২১ তারিখের বইমেলার মানবস্রোতে হাঁপিয়ে গিয়েছিলাম। অতি দ্রুত এখান থেকে বেরুতে পারলে বেঁচে যাই। আহা, আমি বেরুতে চাইলেই তো হবে না, মানবস্রোত আমায় বেরুতে দিলে তো!
তাছাড়া আমায় ফিরতে হবে কাফরুল, স্কুটারে ফেরা যাবে না। আমি নিশ্চিত, আটকে দেবে। আবারও এলিয়েন ওরফে আর্মিদের মুখোমুখি হতে চাচ্ছিলাম না। গতবার এই নিয়ে কম হেনেস্তা হতে হয়নি।
হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় থামতে বাধ্য হই, কাশেম প্রকাশনীর কাছে। এই প্রকাশনীর সবগুলো বইই একজন লেখকের! এ পর্যন্ত ওনার ৯৪টি বই বের হয়েছে। লেখক এবং প্রকাশক একই ব্যক্তি। আমি বইগুলোর নাম পড়ার চেষ্টা করি, বোরকাওয়ালীর প্রেম, প্রেমে এতো জ্বালা কেন?, প্রেম একটি ফুটন্ত গোলাপ, ইত্যাদি। আমি ওই লেখকের জরায়ুর জন্য বেদনা বোধ করে ওখান থেকে সরে আসি।
আমার বন্ধুরা বুদ্ধি দিল বাসে করে চলে যেতে, এলিয়েন-আর্মিরা নাকি বাস আটকায় না (আহা, বাস আটকালে নিজেদের চলাফেরায় খুব সমস্যা হয় বুঝি!)। ৪ নাম্বার বাসে করে গেলেই সহজেই চলে যেতে পারব। আমি চোখে অন্ধকার দেখি। বাস আমাকে কোত্থেকে কোথায় নামিয়ে দিয়ে ভুস করে চলে যাবে, তখন আমার গতি কী? পারতপক্ষে সঙ্গে কেউ না-থাকলে আমি বাসে উঠি না।
এরা আমাকে পানির মত সব বুঝিয়ে দিলেন, যথারীতি আমি কিছুই বুঝলাম না। রাসেল, মাশা এঁরা আমার সম্বন্ধে খানিকটা ওয়াকিবহাল, এঁদের মনটাও নরোম। এরা বললেন, 'ঘটনা বুজছি আর বলতে হবে না। আসেন শাহবাগ যাই, চা-চু খাই। ওখান থেকে আপনাকে বাসে উঠিয়ে দেব'।
আমি মহা আনন্দে এদের পিছুপিছু হাঁটতে থাকি, এরা হাঁটলে আমি হাঁটি, থামলে থামি। ফাঁকতালে কথা, ভাবনা চালাচালি হতে থাকে। বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা খাওয়া, সিগারেট টানার সঙ্গে অন্য আনন্দের তুলনা কোথায়?
অসম্ভব ব্যস্ত শাহবাগ চৌরাস্তা পেরুতে হবে। এদের সঙ্গে আমিও অপেক্ষা করি। এরা হাঁটা ধরলে আমিও হাঁটা ধরি, থামলে থামি। কোথাও একটা ভজকট হয়ে যায়, মাঝ রাস্তায় বেকুবের মত দাঁড়িয়ে আছি। আরেকটু হলেই স্কুটার গায়ের উপর উঠে আসত। রাসেলের চিল চিৎকার, 'আপনি নিজেও মরবেন, সাথে আমারেও মারবেন'।
রাস্তা পার হওয়ার পর রাসেল চোখ লাল করে রাগে লাফাতে থাকেন, 'আচ্ছা, বিষয়টা কী! হে, বিষয়টা কী! আর একটু হইলেই তো কাম সারছিল! বাড়িত থিক্যা কি বিদায় নিয়া আইসেন?'
আমি মুখে বোকা বোকা হাসি ঝুলিয়ে রাখি। কি বলব, এই প্রশ্নের কী উত্তর হয়!
রাসেলের রাগ কমে না, 'এইটা আপনের মফস্বল না, এইটা ঢাকা শহর। এইখানে মানুষকে প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটতে হয়'। নইলে সব শেষ'।
আমি উদাস হয়ে সিগারেট টানতে টানতে বলি, 'তাই! মন্দ কী, মাঝে মাঝে জীবনটা বড়ো ক্লান্তিকর মনে হয়'।
রাসেল নামের মানুষটা একসময় হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু রাগ কমে না, 'আপনে আর ঢাকা আইসেন না। ঢাকা শহর আপনের জন্য না। আমি লেইখা সই কইরা দিব, আপনে ঢাকা শহরে চলাচলের জন্য অনুপযুক্ত-অচল'!
তিনি এই অচল মালকে মাশার কাছে হস্তান্তর করে বিদায় নেন। আমি যেদিকে যাব মাশা যাবে এর উল্টোদিকে। বাসের জন্য অপেক্ষার একশেষ! ৪ নাম্বার বাস তো আর আসে না। সব ৩ নাম্বার। আজ ৩ নাম্বাররা সব দলে-দলে বেরিয়ে পড়েছে! মাশা হচ্ছে একটা চলমান এনসাইক্লোপিডিয়া- এ কেমন করে সব মুখস্ত করে বসে থাকে আমি ভেবে ভেবে সারা। দুনিয়ার তাবৎ বই পড়ে বসে আছে, জিজ্ঞেস করামাত্র গড়গড় করে বলে দেয়, এমন।
তো মাশা আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে, ৩ নাম্বার বাসে গিয়ে ফার্মগেটে নেমে কেমন কেমন করে পৌঁছা যাবে। আমি হুঁ-হুঁ, ও আচ্ছা-আচ্ছা করছি কিন্তু এর বুঝতে বাকী থাকে না, এটা পন্ডশ্রম। মাশা নামের দয়াবান মানুষটা বলেন, 'চলেন, ফার্মগেট পর্যন্ত আমিও যাই'।
তাছাড়া আমায় ফিরতে হবে কাফরুল, স্কুটারে ফেরা যাবে না। আমি নিশ্চিত, আটকে দেবে। আবারও এলিয়েন ওরফে আর্মিদের মুখোমুখি হতে চাচ্ছিলাম না। গতবার এই নিয়ে কম হেনেস্তা হতে হয়নি।
হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় থামতে বাধ্য হই, কাশেম প্রকাশনীর কাছে। এই প্রকাশনীর সবগুলো বইই একজন লেখকের! এ পর্যন্ত ওনার ৯৪টি বই বের হয়েছে। লেখক এবং প্রকাশক একই ব্যক্তি। আমি বইগুলোর নাম পড়ার চেষ্টা করি, বোরকাওয়ালীর প্রেম, প্রেমে এতো জ্বালা কেন?, প্রেম একটি ফুটন্ত গোলাপ, ইত্যাদি। আমি ওই লেখকের জরায়ুর জন্য বেদনা বোধ করে ওখান থেকে সরে আসি।
আমার বন্ধুরা বুদ্ধি দিল বাসে করে চলে যেতে, এলিয়েন-আর্মিরা নাকি বাস আটকায় না (আহা, বাস আটকালে নিজেদের চলাফেরায় খুব সমস্যা হয় বুঝি!)। ৪ নাম্বার বাসে করে গেলেই সহজেই চলে যেতে পারব। আমি চোখে অন্ধকার দেখি। বাস আমাকে কোত্থেকে কোথায় নামিয়ে দিয়ে ভুস করে চলে যাবে, তখন আমার গতি কী? পারতপক্ষে সঙ্গে কেউ না-থাকলে আমি বাসে উঠি না।
এরা আমাকে পানির মত সব বুঝিয়ে দিলেন, যথারীতি আমি কিছুই বুঝলাম না। রাসেল, মাশা এঁরা আমার সম্বন্ধে খানিকটা ওয়াকিবহাল, এঁদের মনটাও নরোম। এরা বললেন, 'ঘটনা বুজছি আর বলতে হবে না। আসেন শাহবাগ যাই, চা-চু খাই। ওখান থেকে আপনাকে বাসে উঠিয়ে দেব'।
আমি মহা আনন্দে এদের পিছুপিছু হাঁটতে থাকি, এরা হাঁটলে আমি হাঁটি, থামলে থামি। ফাঁকতালে কথা, ভাবনা চালাচালি হতে থাকে। বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা খাওয়া, সিগারেট টানার সঙ্গে অন্য আনন্দের তুলনা কোথায়?
অসম্ভব ব্যস্ত শাহবাগ চৌরাস্তা পেরুতে হবে। এদের সঙ্গে আমিও অপেক্ষা করি। এরা হাঁটা ধরলে আমিও হাঁটা ধরি, থামলে থামি। কোথাও একটা ভজকট হয়ে যায়, মাঝ রাস্তায় বেকুবের মত দাঁড়িয়ে আছি। আরেকটু হলেই স্কুটার গায়ের উপর উঠে আসত। রাসেলের চিল চিৎকার, 'আপনি নিজেও মরবেন, সাথে আমারেও মারবেন'।
রাস্তা পার হওয়ার পর রাসেল চোখ লাল করে রাগে লাফাতে থাকেন, 'আচ্ছা, বিষয়টা কী! হে, বিষয়টা কী! আর একটু হইলেই তো কাম সারছিল! বাড়িত থিক্যা কি বিদায় নিয়া আইসেন?'
আমি মুখে বোকা বোকা হাসি ঝুলিয়ে রাখি। কি বলব, এই প্রশ্নের কী উত্তর হয়!
রাসেলের রাগ কমে না, 'এইটা আপনের মফস্বল না, এইটা ঢাকা শহর। এইখানে মানুষকে প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটতে হয়'। নইলে সব শেষ'।
আমি উদাস হয়ে সিগারেট টানতে টানতে বলি, 'তাই! মন্দ কী, মাঝে মাঝে জীবনটা বড়ো ক্লান্তিকর মনে হয়'।
রাসেল নামের মানুষটা একসময় হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু রাগ কমে না, 'আপনে আর ঢাকা আইসেন না। ঢাকা শহর আপনের জন্য না। আমি লেইখা সই কইরা দিব, আপনে ঢাকা শহরে চলাচলের জন্য অনুপযুক্ত-অচল'!
তিনি এই অচল মালকে মাশার কাছে হস্তান্তর করে বিদায় নেন। আমি যেদিকে যাব মাশা যাবে এর উল্টোদিকে। বাসের জন্য অপেক্ষার একশেষ! ৪ নাম্বার বাস তো আর আসে না। সব ৩ নাম্বার। আজ ৩ নাম্বাররা সব দলে-দলে বেরিয়ে পড়েছে! মাশা হচ্ছে একটা চলমান এনসাইক্লোপিডিয়া- এ কেমন করে সব মুখস্ত করে বসে থাকে আমি ভেবে ভেবে সারা। দুনিয়ার তাবৎ বই পড়ে বসে আছে, জিজ্ঞেস করামাত্র গড়গড় করে বলে দেয়, এমন।
তো মাশা আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে, ৩ নাম্বার বাসে গিয়ে ফার্মগেটে নেমে কেমন কেমন করে পৌঁছা যাবে। আমি হুঁ-হুঁ, ও আচ্ছা-আচ্ছা করছি কিন্তু এর বুঝতে বাকী থাকে না, এটা পন্ডশ্রম। মাশা নামের দয়াবান মানুষটা বলেন, 'চলেন, ফার্মগেট পর্যন্ত আমিও যাই'।
অবশেষে ফার্মগেটে ৪ নাম্বার বাসে উঠিয়ে কন্ডাকটরকে বলে দেন, 'মামা, অসুস্থ মানুষ একটু কাফরুল নামায়া দিয়েন'। মানুষটা বিদায় নেন।
বাসে উঠে আমি গভীর শ্বাস ফেলে বলি, প্যারাডাইস লস্ট। বন ভয়েজ, বইমেলা। আগামীতে তোমার সঙ্গে দেখা হবে এ আশা ক্ষীণ!
বাসে উঠে আমি গভীর শ্বাস ফেলে বলি, প্যারাডাইস লস্ট। বন ভয়েজ, বইমেলা। আগামীতে তোমার সঙ্গে দেখা হবে এ আশা ক্ষীণ!
No comments:
Post a Comment