‘…মিডিয়া’ ফুটবলের উম্মাদনা কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে এর নমুনা দিয়ে শেষ করা যাবে না।
রাশিয়ায় এই বিশ্বকাপ রাশিয়ার জন্য 'ইদ-চান'! সরকার সেই দেশের অনেক অন্যায্য কাজ আড়াল করে ফেলার চেষ্টা করছে। যেমন, বর্তমানে রাশিয়ান নারীদের অবসরের বয়সসীমা ৫৫ এবং পুরুষদের ৬০। এখন সরকার চাচ্ছে এই বয়সসীমা যথাক্রমে ৬৩ এবং ৬৫ করতে। এতে করে ভবিষ্যতে সরকারের এক ট্রিলিয়ন রুবল সাশ্রয় হবে।
আমাদের দেশে
অবশ্য এইসব আড়াল-আবডালের প্রয়োজন নেই কারণ আমরা খুল্লামখুল্লা বাথরুম সারলেও কিছু যায় আসে না বরং আমরা গলাবাজি করব এই বলে যে, ‘আমি ল্যাংটা তো কী হইছে- আপনে তাকান ক্যান, আপনের মনে কু আছে চোউক খারাপ’।
অবশ্য এইসব আড়াল-আবডালের প্রয়োজন নেই কারণ আমরা খুল্লামখুল্লা বাথরুম সারলেও কিছু যায় আসে না বরং আমরা গলাবাজি করব এই বলে যে, ‘আমি ল্যাংটা তো কী হইছে- আপনে তাকান ক্যান, আপনের মনে কু আছে চোউক খারাপ’।
স্কিণশট ঋণ: প্রথম আলো, ২৯ জুন ২০১৮। |
আমাদের এই মেয়েরাই গতকাল আরেক কান্ড করে বসল! আইরিশদের শুইয়ে দিল! কেবল তাই না, জাহানারা ৫ উইকেট নিয়ে শুধু টি-টোয়েন্টি না, মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ৫ উইকেট পেল। এই প্রথম, বাংলাদেশের কোনো মেয়ে!
ছবি ঋণ: http://www.espncricinfo.com |
এই মিডিয়া চালান যেসব সর্দারেরা সেইসব মিডিয়াবাজ মানুষদেরও দেখি বিরাট দেশপ্রেমিক। এঁরা লেখালেখি শেখার জন্য আমেরিকা যেতে খুব পছন্দ করেন আমেরিকা থেকে ফিরে এসে 'সদ্য আমেরিকা ফেরত' টাইটেল লাগান ওখানকার বিস্তর গল্প বলেন কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমেরিকার মহানুভবতার(!) গল্পটা বলার আর সময় পান না।
আমাদের এক 'ফেসবুক ছালাব্রেটি' এই নিয়ে বিস্তর গোস্সা প্রকাশ করেছেন এইসব নাকি নির্দোষ খেলুড়ে অধিকার। বৈদেশের পতাকা-টতাকা লাগানো খুবই উত্তম এক কাজ। এইসব 'ফেসবুক ছালাব্রেটিদের' সমস্যা হচ্ছে এদের পিঠে ছালা বেঁধে কথা বলতে হয় কারণ বৃষ্টি দেখে ছাতা ধরার একটা বিষয় আছে বৈকি। নইলে লাইক-টাইক কমে গেলে তো বিপদ, অমায়িক বিপদ!
এখন আবার আমাদের দেশপ্রেমিকদের নতুন একটা ইয়ে চালু হয়েছে। দেশপ্রেমিক একেকটা! অন্য দেশের পতাকার সঙ্গে আমাদের জাতীয় পতাকা বেঁধে দিচ্ছে। আমি ঝাড়ুর হাতলে বাঁধতেও দেখেছি সঙ্গত কারণেই এখানে দিলাম না। বৃষ্টি, দিন নেই রাত নেই উড়ছে আমাদের জাতীয় পতাকা। বেচারা পতাকা, আর জাতীয় রইল কই!
আমাদের দেশে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে যে উম্মাদনা তা অসুস্থতার পর্যায়ে পড়ে। অন্য দল করে বলে বাপ-ছেলেকে একসঙ্গে কুপিয়েছে। অন্য এক জায়গায় উলঙ্গ করে ফেলেছে।
আহারে পতাকা, পতাকা লাগাতে গিয়ে যে অজস্র প্রাণ যে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য মানবসন্তান বিকলাঙ্গ হচ্ছে এই দায় কি আমাদের উপরও খানিকটা বর্তায় না? অথচ আমাদের কোনো বিকার নেই। এই ভিডিওটা পুরোটা আমি দিলাম না কারণ আমার এতো সাহস নাই।
ভিডিও: সংগৃহীত
জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রথম পাতায় ঢাউস আকারে ছাপা হচ্ছে আজ ব্রাজিল বাড়ির কথা তো কাল আর্জেন্টিনা বাড়ির কথা!
ওই দেশের লোকজনেরা তো মুখ ফসকে বলেই ফেলে, 'কী কান্ড, খোদ আমাদের দেশেও তো আমাদের এই দল নিয়ে এতটা উম্মাদনা নেই যতটা তোমাদের দেশে'!
জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রথম পাতায় ঢাউস আকারে ছাপা হচ্ছে আজ ব্রাজিল বাড়ির কথা তো কাল আর্জেন্টিনা বাড়ির কথা!
আমাদের দেশের এমন বেকুব দেখার জন্য ওদের উড়ে চলে আসতে সমস্যা কোথায়! আহা, তখন মুন্নি সাহারা যে চকোলেটের মত গলে যায়।
ভাবা যায়, একজন বয়ষ্ক মানুষ তার জমি বিক্রি করে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার পতাকা বানিয়েছেন, জার্মানির।
এটা আবার মিডিয়া ফলাও করে দেখাচ্ছে-নাচাচ্ছে। এখন জার্মানির বিদায়ে শোকে বুড়া মিয়া খাওয়া-দাওয়া করছেন না। আগে জানতাম জরু(বউ) মরে যাক কিন্তু গরু যেন না মরে। বউ গেলে বউ আসবে কিন্তু গরু? এখন দেখছি জরু-গরু-পোলা-ছোলা সব্টাই যাক কেবল জার্মানি বেঁচে থাক। এটাও আবার মিডিয়ার জন্য 'লাজিজ' খাবার। শিরোনাম হয়, 'পতাকা আমজাদ বাকরুদ্ধ'!
কেউ-কেউ বলবেন, আহা, তাই বলে কী খেলা নিয়ে আমরা লাফাব না। অবশ্যই লাফাব কিন্তু এখন যা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে একেকটা চলমান রোগী! আগে আমরা আর যাই করি অন্তত কোন দল জিতবে এটা নিয়ে টাকাটুকা লেনদেনের নামে জুয়া তো আর খেলিনি।
এখন খেলা নিয়ে যেরকম বাপ-বাপান্ত হয় এ এক বিরল। সহিষ্ণুতার লেশমাত্রও নাই। সহিষ্ণুতার অভাব কীরকম হয় এই ভিডিও দেখলে খানিকটা আঁচ করা যাবে।
কালে-কালে আমাদের বিচিত্র আবেগ (মা মরে গেছে পোলা দুঃখের সেলফি উঠাচ্ছে) যে প্রকারে এগুচ্ছে তার নমুনা এমন দাঁড়াবে...।
:অাপডেট: ৩০.০৬.২০১৮
এই ছোকরি তো এমন কান্না কাঁদছে বাপ মরলেও সম্ভবত এমন কান্না করবে না। আর আমাদের দেশে কেবল জরু-গরু, পোলাই না- শ্লা, প্রাণটাও যাক:
সহায়ক সূত্র:
১. হুজুগে বঙ্গাল: http://www.ali-mahmed.com/2018/06/blog-post_10.html
No comments:
Post a Comment