এরশাদের সময়, খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লিখতে পেরেছি, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকতে পেরেছি আওয়ামী শাসনামলে এ ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! যেদিন শহিদুল আলমকে পুলিশ নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল, কোর্টে 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Sunday, May 9, 2010
পুলিশ লিখবে কবিতা
হা ঈশ্বর, এই ছবিটা আমি কেন দেখলাম! নিজেকে এখন পোকা-পোকা লাগছে! কখনও কখনও মনে হয় এমন, ইচ্ছামৃত্যুর ব্যবস্থা থাকলে বেশ হতো।
দূর্ভাগ্য আমার পিছু ছাড়ে না। আপাতত আমি পত্রিকা পড়া বাদ দিয়েছিলাম। ফি রোজ ৮০০ পয়সা খরচ করে এই সব আবর্জনা কেনার কোন মানে হয় না। একজন অন্যজনের অন্তর্বাস ধরে টানাটানি করছেন, কোন নেতা কোন রঙের কাপড় [১] পরে সংসদে এসেছেন এই সব খবর দিয়ে আমি কী করব?
মুক্তিযুদ্ধের অসম্ভব বিখ্যাত ছবি ছাপিয়ে লিখে দেবে সংগৃহিত। এই জন্য দুঃখ প্রকাশ দূরের কথা, চোট্টামি শুরু করে দেবে [২]। এদের কান্ডকারখানা দেখে আমার উপর চাপ পড়ে। অন্য সব লেখা ছেড়ে কেবল এদের নিয়েই পড়ে থাকতে হয়!
আমাদের দেশের স্বপ্নবাজদের খবরের জন্য মুখিয়ে থেকে লাভ কী, এদের খবর ছাপাবার জায়গা কোথায় পত্রিকাগুলোতে? মুক্তিযুদ্ধে একজন ট্যাংক নিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন [৩], কে বলবে এঁর কথা? ওঁর খবর জানার জন্য যে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে? ডিসেম্বর মাস ব্যতীত আমাদের যে আবার মুক্তিযুদ্ধের জোশ আসে না। কিন্তু ডিসেম্বর, এতো সময় কোথায় আমার? কে দেখেছে নেক্সট সামার, নেক্সট ডিসেম্বর! সেই কানসাটের আনোয়ারের মা এখন কেমন আছেন, কে জানাবে এটা আমাকে?
আহা, বিজ্ঞাপনের নামে মাখন ছড়ানো গ্রামীন ফোন বিপদে না পড়লে অন্য ফোন কোম্পানিদের পক্ষে কথা বলার আগ্রহ কই [৪]!
তবে এদের শক্তি দেখে আমি মুগ্ধ হই- আমি ব্যতীত গোটা দেশের লোকজনের শপথের [৫] কাজটা সেরে ফেলেছেন। সবাই জন্য থাকুক শপথ, আমার জন্য না-হয় কুপথ!
আচ্ছা, এই দেশে কালো টাকার মালিক ব্যতীত পত্রিকা বের হওয়ার কোন সুযোগ নাই, না? সাংবাদিকরা মিলে পারেন না একটা পত্রিকা বের করতে? অনুমান করি, আমাদের দেশে এটা সম্ভব হবে না। কারণ অনেক। বিস্তারিত বলে মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে আসি না।
গতকাল আমাকে মিডল-ইস্ট থেকে একজন ফোনে বলছিলেন, "...ভাই, দেশে আসতে ইচ্ছা করে না। আজ ভাত খেতে পারিনি..."।
কারণটা জিজ্ঞেস করায় তিনি যা বলেছিলেন, ওখানে বাংলাদেশের কোন একটা চ্যানেলে তিনি এই কোপাবার দৃশ্যটা দেখেছেন। আমার কাছে তাঁর প্রশ্নটা ছিল, "একজন যে অন্যজনকে কোপাচ্ছে এরা তো এই কলেজেই একসঙ্গে পড়ে, একসঙ্গে ভাত খায়...প্রশাসন কি করে..."।
আমি তখনও বুঝতে পারিনি আসলে তিনি কোন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলছেন। তাঁর বিশদ বর্ণনা শুনে অনেক ঝামেলা করে এই ছবিটা দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি। একটা সভ্য দেশে এটা কী করে সম্ভব? এরা কোন দল করে, কোথায় পড়ে এটা আমার আলোচ্য বিষয় না। কেমন করে এটা সম্ভব?
অনেকে বলবেন, অতীতে কি এমন ঘটনা আর ঘটেনি? ঘটেছে। হূমায়ুন আজাদকেও কোপানো হয়েছে। কিন্তু এমন দিনের আলোয় প্রকাশ্যে? এতেও অনেকে বলবেন, প্রকাশ্যে এমন কোপাকোপি কি হয়নি? হয়েছে।
কিন্তু আমাকে যেটা হতভম্ব করে দিচ্ছে, সেটা হচ্ছে, ছবিটা একটু ভালো করে লক্ষ করে দেখলে এর ভয়াবহতা ফুটে উঠে। কেমন করে একজন জাপটে ধরেছে, একজন হাত আটকে রেখেছে, অন্য জন কোপ দিচ্ছে। এই দৃশ্যের কাছে হিন্দি সিনেমা নস্যি! এই দৃশ্যটা ক্যামেরাবন্দী করা গেছে, এমন কী ইলেকট্রনিক মিডিয়ারও রেকর্ড করার সুযোগ হয়েছে!
আমাদের সরকারী বাহানীর লোকজনরা তখন কোথায় ছিলেন? আমাদের এলিট ফোর্স র্যাব, এরা? এই ছেলেগুলোকে কেন তখনই থামানো হলো না, প্রয়োজনে গুলি করে মেরে ফেলে। এই দানবদের থামাবার জন্য প্রয়োজনে গুলি করে মেরে ফেললে এ নিয়ে আমার চোখের জল ফেলার অবকাশ কই।
সরকারী বাহানীর লোকজনরা হয়তো বলবেন, যারা প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত এরা অনেকে এখানেই থাকেন, সঙ্গে সঙ্গে খবর পেয়ে যান, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি বিশেষ বাহিনীর চীফ না, এটা আমার দায়িত্ব না কেমন করে এরা কি করবেন এটা নিয়ে গবেষণা করা। কিন্তু এটা জটিল কিছু না। পরিচয় গোপন করে এই কলেজের ক্যান্টিনের দায়িত্বে থাকবেন বিশেষ বাহিনীর লোকজনরা, প্রয়োজনে হলেই বিশেষ লোগো সম্বলিত জ্যাকেট পরে ঝাপিয়ে পড়বেন। এরা সাদা পোশাকে এই কলেজে বুটওয়ালা, বাদামওয়ালা, মুচির কাজ করতে থাকা লোকজনের ভান ধরে থাকবেন। আমার এতো জেনে কাজ নেই, আমি এই সব দৃশ্য দেখতে চাই না, ব্যস।
আমার তো মনে হয় যেসব ফটো-সাংবাদিক এই সব ছবি উঠান এদের হাতে ক্যামেরার জায়গায় অস্ত্র তুলে দিলেই হয়। অস্ত্রটা ব্যবহার করবেন, কেবল অন্য ভঙ্গিতে।
আমার পরামর্শ, রহমান আরিফদের মতো মানুষদের নিয়ে বিশেষ সরাকারী বাহিনী গঠন করা হোক। কেবল এদের হাতে থাকবে ক্যামেরা নামের অস্ত্রের বদলে থাকবে সত্যিকারের অস্ত্র।
আর আমাদের চৌকশ পুলিশ বাহিনীর লোকজনদের আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হোক। এই যেমন হালদায় মা-মাছ কবে ডিম পাড়বে, বা এইবার বেগুন গাছে কি ধরনের পোকার আক্রমনের সম্ভাবনা, এইসব দুধর্র্ষ কাজগুলো। এই সব করে করে এরা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বেন তখন নদীর পাড়ে হাওয়া খাবেন, কবিতা লিখবেন। সেই কবিতা মহান সংসদে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে সংসদ সদস্য নূর সাহেব আবেগঘন গলায় পাঠ করবেন। আমরা টিভিতে হাঁ করে শুনব।
সহায়ক লিংক:
১. মুক্ত-চিন্তার দৈনিক: http://www.ali-mahmed.com/2009/01/blog-post_26.html
২. চোট্টামি: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_08.html
৩. ট্যাংক-মানব: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_03.html
৪. ডিজিটাল গ্রে-মেটার: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_21.html
৫. শপথ: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_19.html
*ছবি ঋণ: রহমান আরিফ, প্রথম আলো
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
2 comments:
Thumbs up
:) @Rohan
Post a Comment