"এমনিতে শহীদুল্লাহ কায়সার খুব কথা বলতেন। কিন্তু যেদিন যুদ্ধ শুরু হলো সেদিন থেকে তিনি চুপ। সারাদিন টেনশনে থাকেন। যুদ্ধের আগে তাঁকে অনেকে বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। কারণ ব্যস্ত ছিলেন একটি উপন্যাস রচনায়। তিনি বলতেন, 'যুদ্ধ আমাকে দেখতে হবে। কারণ তথ্যগুলো আমার উপন্যাসে লাগবে'।
চৌদ্দই ডিসেম্বর।
সকাল বেলায় দেখা গেল বিদেশী দূতাবাসের নম্বর প্লেট লাগানো একটি গাড়ি এসে শহীদুল্লাহ কায়সারের বাড়ী থেকে একটু দূরে দাঁড়ালো। অনেকক্ষণ গাড়ীটা সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে তারপর একসময় চলে গেল।
সকাল ন’টা-দশটার দিকে সদরী ইস্পাহানীর টেলিফোন।
'কি করবো কায়সার সাহেব'?
কায়সার সাহেব তাকে অভয় দিলেন।
বেলা তখন তিনটা।
বারান্দায় স্ত্রীর সাথে বসে আছেন তিনি। এমন সময় দেখলেন টুপি মাথায় একটি লোক এক দৃষ্টে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এ দেখে তাঁর স্ত্রী বললেন, 'তুমি ভিতরে যাও, দেখ না লোকটা কিভাবে তাকিয়ে আছে'।
সন্ধ্যা ছ’টা।
শহীদুল্লাহ কায়সার বসে বসে খবর শুনলেন। এক সময় চাকরকে ডেকে বললেন, 'আমার জন্য দু’টো রুটি বানিয়ো'।
শহীদুল্লাহ কায়সার প্রায়ই স্ত্রীকে বলতেন: দেখো আমাকে যে কোন সময় নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং সব সময় আমার জন্য কিছু কাগজ-কলম আর সিগারেট রেখে দেবে। আর কিছু টাকা। শহীদুল্লাহ কায়সার আরো বলতেন, 'আমি একজন সাংবাদিক। তারা আমাকে যাই করুক মারবার সাহস পাবে না।'
চাকরকে তিনি রুটি বানাবার কথা বলেছেন এমন সময় দরোজায় ধাক্কা। মিলিটারী এসেছে...।
...আলবদররা এদিকে দরজা ধাক্কাচ্ছে। তিনি বললেন, 'দরোজা খুলে দাও'। একথা বলে উপরে বেডরুমে গেলেন; স্ত্রীকে বললেন, 'শীগগীর আমাকে কিছু টাকা দাও'। বলে তিনি প্যান্ট পরতে লাগলেন। তাঁর স্ত্রী তখন বললেন, 'টাকা দিতে বলে তুমি যাচ্ছ কোথায়'?
শহীদুল্লা কায়সার বললেন, 'না, একটু ভালো পোষাক পরে নেই'।
...ইতিমধ্যে আলবদররা তাঁর বেডরুমে ঢুকে পড়েছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'আপনারা কাকে চান'?
'আপনার নাম কি'? তারা (আলবদর) পাল্টা জিজ্ঞেস করলো।
'শহীদুল্লাহ কায়সার'।
সঙ্গে সঙ্গে আলবদররা তাঁর হাত ধরলো। 'আপনার সাথে কথা আছে'। বলে তারা তাঁকে বারান্দায় নিয়ে এলো।
এদিকে বাসা জুড়ে হৈ-চৈ চিত্কার। আলবদররা তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এমন সময় শহীদুল্লাহ কায়সার কঠিন কন্ঠে বললেন, 'আমি তো যাচ্ছিই। আপনারা আমার হাত ধরবেন না'। এ বলে তিনি একবার পিছন ফিরে সবাইকে দেখতে চাইলেন। কিন্তু আলবদররা তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি। (সেই তাঁর শেষ যাওয়া)।"
(১৪ ডিসেম্বর '৭১-এ আল-বদরদের হাতে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্ত্রীদের সাক্ষাত্কারের ভিক্তিতে রচিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অষ্টম খন্ড)
*শীতের পাখিরা শীত শেষ হলে ফিরে আসে কিন্তু শহীদুল্লাহ কায়সাররা আর ফিরে আসেন না।
**মুক্তিযুদ্ধের কিছু ছবি: http://71photogun.blogspot.com/
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Friday, October 1, 2010
নিধন: শহীদুল্লাহ কায়সার
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
4 comments:
খুব ভাল । এই ইদ শারদিয়া তে যে সব শিশুরা নতুন জামা পায়নি বা পাবেনা তাদের কথা .....
দাদা, আমার পাতায় গিয়ে ছবিটা দেখেন তো। মনে পরি নাকি, আমি কে??
আপনার লেখার ধরণ সত্যি অভাবনীয় :(
ভালো আছেন তো?????
২০০৯ এর ২৫,২৬,২৭ ফেব্রুয়ারীর কথা ভুলে গেলেন কি করে????????????????????
ওঁরা কি মা্নুষ নয়????
ARMY Officer only?????
Fugitive
"২০০৯ এর ২৫,২৬,২৭ ফেব্রুয়ারীর কথা ভুলে গেলেন কি করে????????????????????"
প্রশ্নবোধক চিহ্নের বন্যা বয়ে গেছে দেখছি! কে আপনাকে বলল, এটা আমি্ উপেক্ষা করেছি?
ওই সময়ে বেশ কিছু লেখা লিখেছিলাম, বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না কিন্তু কঠিন প্রতিকূলতার মধ্যে ওই লেখাগুলো লিখতে হয়েছিল। ওই লেখাগুলোর সবগুলোর লিংক ঠিক এই মুহূর্তে পাচ্ছি না। যে কটা পেলাম এগুলো পড়ে দেখতে পারেন:
http://www.ali-mahmed.com/2009/02/blog-post_28.html
http://www.ali-mahmed.com/2009/03/httpwww.html
Post a Comment