আবেপ্রবণ জাতি হিসাবে আমাদের যেমন অন্য রকম সুনাম আছে তেমনই হুজুগে
জাতি হিসাবেও। একজনের বেল্ট ছিঁড়ে প্যান্ট নেমে গেছে ব্যস আর যায় কোথায় সবাই ঝাপিয়ে পড়ল। খুলে-খুলে
যায় এমন প্যান্ট না-পরলে চলছে না যে! সামান্য উবু হলেই যে পশ্চাদদেশ দেখা যাচ্ছে
তাতে কী আসে যায়। আহা, সমস্যা কেথায়- পশ্চাদেশে তো আর হলুদ ফুল লেগে নেই।
খেলা নিয়ে মাতামাতি হওয়া নিয়ে আমরা উল্লসিত হই। ভাল করে গোঁফ উঠেনি এমন পোলাপানরা বাপের নাম
বলতে তোতলায় কিন্তু তোতাপাখির মত মুখস্ত যখন বলে যায় উথাপ্পা, পিযুস চাওলাদার,
চিন্নাস্বামীর নাম তখন আমরা তিন উল্লাসে বলি, ‘পোলা তো না যেন আগুনের গোলা’। মিনিটে-মিনিটে রানের আপডেট এদের ঠোঁটে-ঠোঁটে!
কিন্তু এদের অনেকেই যে ক্রিকেট-জুয়ায় আসক্ত এই খবর কে রাখে। আমি এমন
প্রচুর লোকজনকে চিনি যাদের বাবা বেলা শেষে বাজারে যান শস্তায় সদাইপাতি কেনার জন্য
অথচ ছেলে ২০/২৫ লাখ টাকা ক্রিকেট-জুয়ায় হেরে বসে আছে। ফলাফল জমি বিক্রি।
ভারত আমাদেরকে ফেনসিডিল খাওয়া শিখিয়েছে, আইপিএলের নাম করে শিখিয়েছে জুয়া। একরাতে
আতশবাজি উড়ে হাজার-হাজার টাকার, এটাও ভারত থেকেই আসে!
এখন এদেরকে ফুটবল নিয়ে জুয়া খেলতে আটকাবে কে। গত বিশ্বকাপ থেকে
আমাদের দেশে এটা চালু হয়েছিল কে কত বড়ো পতাকা লাগাতে পারে। আমদের মিডিয়া ঘটা করে
এই সব ছাপিয়ে ছিল। গত বিশ্বকাপের সময় লিখেছিলাম:
“...প্রথম আলোতে খবরটা আসল মৌলভীবাজারে ৬০০ ফুট পতাকা উড়ানো হয়েছে। প্রথম শ্রেণীর পত্রিকায় এই খবরটা আসার পর অন্যরা বসে থাকবে বুঝি। দুদিনই পরই জানা গেল ৯০০ ফুট পতাকা উড়েছে, হবিগঞ্জের
নবীগঞ্জে।...
...আবার অনেক নির্বোধ
অতি চালাকি করতে গিয়ে অন্য দেশের পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা লাগিয়ে দিল। রোদ-বৃষ্টি-বিবর্ণতা, সকাল-সন্ধ্যা-রাত উপেক্ষা করে আমাদের পতাকা উড়তে থাকল।...” [১]
এবারও নিশ্চিত আমাদের মিডিয়া তাদের ক্যামেরায় শান দিচ্ছে এই অসুস্থ
প্রতিযোগীতার ঝকঝকে খবর ছাপার জন্য। মাত্র কাল পড়লাম পতাকা লাগাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট
হয়ে একজনের মৃত্যু। মিছিলের মত এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়বে। পত্রিকার দামী স্পেসে
কয়টার আর খবর আসবে!
ভিন দেশের পতাকা লাগবার এই অসভ্য প্রতিযোগীতা নিয়ে আমাদের কোনও বিকার
নেই। একজন বিশ হাত লম্বা পতাকা লাগিয়েছে অন্য জন বাদ যাবে বুঝি? এখন ত্রিশ হাত লম্বা পতাকা
না-লাগালে যে রাতে ওর ঘুমের সমস্যা হয়!
বিশেষ দিনে যখন আমাদের জাতীয় পতাকা লাগাবার প্রয়োজন হয় তখন এই ঢাউস
বাড়িগুলোতে পতাকা লাগাবার কোনও গোপন ইচ্ছা থাকে না। আহা, নীচের ভাড়াটিয়া দোকানদার
পতাকা তো লাগিয়েছে। তাও কী, লম্বা ঝাড়ুর হাতল উল্টো করে! লোকজন এখন অনেক চালাক
হয়েছে এরা ইয়া লম্বা ভিনদেশি পতাকা লাগিয়ে উপরে আমাদের ছোট্ট একটা পতাকা লাগিয়ে
দেয়। ভাবখানা এমন,
আমিও দেশপ্রেমিক বটে
বুদ্ধির অভাব নাই ঘটে।
No comments:
Post a Comment