Search

Friday, January 30, 2015

ঢিলেঢালা হরতাল+নিরাতপ অবরোধ=বোমার উত্তাপ

মিডিয়ায় প্রায়শ লেখা হয়, ‘ঢিলেঢালা হরতাল বা নিরাতপ -তাপহীন অবরোধ’। তাপহীন অবরোধ? বটে! ওরে, নিরাতপ হরতাল-অবরোধ যার অপর নাম গণতন্ত্র তার তাহলে উপায় কী!
উপায়? ঠিক তখনই আমাদের গণতন্ত্র তার নিজস্ব ভঙ্গিতে বোমা ফাটিয়ে উত্তাপ-তাপ ছড়ায়। গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে এর প্রয়োজন আছে নইলে গণতন্ত্র মারা পড়বে যে।
আগুনে যখন চড়চড় করে আমাদের চামড়া পোড়ে তখন গণতন্ত্রের কোঁচকানো, শিথিল চামড়া টানটান হয়। আধ-জবাই পশুর মত আমরা যখন জান্তব চিৎকার করি সেই চিৎকারে ঝিম মেরে থাকা গণতন্ত্র নবউদ্যমে গাঝাড়া দিয়ে জেগে উঠে।

কেউ-কেউ ইনবক্সে আলাদা করে লিখে আমার উপর ক্ষোভ মেটান হরতাল-অবরোধ নিয়ে কেন আমি লিখছি না। কেউ-কেউ বিশেষ কোনও দলের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে ফেলার অপ্রয়াসও করেন। বাহে, এই বিষয় নিয়ে লিখে-লিখে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। এই বিষয়ে অজস্র লেখা লিখেছি। হরতাল নিয়ে গোটা একটা বই-ই আছে আমার। কী লাভ, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে লিখে!

যাই হোক, তবুও যেটা আমি লিখেছিলাম এ গ্রহের সবচেয়ে বড়ো কারাগারের রেকর্ড আমাদের [১]!
"ভাবা যায়! এ গ্রহের সবচেয়ে বড়ো কারাগার- কয়েদী সংখ্যা ১৪ কোটির উপরে! অবশ্য কারাগারটা ৩৬৫ দিন চালু থাকে না, এটা আমাদের জন্যে ভারী বেদনার!...

আজ যে দল ক্ষমতায় এরাও ঠিক একই কাজ করেছেন, গণতন্ত্রের নামে। ২০০৬-৭ সালের লেখাগুলো কপি-পেস্ট করে দিলে নতুন করে লেখার প্রয়োজনই হয় না আমার। পার্থক্য এটুকুই যে আজ যারা ক্ষমতাশীন দলের তারা তখন বিরোধী দলে ছিলেন- আর আজ যারা বিরোধী দলে এরা ক্ষমতায় ছিলেন।
২০০৭ সালের একটা লেখা থেকে [২] খানিকটা তুলে দেই:
...এই যে এতগুলো হরতাল দেয়া হয়েছিল; এতো প্রাণ, সম্পদের অপচয় হলো, লাভ কী হলো? বিএপি তো তার পাঁচ বছরের টার্ম প্রায় শেষ করে ফেলল! নেতাদের কোন সমস্যা নাই, এদের সন্তানরা থাকে দেশের বাইরে, হরতাল ডাক দিয়ে বিদেশ চলে গেলেই হয়!...
সত্যটা আমরা জানি, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের বিরুদ্ধে যে শত-শত দিন হরতাল-অবরোধ দিয়েছিল আওয়ামিলীগ; বিএনপি কিন্তু এক সেকেন্ড পূর্বেও ক্ষমতা ছাড়েনি। এখন আওয়ামিলীগও দু-সেকেন্ড পূর্বে ক্ষমতা ছাড়বে এমনটা দুরাশা মাত্র।

২০০৭ সালের এক লেখায় আমার বেদনার কথা লিখেছিলাম [৩]:
...হরতাল প্রসঙ্গে এ দেশের সেরা সন্তান বা শক্তিশালী মানুষদের প্রতি আমার সীমাহীন রাগ আছে। এঁরা কী তুচ্ছ বিষয় নিয়েই না হইচই করেন অথচ হরতাল নিয়ে এঁরা টুঁ-শব্দও করেননি!
... ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। যিনি নির্ভীক, স্পষ্টবাদী হিসাবে সুপরিচিত। তিনি একটা কলামে লিখলেন, 'শিক্ষা বিভাগকে হরতালের আওতার বাইরে রাখা হউক'। উত্তম-উত্তম, তা ছাত্ররা কি গাধার পিঠে চড়ে চলাফেরা করবে? শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ঢাকা থেকে একজন ছাত্রী যখন সিলেট যাবে, সে কি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাবে, নাকি পালকিতে চড়ে? 
...প্রকারান্তরে জাফর ইকবাল স্বীকার করে নিলেন, হরতাল হউক অসুবিধা নাই কিন্ত শিক্ষা বিভাগকে ছাড় দেয়া হউক। তিনি শিক্ষক বলেই সম্ভবত এমনটা চিন্তা করেছেন...।

তখন আমি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে কাতর-চিঠি লিখে বিস্তর অনুরোধ করেছিলাম, হরতাল নিয়ে কিছু একটা করার জন্য। সেটা ২০০৫ সালের কথা! আজ ২০১৫ সালে এসে দেখছি আমাদের জাফর ইকবাল সাহেব জেগেছেন। তাঁকে জাগ্রত অবস্থায় দেখে ভাল লাগছে।
আজ একটি দৈনিকে হরতাল-অবরোধ নিয়ে কঠিন একটা কলাম লিখেছেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ‘একটু খানি চাওয়া’ শিরোনামে। ওখান থেকে কিছু অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি:
...একেকজন মানুষকে খুন করার জন্য (আগুনে পুড়িয়ে) ২০ হাজার টাকার চুক্তি। ...রাজনীতির এই হিসাব আমাদের দেশে ছিল না।
... এখন বিএনপির রাজনৈতিক চরিত্রটি ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে।
... সামনে এসএসসি পরীক্ষা। খোদার কাছে দোয়া করি আমাদের দেশের এই ছেলেমেয়েরা যেন ঠিকভাবে পরীক্ষা দিয়ে সুস্থ দেহে তাদের বাবা-মার কাছে ফিরে যেতে পারে।
...তারপরও আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি...মানুষ হত্যার এই নৃশংসতা নিশ্চয়ই এক সময় বন্ধ হবে। মা তার সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর পর একটুখানি শান্তিতে থাকতে পারবেন। ট্রাক ড্রাইভারের স্ত্রী, হেলপারের আপনজনকে ভয়াবহ আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে না। একজন ট্রেনের যাত্রীকে নিজের জীবন নিয়ে ট্রেনে উঠতে হবে না।...

এরপর যথারীতি লেখাটা শেষ হয়েছে জাফর ইকবাল সাহেবের স্টাইলে, “এই দেশের মানুষ তো খুব বেশি কিছু চাইছে না, শুধু একটুখানি নিরাপদ জীবন চাইছে, সেটা কী খুব বেশি চাওয়া হলো?

আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের বুদ্ধির খেলা দেখাতে থাকুন। যারা-যারা তাদের বুদ্ধির খেলা দেখার জন্য হাঁ করে থাকেন তারা তাদের মুখ আরও হাঁ করুক তাতে আমার কী! আমার মত বুদ্ধিহীন মানুষের সাফ কথা, শত-শত দিন দূরের কথা একদিনের জন্যও হলেও আমি হরতাল-অবরোধ চাই না, গণতন্ত্রের বাপের মৃত্যুতেও না। আইন করে নিষিদ্ধ করা হোক এই দানবকে। নইলে দানব যেমন তার মাকে খেয়ে ফেলে তেমনি হরতাল-অবরোধ নামের এই দানবও খেয়ে ফেলবে এই দেশমাকে।
(বাস্তবতা হচ্ছে, ক্ষমতাশীন কোন দলই এই দানবকে মেরে ফেলতে চাইবে না কারণ বিরোধীদলে গেলে এই দানবের যে বড়ো প্রয়োজন)


সহায়ক সূত্র:
১. এ গ্রহের সবচেয়ে বড়ো কারাগার: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_26.html
২. আর কতটা রক্ত দিলে শেষ হবে হরতাল?: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_9163.html
৩. হরতাল নাকি গণতন্ত্রে ঢাল!: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_3914.html

No comments: