Search

Saturday, July 28, 2018

সবই সিস্টেম!

আমি বারবার যেটা বলে আসছি সেটা হচ্ছে, ‘আমরা এমনই’! আমরা একেকজন চলমান জম্বি। ঘুরছি-ফিরছি, খাচ্ছি-দাচ্ছি, চকচকে পোশাকে এবং চামড়ায় গলিত শবটাকে ঢেকে রাখছি। ফরমালিনে চুবানো দেহটা থেকে তরল পদার্থটা সরে গেলেই ভক করে তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে।

হানিফ পরিবহনের বাসকর্মীরা (বাসের চালক, সুপারভাইজার, চালকের সহকারী) যে ছেলেটাকে (সাইদুর রহমান পায়েল) নৃশংস ভাবে খুন করল এরা তো এই সিস্টেমেরই অংশ যে সিস্টেমে আমরা অধিকাংশ মানুষ দিনযাপন করছি। আন্দোলন করে যারা মার খেল তারাই আজ গরাদের পেছনে! অথচ যারা নৃশংস ভাবে মেরেছে তারা ক্লিনশেভেও অদৃশ্য গোঁফে তা দিয়ে বেড়াচ্ছে। সিস্টেম।

আমাদের সকালটা শুরু হয় অন্য রকম করে। একজন আলোকিত মানুষ যার কাছ থেকে অন্ধকারের মানুষেরা ভয়ে-শ্রদ্ধায় দশ হাত দূরে থাকবে সেই অন্ধকারের মানুষটাকে (চালু নাম হচ্ছে টিকেট কালোবাজারী) আলোকিত মানুষটা ফিসফিস করে বলে, ‘ভাই একটা টিকেট হবে’? কারণ দশ দিন পূর্বেই টিকেট সোয়া লাখ টন কয়লার মত উড়ে গেছে।
ও ভাল কথা, অভিযুক্ত কয়লাখাদকদের একজনকে দেখলাম ছুটি দেওয়া হয়েছে হজে যাওয়ার জন্য। ভাল, এটাই সিস্টেম!

এখন আবার দেখছি কয়লা ময়লা ধুতে গেছে এটা সত্য না। কয়লার উড়াউড়ি মিছা কথা। কয়লা নাকি বিএনপির সময় থেকেই চুরি হচ্ছিল এখনকার সরকার এটা ধরেছে। এটাও এক প্রকারের সিস্টেমের কথা। ওহ, ট্রেনের টিকেট প্রসঙ্গে মনে পড়ল। আশার কথা আগামীতে ট্রেন, ট্রেনের টিকেট এইসবের বালাই আর থাকবে না। কারণ দেশেই ‘হাউয়াই জাহাজ’ বানানো হবে। এবং প্রতিটি জেলায় বিমানবন্দর হবে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মানুষ বিমানে যাবে তখন আর ট্রেনের প্রয়োজন কী! এটাও সিস্টেমের উন্নয়ন।

মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে গেছি। কথা হচ্ছিল, বাসকর্মীদের খুন নিয়ে। ঘটনাটা আমরা সবাই জানি। পায়েল নামের ছেলেটা বন্ধুদের নিয়ে হানিফের বাসে ভ্রমণ করছিল। যানজটে যখন বাস স্থির তখন বাথরুম করার জন্য নেমেছিল। যানজট কমে এলে বাস ছেড়ে দেয়। পায়েল ওই বাসের পেছন-পেছন দৌড়াতে থাকে। অবশেষে নাগাল পেয়ে উঠার চেষ্টাকালে আহত হয়ে পড়ে যায়। পায়েল মরে গেছে এটা ভেবে বাসকর্মী ৩ জন মিলে তাকে একটা সেতু থেকে ফেলে দেয়।

সিস্টেম আমাদেরকে এটাই শিখিয়েছে মেরে পালিয়ে যেতে হবে। না-পালালে ২টা ঝুঁকি আছে। গণপিটুনি। কখনও-কখনও এর ফাঁদে পড়ে চ্যাপটা হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা। আবার একশ ভাগ নির্দোষ মানুষও রাস্তা থেকে কাউকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আমাদের দেশের সমস্ত ক্ষমতা তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা শুরু হয়। আর আইনের শাসনের কথা না-বলাই ভাল। যে দেশের চালকদের গরু-ছাগল চিনলেই চলে সেখানে তাদেরকে আইন স্পর্শ করার সুযোগ কোথায়!

যাই হোক, আরেক সিস্টেমের কথা বলি। এদেশে কোনও অপরাধি অপরাধ করলে আইনের লোকজনেরা কোমরে দড়ি লাগিয়ে তার বুড়া বাপ-মা-চাচা-চাচিকে ধরে নিয়ে আসেন। বুড়া-বুড়ি তাঁদের দোষ খুঁজে গ্লানি পাওয়ার কিছু নেই- গলায় যে দড়ি লাগানো হয় না এতেই জনগণ বেজায় খুশি।
আমরা এটা বিলক্ষণ জানি অতিরিক্ত লাভের লকলকে জিহ্বার কারণে বাস মালিকদের বেঁধে দেওয়া কঠিন সময়, একজন চালককে ১০/১৫ ঘন্টা চালাতে বাধ্য করা এমন অজস্র উদাহরণ আছে।

তো, এই সিস্টেমের হাত ধরেই বলি এই যে হানিফ বাসকর্মীরা অকল্পনীয় খুনটা করল এই কারণে কি তাদের বাসের মালিকের কোমরে না-হোক অদৃশ্য লেজেও দড়ি লাগানো হবে না?

No comments: