Search

Monday, April 25, 2022

আহা জীবন!

লেখক: Shawkat Ali

"১০০ মিলিয়ন শুক্রাণুর মধ্যে একটিমাত্র শুক্রাণু মানব ভ্রুণ জন্ম দিয়ে থাকে।

সাধারণত নয় মাস একজন মা শিশুকে গর্ভে ধারণ করেন। একটি ভ্রূণ থেকে পূর্ণাঙ্গ মানবশিশু হয়ে গর্ভে বেড়ে ওঠা একটি বিস্ময়কর ব্যাপার।
১. জীবনলাভের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ভ্রূণটি গর্ভে ঘোরাঘুরি করতে থাকে।
২. ৬ সপ্তাহের মাথায় ক্রমশ বিকাশমান শিশুর হৃৎপিণ্ড রক্ত পাম্প করা শুরু করে।
৩. গর্ভধারণের ৮ সপ্তাহের মধ্যে শিশুর ছোট ছোট চোখ ও কান তৈরি হতে থাকে। এই সময় শিশুটি দুই সেন্টিমিটার লম্বা হয়। মুখও তৈরি হতে শুরু করে এই সময়।
৪. শিশুর লিঙ্গ তৈরি হতে থাকে গর্ভধারণের ৯ সপ্তাহের মধ্যে। ১২ সপ্তাহ থেকেই ধীরে ধীরে বোঝা যায় শিশুটি ছেলে হবে, নাকি মেয়ে।
৫. ১১ সপ্তাহের মাথায় শিশুর স্বাদ গ্রহণের গ্রন্থি বিকশিত হয়। মা যে খাবার খাচ্ছেন তার স্বাদ ও গন্ধ পায় গর্ভের শিশু।
৬. ১২ সপ্তাহের মধ্যে ভ্রূণটি পাঁচ সেন্টিমিটার বড় হয়। শিশুর শরীর মোটামুটি তখন গঠন হয়ে যায়। , নখ, মাথা ও কান তৈরি হয়।
৭. গর্ভবতী নারীদের মর্নিং সিকনেস, বমি ভাব বা অবসাদ হয়ে থাকে। তবে গর্ভের প্রথম ১২ সপ্তাহের মধ্যে নারীকে রক্ষা করতেই এগুলো হয়ে থাকে। মূলত বাইরের ক্ষতিকর উপাদান থেকে শিশুকে রক্ষা করতেই মায়ের দেহ তা প্রাকৃতিকভাবেই গ্রহণ করে না। তাই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
৮. মায়ের খাদ্যাভ্যাস শিশুর পরবর্তী জীবনের পছন্দের খাবার নির্ধারণ করে। মা যে খাবার খান তার মলিকিউলগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে শিশু। মা যে খাবারগুলো এড়িয়ে যান, পরবর্তীতে শিশুরাও ওগুলো খেতে চায় না।
৯. ১৬ সপ্তাহের মাথায় গর্ভের ভেতরে ও বাইরে থেকে আওয়াজ পায় শিশু। তার শ্রবণেন্দ্রিয় গঠন হতে থাকে। সে মায়ের হৃৎস্পন্দন, খাবার, নিঃশ্বাস, হাঁটা, কথা বলা ইত্যাদি আওয়াজ পায়।
১০. ১৬ সপ্তাহের মাথায় গর্ভের মাঝেই শিশু তার চোখ খোলে এবং বাইরে থেকে আসা আলো দেখাতে পায়। ২৬-২৮ সপ্তাহের মাথায় তারা চোখ খোলে।
১১. ২০ সপ্তাহের মধ্যে ১৮ সেন্টিমিটার হয়। শিশু তখন গর্ভের ভেতর নড়াচড়া করতে থাকে। এই সময় শিশুর আইব্রো তৈরি হয় এবং নখ ভালোভাবে হয়।
১২. গর্ভের ২৪ সপ্তাহে শিশু আশপাশের শব্দ শুনতে পারে। শিশুর মুখ ও অন্যান্য অঙ্গ সম্পূর্ণভাবে তখন গঠিত হয়। চামড়া খুব পাতলা হয়।
১৩. গর্ভের ২৭ সপ্তাহ সময়ে শিশুর ফুসফুস বৃদ্ধি পায়।
১৪. কোষের একটা স্তর মায়ের থেকে আলাদা করে রাখে শিশুকে। মায়ের জরায়ুর দেয়াল আর শিশুর নাভির মধ্যকার স্তরটি দারুণ পাতলা। এর মধ্য দিয়ে যাবতীয় পুষ্টি শিশুর দেহে প্রবেশ করে।
১৫. আবেগগত অবস্থা শিশুর বিকাশকে মারাত্মভাবে প্রভাবিত করে। মায়েদের এ সমস্যা থাকলে শিশুরা পোস্ট-ট্রমাটিক ডিসঅর্ডারে ভোগে। এমনকি তা শিশুর বাকি জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
১৬. ৪০ সপ্তাহের মধ্যে শিশুর শরীর সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে যায়। এই সময় মাথা জরায়ু অভিমুখে থাকে। তখন শিশুর ওজন দুই থেকে তিন কেজি হয়।
তারপর একদিন মানব শিশুর পৃথিবীতে আগমণ ঘটে। তাকে পৃথিবীতে আনার পেছনে থাকে সৃষ্টিকর্তার এক বিশাল আয়োজন ।
অথচ আমরা এ জীবনের বেশির ভাগ সময় স্রেফ অপচয় করেই কাটিয়ে দেই। মানুষ তার জীবনের তিন ভাগের এক ভাগ সময় ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেয়।
তারপর হঠাৎ একদিন আমাদের বোধদয় হয় হায় জীবন এত ছোট ক্যানে। একটি গাছ বেঁচে থাকে হাজার বছর। একটি কুমিরের আয়ু কয়েকশ বছর। অথচ মানুয়ের আয়ু একশ বছরও না। এ ভারী অন্যায়!"

No comments: