Search

Wednesday, July 25, 2018

সুখীমানব!

আমার এখানে কেউ বেড়াতে এলে আমি খুব আগ্রহ করে এঁর কাছে নিয়ে যেতাম এটা বলে, আসেন, আপনাকে একজন সুখী মানুষ দেখাই। কেউ কাঁধ ঝাঁকাতেন তো কেউ ঠোঁট বাঁকাতেন। তাদের এই তচ্ছিল্য আমি গায়ে মাখতাম না। আমি আমার মত করে ব্যাখ্যা করতাম।

এই মানুষটাকে অনেক দিন ধরে স্টেশনে দেখি ওভারব্রিজের নীচে।
গতবার শীতের তীব্রতায় যখন সবাই কাবু তখন এই মানুষটাকে একজন একটা কম্বল দিলে পরদিন দেখা গেল সেটা এঁর গায়ে নেই, উধাও। জিজ্ঞেস করলে এই মানুষটা অস্পষ্ট গলায় বলেছিলেন, এক বুড়া নাকি শীতে কষ্ট করছিল তাকে দিয়ে দিয়েছেন। শোনো কথা, শীতে নিজে হি হি করে কাঁপেন- পুরো শীতটা তো এই হাফপ্যান্ট পরে কাটিয়ে দিলেন!

কথায় সিলেটের টান। কেউ দেখেনি তিনি কারও কাছ থেকে পয়সা চেয়েছেন। শত-শত বার এঁকে খাবার খাওয়ার কথা বা অন্য কোনও সহায়তার কথা বললেও বড় অমায়িক এক ভঙ্গিতে না করেছেন। কখনও-কখনও, কেবল চা সঙ্গে দু-একটা বিস্কুট! তিনি না বলার পূর্বে দু-হাত উপরে তুলে এমন এক শারীরিক ভঙ্গি করতেন, মুখে কোনও শব্দ উচ্চারণ না-করলেও তিনি যে তীব্র ভাল লাগায় ডুবে আছেন এমনটাই বোঝা যেত। তাঁর এই অদেখা ভাল লাগা দেখার চোখ আমাদের কই। এক জীবনের কত কিছুরই না প্রয়োজন হয় আমাদের। বাড়ে চোখের লোভের আকার। বাড়ে হাহাকার।
আমি যখনই দেখেছি বসা, ঠিক এই ভঙ্গিতেই।
কেবল গতকাল দেখা গেল দিন-দুপুরে মানুষটা শুয়ে! বাইরে অঝোর বৃষ্টি। ভোর রাতে মানুষটা কখন অন্য ভুবনে যাত্রা করেছেন কেউ জানে না! তার পাশে এক বিন্দু জল ফেলার জন্য কেউ ছিল না। তাতে কী- প্রকৃতি নিশ্চয়ই কাঁদে অঝোরে, তার এমন সন্তানকে হারিয়ে। এমন এক শিশু যার কোনও অভিযোগ নেই, জীবনের প্রতি কারও প্রতি…।

No comments: