অতি ধার্মিক মহতরমাগণ কাপড়ে মুখ বেঁধে রাখেন। একবার আমার বাসায়
মেহমান আসলেন, স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ডাক্তার। এরা আবার আমার আত্মীয়ও। ভদ্রমহিলা
মুখ বেঁধে কথা বলছিলেন। কেউ বলে দেয়নি কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল আমি এই গ্রহের
সবচেয়ে দুষ্ট মানুষ! আমি চিন্তা করছিলাম এই মহতরমা খাওয়ার সময়ও কী তার মুখের কাপড় খুলবেন
না?
পর্দা প্রথার কথা যদি বলা হয় তাহলে আমাদের পোশাকগুলো কিছু ক্ষেত্র
ব্যতীত কোনও প্রকারেই অশালীন বলা চলে না। তারপরও যদি কেউ মনে করেন আলাদা চাদর
ব্যবহার করবেন বা স্কার্ফ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখবেন সেটা তার অভিরুচি। নানরা মাথা ঢেকে রাখেন এই নিয়ে খুব একটা
উচ্চবাচ্য হয় বলে তো শুনিনি।
এমনিতে ঢিলেঢালা বোরকার বিষয়ে অনেকে অন্য রকম যুক্তিও দেখান
পোশাক বিবর্ণ-মলিন-ময়লা থাকলে আলাদা করে পোশাক বদলাবার হুজ্জত নেই। বা কাউকে দামি- কমদামি পাশাক নিয়ে লজ্জিত হতে হয় না।
আমাদের দেশে এতোটা কাল মহিলারা শাড়ি-কামিজ পরে কাটিয়ে দিয়েছেন। সমস্যা
হয়নি। অল্প ক-বছর হলো দাবানলের মত বোরকা, মুখ ঢেকে রাখা ছড়িয়ে গেল। অনেক ক্ষেত্রে বোরকা নামের
সিল্ক টাইপের কাপড়ের যে জিনিসগুলো পরা হয় এতোটাই আঁটসাঁট যেন এটা গায়ে রেখে সেলাই
করা হয়! আবার পেছন দিকে দড়ির মত একটা জিনিস দিয়ে কষে বেঁধেও রাখা হয়। এতে করে
আবেদন বাড়ে না কমে এই বিতর্কে যেতে চাচ্ছি না?
আহা, গল্প-উপন্যাস লেখার একটা সুবিধা আছে একটা চরিত্র সৃষ্টি করে তার মুখ
দিয়ে অনেক কিছু বলিয়ে নেওয়া যায়। এখানে এই সুবিধাটুকু নেই বলে বিশদে গেলাম না। ...কে লিয়ে ইশারাই কাফি।
আমাদের পায়ের অদৃশ্য শেকলগুলোর মধ্যে সামাজিকতার শেকলও একটা। ওয়াল্লা,অমুকের ছাওয়াল এই কাজটা করছে বা তমুকের বেটি...। মুখ বেঁধে রাখার যে
অপব্যবহার হচ্ছে কে কোথায় কেন যাচ্ছে তা আঁচ করার কোনও যো নেই। মুখে কাপড় বেঁধে
বাপ-মার সামনে দিয়ে মেয়ে বখামি করবে টেরটি পাওয়ার কোনও উপায় নেই। কে ড্রাগ নিয়ে
যাচ্ছে কে তার খোঁজ রাখছে? এখন কেবল বাকী আছে মুখ ঢেকে কিলিং মিশনে অংশ
নেওয়া। সিসিটিভি ক্যমেরায় ছবি আসলেই কি- ওটা জরিনা নাকি ক্যাটরিনা বার করে কার সাধ্য।
কোরান শরীফে পর্দা প্রথার কথা যেটা আছে:
“হে নবী! তুমি তোমাদের স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও
বিশ্বাসী নারীদের বলো তারা যেন চাদরের কিছু অংশ নিজেদের মুখের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে,
ফলে তাদেরকে কেউ উত্যক্ত করবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সুরা আহজাব: ৫৯)
এই আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট যেটা বলা হচ্ছে:
“নবীপত্মী হযরত আয়েশা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি
বলেন, ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) নবী করীম (ছ) এর নিকট বলতেন, আপনার স্ত্রীদেরকে
পর্দায় রাখুন। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করিম (ছ) তা করেননি। নবী করিম (ছ.) এর
স্ত্রীরা প্রাকৃতিক প্রয়োজন রাতেই বাইরে গিয়ে সেরে আসতেন। তারপর একদা সাওদা বিনতে
যামআ (রা.) বাইরে গেলেন। তিনি দীর্ঘাঙ্গিনী স্ত্রীলোক ছিলেন। তাঁকে দেখেই ওমর (রা.) বললেন, হে স্ওদা! আমি
আপনাকে চিনে ফেলেছি।
পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার আকাঙ্ক্ষায়ই ওমর (রা.) ঐরূপ উক্তি করেছিলেন।
আয়েশা (রা.) বলেন, অতঃপর আল্লাহ তা’আলা পর্দার আয়াত নাযিল করলেন।“
(বোখারী শরীফ, কিতাবুল ইস্তি’যান, ৩৬৪২)
প্রেক্ষাপট তো জানা গেল। তারপরও কেউ যদি মনে করেন আক্ষরিক অর্থে এর পালন
করবেন তাহলে চাদর ব্যবহার করেন, আটকাচ্ছে কে! শরীরের সঙ্গে সিল্ক টাইপের কাপড় সেলাই করে ফেলার
প্রযোজন কী বা পেছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলার? বেশ তো, শরীর আপনার সেটা দড়ি দিয়ে
বাঁধবেন নাকি চাবুক দিয়ে সে আপনার অভিরুচি। ফ্যাশন-স্টাইল করলে কার কী বলার আছে! প্রয়োজনে 'বাড্ডি-চাড্ডি’ পরে ঘুরেন। কেবল দোহাই
লাগে, ধর্মের দোহাই দিয়েন না...।
No comments:
Post a Comment