Search

Thursday, January 22, 2015

ছোট্ট, পুরনো সেই গল্প...।

সাদামাটা গল্প। কাহিনী প্রায় একই- মাত্র হপ্তাখানেক পূর্বেই লিখেছিলাম, 'ফ্লাই এওয়ে পিটার...' [১]। এদেরকে খাবারের সঙ্গে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে দিয়েছে। রাতের ট্রেন থেকে নামানোর পর আখাউড়া স্টেশনে গভীর রাতে এদেরকে পাওয়া যায়।

এই মানুষটার মুখেই শুনছিলাম বিশদ বর্ণনা। এই মানুষটা এবং তাঁর লোকজন মিলে ধরাধরি করে এদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করান।
সকাল-সকাল এমন একটা ঘটনা শীতের সকালের চার মত মনটা ভাল করে দেয়। আমাদের দেশের পুলিশের প্রতি সাধারণ লোকজনের এন্তার ক্ষোভ আছে এ সত্য। অবশ্য ক্ষেভের যথেষ্ঠ কারণও আছে। কিন্তু পুলিশের লোকজনেরা তো আর অন্য গ্রহ থেকে আসেন না। এরাও এই দেশেরই সন্তান, কারও না কারও ভাই, স্বজন। আমাদের দেশে আমরা পুলিশের কাছ থেকে সহস্র হাত দূরে থাকতে পছন্দ করি।
কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয় আমাদের সবারই ভাল হওয়ার সদিচ্ছা আছে। কেবল সুযোগের অপেক্ষা। সবার ভেতরের লুকানো শিশুটা কখন বের হয়ে আসবে এটা কী আর আমরা আগাম জানি, ছাই! তখন সেই শিশুটির সঙ্গে শিশু না-হয়ে তো উপায় নেই।

যাই হোক, গতকাল সকালে এই মানুষটার কাছ থেকে জেনে হাসপাতালে গিয়ে এদেরকে আমি পাই এই অবস্থায়। ওয়াল্লা, এ যে ফুটফুটে ছোট্ট একটা মেয়ে! এদের মধ্যে ‘ছোটলাল’ এর বাবা। এদের মধ্যে এই মেয়েটাই অনেকটা সুস্থ কিন্তু এ ভীত, সন্ত্রস্ত, আতংকিত। আমার আশ্বাস কতটুকু বিশ্বাস করবে এটা সম্ভবত বুঝে উঠতে পারছিল না। অন্য একজন যার নাম সুমন সে ওদিনই চলে যায়।

আমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল এই ছোটলালের প্রতি। কারণ এই মানুষটাকে পুরোপুরি সুস্থ না-হওয়া পর্যন্ত ছাড়া যাবে না। সামান্য ছোট্ট ভুলের কারণে কেবল এই মানুষটা যে কোথাও হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকবে এমনই না, হারিয়ে যাবে ছোট্ট এই মেয়েটিও। এ হতে দেওয়া যায় না, কক্ষণও না।
সকাল ১১টায় স্টেশনে এরা যখন অপেক্ষা করছে তখন রাতের ট্রেন ‘উদয়ন’ দিনে চলে এসেছে। মানুষটার বাড়ি নোয়াপাড়া। উদয়ন ট্রেনটা শায়েস্তাগঞ্জের পূর্বে থামে না। শায়েস্তাগঞ্জে নেমে এরা আবার নোয়াপাড়া ফিরে আসবে।
ট্রেন ছেড়ে দেয়। 'শিখা' নামের ছোট্ট মেয়েটির টলটলে চোখ থেকে আমি চোখ ফিরিয়ে নেই...। সেই তীব্র চোখের দৃষ্টি ধরে রাখার ক্ষমতা ক্যামেরা নামের যন্ত্রের কোথায়!

যাক, চেপে রাখা শ্বাস ফেললাম যখন এরা বাড়িতে পৌঁছে আমাকে ফোনে নিশ্চিত করল। হাসপাতালের লোকজনসহ সবার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই কারণ এটা একটা টিম-ওয়র্ক।
হাসপাতালের লোকজনেরা কখনও মুখ ফুটে কিছু চান না। কিন্তু আজ একজন নার্স বলছিলেন একটা নেবুলাইজার মেশিনের বড়ো প্রয়োজন। শ্বাসকষ্টের রোগি বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটা কতটা জরুরি এই অভিজ্ঞতা আমার খানিকটা আছে। এক ফোঁটা বাতাসের জন্য একটা শিশু অমানুষিক কষ্টে নীল হয়ে যায়- এই গ্রহে এতো বাতাস অথচ এক ফোঁটা বাতাসের জন্য ফুসফুসের কী হাহাকার...।
এমনিতে একটা নেবুলাইজার মেশিন হাজার তিনেক টাকার মধ্যে পাওয়া সম্ভব। এমন একটা মেশিন কোনও দেবদূতের জন্য পাখায় করে নিয়ে আসাটা কী খুব কঠিন কোনও কাজ?

সহায়ক সূত্র:
১. ফ্লাই এওয়ে পিটার...: http://www.ali-mahmed.com/2015/01/blog-post_14.html 

আপডেট, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫:
কোত্থেকে কেমন করে সেটা আলোচনা হওয়াটা খুব একটা জরুরি কিছু না। জরুরি কাজটা ছিল এই হাসপাতালে একটা 'নেবুলাইজার' মেশিনের ব্যবস্থা করা, সুখের বিষয়, সেটা হয়েছে। 

No comments: