*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Sunday, January 17, 2010
জ্ঞানপাপী: আলাউদ্দিন আল আজাদ, মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান
সিতারায়ে হরর খেতাবে ভূষিত, ডেভিল ডেয়ারখ্যাত অতিশয় দক্ষ পাইলট মতিউর রহমান পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর সব কর্মকর্তাকে ফাঁকি দিয়ে মাসরুর বিমানঘাঁটি থেকে অবাঙালী ছাত্র বৈমানিক রশিদ মিনহাজসহ একটি T-33 বিমান হাইজ্যাক করে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন ২০ আগষ্ট ১৯৭১ সালের শুক্রবার।
এ ভয়াবহ কাজে তাকে সহায়তা করেছিলেন তাঁর স্ত্রী মিলি রহমান। সমস্ত ঝুঁকি মাথায় নিয়ে দুই শিশুসন্তানসহ থেকে গিয়েছিলেন মৌরিপুর বিমানবাহিনীর অফিসার্স মেসে।
ভারতীয় সীমান্ত থেকে ৩ মিনিটের দূরত্বে থাকতেই মরুভূমিতে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। অবাঙালী ছাত্র-বৈমানিক রশিদ মিনহাজসহ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান নিহত হন। রশিদ মিনহাজকে সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব 'নিশানে হায়দার'-এ ভূষিত করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে গাদ্দার বা ট্রেইটর চিহ্নিত করে মতিউর রহমানকে সমাহিত করা হয় অনাদরে-অবহেলায় তীব্রতম ঘৃণার সঙ্গে ঐ বিমানঘাঁটির চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত কবরস্থানে। বিমানঘাঁটির মূল প্রবেশদ্বারে টাঙিয়ে রাখা হয় রশিদ মিনহাজের ছবি সমরবীর হিসেবে। জানানো হয় অভিবাদন। অন্যদিকে মতিউর রহমানের ছবি টাঙিয়ে গাদ্দার হিসেবে থুথু ছিটানোর ব্যবস্থা করা হয়। (গোলাম আজম বাণীও দেন)।
...মিলি রহমান বলতে থাকেন ৩৪ বছর আগে মধ্য জুলাইয়ের সেই দিনের কথা। বেশ গম্ভীর এবং অন্যমনস্কতার মধ্যে আমাকে এসে নতুন সালোয়ার কামিজটা পরে টাইট করে চুল বাঁধতে বলে ছোট কন্যা তুহিনকে কোলে তুলে নিল। আদর করতে থাকলো ভীষণ তাকে। তারপর তারই পরামর্শে বোন রোজীকে লিখতে হলো একটা চিরকুট...রোজী আপা, তুহিন বাড়িতে থাকলো। ওকে দেখো। ওর এই কাজকর্ম দেখে সাত মাসের ছোট তুহিনকে কোলে নিয়ে অঝোরধারায় কেঁধে উঠলাম।
তা দেখে মতিউর বলে উঠলো, দেশের জন্য একটা বাচ্চাকে ছাড়তে পারছো না! দেশের ঐ অবস্থা দেখেশুনেও একটা বাচ্চা নিজের বোনের কাছে ছেড়ে যেতে এতো কষ্ট হচ্ছে তোমার? কত বাচ্চা চাই তোমার? দেশ স্বাধীন হলে আমিই তোমাকে দেব অনেক বাচ্চা।
এর পর মাহিনকে নিয়ে ওর সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম এয়ারফিল্ডে। গার্ডকে জানালো, বেগম সাহেব ও বাচ্চা এসেছে একটু প্লেন দেখবে। বিনা বাধায় প্লেনের কাছে পৌঁছাতেই ইশারা করলো মাহিনকে নিয়ে ককপিটে বসতে। তাকিয়ে দেখি প্লেনটা শেকল দিয়ে বাঁধা। আমি আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করলাম, 'ধরো প্লেনটা স্টার্ট নিলো না, আবার নিলেও শিকল বাঁধা প্লেন উড়বে কেমন করে? আর এটা করতে গেলে ওরা কী করবে'?
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব ক্যাজুয়ালি উত্তর দিল, 'গুলি করে মেরে ফেলবে, আর কি হবে'?
আমি বললাম, 'এক মেয়ে বাড়িতে ফেলে এসে আরেক মেয়ে নিয়ে এতবড় রিস্ক নিতে পারবো না'।
ও ফট করে উত্তর দিল, 'এ জন্যই মেয়ে মানুষ নিয়ে কোনো কাজ হয় না'।
তারপর বাড়ি ফিরে এলাম। হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে ও বলে উঠলো, 'আমাকে মাফ করে দিও। আমার মাথা ঠিক নাই। আমার পরিকল্পনাটা ঠিক হয়নি। কিন্ত কি করবো বলো, কিছু একটা না করা পর্যন্ত স্বস্তিও পাচ্ছি না যে'।
...১৯ আগষ্ট সকালে মতিউর ঘর থেকে বেরিয়ে যান। স্ত্রী মিলি রহমান প্রতীক্ষায় থাকেন। দুপুরের দিকে গাড়ির শব্দে বেরিয়ে এসে দেখেন ফিরে এসেছেন তার প্রিয় মতি। ...আকাশের অবস্থা ভালো না থাকায় এদিন ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন মতিউর রহমান।
এরপর আসে ২০ আগষ্ট, ১৯৭১ শুক্রবার। সে দিনের কথা স্মরণ করে মিলি রহমান বলেন, রাতে দেখলাম মতি ঠিক ঘুমুচ্ছে না। বারবার আমাকে আর বাচ্চাদের দেখছে। কিন্তু আমি তাকালেই আবার শুয়ে পড়ছে। সকালে উঠে স্বাভাবিক কায়দায় অফিসের পথে রওয়ানা হন তিনি। সে দিন যাবার সময় কোনো কথা হয়নি তার সঙ্গে। এমনকি প্রতিদিনকার মতো খোদা হাফেজ বলা হয়নি মিলি রহমানের।
...২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন মিলি রহমান বোনের সঙ্গে। আসার আগে দেখতে চেয়েছিলেন প্রিয় মতির কবর। অনেক চেষ্টার পর অনুমতি মিলেছিল। Traitor of the Nation ক্যাপশন লেখা মতিউরের ছবি গাঁথা মূল ফটক পেরিয়ে কবরখানায় পৌঁচেছিলাম অবশ্য। নামতে দেয়া হয়নি। গাড়িতে বসেই দূর থেকে একনজর দেখা। প্রিয়তম মানুষের কবর দেখা!
...এতো তিক্ততা যেন আর কারো জীবনে না আসে। আমি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী। সবখানে যাবার সুযোগ ছিল। সামাজিক এই মর্যাদা, সম্মান, পরিচিতির পরও আমাকে যে তিক্ততার স্বাদ নিতে হয়েছে, তাতে আমার সব সময় মনে হয়েছে সাধারণ মেয়েদের অবস্থা তাহলে কত শোচনীয়, কত দুর্দশাগ্রস্ত! এটা যে কী সাংঘাতিক জিনিস বলা মুশকিল। যেই বুঝল আমার স্বামী নেই ওমনি আমি যেন বেওয়ারিশ জিনিস। কোনো খুঁটি নেই, যা ইচ্ছে তাকে নিয়ে যেন করা যায়। অশ্রুসজল হয়ে উঠেন তিনি।
বলেন, বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, ছয়টা হরমোন ইনজেকশন নিতে হয়েছে আমাকে শুধু মোটা হবার জন্য। যাতে আমাকে বয়সী দেখায়। ভারিক্কি দেখায়। বয়স বাড়ানোর জন্য আমার মতো মানুষকে বাধ্য হতে হয়েছে এই ইনজেকশন নিতে। তাহলে বোঝেন অন্য মেয়েদের, নারীদের অবস্থা...।
...৩৪ বছর ধরে তো কেউ ইতিহাস লিখল না। সেই ইতিহাসের কথা তো আমাকেই লিখতে হলো।
...এমনকি আমার নিজের পরিবারেও লিখবার মতো যোগ্য লোক ছিলেন। আমার দু-বোনজামাই আলাউদ্দিন আল আজাদ ও মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামানের মতো লোক ছিল। তারাও তো লিখতে পারতেন। কেউ তো লিখল না। বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে এখানে ওখানে নানাভাবে লেখা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে আছে। জাহানারা ইমাম লিখেছেন। কিন্তু আমার জানামতে, বিস্তৃত করে পুরো জীবন জানবার মতো করে তাদের নিয়ে লেখা হয়নি। আমি অন্তত বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরকে (বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর স্মারকগ্রন্থ) নিয়ে সে চেষ্টাটা করলাম।"
(এই দেশে আলাউদ্দিন আল আজাদ, মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামানের মতো মানুষদের সংখ্যা কম হলে আমাদের মতিউর রহমানের ফিরতে এতো দীর্ঘ বছর লাগত না।)
*লেখা সূত্র: সাপ্তাহিক ২০০০
**ছবি-স্বত্ব: শম্ভু সেনগুপ্ত, আগরতলা/ সংগ্রহে: দুলাল ঘোষ।
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
3 comments:
মাহমেদ ভাই, কেন ম্যানিপুলেশন করেন? মিনার মাহমুদ মারা যাওয়ার পরে তাকে নিয়ে লেখা আপনার পোস্টটা ডিলিট করে ফেলেছেন। মারা গেলে কি তার সব কর্ম মাফ হয়ে যায়? লেখাচুরি হালাল হয়ে যায়? মিনার মাহমুদের নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে আপনার লেখাটা থাকলে কি ক্ষতি হতো খুব?
এই পোস্টের শিরোনামে আলাউদ্দিন আল আজাদকে জ্ঞানপাপী বললেন। নিজে খবর নিয়ে দেখেছেন কি- আপনার এই পোস্ট দেয়ার ৩ বছর আগে ২০০৭ সালের বইমেলায় গতিধারা প্রকাশনী থেকে তার লেখা ‘প্যাপিরাস মতিউর’ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি পড়ে দেখেন, জানবেন উনি কী করেছেন না করেননি। আচ্ছা, আলাউদ্দিন আল আজাদ তো মারা গেছেন, এই পোস্ট মুছে ফেলবেন?
একটা কথা বলি - লেখকের ক্ষমতা খুব ধারালো। সাপ্তাহিক২০০০ পত্রিকার সুত্র ধরে অনেক কঠিন কথা বলা যায়, একে ওকে জ্ঞানপাপী বলা যায়। কিন্তু, লেখক হিসাবে নিজে একটু খোঁজ নিয়ে লিখলে, নিজের জ্ঞানের পরিধিও বাড়ে। আর লেখা/কমেন্ট মোছার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। সম্পুরক লেখা আসতে পারে। মোছাটা অন্যায়। পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা।
আপনার এই সব কঠিন অভিযোগের জবাব আছে আমার কাছে। গুছিয়ে লিখতে গেলে লম্বা একটা লেখা লিখতে হয়ে যাবে কিন্তু আমার লেখালেখি আপাতত বন্ধ।
কখনও লেখা শুরু করলে অবশ্যই আপনার অভিযোগের জবাব দেব...@হাসান সোহেল
@হাসান সোহেল, আপনার মন্তব্যের প্রসঙ্গে:
http://www.ali-mahmed.com/2012/06/blog-post_22.html
Post a Comment