Search

Tuesday, August 3, 2010

জিরো ক্রেডিট: ২

জিরো ক্রেডিট [১] নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। কাজটা কঠিন। যারা একবার ভিক্ষা করা শিখে যায়, বিনা পরিশ্রমে হাত বাড়ালেই টাকা পাওয়া যায়, এদের মন-শরীর সব সম্ভবত জমে যায়। এই ভুবন থেকে এদের ফিরিয়ে আনাটা কঠিন, অন্তত আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে!

আজ রাস্তায় যখন একজন বলেন, ভাল আছেন? আমি মানুষটাকে চেনার চেষ্টা করি। যথারীতি আমার দুর্বল স্মৃতিশক্তি আমার সঙ্গ ছেড়ে দেয়। আমি খানিকটা থমকে গিয়ে বলি, আপনি কি আমাকে চেনেন?
মানুষটা যখন বলেন, আপনে বাচ্চার মারে লাঠি দিছিলেন।
এখন আমার মনে পড়ে বাচ্চা কোলে এক অন্ধ মহিলাকে 'সাদা ছড়ি' দিয়েছিলাম। এই মহিলার নামটাও মনে পড়ে, মিনারা। তারচেয়ে বেশি মনে পড়ে অসম্ভব মায়া-মায়া চেহারার এই বাচ্চাটা আসার সময় হাত বাড়িয়ে আমার আঙ্গুল ধরে রেখেছিল। কেন, কে জানে?

বাচ্চাটা বেশ খানিকটা অসুস্থ, শ্বাস কষ্ট। যে ডাক্তার ভদ্রলোক [২] পরম মমতায় আমার পাঠানো মানুষগুলোকে দেখে দেন তিনি ঢাকা থেকে এখানে আসেন বৃহস্পতিবার বিকেলে, যান শুক্রবারে। এই বৃহস্পতিবারে বাচ্চাকে নিয়ে আসতে বলে দিলাম। বাচ্চার মা-ও যোগ করলেন, আমারেও এট্টু দেখাইলে ভালা হইত।
আমি বলি, আচ্ছা।

কী কাকতালীয়! এবার এদের পেয়ে যাই আমার বাসার কাছেই।

এদেরকে আসেন বলে আমি হাঁটা ধরি, যাক, দু-দন্ড কথা বলা যাবে।

মানুষটার নাম হাকিম মিয়া। আমি তাকে বলি, বাচ্চার মা অন্ধ ঠিকাছে তিনি ভিক্ষা করেন কিন্তু আপনি তো সুস্থ-সবল একজন মানুষ। বুঝলাম, আপনার স্ত্রী চোখে দেখেন না বলে আপনি তার সঙ্গে সঙ্গে থাকেন, বাচ্চাটাকে নিয়ে। এই বাচ্চাটাই একদিন বড়ো হবে, আপনাদের দেখাদেখি এও ভিক্ষা করা শিখবে। আপনি কি চান আপনার বাচ্চাকে কেউ ফকিরের বাচ্চা বলুক...। আমি টাকার ব্যবস্থা করে দিলে ব্যবসা করবেন?

যাই হোক, শেষঅবধি ঠিক হয়, এই মানুষটা স্টেশনে, গাড়িতে বাদাম বেচবেন। আমি আবারও বলি, ভেবে দেখেন, করবেন?
হাকিম বলেন, হ, করুম।
মিনারা এবার কঠিন গলায় বলেন, না, তুমি আমার দিকে তাকাইয়া কও। করবা, না হিলিঝিলি করবা?
ভাবনাটা তখনই আমার মাথায় আসে, আচ্ছা, হাকিম মিনারার দিকে তাকিয়ে বললেন কি না এটা মিনারা বুঝবেন কেমন করে? আমি এদের কথাবার্তা উপভোগ করতে থাকি।

অবশেষে ঠিক হয়, আজকের মধ্যেই বাদাম রাখার ঝুড়ি, পাল্লা-বাটখারা ইত্যাদি কেনা হবে। আগামিকাল থেকে হাকিম মিয়া বাদাম বিক্রি করা শুরু করবেন। 
গুড লাক, হাকিম মিয়া।

*আর্থিক সহায়তা: পড়শী ফাউন্ডেশন
**আপডেট, হাকিম মিয়া: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_06.html 

সহায়ক লিংক:
১. জিরো ক্রেডিট, ১: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_25.html 
২. ডাক্তার: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_06.html

2 comments:

সুব্রত said...

পড়শী ফাউন্ডেশন...ঢাকায় এটার কোন শাখা আছে?

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

না, ঢাকায় এর কোন শাখা নেই।

পড়শী ফাউন্ডেশন, শুনলে গালভরা শোনায় আসলে তেমন কিছু না। এটার পেছনে আছেন সাদিক আলম নামের অসাধারণ একজন মানুষ।
আমি একেকটা প্রজেক্ট করি আর তোতা পাখির মতো বলি, সাদিক টাকা দে। ইনি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে টাকা যোগাড় করেন।
একটা কথা আপনাকে বলি, কাউকে বলবেন না যেন, সাদিক নামের মানুষটা আমার এই সব পাগলামির কারণে ভিক্ষার ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। মানুষটার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। @সুব্রত