Search

Monday, October 19, 2020

ও ডাক্তার, আমাদের ডাক্তার!

আমার হাবিজাবি কাজের একটা অংশ হলো স্টেশনে একটা চক্কর লাগানো। বিচিত্র-সব অভিজ্ঞতার পাশাপাশি মানুষের সীমাহীন কষ্ট কাছ থেকে দেখার বিরল এক সুযোগ। অসহায় মানুষের এক ভরসাস্থল হচ্ছে এই স্টেশনগুলো। কারণ এখানে শুয়ে-বসে থাকলে তেমন সমস্যা নেই। রাতে ঘুমালেও সচরাচর কেউ কিছু বলে না। তবে এর ব্যত্যয়ও আছে। সেটা পরে বলছি।

এইসব জায়গায় আবার কিছু সমস্যাও আছে। নেশাখোর, তৃতীয় লিঙ্গদের তান্ডব! তাই খানিকটা সতর্ক থাকারও প্রয়োজন আছে। আমার পা ধরে যখন একজন টানাটানি শুরু করল তখন খানিকটা যে ভয় পাইনি এমন না। ভয় চেপে ওই মানুষটাকে বললাম, 'তোমার সমস্যা কি? এমন করছ কেন'?

ওই মানুষটা এরপর যেটা বলে সেটা শুনে আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। শপথ আমার লেখালেখির, এ-ও কী সম্ভব! কেমন করে সম্ভব? এমন ঘটনা তো সিনেমা-টিনেমা-ছায়াছবিতে ঘটে! আমি ভেজা চোখে একে বললাম, 'তুমি কি এখন হাঁটতে পারো'?

সে স্টেশনের কিছুটা দৌড়ে এসে সবগুলো দাঁত বের করে বলল, 'আমি তুফানের লাহান দৌড় দিতামও পারি'।

যে নমুনা দেখলাম এ যে আমাকে দৌড়ে ছাড়িয়ে যাবে এতে কোনও সন্দেহ নেই। তবুও আমি অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রইলাম।

এর তো বাঁচার কথা না! বাঁচলেও অন্তত এই পা-টা কেটে ফেলার কথা। সালটা আমার মনে নেই, আমি একে যে অবস্থায় পেয়েছিলাম আমি ডাক্তার না-হয়েও তখন বুঝতে পারছিলাম এই পায়ে গ্যাংরিন ছড়িয়ে পড়েছে। মাংস পচার এমন গন্ধ, এমন তীব্র গন্ধ পেটের ভেতরের সবকিছু বের হয়ে আসার উপক্রম হয়।
ওর ওই সময়ের পায়ের ছবিটা আমি এখানে দিচ্ছি না কারণ দুর্বল চিত্তের মানুষদের পক্ষে এটা দেখাটা সমীচীন না তাই এই পোস্টের একেবারে নীচে ছবিটা থাকছে। ওই সময় এমন বিভৎস ছবিটা ওঠাবার কারণ হচ্ছে এর হাহাকার সহ্য হচ্ছিল না। কিন্তু এই একটা জায়গায় আমি বড় অসহায়। আমি তো চিকিৎসক না যে এর একটা বিহিত করব। 

ঠিক সেই মুহূর্তে আমার ডা. রুমি আলম নামের মানুষটার কথা মনে পড়ে। এই মানুষটাকে পূর্বেও আমি আমার এই সব হাবিজাবি কাজে বিরক্ত করেছি। এর একটা নমুনার ছবিও নীচে থাকছে। মজনু কেস!

তো, তখন তিনি বলেছিলেন, 'এমনে তো বুঝব না। ছবি পাঠান'। ছবি দেখে তিনি ঝিম মেরে থেকে বলছিলেন, 'একে হাসপাতালে ভর্তি করেন'।

আমি আমার পূর্বের অভিজ্ঞতায় জানি। হাসপাতালে একে রাখবে না। বিশদ আলোচনায় গেলাম না। তো, আমি বললাম, 'এটা সম্ভব না। কি-কি ওষুধ দেওয়া যায় সেটা বলেন'।

তিনি এন্টিবায়োটিকসহ আর কী-কী ওষুধ লিখে পাঠিয়েছিলেন আজ আর মনে নেই তবে ড্রেসিং-এর জন্য তরল ওষুধের কথা মনে আছে। কারণ এই বিষয়ে মজার একটা ঘটনা ঘটেছিল। স্টেশনের একজনকে বলেছিলাম, 'তুমি এইটা এমনে-এমনে করে এর পায়ে লাগিয়ে দিতে পারবা? টাকা দিব'।

সে উত্তর দিয়েছিল, 'আমারে লাখ ট্যাকা দিলেও এইটা করতাম না'।

অথচ ওই ব্যাটার বডিটার কথা বাদ দিলে লুঙ্গি, ল্যাঙ্গোটের (ভেতরে যদি থাকে আর কী, অনুমানে বললাম) দাম ১০০ টাকা ছাড়াবে কিনা সন্দেহ আছে। স্যার লাখ টাকার নীচে নামেনই না! কী আর করা! আমার ওয়ালেটে দু-একটা ওয়ানটাইম গ্লভস থাকেই। আর এমনিতে মেথর হিসাবেও বাসায় আমার যথেষ্ঠ সুনাম আছে। এই ধরুন, ইয়েতে মোবাইল পড়ে গেছে বা ইয়েতে চাবি ডুবে আছে ইত্যাদি-ইত্যাদি। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলাপে গেলাম না সূক্ষ রুচির পাঠকের গা গুলাবে। অন্তত এই একটা কারণে আমি বাসার সবার তোয়াজে থাকি।

যাই হোক, আমি একে দেখিয়ে দিলাম কেমন করে রগড়ে রগড়ে লালচে করে ফেলতে হবে। ওষুধ ঠিকমত খাচ্ছে কিনা বা কী অবস্থা জানার জন্য মাঝে-মাঝে কথা হয়। একদিন, একদিন এর পায়ের অবস্থা দেখে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। হাড় আলাদা হয়ে যে খানিকটা মাংস ছিল তা ঝুলছে। ঘটনা শুনলাম। রাতে স্টেশনে ঘুমাচ্ছিল। জিআরপি বা রেলপুলিশ লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়েছে। বাড়িটা পড়েছে এর পায়ে। 

সেদিনই স্থির করেছিলাম একটা আশ্রম-হোম টাইপের কিছু একটা করব। তাহলে একে আর স্টেশনে শুয়ে লাঠির বাড়ি খেতে হত না। কিন্তু আমি শ্লা, চুতিয়া-একটা এখনও এটা করতে পারলাম না অথচ মেঘে-মেঘে বেলা বয়ে যায়- আমি তো আর কচ্ছপ না আমার সময় ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে!

যাই হোক, এদের ক্ষেত্রে যা হয়। একদিন দেখি এ উধাও। এরপর বিষয়টা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। এরপরই সেই পা টানাটানির কিচ্ছা। আমি ডা. রুমি আলমের ছবি একে দেখিয়ে বলি: ব্যাটা, তুমি এই মানুষটার কারণে আজ হেঁটে বেড়াচ্ছ

ডা. রুমি আলম

আজ এটা লেখার কারণ হচ্ছে ডা. রুমি আলম নামের এই সহৃদয় মানুষটা করোনায় আক্রান্ত। আজই এই মানুষটা আমাকে লিখেছেন: আমি করোনা পজেটিভ। আমার জন্য দোয়া করবেন...

আমি তাঁকে লিখলাম: অসংখ্য মানুষের দোয়া আছে আপনার সাথে...।

তিনি সম্ভবত আমার কথাটা খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। গুরুত্ব দেওয়ার কারণ নেই কারণ এই সমস্ত মানুষরা নিরলস তাঁদের কাজ করে যান তাঁদের এতো ভাবাভাবির সময় কোথায়! কিন্তু আমার ভাবার প্রয়োজন আছে, যেমনটা এই ডাক্তারদের অতীব প্রয়োজন এই সমস্ত অসহায় মানুষদের জন্যও। যারা ব্লেসিং-এ বিশ্বাস করে তারা এটা বিলক্ষণ জানেন এই মানুষটাকে অসংখ্য ব্লেসিং তাড়া করবে, সবিরাম। তাঁর অতি দ্রুত সুস্থ না-হয়ে উপায় আছে...।

.

.

.

.

.

.

.

.

.

.

 এসময় এটাই ছিল ওর ঘরবাড়ি-বাড়িঘর!
 

তখনকার পায়ের অবস্থা!
 

...

মজনু কেস:

এই স্যারকেও আমি স্টেশনে পেয়েছিলাম। অল্প বয়সের একটা ছেলে। বয়স ১৫/১৬ হবে। ঘটনা শুনে আমি হতভম্ব! কোন এক ছোকরির জন্য এ নিজেই নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। একটু লক্ষ করলে এর হাতে 'এস' অক্ষর আগুনে পুড়িয়ে খোদাই করা অবস্থায় পাওয়া যাবে। এরও চিকিৎসা হয়েছিল। চিকিৎসক? ডা. রুমি আলম ব্যতীত কে আবার! 

 

 




2 comments:

Unknown said...

একজন মানবিক ডাক্তার শ্রদ্ধেয় ডা:রুমি আলম। এখনও স্যারের কথা আমার মনে পড়ে। আব্বুর অসুস্থতার সময় তখন আমি খুবই ছোট স্যারের ডেডিকেশন, মানবীয় গুণাবলী আমার ছোট বেলার অবুঝ মনেই নাড়া দিয়েছিল। এখন অনুভব করি সেই সময় আল্লাহর রহমতে স্যার ছিলেন বলে আর ভাইয়া আপনি ছিলেন বলে না হলে আব্বু কে নিয়ে কি যে হত!! আল্লাহ রুমি স্যারকে দ্রুত সুস্থতা দান করুন। আমিন। আবার আমাদের মাঝে উনি ফিরে আসবেন সুস্থ হয়ে এই প্রত্যাশা করি। এমন ডা: রুমি আলমকে যে আজ জাতির জন্য বড্ড প্রয়োজন।

www.babu25.blogspot.com said...

May Allah bless him with hayate tayaaba and I'm sure that he will recover from COVID19 soon,In sha Allah