাৎ আমাদের রাস্তা ট্যাঙ্কে ভরে গেল। এবং সর্বত্র রাশিয়ান এবং জার্মান সৈন্যদের মৃতদেহতে ভরা ছিল। আমি মনে আছে সেই রাশিয়ান বোমাগুলির ভয়ঙ্কর শব্দ আমরা তাদের স্ট্যালিনজর্লস (স্ট্যালিনের অঙ্গ) বলতাম'।

এক রাতে জঙ্গি বিমানের এয়ার রেইডের সময়, ইনজেবার্গ ভুগর্ভস্থ স্থান ছেড়ে প্রদীপের জন্য সলতে খুঁজতে দৌড়ে উপরে যান। তিনি বলেন, 'হঠাৎ দেখি দু'জন রাশিয়ান আমার দিকে তাদের পিস্তল তাক করে। "তাদের একজন আমাকে নিজের কাপড় চোপড় খুলে ফেলতে বাধ্য করে এবং তারপর সে আমাকে ধর্ষণ করে এবং পরবর্তীতে অন‍্যজনও আমাকে ধর্ষণ করে। আমি তখন ভেবেছিলাম যে আমি মরে যাব, তারা আমাকে মেরে ফেলবে'।
ইনজেবার্গ সে সময় তার এই ভাগ্য-পরীক্ষা নিয়ে কারো কাছে কিছু বলেননি, এমনকি তার পরের কয়েক দশকও না, এটি তারজন‍্য খুব কঠিন ছিল। তিনি বলেছিলেন যে, 'আমার মা গর্ব করতে পছন্দ করতেন যে তার মেয়েটিকে ছোঁয়া হয়নি"।

তবে ধর্ষণগুলি বার্লিন জুড়ে পরিবারের মহিলাদেরকে প্রভাবিত করেছিল। ইনজেবার্গ এর মনে আছে তখন বার্লিনের ১৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মহিলাদেরকে যৌনরোগের জন্য পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, 'খাবারের স্ট্যাম্পগুলি পাওয়ার জন্য আপনার মেডিকেল প্রশংসাপত্রের প্রয়োজন ছিল এবং আমার এখনো মনে আছে যেসমস্ত ডাক্তাররা এই প্রশংসাপত্র তৈরি করতেন, তাদের ওয়েটিং রুম মহিলাদের দ্বারা ভর্তি ছিল'।"
...

Facebook

জার্মানিতে মার্কিন সেনা বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণের সংখ্যা ১১,০৪০ বলে লেখক #জে_রবার্ট_লিলি তার '#টেইকেন_বাই_ফোর্স' বইয়ে উল্লেখ করেছেন। বিজয়ের পর জার্মানিতে অনেক আমেরিকান ধর্ষণ ছিল বন্দুকের পয়েন্টে সশস্ত্র সৈন্যদের দ্বারা গণধর্ষণ।

কিন্তু ২০১৫ সালে, জার্মান নিউজ ম্যাগাজিন #ডের_স্পিগেল জানিয়েছিল যে জার্মান ইতিহাসবিদ #মরিয়াম_গ্যাবার্ট বিশ্বাস করেন, '১৯৫৫ সালে পশ্চিম জার্মানি সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার সময় পর্যন্ত মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রায় ১৯০,০০০ জার্মান নারীকে ধর্ষণ করেছিল, বেশিরভাগ হামলাই নাজি জার্মানিতে মার্কিন প্রবেশের পরের মাসগুলিতে সংঘটিত হয়েছিল'। লেখক ১৯৪৫ সালের গ্রীষ্মে বাভেরিয়ান খ্রিষ্টান পুরোহিতদের দ্বারা প্রাপ্ত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে তার দাবি করেছিলেন।

সোভিয়েত জোনে রেড আর্মির স্কেলে না-গেলেও ব্রিটিশ সামরিক পুলিশ নিয়মিত ধর্ষণের রিপোর্টগুলি তদন্ত করে। ফরাসিরা এই অপরাধের সাথে জড়িত ছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, 'কনস্ট্যান্স' অঞ্চলে ফ্রান্সের সেনারা ৩৮৫ ধর্ষণ করেছে আর ব্রুশালে ৬০০।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার সত্তর বছর পরও আমেরিকান, ব্রিটিশ এবং ফরাসীদের পাশাপাশি সোভিয়েত মিত্রবাহিনীর দ্বারা পরিচালিত যৌন সহিংসতা নিয়ে নতুন গবেষণা বেরিয়ে আসছে। কিন্তু বছরের-পর-বছর ধরে বিষয়টি সরকারী বেড়াজালে আটকে থেকে খুব কম খবরই লোকে শুনতে পাবে। সামাজিক কলঙ্কের অপবাদ ছাড়াও, তখনকার পূর্ব জার্মানিতে, পুজিত সোভিয়েত বীর, যারা পশ্চিমের প্রাচীর ভেঙে ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করেছিলেন তাদের সমালোচনা করা অপবিত্রকর ছিল। নাৎসি অপরাধের জন্য অপরাধবোধে ভুগতে থাকা জার্মানদেরকে এই সব দুঃখগাথা অকথনীয় করে তুলেছিল। 
ধর্ষণের স্কেল কী ছিল? সাধারণত বলা হয়ে থাকে যে, এই সংখ্যা বার্লিনে ১০০,০০০ এবং পুরো জার্মান ভূখণ্ডে ২০ মিলিয়ন নারী। এই সংখ্যা স্বাভাবিক ভাবেই খুবই বিতর্কিত এবং অল্প বেঁচে থাকা মেডিকেল রেকর্ড থেকে প্রমাণের সুযোগ ছিল না।


প্রাক্তন যুদ্ধসামগ্রী কারখানায় এখন স্টেট আর্কাইভ রয়েছে, 'মার্টিন_লুচারহ্যান্ড' বেশ কয়েকটি নীল পিচবোর্ড ফোল্ডার দেখান। এর মধ্যে বার্লিনের ২৪ টি জেলার মধ্যে কেবল একটি অংশের জুলাই থেকে অক্টোবর ১৯৪৫-এর গর্ভপাতের রেকর্ড রয়েছে। কেন কে জানে অলৌকিক ভাবেই তা অক্ষত ছিল! গর্ভপাত অবৈধ ছিল, তবে লুচরহ্যান্ড বলেছিলেন, '১৯৪৫ সালে গণ-ধর্ষণের বিশেষ পরিস্থিতির কারণে এই মহিলাদের জন্য একটি ছোট উইন্ডো ছিল'। ১৯৪৫ সালের জুন থেকে ১৯৪৬ সালের মধ্যে বার্লিন অফিসের এই একটি জেলা কার্যালয়ে গর্ভপাতের জন্য মোট ৯৯৫টি আবেদন অনুমোদিত হয়েছিল যা সংখ্যায় এক হাজারেরও বেশি তা এই ভঙ্গুর ফাইলগুলিতে সংরক্ষিত রয়েছে।

একটা বাচ্চাদের মতো হাতের লেখায়, একটি মেয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিল যে তাকে কিভাবে তার বাড়ির বসার ঘরেই তার বাবা-মার সামনে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। ধর্ষণের আসল স্কেল সম্ভবত আর কখনই জানা যাবে না। সোভিয়েত সামরিক ট্রাইব্যুনাল এবং অন্যান্য উৎসের দলিলপত্র উন্মুক্ত নয়। রাশিয়ান সংসদ সম্প্রতি একটি আইন পাস করেছে যাতে বলা হয়েছে যে, কেউ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রাশিয়ার রেকর্ডকে অস্বীকার করলে তার জরিমানা এবং পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

মস্কোর হিউমিনিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ ইতিহাসবিদ 'ভেরা_ডুবিনা' বলেন, তিনি বৃত্তি নিয়ে বার্লিনে না-যাওয়া পর্যন্ত তিনি এই ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। পরে তিনি এই বিষয়ের উপর একটি গবেষণাপত্র লিখেছিলেন, কিন্তু তা প্রকাশের জন‍্য কোন প্রকাশক পাওয়া যায়নি।
'রাশিয়ান মিডিয়া খুব আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল, জনগণ কেবলমাত্র মহান দেশপ্রেমিক যুদ্ধে আমাদের গৌরবময় বিজয়ের কথা শুনতে চায় এবং এখন তাই সঠিক গবেষণা করা আরও কঠিন হয়ে উঠছে,' ভেরা বলেছিলেন।

ইতিহাসের দূর্ভাগ্য যে বর্তমানের এজেন্ডা অনুসারেই এটি বর্ণনা করা হয়। আর সময়ের সাথে সাথে যারা এই ঘটনগুলোর সাক্ষী এবং ভিক্টিম, তারা তাদের বৃদ্ধ বয়সে এবং কনিষ্ঠ যারা এই ব‍্যাপারে সোচ্চার হতে চান আইনের মাধ্যমে তাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করে হয়েছে।
সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা ব্যাপক হারে জার্মান নারীদের গণধর্ষণের কারণ হিসেবে ঐতিহাসিক #নর্মান_নাইমার্ক তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করেন,
১. ঘৃণাত্মক প্রচারণা।
২. জার্মান বাহিনীর হাতে ব্যক্তিগত ভোগান্তি।
৩. সোভিয়েত সৈন্যদের মধ্যে জার্মান নারীদের সম্পর্কে নিচু ধারণা
এছাড়া রুশ সংস্কৃতির পিতৃতান্ত্রিক প্রকৃতি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত এশীয় জাতিসমূহের সমাজব্যবস্থা (যেখানে অপমানের প্রতিশোধ নেয়া হয় শত্রুর নারীদেরকে ধর্ষণের মাধ্যমে) এর পিছনে বড় একটি ভূমিকা রেখেছিল বলে নাইমার্ক মনে করেন।
বহু সোভিয়েত সৈন্য বিশ্বাস করত যে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ ও সেখানে বর্বর ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মাধ্যমে জার্মানরা সোভিয়েতদের অপমানিত করেছে এবং এ অপমানের প্রতিশোধ নেয়া নীতিসঙ্গত। এই চিন্তাধারা থেকেই সোভিয়েত সৈন্যরা বহু জার্মান নারীকে জনসম্মুখে কিংবা তাদের স্বামীদের সামনে ধর্ষণ করেছিল।
রেড আর্মির সৈন্যরা তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে এক ধরণের প্রতিশোধ হিসাবে জার্মান মহিলাদের উপর গণধর্ষণ করত জার্মান সেনাবাহিনী। তারা মনে করেছিল যে জার্মান সেনাবাহিনী আক্রমণ করে তাদের মাতৃভূমিকে 'লঙ্ঘন' করেছিল বলে এটি করা তাদের অর্জিত অধিকার। দীর্ঘকাল ধরে মহিলাদের সাথে যোগাযোগ না করা ছাড়াও তাদের পশুর প্রবৃত্তি আরও বাড়িয়ে তোলে।
জাপোটোকজনি তাঁর বইয়ে বলেছিলেন যে এমনকি মহিলা রাশিয়ান সৈন্যরাও ধর্ষণকে অস্বীকার করেনি, কারও কারও কাছে এটি মজাদার বলে মনে হয়েছে।

#সুইটলানা_আলেক্সিভিচ রচিত 'ওয়ার'স অউম্যানম্যানলি ফেস' (War's Unwomanly Face) নামের একটি ডকুমেন্টারি বইয়ে জার্মানিতে তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সোভিয়েত প্রবীণদের স্মৃতি রয়েছে। প্রাক্তন এক সেনা আধিকারিকের বয়ানে:
'আমরা ছিলাম যুবক, শক্তিশালী এবং চার বছর মহিলা ছাড়া ছিলাম। সুতরাং আমরা জার্মান মহিলাদের ধরতে চেষ্টা করেছি এবং ... দশ জন পুরুষ একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল। সেখানে তখন পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলা ছিলেন না; জনগোষ্ঠীর বড়ো একটা অংশ সোভিয়েত আর্মিরা আসার আগেই এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সুতরাং আমাদের বারো বা তের বছর বয়সী মেয়েদের দিকে হাত বাড়াতে হয়েছিল।
তারা তখন কান্নাকাটি করলে, আমরা তাদের মুখে কিছু একটা দিয়ে দিতাম। আমাদের কাছে তখন এটা একটা মজাদার বিষয় ছিল। এখন আমি বুঝতে পারি না আমি এটি কীভাবে করেছিলাম। আমি একটি ভাল পরিবারের ছেলে... তবে  ওই লোকটি আমিই ছিলাম'।

নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী, বেলারুশিয়ান সাংবাদিক 'স্বেতলানা_আলেক্সিভিচ' যুদ্ধের সময় সোভিয়েত সৈন্যদের মানসিকতা অনুসন্ধানের জন্য তার জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন। তাকে সাক্ষাৎকার দেওয়া সৈনিকদের স্মৃতি থেকে তাদের তখনকার সাধারণ অনুভূতি এবং বিবৃতি থেকে কখনো-কখনো অনুশোচনাও অনুধাবনযোগ্য। তার গবেষণা থেকে উঠে আসা উক্তিগুলির একটিতে তিনি নীচে বর্ণিত ঘটনা স্মরণ করেছেন:
'যখন আমরা শহরগুলো দখল করেছিলাম, তখন লুটপাটের জন্য এবং ... [ধর্ষণের] জন্য আমাদের প্রথম তিন দিন ছিল। এটি অবশ্যই অফিশিয়াল ছিল। তবে তিন দিন পরেও কেউ এই কাজ করলে তারজন‍্য কোর্ট-মার্শালও হতে পারতো।
...আমার মনে আছে একজন ধর্ষিত জার্মান মহিলাকে দেখেছিলাম, যে তার দুই পায়ের ফাঁকে হ্যান্ড গ্রেনেড দিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় পরে ছিলেন। এখন আমি লজ্জা বোধ করছি কিন্তু আমি তখন লজ্জা বোধ করি নি...
আপনি কি মনে করেন [জার্মানদের] ক্ষমা করা সহজ ছিল? আমরা তাদের গোলাপময় পরিষ্কার সুন্দর সাদা ঘরগুলি দেখতে ঘৃণা করতাম। আমি তাদের পাপের শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম। আমি তাদের চোখে অশ্রু দেখতে চেয়েছিলাম...।
পরে অতিক্রান্ত সময়ের সাথে সাথে আমার তাদের প্রতি মমতা অনুভব করা শুরু হয়েছিল'। (জার্মানি দখলের সময় ধর্ষণ, ২০১৮)।

পূর্ব প্রুসিয়ায় 'আলেকসান্দর_সোল্জনিতসিন' সোভিয়েত সামরিক কর্মীদের দ্বারা স্থানীয় জার্মান বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তার মতে যারা সোভিয়েত ইউনিয়নে নাৎসিদের অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে জার্মানি এসেছিল।
যুদ্ধ ও দখলকালে সোভিয়েত সেনাবাহিনী দ্বারা ধর্ষণ করা জার্মান মহিলা ও মেয়েদের সঠিক সংখ্যাটি অনিশ্চিত, তবে পশ্চিমা ঐতিহাসিকরা অনুমান করেছেন যে তাদের সংখ্যা সম্ভবত কয়েক লক্ষ এবং সম্ভবত দুই মিলিয়নের কাছাকাছি। এবং এর ফলস্বরূপ জন্ম নেওয়া 'রাশিয়ান শিশু' হিসাবে পরিচিত বাচ্চাদের সংখ্যাও অজানা।
তবে বেশিরভাগ ধর্ষণ গর্ভধারণ পর্যন্ত যায়নি, কারণ গর্ভপাত ধর্ষিত নারীদের প্রথম অপশন ছিল। তাছাড়াও যুদ্ধ বিদ্ধস্থ দেশে ওষুধের অভাবে বিনা চিকিৎসা, নির্যাতনের কারণে অভ্যন্তরীণ আঘাত, যৌনবাহিত রোগ, খারাপভাবে সঞ্চালিত গর্ভপাত এবং আত্মহত্যা করার কারণে অনেক নারী মারা গিয়েছিলেন, বিশেষত যাদের বহু ধর্ষণের শিকার হওয়ার কারণে অর্গান ফেইলিওর করে।

এছাড়াও, প্রচুর নারী অনাহার, ডিপথেরিয়া সহ বহু রোগের ফলে যুদ্ধের পরপরই জার্মানিতে মারা গিয়েছিলেন। বার্লিনে তখন শিশু মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশে পৌঁছেছিল।
পরবর্তীকালে বেশিরভাগ নির্যাতিত মহিলারাই তাদের জীবনের এই ভয়ানক অভিজ্ঞতা ভুলে যেতে চেয়েছিলেন এবং সেগুলি পুনরায় বর্ণনা করার কোন ইচ্ছাই তাদের ছিল না।

'আলেকসান্ডার_সোলঝেনিৎসিনজার্মানি আক্রমণে অংশ নিয়েছিলেন এবং এ নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলেন, যার জন্য সোলঝেনিৎসিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই কবিতায় তিনি জার্মান নাগরিকদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সোভিয়েত সেনাদের দ্বারা পরিচালিত স্তম্ভ, ধর্ষণ এবং হত্যার কথা স্মরণ করেছেন:
'ছোট মেয়ে গদিতে আছে, 
মৃত। কতজন এর উপর উপুড় হয়েছে?
একটি প্লাটুন, সম্ভবত এক কোম্পানি সৈন্য?
একটি মেয়েকে পরিণত করা হয়েছিল
একজন মহিলায়।
একজন মহিলা পরিণত হয়েছিল,
একটি লাশে।
আর এগুলি সবই খুব সহজ বাক্যাংশে 
বলা হয়েছিল:
ভুলে যেও না! মাফ করবে না! রক্তের জন্য রক্ত! দাঁতের জন্য দাঁত!'
( Дом не жжен, но трепан, граблен.

Чей-то стон стеной ослаблен :

Мать – не на смерть. На матрасе,

Рота, взвод ли побывал –

Дочь-девчонка наповал.

Сведено к словам простым :

НЕ ЗАБУДЕМ ! НЕ ПРОСТИМ!

КРОВЬ ЗА КРОВЬ и зуб за зуб!)
-AleksandrSolzhenitsyn, PrussianNights

জার্মান নারীদের ধর্ষণ নিয়ে কেউই প্রথমটায় তেমন আমলে নেয়নি। এই গণধর্ষণকে অনেকটা চিহ্নিত করা হয়েছিল পরাজিত জার্মান জনগণের বিজয়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব‍্যবস্থা হিসাবে।
তবে, যুক্তি যাই দেওয়া হোক, পুরুষ সৈনিকদের দ্বারা এই গণধর্ষণ কোনও 'গ্রহণযোগ‍্য' হওয়া উচিৎ ছিল না। বরং জার্মান নারীদের সেনাবাহিনী দ্বারা নির্যাতন ও তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল।
আর এই ঘৃণ্য কাজগুলো করেছিল তারাই, যারা বীভৎস নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বীরত্ব পূর্ণ লড়াই করেছিল এবং এবং তাদের তৈরি মৃত্যু শিবিরগুলোকে স্বাধীন করেছিল।
১৯৪৫ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি প্রকাশ করে যে, প্রতিশোধের স্পৃহায় আচ্ছন্ন মানুষদের ঘৃণার কাছে, সভ্যতার আবরণ কতটা পাতলা হতে পারে। নারীর প্রতি পুরুষের এই ভয়ংকর যৌন আক্রমণের তীব্রতা আমাদেরকে পুরুষ যৌনতার অন্ধকার দিকগুলো সম্পর্কেও চিন্তা করতে শেখায়, যা আমরা হয়তো সচরাচর স্বীকার করতে চাই না।"

-লেখক: Galib Choudhury 









3 comments:

আনিস said...

এটা মারাত্মক একটা লেখা আপনার।ভাই লিনকের লেখাটা এটা কি আপনি? :o
https://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_22.html?m=0

Unknown said...
This comment has been removed by the author.
আলী মাহমেদ। said...

হ্যা, ধন্যবাদ। @জনাব আনিস