*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Sunday, March 14, 2010
শৈশব!
নঈম সাহেব দোকানে বসে খুশি মনে পান চিবুচ্ছেন। এ ক-দিন ওঁর মনে ভারী আনন্দ! কনফেকশনারীর ব্যবসাটা এখন জমজমাট। দু’জন মিলেও বিক্রি করে কূল পাওয়া যাচ্ছে না। পাশেই বেশ কটা বাচ্চাদের স্কুল চালু হয়েছে। টিফিন টাইমে বাচ্চারা সব সাফ করে দিচ্ছে। পেটিস, সিঙ্গারা এইসব আবার বিকেলে কিনে আনতে হচ্ছে। ওদিন বেশ ক’টা সিঙ্গারা থেঁতলে গিয়েছিল, কাঁচের বাক্সের এক কোনায় পড়ে ছিল।
ছোট একটা ছেলে কী চমৎকার করেই না বলল: কাকু, একটা সিঙ্গারা দেন তো।
নাঈম সাহেব লজ্জিত হয়ে বলেছিলেন: সিঙ্গারা তো নাই খোকা।
ওই তো, দেন না, কাকু।
ওগুলো ভেঙ্গে গেছে, খাওয়া যাবে না যে।
কিছু হবে না। দেন না, খুব খিদে লেগেছে।
তিনি সীমাহীন বিব্রত হয়ে যতটুকু সম্ভব টিপেটুপে ঠিক করে দিলেন। মুখ মুছে ছেলেটি টাকা দিলে হাঁ হাঁ করে উঠেছিলেন: ওকি, টাকা কেন।
কাকু সিঙ্গারার দাম নিবেন তো।
না-না, ঠিক আছে। ওগুলো এমনিতেই ফেলে দিতাম।
ফেলে দিলে অন্য কথা। আমি খেয়েছি, টাকা দিতে হবে না বুঝি।
ছি-ছি, টাকা লাগবে না।
উহুঁ, মা বলেন কিছু খেলে টাকা দিতে হয়।
তোমার মা বলেছেন বুঝি, ঠিক বলেছেন। আচ্ছা তুমি অন্য দিন দিয়ো।
উহুঁ-উহুঁ, আজ নিতে হবে।
নঈম সাহেব অপার বিষ্ময়ে শিশুটির দিকে তাকিয়েছিলেন। ওঁর চোখ থেকে মুগ্ধতা চুঁইয়ে পড়ছিল। এখনকার শিশুরা কী সৎ, অমায়িকই না হচ্ছে। ওঁর ছেলেবেলার কথা মনে করে হাসলেন। তখন ফোর-ফাইভে পড়েন। এক দোকান থেকে আধসের জিলাপী কিনলেন।
দোকানি বলেছিল: খোকা বাবু পয়সা দেও।
তিনি ডাহা মিথ্যা বললেন, কি বলেন, পয়সা না দিলাম!
হই হই-এ লোক জমে গেল। সবাই দোকানিকে বকা দিল। জলিল মিঞা তোমার কী মাথা খারাপ। এই দুধের শিশু মিথ্যা বলবে, এরা হল ফেরেশতার জাত।
অন্য একজন বলল, জলিল, তোমাকে কতদিন নিষেধ করেছি দিনের বেলা গাঁজায় টান দেবে না।
জলিল মিঞা অসহ্য রাগে লাফিয়ে উঠেছিলেন: তাহলে-তাহলে, আমি কি মিথ্যা বলছি। হুলস্থূল কান্ড, বয়স্ক একলোক হাত উঠিয়ে সবাইকে থামতে বললেন, এই ছেলে, যাও, বাড়ি যাও। জলিল, কত হয়েছে, দাম আমি দেব।
জলিল মিঞা মুখ লম্বা করে বললেন: দাম লাগবো না।
এই ব্যাটা, দাম লাগবো না এটা এখন বলছিস কেন। এতক্ষণ তো আকাশ ফাটিয়ে ফেলছিলি।
নঈম সাহেব গুটিগুটি পায়ে সরে পড়ছিলেন। জলিল মিঞা পেছন থেকে চেঁচাতে থাকল: এ্যাই, এ্যাই পুলা, জিলাপীর পোটলা ফালাইয়া কই যাও।
নঈম সাহেব মহা সুখে জিলাপী চিবুতে চিবুতে বাবার সামনে পড়ে গেলেন। মুখ রসে মাখামাখি। বাবাকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন প্রায়। একটুর জন্যে ধরা পড়ে গেলেন!
বাবা শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, কি খাচ্ছিস?
জিলাপী।
পেলি কোথায়?
নঈম সাহেব ঝড়ের গতিতে চিন্তা করছিলেন। বাসার কেউ দিয়েছে এটা বলে পার পাওয়া যাবে না, সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যাবেন। মাথায় যা এল তাই বললেন: একজন দিল।
বাবার এবার হিম গলা, এমনি দিল?
নঈম সাহেব বুঝতে পারছিলেন ফাঁদে পা দিচ্ছেন। তখন আর ফেরার উপায় নেই।
জ্বি।
হুম, যে দিল সে তোর কি লাগে, মামা-ফুফা-চাচা? বল, চুপ করে আছিস কেন?
এই মুহূর্তে আকাশের সমস্ত তারা ঝপ করে নঈম সাহেবের চোখে নেমে এসেছে। একেকটা তারার কী রঙের ছঁটা! জাড়িয়ে জড়িয়ে বললেন: জ্বি, এক দোকানী দিল। আমি নিতে চাই নি, জোর করে দিয়ে দিল। বলল, না নিলে খুব রাগ করবে।
বাবা চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, পয়সা না নিয়েই দিল?
জ্বি, বলল, না নিলে রাগ করবে।
আহা, তাহলে তো নিতেই হয় নইলে রাগ করবে যে। আয় আমিও আধ মন মাগনা জিলাপী নিয়ে আসি। চ-ল!
বাবা ঘাড় ধরে প্রায় উড়িয়ে নিয়ে চললেন। এখন কোন সংশয় নেই, পেটের জিলাপীগুলো বাবা বের করে ফেলবেন। এজন্য বাবাকে খানিকটা ফ্রিহ্যান্ড এক্সসারসাইজ করতে হবে। মাদ্রাসায় যা দোয়া-দরুদ শিখেছিলেন সব কয়েকবার রিভিশন দিয়ে ফেললেন। জলিল মিয়া নামের লোকটা অসম্ভব শান্ত গলায় বলেছিলেন: জ্বি, আমি দিছি।
বাবার তখন চন্ডাল রাগ: কেন, কেন দিলেন!
জলিল মিয়া বাবার চোখে চোখ রেখে বললেন, ছেলেপুলে নাই তো, মায়ায় পইড়া দিছি। ভুল হইছে, মাফ কইর্যা দেন।
ঠিক তখনি রোগামত কাল-কাল একটা ছেলে, দোকানের ভেতর থেকে উচুঁ গলায় বলল: বাজান, চুলা নিভাই ফেলমু।
জলিল মিয়ার রক্তশূন্য মুখ। বাবা হতভম্ব। টুঁ-শব্দও করলেন না। ঘোরলাগা ভঙ্গিতে জলিল মিঞাকে হাত বাড়িয়ে ছুঁলেন। বিড়বিড় করে কীসব বলতে থাকলেন।
একটা ভিক্ষুক গলা ফাটিয়ে ভিক্ষা চাচ্ছে। নঈম সাহেব কড়া কথা বলতে গিয়েও বললেন না। বয়স্ক অন্ধ একটা লোক, সঙ্গে মৌ’র বয়সী একটা মেয়ে। এই মেয়েটা ঠোঁট কী ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। নঈম সাহেবের চোখ ভিজে এল, কী অনিশ্চিত একটা জীবন! এই শিশুটি অন্ধ লোকটার হাত ধরে কোথায় কোথায় ঘুরবে, কতদিন ঘুরবে? পাঁচটা টাকা দিলেন। মেয়েটি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। সমস্ত মুখ কৃতজ্ঞতায় ভিজে আছে। আশ্চর্য, এর জীবনরেখার সীমা এই! মাত্র পাঁচ টাকা পেয়ে এ অন্য জগতের আনন্দ অনুভব করছে। মেয়েটা ভিক্ষে করতে বেরিয়েছে সম্ভবত খুব বেশিদিন হয় নি। বিস্মিত হওয়ার ক্ষমতা এর প্রবল।
নঈম সাহেব এইসব নিয়ে ভাবার সুযোগ পেলেন না। টিফিন টাইম হয়ে গেছে। শিশুরা দল বেঁধে কলকল করে ঢুকছে। একা হাঁপিয়ে উঠলেন। দোকানের ছেলেটা এত দেরি করছে আজ। কল্লোলকে ঢুকতে দেখে চোখ কপালে তুলে বললেন, ‘তুই।’
কল্লোল তেমন দোকানে আসে না। কল্লোল হাসিমুখে বলল, ‘কি বাবা, ঝামেলা। এরা দেখি বাজার জমিয়ে ফেলেছে।’
‘ছি, এইসব বলতে নেই। এরা খরিদ্দার, লক্ষী। হোক শিশু, আমরা যে খাবারটা খাই, পোশাকটা গায়ে দেই এতে এদের অবদান কম না।’
‘মাইগড, বাবা, তুমি দেখি একেবারে পাকা ব্যবসায়ীর মত কথা বলছ।’
‘তোদের ধারণা, ব্যবসায়ী মানেই অবজ্ঞার বিষয়, এটা ঠিক না। ব্যবসায়ী মানেই বুদ্ধিমান। এমন না হলে কেউ পিচ্ছিল টাকা আটকাতে পারে।’
‘সরি, বাবা। তুমি খালি কথার উল্টা অর্থ কর। ইয়ে বাবা, আমি তোমাকে সাহায্য করি?’
‘পাগল, তুই সাহায্য করবি, তুই! এক গ্লাস পানি ঢেলে খেতে পারিস না। এইসব পারবি না।’
‘ফুঃ, এটা কোন কাজ, শিশুরাও পারে।’
অল্পক্ষণেই দেখা গেল শিশুরা নঈম সাহেবকে পাত্তা দিচ্ছে না। যা বলার কল্লোলকেই বলছে, আংকেল এটা দেন, ওটা দেন, পানি দেন। একজন তো বলল, আংকেল দেখেন তো মুখে খাবার লেগে আছে কিনা।
কল্লোলের কী আনন্দই না হচ্ছে, বাবাকে খানিকটা সাহায্য করতে পেরে।
‘বাবা এখন থেকে আমি কিন্তু সময় পেলেই আসব।’
নঈম সাহেব আঁতকে উঠলেন, ‘না-না, তোর পড়াশোনার ক্ষতি হবে।’ কল্লোল কথা বাড়াল না। প্রায় রোজই দোকানে আসতে থাকল।
*পিতা ও পুত্র
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment