জাপানি কবি আকিতাকে [১] নিয়ে একটা লেখার প্রসঙ্গ ধরে "বি-স্ক্যান"-এর কথা চলে এসেছিল। আমারব্লগের যে অনুষ্ঠানে আমি এসেছিলাম, ওই অনুষ্ঠানে ওঁরাও এসেছিলেন। আমার সৌভাগ্য এঁদের কারও কারও সঙ্গে অল্প হলেও কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। সুযোগ হয়েছিল তাঁদের ভাবনাগুলো জানার।
আমার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে সবার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ওদিন আমি বেশ খানিকটা অসুস্থও ছিলাম। সকাল থেকে বুকে প্রচন্ড ব্যথা। একজন ডাক্তার আছেন [২] যিনি বিচিত্র কোন এক কারণে আমাকে পছন্দ করেন। আমি চোখ বন্ধ করে তাঁকে বিশ্বাস করি। তাই তিনি যখন বললেন, এটা হার্টের সমস্যা না তখন আমি চেপে রাখা শ্বাস ছাড়লাম। যাক, লেখালেখি নামের আরও কিছু আবর্জনা সৃষ্টির সুযোগ থেকে গেল!
কিন্তু তিনি যখন বললেন, আপনার ঘুম কম হচ্ছে। আপনি বিশ্রামে থাকলে ভাল হয়। তখন বড়ো মুশকিল হয়ে গেল। এটা সত্য, বেশ কিছুদিন ধরে আমার ঘুমাবার সময় অতিরিক্ত কম! ডাক্তার নামের মানুষটার মতে, অত্যন্ত কম ঘুমাবার কারণই নাকি এই ব্যথার উৎস।
যাই হোক, আমি তাঁকে বললাম, আমার যাওয়াটা খুব জরুরী, কিছু মানুষকে আমি কথা দিয়েছি। একগাদা ব্যথা কমাবার ওষুধ খাইয়ে তারপর ছাড়লেন। ফোনে যখন জিজ্ঞেস করেন, সিগারেট খাচ্ছেন না তো আবার? আমি সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বলি, না। ভাগ্যিস, ফোনে সিগারেটের ধোঁয়া দেখার পদ্ধতি এখনও চালু হয়নি! তাহলে সর্বনাশ হয়ে যেত। ওই মানুষটার কাছে এই কপটতার জন্য ক্ষমা চাই। তাঁর এই ভালবাসার ঋণ আমি শোধ করি কেমন করে? ব্যস্ততার কারণে তিনি কখনও আমার লেখা পড়েন না। কিন্তু তাতে কী, আমার ভালবাসাটা এখানে জানিয়ে দিলাম। সিগারেট খাওয়ার কথাটাও তাঁর জানার কথা না।
তো, ওখানে বি-স্ক্যানের কয়েকজনের সঙ্গে আমার টুকটাক কথা হয়েছিল। তাঁদের একজন, 'রুমা আপা' (নামটা সঠিক লিখে না থাকলে আগাম ক্ষমা প্রার্থনা)।
আমার আকিতাকে নিয়ে পোস্টটা পড়ে তিনি আমার সম্বন্ধে বেশ খানিকটা অতিশয়োক্তি করেছেন [৩], লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাওয়ার মত কিছু কথা বলেছেন।
আমি হতভম্ব, আপনারা কত অল্পতে না তুস্ট হন! আমি বুঝি না একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের সঙ্গে মানুষের মতই কথা বলবে, আচরণ করবে, এটা নিয়ে অবাক হওয়ার অবকাশ কোথায়!
সেখানে (তাঁর ব্লগে) তিনি লিখেছেন: "এসকাপ' সঠিক শব্দ ব্যবহারের নির্দেশিকায় ১৯৯৩ সালে 'প্রতিবন্ধী' শব্দটা অভিধান থেকেই বাদ দিয়েছে। তবুও মানুষ আমাদের কে প্রতিবন্ধী বলে ডাকে। এটা যে কি অপমানের,লজ্জার,মন খারাপের,হতাশার সেটা ভূক্তভোগী মাত্রই জানেন। যখন এই নামে কেউ ডাকে তখন শোকে পাথর হয়ে যাই।"
কিন্তু বি-স্ক্যানের একজনের বক্তব্যের শুরুটা ছিল এমন, "আমরা প্রতিবন্ধীরা..."। তখন আমার বুকে ধাক্কার মত লেগেছিল। এর মানে কী, এঁরা নিজেরাই নিজেদের প্রতিবন্ধী বলছেন? একজন মানুষ কতটা অসহায় হলে অন্যের চাপিয়ে দেয়া মত-অভিমত নিজের করে বলেন। তাঁর তখন নিজের করে বলার কিছুই থাকেন না। আমরা এঁদের কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছি!
এখানে আমার খানিকটা বলার আছে, আপনারা কেন এমনটা করে ভাবেন? আপনারা ঈশ্বরের বিশেষ সন্তান। আমি আগের পোস্টেও লিখেছিলাম, "এই গ্রহে আমাদের চেয়ে আপনাদেরই অধিকার অনেক অনেক বেশী"।
কেন জানেন? আমরা কোন ছার, আপনাদের চোখে চোখ রাখার ক্ষমতা স্বয়ং ঈশ্বরেরও নাই। কারণ তিনি তাঁর সেরা সন্তানদেরকে আমাদের কল্যাণের জন্য অন্যায় করেছেন। প্রয়োজনে এগিয়ে দিয়েছেন। যুদ্ধের সম্মুখে দেখবেন সাহসীদের এগিয়ে দেয়া হয়, পুরো যুদ্ধের ঝড় এঁদের উপর দিয়ে যায়। ঈশ্বরও আপনাদের মত সেরা সন্তানদের এগিয়ে দিয়েছেন, আমাদেরকে চাবকাবার জন্য, একটা চাবুক হিসাবে।
প্রকৃতি-ঈশ্বর, যে যে নামেই বলুক, তাঁর অনন্ত ভ্রমনে [৪] থামাথামি নাই। প্রকৃতি খুব একটা ব্যত্যয় পছন্দ করে না। প্রকৃতি কখনই চাইবে না তার সন্তানরা একেকটা দানব হয়ে থাকুক। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে একটা সভ্যতাকে থামিয়ে দিক।
এর জন্য তাঁর সন্তানদের পায়ে একের পর এক শেকল পরাবার চেষ্টা করে, দানব থেকে মানব বানাবার জন্য। একেজনের জন্য একেক পদের শেকল! শিক্ষার শেকল, ধর্মের শেকল, উত্তারাধিকার-সন্তানের শেকল, যার জন্য যেটা প্রযোজ্য। আপনাদের মত বিশেষ সন্তানরাও আমাদের জন্য এক ধরনের শেকল। দানব হওয়া থেকে আমাদেরকে থামাবার জন্য।
তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট, দেখো মানুষ, তোমাদেরকে আমি খানিকটা অন্য রকম করলে কেমন হয়? অ মানুষ, তোমরাও আমার আমার অন্য রকম সন্তান গাছ-পাখি এদের প্রতিও সুবিচার করবে। গাছ কেটে ফেললে, পশু-পাখীর আবাস ছিনিয়ে নিলে তোমরাও ঠিক এমন করে ফল ভোগ করবে।
আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে, যে মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটা ছিল ওখানে সিড়িতে র্যাম্প (সিড়িতে ঢালু জায়গা- হুইল চেয়ার তোলার ব্যবস্থা)ছিল। আমি বাজে স্মৃতি শক্তির জন্য কুখ্যাত। আমার মনে পড়ছে না কমলাপুর স্টেশনের সিড়িতে র্যাম্প দেখেছি কি না। সম্ভবত না। যেটা দেখেছি সেটা হচ্ছে মাল-সামান তোলার জন্য। আজব! আমরা জড় পদার্থ নিয়ে মাথা ঘামাই কিন্তু একজন মানব সন্তান, ঈশ্বরের বিশেষ সন্তানের জন্য মাথা ঘামাই না!
এখানেই হচ্ছে আসল কথা। ঈশ্বরের বিশেষ সন্তানরা যে-কোন সময় যে-কোনও জায়গায় চলে আসতে পারেন। সেটা স্টেশন নাকি স্টেডিয়াম এটা আলোচ্য বিষয় না। আমরা কেন প্রস্তুত না! কেন দরোজাটা খুলে রাখছি না?
আমরা বুকে হাত দিয়ে নিজেকেই জিজ্ঞেস করি, তাঁদের আসতে দেয়ার দরোজা কি আমরা খোলা রেখেছি? আমরা কি প্রস্তুত? উত্তরটা না হলে এঁদের কোন সমস্যা নাই। সমস্যাটা আমাদের। একজন ঘুষখোরের জন্য যেমন একটা গাছের প্রয়োজন [৫] হবে তেমনি একদা আমাদের জন্যও এমন একটা দরোজার প্রয়োজন হবে, এটা আমরা যত দ্রুত বুঝতে পারব ততোই আমাদের জন্য মঙ্গল।
*কেবল জাপানি কবি আকিতার কথা ধার করে আপনাদের বলি, আকিতার মা বলতেন, "...তুমি তো একটা ঘটনার স্বীকার মাত্র। প্রকৃতি তোমার প্রতি অন্যায় করেছে, তাই তুমি এই রোগের সংস্পর্শে এসেছ, যাতে তোমার কোন হাত নাই! ...যখন কারো সঙ্গে কথা বলবে, তার চোখে চোখ রেখে কথা বলবে, বিন্দুমাত্র বিব্রতবোধ করবে না...!"
**ছবি ঋণ: আমার ব্লগ
সহায়ক লিংক:
১. ঈশ্বরের বিশেষ সন্তান, ভালবাসার সন্তান: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post.html
২. ডাক্তার নামের মানুষটা: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_06.html
৩. রুমা আপার পোস্ট: http://rooma.amarblog.com//posts/105264/
৪. তাঁর অনন্ত ভ্রমণ: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_18.html
৫. ভূত দিবস: http://www.ali-mahmed.com/2008/08/blog-post_21.html
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Monday, May 3, 2010
ঈশ্বরের বিশেষ সন্তানদের জন্য আমরা কি প্রস্তুত?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comment:
!!!!!!!!
Post a Comment