Search

Thursday, October 10, 2019

আসেন একটু 'গফ' করি...।

যেহেতু এটা পত্রিকা অফিস না তাই গফ-গল্প করলে খানিকটা আঞ্চলিকতার টান থাকাটা খুব একটা দোষের কিছু না। ওহ, 'গফ' করলে তো একটা টপিক লাগে, লাগে না?


বুয়েটের আবরার নামের যে ছেলেটাকে তারই সহপাঠিরা পিটিয়ে মেরে ফেলল এই নিয়ে দেশ দেখি উত্তাল। ক্যান রে ভাই, তাল-উত্তাল ক্যান! এইটা কী এই 'পরথম'? নাকি পিটাপিটি যারা করল তারা ক্ষমতাশীন দলের ছাত্রলীগের বলে? শোনেন, এইটা আপনাদের মানায় না, বুঝলেন। আপনি এই দেশের বুদ্ধিজীবী-উইটিবি হলে না-হয় একটা কথা ছিল। কারণ, এরা রঙিন একটা চশমা লাগিয়ে রাখেন- কিছু একটা হলেই বলেন: উ-ই-ই মা, এতো আগে জানতুম না। যেন বুদ্ধিজীবী নামের ওই বি...হীন মানুষটা এই দেশে না, মঙ্গলগ্রহে বসবাস করেন।

ওহো, রঙিন চশমার বিষয়টা এইখানে খানিকটা ভুল বলেছি, সাদা চশমা লাগিয়েও ওই কাজটা অবলীলায় করা যায়। এই যেমন দেখুন আমাদের দেশের একজন সাহিত্যিক মহোদয় সাদা চশমা লাগিয়েও দেশে কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছেন না:
 
মিছরি মেশানো যে লেবেনচুষ আমাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়, শিবির বলে যে কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেল আর জঙ্গি বলে গুম। ব্যস, খেল খতম। আমরা অজান্তেই সেই খেলার আমোদপ্রিয় দর্শক হয়ে পড়ি।



তসলিমা নাসরিন যখন এমন একটা লেখেন তখন আমরা গা করি না কারণ উম্মাদের সব কথা ধরতে নেই [] কিন্তু এসপি মহোদয়ের এই কথার অর্থ কী! আবরারের পরিবার জামায়াত-শিবির! আচ্ছা-আচ্ছা স্যার, ধরে নিলাম জামায়াত শিবির! তো? ই দোহাই দিয়ে আপনি কী একটা ছেলেকে মেরে ফেলাটা জাস্টিফাই করছেন!
ওহে এসপি মহোদয়, নীচের এই ভিডিও ক্লিপটা, এইটা যদি আপনের বাপ হইত তখনও কী আপনার বক্তব্য এই-ই থাকত নাকি খানিকটা বদলে যেত?



আবরারের যে স্ট্যাটাসটা ফেনি নদীর পানি সংক্রান্ত... ফেনি নদীর পানি  দেওয়ার কী আছে এই নদী থেকে ভারত তো চুক্তির আগেও পানি নিত। হুদাহুদি...!
    
আর র‌্যাগিংয়ের নামে অত্যাচার করাটা তো নতুন কিছু না। এদের মন-মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বিরুদ্ধাচারণ মানেই জামায়েত-শিবির। ওইটা তখন আর একটা মানুষ না। মারো-কাটো-বাটো, কোনও সমস্যা নাই! পোলাপানরা এই-ই করে-করে হাত পাকায়। কচু গাছ কাটতে-কাটতে ডাকাত। এ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বাম হাতটা যথারীতি বেশি পাকায় দলীয় পান্ডারা: 




আগেও নানা সময়ে পেটানোর  ঘটনা ঘটেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে শেরেবাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ বলেন, "...কোনো শিক্ষার্থী আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ করেনি যে তারা নির্যাতিত হয়েছে"
এই এক চুতিয়ামার্কা কথাবার্তা। আমাদের দেশের বিভিন্ন পেশায় আমাদের বেতনভুক্ত কর্মচারীরা এই কথাটা খুব বলেন। ডিসি সাহেব বলেন, ওসি সাহেব বলেন, ছলিমুল্লা সাহেব বলেন...। এই যেমন অন্য এক প্রসঙ্গে দাউদকান্দি থানার ওসি বলেন, ‘বিষয়টি পুলিশের জানা ছিল না। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে[২] 
অভিযোগ করতে হবে কেন! যেখানে অসঙ্গতি দেখা যাবে সেখানেই ব্যবস্থা নেবেন। ছদুমদুর কথা- অভিযোগ দিয়ে কল্লা হারায় আর কী! এদের বক্তব্যের মূল বিষয় হলো কোন ঘটনা ঘটলে অভিযোগ না-দিলে এরা কেউ নড়বেন-চড়বেন না। এখন ধরুন কেউ যদি এতিম কোন মানুষকে খুন করে ফেলে [৩] তাহলে তাকে ধরাধরির কোন বালাই নেই কারণ ব্যাটা তো এতিম তার উপর মাটির নীচে এমন ভঙ্গিতে শুয়ে আছে যে নড়াচড়ার নিয়ম নাই। অভিযোগ করবেটা কে শুনি? ব্যস, মামলা ডিসমিস।

আবরার খুন প্রসঙ্গে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর হেডলাইন, 'পুলিশ জেনেও তৎপর হয়নি''। ওয়াল্লা, এইটা কী নেপচুন গ্রহের 'পরতিকা'? এরা কী জানে না পুলিশ দুদ্দাড় করে হল-বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে পড়লে সে যে এক আরেক কাহন। এই দেশে ক্ষমতাশীন দলের সাধারণ কোনও-এক পাতি নেতাও পুলিশ অফিসারকে চড় মারে। আইজিপিকে বলে ভাই...।
এইটা হচ্ছে আমাগো জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠার টিজার। 'আবরারের মায়ের আকুতি। ভিডিও দেখতে কিউআর কোডটি স্ক্যান করুন'। মতি মিয়া স্যারের কাছে সবই পণ্য!

এই খুনের প্রসঙ্গে প্রভোস্ট-ট্রভোস্ট, প্রক্টর-ট্রক্টর গ্যাম্বলের দিকে আঙ্গুল তোলার পূর্বে অন্য একটা গফ বলি। আমাগো সমুদ্রজয়ের পর-পরই ঠিক করা হলো এটার একটা 'ছেলিব্রেশন' করা হবে। এই কর্মকান্ডে তো একটা কমিটি করা লাগে। সেই কমিটির জন্য কিছু সদস্যও তো করা লাগে। মাত্র ৫০১ জন সদস্য করা হয়েছিল। সেই সদস্যদের মধ্যে আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবী মহোদয় ছিলেন [১]। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি জনাব, আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মহোদয়ও ছিলেন। আচ্ছা, কইনছেন দেহি, ২২ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর পিতা এই ভিসি মহোদয়ের এই-ই তাহলে কাজ ! এ যে এক অভূতপূর্ব!

এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের বুয়েটের উপাচার্য সাইফুল ইসলাম ছায়েব আবরারের জানাজায় পাঁচ মিনিট সময় দিতে পারেন না কারণ তখন তিনি আমাগো স্টারের স্টার মিনিস্টারের সঙ্গে 'সিটিংমিটিং'-এ ব্যস্ত ছিলেন।

আবরারকে খুন করার পর খুনিরা বসে আরামসে ফুটবল খেলা দেখছিল। চমকে গেলেন কী! আহা, এ তো বিচিত্র কিছু না। আপনের-আমার ছেলে-মেয়েটা যখন ফেসবুক ওরফে 'প্যাচবুকে' 'এস্টেটাস' প্রসব করে, "আমার মা আইসিওতে আছে তার জন্য ব্রো-সিস তুমরা প্রেয়ার করবা"। বলেই আর 'দিরং' করে না বাইরে কোথাও বসে-বসে লাইক আর কমেন্টের উত্তর দিতে গিয়ে পেছনের ঢোলা প্যান্টের ফাঁক গলে পাছা উদোম হয়ে পড়ে। কই, তখন তো আপনার-আমার গাত্রদাহ হয় না। আপনি-আমি তো তখন 'এস্মার্ট পুন' হাতে 'এস্মার্ট পুত' বলে মুত আটকে তিন উল্লাস করি। তো, লাগাইবেন ধুতরা গাছ আর ফল চাইবেন আপেল- ভাইরে, এইটা তো একটা 'ছইয়েরালি' মার্কা কথাবার্তা।
এরা যে রাগের মাথায় এই কান্ড করেছে এমন না, আগে থেকে আটঘাট বেঁধে... :

ভিন্ন মত প্রকাশে আমাদের সহিষ্ণুতার অভাব প্রকট। ভুল ম্যাসেজ কেমন করে যায় তার একটা উদাহরণ:

আমাদের দেশে দল করে-করে কেমন করে একটা মানুষ দলবাজ হয়ে পড়ে এর একটা ছোট্ট উদাহরণ:

যাই হোক, খুনিদের অনেককেই ধরা হয়েছে।
ধরা হয়েছে এ সত্য কিন্তু এ নিয়ে আমাদের মত বেকুবদের খুব একটা উচ্ছাস নেই কারণ আবু বকর খুনের মামলার রায়ে যেভাবে ছাত্রলীগের সব আসামী খালাস হয়েছিল এ ক্ষেত্রেও এমনটা হওয়া চিত্র-বিচিত্র কিছু না। সব সম্ভবের দেশ এটা! ক্যান রে ভাই, বিশ্বজিতের খুনিদের এখনকার অবস্থা জানেন না?

আসলে গোটা দেশটাই ডুবে আছে ফরমালিনে। এই তরল পদার্থটা সরিয়ে ফেলা মাত্র  বিকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে সবখানে...।    

সহায়ক সূত্র:

...
যে কথা লেখার শুরুতে বলছিলাম, এ পৈশাচিকতা নতুন না:
BUETian - বুয়েটিয়ান: "মারপিটে অংশগ্রহণকারীঃ
১। শুভ্র জ্যোতি টিকাদার (https://www.facebook.com/shuvrajyoty)
২। সিয়াম, ০৯ ব্যাচ (ডিস্ট্রাকটিভ সিয়াম নামে পরিচিত) (https://www.facebook.com/destructive.seeam)
৩। শুভম, ০৯ ব্যাচ (সিগমাইন্ড নামে এক কোম্পানি খুলেছে সে আর সিয়াম মিলে) (https://www.facebook.com/abushuvom)
(https://facebook.com/sigmindAI/)
৪। কাজল, ০৯ ব্যাচ (https://www.facebook.com/arifurkajol)
৫। রাসেল, ১০ ব্যাচ (পরবর্তীতে অনুতপ্ত হয়ে তাবলীগে যোগ দিয়েছে)
৬। কনক, ১০ ব্যাচ ( সাবেক সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষক লাঞ্ছনার দায়ে বহিষ্কৃত) (https://www.facebook.com/konok.ahmed.5)
৭।টি আর, ১১ ব্যাচ (আসল নাম তানভির রায়হান) [https://www.facebook.com/tanvir.d.rayhan]

আমাকে তিতুমীর হলের ২শত ব্লকে '১০ ব্যাচের প্রতীকের রুমে ডেকে নিয়ে যায় ১২ ব্যাচের আনিস। আমার কোন ধারণাই ছিল না কেন ডাকা হয়েছে। সেখানে ০৯ এর শুভ্র টিকাদার, ০৯ এর সিয়াম, ০৯ এর শুভম , ১০ ব্যাচের কনক, রাসেল আর ১১ ব্যাচের তানভীর রায়হান (টিআর নামে কুখ্যাত) আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আজগুবি ভাবে আমি শিবির করি এটা প্রমাণ করার জন্য আমাকে টর্চার করে।
প্রথমে তানভীর আমাকে গালে প্রচন্ড এক থাপ্পড় মারে। আমার মাথা ঘুরে যায় এত জোড়ে থাপ্পর খেয়ে, ঠোট কেটে যায়। এটা ওদের টেকনিক। আচমকা আঘাত করে টর্চারের মুড ক্রিয়েট করে। এরপর তানভীর আমার বুকে প্রচন্ড এক লাত্থি মারে। আমি মেঝেতে পড়ে যাই। কেউ এসে তোলে আমাকে। এরপর আমাকে জোর করে স্বীকার করতে বলে যে আমি শিবির করি। স্বীকার না করলে আমার মাথায় একটা বস্তা পরিয়ে দিয়ে বেধে দেয়া হয়।
এরপর শুধু মুহুর্মুহু রডের বাড়ি পড়তে লাগল পিঠের উপরে। একজন মনে হয় টায়ার্ড হয়ে রডটা রাখতেই আরেকজন রড হাতে তুলে নেয়। এভাবে থেমে থেমে প্রায় ১ ঘন্টা বস্তাবন্দী হয়ে মার খেয়েছিলাম। এভাবে আমি যখন জ্ঞান হারানোর কাছাকাছি চলে গেছি তখন শুরু হয় আরেক টেকনিক। এবার মাথা থেকে বস্তা খুলে একজন এসে খুব আদর করে আমাকে রক্ষা করার ভান করে। বলে যে, "আমি শিবির করি" এটা বললেই ও আমাকে অন্যদের থেকে বাচিয়ে নিবে। কিন্তু আমি আল্লাহর রহমতে ঘোরের মধ্যেও বুঝতে পারি এটাও ওদের চাল।
এরপরে আবার মার দিতে থাকে। একপর্যায়ে আমাকে ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকি দেয়। শূভম এসে আমার পা ভেংগে ফেলার পরামর্শ দেয়। পরামর্শ শুনে কাজল আর রাসেল মিলে আবার পূর্নোদ্যমে আমার পা লক্ষ্য করে রড দিয়ে পিটানো শুরু করে। একপাশ হয়ে যাওয়ায় সব মার এসে লাগে বাম পায়ে। একপর্যায়ে আল্লাহপাক মুখ তুলে তাকায়। ওরা কোন কারণে আমার উপরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আমাকে চলে যেতে বলে।
আমি আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। যাওয়ার সময় হলের গেটে আমাকে বলে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবি রাস্তায় এক্সিডেন্ট করছিস। পাচবার আমাকে দিয়ে মিথ্যা উত্তর প্র্যাকটিস করিয়ে যখন ছেড়ে দেয় তখন রাত ৩ টা। আমি এখন কোথায় যাব হল থেকে ? কোন রিকশাও পাওয়া যাচ্ছে না। শরীরে একফোটা শক্তি অবশিষ্ট নেই। কিন্তু যত দ্রুত পারা যায় ওদের দৃষ্টির সীমানা থেকে চলে যেতে চাচ্ছিলাম, যদি আবার সেই জাহান্নামে ডাকে!
খুড়িয়ে খুড়িয়ে তিতুমীর থেকে বের হয়ে পলাশীর কাছে এসে একটা রিকশা ডাকি শরীরের সব শক্তি জড় করে। তারপর আমার চাচার বাসায় চলে যাই। এরপরের বুয়েটের বাকি সময়টা একটা ট্রমা নিয়ে কাটিয়েছি। কোন আনন্দ উল্লাস কাজ করেনি, ক্যাম্পাস লাইফ নিয়ে কোন ভালবাসা কাজ করেনি। ঘৃণা আসত নির্লিপ্ত স্বার্থপর সব বুয়েটিয়ানের দিকে তাকালে।
-বুয়েট ইউরিপোর্টার হতে"

2 comments:

তুষার said...

ছাত্রলীগ থেকে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে’, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘এরা আমাদের ছাত্র। এদের আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেন। আমরা ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে, ওদের সঙ্গে কথা বলে, ওদেরকে ঠিক জায়গায় নিয়ে আসতে পারব। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আগাছাকে দূর করে দিতে। আমি বলি, না। আগাছাকে আমরা ফুলগাছে পরিণত করব। সম্ভব। আমাদের ছাত্র, আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেন। আমরা ওদেরকে ঠিক করে দেব।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

আসলে ওনার কোনও দোষ নেই, সব দোষ ওই রঙিন চশমার @তুষার