Search

Saturday, December 10, 2011

হাসপাতাল পর্ব, আট: মাখন

আমার মাকে অপারেশনের পর পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। এনেসথেসিয়ার প্রভাবে তাঁর দীর্ঘ সময় ঘোরে থাকার কথা। কিন্তু আধ-ঘন্টার মধ্যেই তিনি তীব্র ছটফট শুরু করলেন। এতোটাই তীব্র যে অক্সিজেন মাস্ক, অসংখ্য নল সব খুলে ফেলে দেন, এমন।
আমার ধারণা ভুলও হতে পারে। এনেসথেটিস্ট ভদ্রলোক সম্ভবত বাড়তি ঝুঁকি নিতে চাননি, তাছাড়া ঝাড়া চার ঘন্টা অপারেশন চলেছে, অনেকটা সময় এখানেই চলে গেছে।

আমার বোন প্রাণপণ শক্তিতেও ধরে রাখতে পারছে না।
এই পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে সিজারের রোগীদেরকেও রাখা হয়। আমি কেমন করে যাই! আমি নিয়ম ভেঙ্গে, লজ্জার মাথা খেয়ে মার কাছে গেলাম। আমরা ভাই-বোন, দু-জন মিলে মাকে ধরে রাখতে পারছি না। কী অমানুষিক শক্তি চলে এসেছে তাঁর মধ্যে। ডিউটি ডাক্তার আমাকে জানালেন, অপারেশনের পর এমনটা হতে পারে। বুঝলাম, কিন্তু এই রোগিকে বিছানায় রাখার উপায় কি এই বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারলেন না। ভুলও হতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয়, এর সমাধান, এটা কোন জটিল বিষয় না।

চু...ভাইরা যদি জানেই অপারেশনের পর এমনটা হতেই পারে তাহলে রোগিকে আটকে রাখার জন্য কোনো-না-কোনো উপায় কেন বের করতে পারলেন না? বেডের সঙ্গে সফট বেল্ট টাইপের কিছু একটা ব্যবহার করলে, রোগিকে আটকে রাখার ব্যবস্থা করলে অন্তত রোগি নল-টল ছিঁড়ে ফেলার সুযোগ পাবে না। বিছানা থেকে গড়িয়ে পড়ে যাবে না। অপারেশনের রোগি যদি অক্সিজেন মাস্ক, ক্যানোলা সব খুলে নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে তাহলে এই রোগির গতি কী! চু...ভাইদের কাছে আমি জানতে চাই, গতি কী, বাহে!

যাই হোক, আমরা ভাই-বোন মিলেও আমার মাকে ধরে রাখতে পারছি না। তাঁর কষ্টে আমাদের চোখে পানি কিন্তু কখনও না-হেসেও পারছি না। কারণ তিনি চিমটি কাটছেন। এমন চিমটি আমাদের দু-জনের চামড়া খুলে আসবে এমন। সমানে বকাবকি করছেন। আমার এই বোনটা নিজেই একটা ডায়গনোসিস্ট সেন্টার চালায়। কিছু-কিছু বিষয়ে তার ধারণা আছে। হঠাৎ সে আবিষ্কার করে, সাকারের যে নলটা এটায় গিঁট দেয়া। এটা খুলে দেয়ার দায়িত্ব ছিল নার্সের।

কপাল আমাদের, আজ পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে যে নার্সের দায়িত্ব পড়েছে এ অসম্ভব বেতমিজ টাইপের এক মহিলা। নার্স হওয়ার কোনো যোগ্যতাই এর নাই। অন্য রোগিদেরকে দেখছি ধমকা-ধমকি করছে। অথচ এর গর্ভে সন্তান- পেট উঁচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছে! এমন সময়ে মানুষদের মন খানিকটা নরোম থাকে বলেই জানি অথচ এর আচরণ অবিকল মহিলা ড্রাকুলার মত!
আমার বোনটাকে আমি ইশারায় নিষেধ করছি কারণ একে এখন কিছু বললে এ আমাকে এখান থেকে বের হয়ে যেতে বললে আমার কিছুই করার থাকবে না কারণ আমি নিজেও অনয়িমের মধ্যে আছি! নিয়ম ধরলে আমি এখানে থাকতে পারি না। এখন আমাকে এখান থেকে চলে যেতে বললে তাহলে মার যে বিপুল ক্ষতি হয়ে যাবে- আমার বোন একা পারবে না।

একসময় আমি এই মহিলা ড্রাকুলাকে বললাম, রোগিকে এভাবে কতক্ষণ ধরে রাখা যাবে! একে ঘুম পাড়াবার ব্যবস্থা করেন। পেথিডিন দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
মহিলা ড্রাকুলা হাঁই তুলে বলল, দেয়া যাবে না, ফাইলে নোট নাই।
আমি অদম্য রাগ চেপে বললাম, ডিউটি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে দেখেন।

ডিউটি ডাক্তার পেথিডিন দিতে বলে দিলেন। আমি পেথিডিনের খোঁজে বের হলাম। রাত বাজে দুইটা। হাসপাতালের কাছেই চব্বিশ ঘন্টা যে দোকানটা খোলা থাকার কথা তা আজ বন্ধ- ঈদের আমেজ এখনও কাটেনি। আমি হাঁটছি, ভয়কে একপাশে সরিয়ে। সঙ্গে আমার সমস্ত টাকা-পয়সা। এলাকাটার খুব একটা সুখ্যাতি নাই বলেই জানি।
অতি দুর্বল একজন মানুষ আমি কিন্তু এই মুহূর্তে আমার সমস্ত শরীর কঠিন, চোয়াল শক্ত, চোখের দৃষ্টি স্থির। কেউ আমার টাকা ছিনিয়ে নিলে চাইলে আমি লড়ব, অন্তত যতক্ষণ আমার প্রাণ থাকবে। আমার যে উপায় নাই, পেথিডিনের জন্য আমার মা যে অপেক্ষায় আছেন...।

আমার অশেষ ভাগ্য, তেমন কিছুই ঘটল না। একটা দোকান খোলা পেয়ে যাই। কিন্তু খানিক ঝামেলা হয়ে গেল। দোকানদারকে আমি দোষ দেই না- পেথিডিন বলে কথা। মহিলা ড্রাকুলা যে কাগজে পেথিডিন লিখে দিয়েছেন ওটার মধ্যে সিল-ছাপ্পড় নাই।
আবারও হাসপাতালে ফিরে গিয়ে সংশোধন করে নিয়ে আসার সময় নাই। দোকানদারকে আমি কাতর হয়ে বললাম, ভাইরে, আমার মা খুব কষ্ট করছেন। দয়া করে দেন। আমি কথা দিচ্ছি সকালেই আমি আপনাকে ঠিক কাগজে লিখে এনে দেব। দোকানদার মানুষটা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি আছি ভয়ে ভয়ে। কারণ আমার মুখে কয়েকদিনের না-কামানো দাঁড়ি (দাঁড়ি না-কামানোর গল্পটা অন্য কখনও বলব)। আমাকে কি ড্রাগ-এডিক্টেটের মত লাগছে? সহৃদয় মানুষটা অবশ্য আমাকে পেথিডিন দিয়ে দিলেন। সকালে অবশ্য আমি ঠিকই যথার্থ কাগজ দিয়ে এসেছিলাম।

পেথিডিন দেয়ার পরও কোনো লাভ হলো না- যে কে সেই! সময় গড়ায়। আমার মধ্যে অস্থিরতা কাজ করে। আবারও তাঁকে পেথিডিন দেয়া হয়। তাঁর তীব্র ছটফটানি কমে না! এই পর্যায়ে এসে আমার মাথা আর কাজ করছিল না। এর মানে কী! এর ব্যাখ্যা কী! কেন এমনটা হচ্ছে? এর উত্তর আমি জানি না।

রাত গভীর হচ্ছিল। একসময় আমাকে এখান থেকে চলে আসতে হয়েছিল। পরে বোনটার কাছে শুনেছিলাম, ভোর সাড়ে-পাঁচটার পরে তাঁর তীব্র ছটফটানি কমে এসেছিল। খানিকটা শান্ত হয়ে ঘুমের ঘোরে ছিলেন। আমি বাইরে বেঞ্চিতে বসে ঝিমাই।
ঝিমাতে ঝিমাতে মাথায় যেটা ঘুরপাক খায়, ডাক্তাররা আমাদেরকে পইপই করে নিষেধ করে গেছেন। রোগির বিছানায় কেউ বসবেন না, ইনফেকশন ছড়াতে পারে। (হাসপাতালে ইনফেকশন কত প্রকারে ছড়ায় এটা আমি পরের লেখায় বিস্তারিত বলব) রোগির কাছে আমাদেরকে যেতে হতো জুতা বাইরে রেখে।
অথচ জুতা পরে একজনের পর একজন ডাক্তার ঢুকছেন। গ্লভস ছাড়াই রোগিকে ধরছেন, নিদেনপক্ষে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল কোনো লোশন দিয়ে হাতটা জীবানুমুক্ত করার চেষ্টাও করছেন না।

আজও এটা আমার মাথায় এটা ঘুরপাক খায়, আচ্ছা, ডাক্তারদের হাতে, জুতার তলায় কি থাকে, মাখন...?

*হাসপাতাল পর্ব, সাত: http://www.ali-mahmed.com/2011/12/blog-post_904.html 

**সবগুলো পর্ব: http://tinyurl.com/boya6xk  

1 comment:

Anonymous said...

It applies to all mobile gadgets, together with iOS and Android smartphones and tablets. The platform is simple to navigate, masses quick, and we love the stated mascot. The platform hosts instant-play games, which means find a way to|you probably can} entry each title straight from your browser with out having to obtain any software program. Red Dog has 우리카지노 an fascinating - you guessed it - purple canine mascot, and it’s received one of the better design solutions out there. The Promotions web page is continually refreshed, and as quickly a new new} slot recreation joins the fold, find a way to|you probably can} expect a neat promo for it. In phrases of design, the developers toned this one down but nonetheless retained that fiery vibe with vivid orange highlights.